আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চড়া দামে কেনা পৃথিবীর সব ছবিরা মানি হ্যাজ নাথিং টু ডু উইথ আর্ট ....

নিজের সম্পর্কে লেখার কিছু নেই । সাদামাটা ।
চড়া দামে কেনা পৃথিবীর সব ছবিরা ....মানি হ্যাজ নাথিং টু ডু উইথ আর্ট ! [ প্রথম পর্ব ] কতোগুলি রঙচঙ মাখানো একখানি ক্যানভাস প্যানেল । কতোইবা মূল্য এর ? সব খরচ-খরচা মিলিয়ে শ’কয়েক ডলার, এই তো ? অথচ এর গায়ে প্রাইজট্যাগ ঝুলছে “১০০ মিলিয়ন ডলার” । ভাবা যায় ? আমার - আপনার ধারনার একদম বাইরে ।

আপনি মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের ছবি কিনতে চান ? ওটা তো দেয়ালেই ঝুলিয়ে রাখবেন ! তাহলে অনেক ঝৈ-ঝামেলা করে একটুকরো ক্যানভাস কিনে টাকাটা এভাবে পানিতে ফেলার দরকারটা কি ? ডলারগুলো একটা পলিথিন ব্যাগে ভরে দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখলেই তো হয় ! লোকজন আপনার ঘরে ঢুকলেই ডলারগুলো দেখতে পাবেন । এরকম একটা মষ্করা আপনি করতেই পারেন । এই মষ্করা উপেক্ষা করেও কিন্তু ছবিগুলো বিক্রি হচ্ছে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারে । এমোন কি নিলামে পর্য্যন্ত তুলতে হচ্ছে ছবি , এতো ক্রেতা । যারা কেনেন, টাকা তাদের কাছে কোনও ফ্যাক্টর নয় ।

কারা কিনছেন এই ছবিগুলো ? কেনই বা কিনছেন ? মিলিয়ন ডলার প্রশ্নই বটে ! কিসের যাদুতে রং-তুলি-ক্যানভাসের খেলা কোটি কোটি টাকায় পরিনত হয়ে যায় ? মনে রাখবেন , ছবি মানুষের হৃদয়কে উৎফুল্ল করলেও মূলতঃ এতো দাম দিয়ে কেনা ছবিগুলো আসলে বিলাসী এক বস্তু । আর এর যাদুটি হলো , এটা একটা বিক্রয় যোগ্য পণ্য । কেবলমাত্র ধনাঢ্য আর ক্ষমতাশালীরাই এর ক্রেতা । যারা সারাটি জীবন দৌঁড়ুচ্ছেন স্ট্যাটাস আর প্রেষ্টিজ এর পেছনে । গুটি কয়েকজন আছেন যারা শিল্পকে বা শিল্পীকে ভালোবেসে ছবি সংগ্রহ করেন আত্মতৃপ্তি পেতে ।

আর বাকীরা সব “টাকায় টাকা আনে” এ সূত্রটি ধরে রিয়েল এষ্টেট ব্যবসার মতো টাকা খাটাচ্ছেন এখানে । নেশার মতো তারা ছুটছেন টাকার পেছনে , “নাফা কেতনা হোগী ?” এরকম একটি হিসেব নিকেশ করে । এই রকম ছবি ক্রেতা হলে আপনাকে মিলিয়নিয়ার নয় , হতে হবে বিলিয়নিয়ার । যে কারনেই আপনি ছবি কিনুন না কেন তার চড়া দামটি দিচ্ছেন কিন্তু ছবির শৈল্পীক দিকটির মূল্য ভেবে নয়, মুনাফার দিকটি ভেবেও নয় । দিচ্ছেন মূলতঃ আর্ট ব্রোকার, ছবি নিলামঘরগুলোর টোপ গিলে ।

