যখন সাইক্লোনে সাগরের সব ঢেউ উত্তাল হয়ে গর্জায় গোপনে সবাইকে বলি, আমি ত খোলসে লুকিয়ে থাকা কোন ভীতু শামুক নই।
পিচ্চিকালে হলিউড ও বলিউডের সকল সিনেমাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ড্যানি সিডাক সাহেবের দুই দুইটা মুভি আস্ত দেইখা নিসিলাম। একটা সুপারম্যান, আরেকখান হইল গরীবের রাজা রবিন হুড। তখন ছিল বিটিবির যুগ। ঈদের ছুটিতে কুমিল্লায় গেলাম বেড়াইতে।
জুম্মাদিন সকাল বেলা থেইকাই গ্রামের পুলাপাইন আর গৃহবধুদের মইধ্যে বেশ চাপা উত্তেজনা। কার্টুন নেটওয়ার্কের বদৌলতে এই উত্তেজনার কারণ খুইজা বাইর করা বেশ টাফ মনে হইল। বেলা পৌনে তিনটায় বড় মামী উঠানে গিয়া চিক্কর দিয়া দর্শকদের টিভিরুমে আইবার জন্য সবাইরে ডাকতে লাগলেন। কৌতূহলের ঠ্যালায় আমিও ওনার পিছুপিছু চইলা গেলাম।
জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়া বিটিভি স্টার্ট নিল।
শুরু হইল বাংলার মাটিতে বানানো পত্থম সায়েন্স ফিকশন মুভি ড্যানি আঙ্কেলের সুপারম্যান। আমার বয়সী সব ছুডো পুলাপাইন হাত তালি দিতে দিতে হাত ব্যাথা কইরা ফেলাইল। তখনো বুজি নাই, আমারও হাত তালি দেয়া দরকার ছিল। ছবি শুরুর পাঁচ মিনিটের মইধ্যেই আমি সেটা বুইঝতে পারলাম।
ছবি শুরু হইল, ভিনগ্রহের দৃশ্যপট থেকে।
ঐ গ্রহের মাইনষের সুপারন্যাচারাল অনেক পাওয়ার থাকে। যেমন এরা আসমানে উড়তে পারে, আর এদের গায়ে সেনেগালের নিগ্রুদের থেইকাও বেশি জোর। একই ক্রোমোজোম শেয়ার করার কারণে নেংটাকাল থেইকাই ড্যানি সিডাক অদ্ভুত সব অলৌকিক শক্তির অধিকারী। খুব সম্ভব ড্যানি সিডাকের আব্বা আর আম্মা সেই মুলুগের রাজা রানী টাইপের কিছু একটা ছিল। নাসির খানের ষড়যন্ত্রে পইড়া দুইজনেই হয়ত প্রাণ হারায়।
ড্যানি চাচা তখন ছুটো। এপোলো মাইনাস-১১ তে চইড়া পৃথিবী গ্রহের বাংলাদেশে (বলদায় আর কোন দেশ খুইজা পায় নাই) ল্যান্ডিং করেন। অনারে আরেক মহিলা (আনোয়ারা অথবা ডলি জহুর। আমি কিছুটা কনফীঊজড) দত্তক লইয়া নিজের পুলার মত আদর কইরা বড় করতে থাকেন। আদরের ঠেলায় দুই-তিন মিনিটের মইধ্যেই তরতর কইরা সিডাক চাচা ছফুট লম্বা হইয়া গেল।
ঘাড়ের পিছে ঘোড়ার কেশরের মত ইয়া লম্বা লম্বা চুল। পুরান জামা কাপড় ছোট হইয়া যাওয়ায় সুপারম্যানের আম্মা রাত জাইগা সিলাই কইরা পুলার লাইগা টাইট ফিটিং গেঞ্জি, পায়জামা আর লাল রঙের আন্ডারওয়ার বানাইয়া দিলেন। নতুন জামা পাইয়াতো সুপারম্যানের আনন্দ আর গায়ে ধরে না। জানালা দিয়া উড়াল দিয়া লগে লগে বাইর হইয়া এলাকার গার্লস স্কুলের গেইটে পৌছানোর পড়েই উড়াউরি খ্যামা দেয়।
উপরের এই লোকই ড্যানি সিডাক।