তারাই ঠিক করে দিচ্ছেন কতো মিলিয়ন বেশী খসানো যায় আপনার পকেট থেকে । দ্য ডেইলী টেলিগ্রাফ পত্রিকার আর্ট ক্রিটিক আলষ্টেয়ার সূক ২০১১ সালের জুলাইতে বিবিসিতে প্রচারিত একটি প্রামাণ্যচিত্রে এই মিলিয়ন ডলার প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বলেছেন – “ ছবির জগৎটা আসলে কুখ্যাত ভাবেই একান্ত গোপনীয় , লুকায়িত এজেন্ডা নিয়ে টগবগে, রহস্যময় রাজনীতিতে আর মানুষের ফুটন্ত ইগোতে ভরা । তাই চড়া দামে ছবি ক্রেতারা মুখ খোলেননি কেউ , তাদের গোপনীয়তা বজায় রাখতে । ” তবুও আলষ্টেয়ার থেমে থাকেননি । দু-দু’জন বিলিয়নিয়ার ছবি সংগ্রাহক যার মধ্যে রয়েছেন বিখ্যাত ছবি নিলামঘর “ক্রিষ্টি’জ” এর মালিক ফ্রাঙ্কোয়িজ পিনো , ক্রিষ্টোফার বার্জ নামের স্বনামধন্য একজন ছবি নিলামকারী ।

আর নিউইয়র্কের এক সফল আর্ট ডিলারকে ও খুঁজে বের করেছেন । আপনাদের পরিচিত ঔপন্যাসিক জেফরী আর্চার এর সাথেও দেখা করেছেন । এদের সাথে দেখা করে আলষ্টেয়ার যা জানতে পেরেছেন তার সার কথা উঠে এসেছে জেফরী আর্চারের জবানীতে । ঔপন্যাসিক হলেও একজন ছবি সংগ্রাহক হিসেবে তিনি সরাসরি বলেই ফেলেছেন , “ তুমি যদি এই পাগলের রাজ্যে ঢুকে পড়ো তো জানবে, এটা একটা ড্রাগের মতো – তোমাকে একটা “ফিক্স”এর পর আর একটাতে টানবেই । আমি বুঝিনা এরা কেন এতো গর্দভ আর উন্মাদ ! গতমাসেই আমার কিছু ছবি ক্রিষ্টি’জ নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দিলো ৫.১ মিলিয়ন পাউন্ডে ।

এর মাঝে একটি, ক্লদ মনে’র আঁকা সীন নদীতীরের দৃশ্য,যার দাম উঠেছে ৩ মিলিয়ন পাউন্ড । ” এমনতরো জেফরী আর্চার বৃটেনের ধনীদের তালিকায় রয়েছেন ৫৮৩ নম্বরে । তারপরেও তিনি আক্ষেপ করেছেন এই বলে যে , নামকরা ইম্প্রেশনিষ্টদের ছবি কেনার ক্ষমতা তার নেই । তাহলে বুঝুন, জেফরী আর্চারের কথামতো আরো অনেক পাগলেরই দেখা পাবেন আপনি ছবি কেনাবেচার জগতে । যেমন ধরুন, এই ছবিটি – “ হোয়াইট সেন্টার” ।

কি আছে এতে ? কে জানে কি আছে ! এই ২০০৭ সালে এর দাম হাকা হয়েছিলো ৭২.৮ মিলিয়ন ডলার । বিক্রি হয়েছে ৭৪.৯ মিলিয়নে । যিনি কিনেছেন তিনিই বলতে পারবেন কি দেখে মজেছেন তিনি । ছবিটি কারো ঘরের দেয়ালের শোভা বাড়িয়েছে হয়তো কিন্তু এই টাকা দিয়ে আপনি সিডর আক্রান্ত কমপক্ষে ১,৫০,০০০ ( দেড় লাখ ) পরিবারের ভাঙ্গা ঘর আবার নতুন করে তুলে দিতে পারতেন !!!!!!!!! কোনও একটি ছবির জন্যে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচা করার এই খেয়ালীপনাকে কেউ কি “ জাষ্টিফাই” করতে পারবেন ? আপনার মতোই আর্ট ক্রিটিক আলষ্টেয়ার ও পারেননি । অবাক হয়েছেন এধরনের ক্রেতাদের মানসিকতা দেখে ।