আগে লম্বা লম্বা চুল আছিল ওনার।
একটা সিন আমার স্পষ্ট খেয়াল আছে।
সুপারম্যানের আম্মা উঠানে গিয়া হাঁক দেয়, "সুপারম্যান! সুপারম্যান! বাবা তুমি কুতায়?" আর সুপারম্যান আকাশে উড়া থাকা অবস্থায় আওয়াজ দেয়, "আম্মা, আমি আইতাছি। দুইডা সেকেন্ড ওয়েট কর। " পরের মুহূর্তেই কবুতরের মত ডানা ঝাপ্টাইতে ঝাপ্টাইতে জমিনে নাইমা আসলো সুপারম্যান।
মা জননী কইল, "বাবা, বড্ড তিয়াস পাইছে। নারিকেল গাছে উইঠা এক জোড়া ডাব পাড়োতো দেকি। " জ্যা আম্মা বইলা ড্যানি সিডাক গাছে টোকা দিতেই তিন ডজন ডাব পড়িয়া গেল। একটা ডাব কুড়াইয়া অইটাতে গুতা দিতেই উহাতে ২ ইঞ্চি ড্রিল হয়া গেল। ডাবের পানি খাইয়া আম্মাজান ক্যানসারে পড়িল।
গ্রামীণফোন স্বাস্থ্যসেবায় ফোন দিয়া জানতে পারল চিকিৎসার জন্য কম কইরা ধরলেও দশ লক্ষ টাকা দরকার।
সুপারম্যান মনে মনে অঙ্ক কষিল,
১০ টাকা পাওয়া যায় ১ টা ডাব বেচিলে
সুতরাং ১ টাকা পাওয়া যায় ১/১০ টা ডাব বেচিলে
১০,০০,০০০ টাকা পাওয়া যায় ১০,০০,০০০/১০ বা ১ লক্ষ ডাব বেচিলে।
দ্রষ্টব্য অঙ্কশাস্ত্রে বেচারা সুপারম্যান কিছুটা দুব্বল।
এক লাখ ডাব বেচলে মারে বাঁচানো যায়। কিন্তু মাইনষের গাছ থেইকা ডাব চুরি করা আইনে নিষেধ আছে।
তাছাড়া আম্মা শুনলে সেই মাইর দিব। তাই টাকা কামানোর উদ্দেশ্যে ও মায়ের অপারেশনের জন্য সুপারম্যান কমলাপুর রেলষ্টেশনে আইসা পৌছল।
বছিলার বস্তিতে ডেরা জমানোর পর মারে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করাইয়া আনল। মায়ে কইল, "দুপুরবেলা রইদে বেশি ঘুরিস না বাপ। তোর স্কিন খারাপ হইয়া যাইব।
আর টাকার ব্যাবস্থা না হইলে পটলের সালুন প্লাস চিকন চাইলের ভাত পাঠাইয়া দিস। " করুন একটা গান শুরু হইল। বেকার ড্যানি সিডাক টেকার জন্য এদিক অদিক ঘুরল। নারী দর্শকেরা আঁচল দিয়া চউখ মুছল। অবশেষে মতিঝিলে জাম্বুর সাথে ষ্ট্রীট ফাইটিংয়ে পারটিসিপেড করবে ঠিক করল।
পাশাপাশি দুই তিনটা লটারির টিকিটও খরিদ কইরা নিল। যদি লাইগা যায়।
জাম্বুর সাথে তিন মিনিটের ফাইটে ড্যানি আঙ্কেলের নিরঙ্কুশ বিজয় হইল। উত্তেজিত জনতা তার মায়ের চিকিৎসার খরচ ম্যানেজ কইরা দিল। ঠেলাঠেলির ভিতরে নায়িকারে কিছু বদমাইশ টিজ করতাছিল।
শালাদের ধুমধাম ফাইট দিয়া নায়িকারে নিয়া সুপারম্যান পাঁচ মিনিটের একটা গান গাহিয়া ফেলিল।
অন্যদিকে ভিনগ্রহে, ইন্টারনেটে আসক্ত নাসির খান বাংলাদেশের স্ট্রিট ফাইটিং অনলাইন দেখিতেছিল। সে ড্যানি সিডাককে সুপারম্যান হিসাবে চিনা নিল। পিঙ্ক কালারের পারদের ড্রেস পইড়া ইউএফও যোগে সকাল সকাল নাসিরখান ঢাকায় অবতীর্ণ হইল। গুলশান এরিয়ায় দুই তিনজন নারী এসিস্ট্যান্ট নিয়া সুপারম্যানের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু করল এলিয়েন নাসির খান।
যেই উত্তর দিতে পারে না তারে চক্ষু থেইকা নির্গত লেজার দিয়া ভস্ম করতে থাকল। গোলমাল শুইনা ঘটনাস্থলে পুলিশ আসলে তাদেরকেও তুলাধুনা দেয়া হইল।
কয়দিন ধরেই গুলশানের নাইট ক্লাবে দিনের বেলা নায়িকাকে নিয়া সময় কাটানোর বদভ্যাস ভালভাবে পাইয়া বসছে ড্যানি চাচারে। ক্লাব থেইকা বাইর হইয়া দেখে রাস্তায় বিশাল জ্যাম আর নাসির খান মোড়ে পুলিশ পিটাইতেসে। তিন রাত্র অনিদ্রার ফলে সুপারম্যানের মেজাজ খিচ্চা গেল।
উইড়া গিয়া ঝাপাইয়া পড়ল নাসির খানের উপর। শুরু হইল ড্যানি আর নাসিরের মইধ্যে এক ভয়াবহ নিউক্লিয়ার ওয়ার যার কথা মনে করলে এখনো ঢাকার মানুষ কাইপা কাইপা উঠে। সেই যুদ্ধের তেজস্ক্রিয়তায় বুড়িগঙ্গার পানি তিন মিটার নিচে নাইমা গেসিল। যুদ্ধের ফাঁকে নায়ক আর ভিলেনের মইদ্যে চরম একটা বাকযুদ্ধ হইয়া গেল।
নাসির খান, "কেমন আছিসরে সুপারম্যান? প্যান্টের উপরে এইডা কি পড়সত? জাইঙ্গা নাকি! হাহ হাহ হা!"
সুপারম্যান, "এইসব বালের আলাপ ছাড়।
ফাইটে মন দে। আর শরম করলেও কিছু করার নাই। আম্মা নিজ হাতে আন্ডারওয়ার সেলাই দিসে। না পড়লে মাইন্ড করবে। "
নাসির খান, "তোর আবার আম্মা আসে কোত্থেইকা।
তোরে এতিম বানাইছিতো আমি। তোর বাপ মায়ের কবরের উপরে ফাইভ স্টার হোটেল দিসি। এফঅয়াইআই তুইতো আমারই গ্রহের পুলা। "
সুপারম্যান, "হারামজাদা, তুই আমার বাপকে মেরেচিস। তোর একদিন কি আমার একদিন।
"
ভয়ঙ্কর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে সুপারম্যানের জিত হইল। তাছাড়া ভিনগ্রহের বেচারা নাসির খান বাংলাদেশের আবহাওয়ায় খাপ খাইতে পারে নাই। ইনভায়রনমেন্টাল ডিসএডভান্টেজের কারনেই হয়ত নাসির খান মারা পড়ল। আজিমপুরের গোরস্থানে তার কবর হইল। জানাজাতে মারভেলের সকল ভিলেন অংশ নিছিল।
আর নাসির খানের হাত থেকে পুলিশ প্রশাসনকে সেইভ করার কারণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সুপারম্যানকে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেয়। এছাড়া পরবর্তীতে মহামান্য রাষ্ট্রপতির একান্ত অনুরোধে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সুপারম্যানকে বীর প্রতীক উপাধি দেয়া হয়।
অবশেষে হাসপাতালে সুপারম্যানের আম্মা বাইচা গেল। নায়ক নায়িকার অন্তরঙ্গ নাচ গানের মধ্যে দিয়া মুভি সমাপ্ত হইল। আমি নাস্তা করতে আব্বার লগে গঞ্জে গেলাম।
জনৈক রুয়েটিয়ানের ব্লগ
২৬ কার্তিক, ১৪২০ বঙ্গাব্দ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।