১৬১০ সালে রুবেন্স এর আঁকা “ ম্যাসাকার অব দ্য ইনোসেন্টস” ছবিটি যখোন ২০০২ সালে নিলামে ওঠে তখোন টেলিফোনে নিলাম ডাকেন কানাডিয়ান বিলিয়নিয়ার ডেভিড থমসন আর তার বাবা । টেলিফোনে ৭৬.৫ মিলিয়ন ডলারের ডাকটি ডেকে যখোন ডেভিড থমসন জিতে যান তখোন তার কাছে আলষ্টেয়ার জানতে চেয়েছিলেন, কি এমোন তাড়া ছিলো তার এতো দামে ছবিটি কেনার ! আলষ্টেয়ারের দিকে শক্ত একটা চাহনি দিয়ে ডেভিড থমসন শুধু বলেছিলেন , “টু ট্রায়াম্ফ” । ভাবুন একবার ! শুধু মাত্র কারো উপর দিয়ে টেক্কা মারতে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ঢেলে দিতেও দ্বিধা নেই কারো কারো । এখানে টাকার জৌলুসই মূখ্য, ছবি নয় । শুরুতে যে মস্করাটির কথা বলা হয়েছে তা বোধহয় মস্করা নয় একবারেই ! আর্ট এ্যাডভাইজার তানিয়া পস শুনিয়েছেন ভিন্ন আর এক ধরনের নেশার কথা ।

এক অজ্ঞাতনামা ক্রেতার পক্ষে ২০০৮ সালে “ক্রিষ্টি’জ” এ নিলামে ওঠা শিল্পী ক্লদ মনে’র “ওয়াটার লিলিজ” ছবিটি যখোন ৮০.৪ মিলিয়ন ডলারে কিনে নেয়ার জন্যে এ্যাডভাইস করেন তিনি, তখোন এতো দামে কেন তিনি ছবিটি কেনার পরামর্শ দিলেন এমোন প্রশ্নের জবাবে বলেছেন , “ আমি যাদের সাথে কাজ করি সেইসব বিত্তশালীদের চারপাশটাতে ঘিরে থাকে কেবল- কোয়ালিটি । তারা তাদের চারপাশে এটা দেখতেই অভ্যস্ত । এই কোয়ালিটির নেশা কেন ছবির বেলাতে এসে মার খাবে ? তারা নিজের দখলে সেরা জিনিষটিই চান । সেটা হোকনা কেন তাদের বাড়ী, গাড়ী কিম্বা উড়োজাহাজ । ইট’স জাস্ট দ্য ওয়ে দে লিভ দেয়ার লাইভস ।

” ঠিকই তো ! এটা তাদের জীবন, তারা কিভাবে কাটাবেন তা আমার মতো আদার ব্যাপারীর খোঁজ-খবর করার দরকারটি কি ! ছবির এই যে এতো চড়া দাম তা কিন্তু ছবির কান্তিময় ছটা নয় । এখানেও আছে বর্ণভেদ । আপনি হয়তো জানেন , ছবি কেনা অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে । ছবি নিলাম ঘরগুলোর অর্জন থেকে যে জ্ঞানটুকু পাওয়া যায় তাতে দেখা যায়, বাদামী রংয়ের ছবিগুলো কেমন যেন দরিদ্র , চড়া দামে বিকোয় না কোনও হাটে । ন্যাংটো মেয়েদের ছবিগুলোর ঝাঁজ অনেক বেশী, টেক্কা মেরে দেয় পুরুষের নান্দনিক ছবির উপরেও ।

নিউইয়র্কের পার্ক এ্যাভেন্যুর এলিভেটরে ছবিটি তার গা-গতর নিয়ে চড়তে পারবে কিনা, তা ও পকেটের টাকা খসাতে কাজে লাগে । আর চড়া দামে যে ছবিটি কেনা হয়ে জাতে উঠলো, তার যে আবার একদিন জাত যাবেনা এমোন গ্যারান্টিও কিন্তু নেই । তাহলে আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, মানি হ্যাজ নাথিং টু ডু উইথ আর্ট ! একটুকরো ক্যানভাসের জমিনে ফুটে ওঠা ছবি দেখে স্বপ্নের রাজ্যে চলে যাওয়া বা মুগ্ধতার ঘোরে হারিয়ে যাওয়া নয়, কেবল ভিরমি খেতে হলে আসুন - যে ছবিগুলোতে “মানি হ্যাজ নাথিং টু ডু...” এমোন একটা ব্যাপার জড়িয়ে আছে, তাদের একনজর দেখে আসি । দ্য কার্ড প্লেয়ারস / পল সেজান The Card Players / Paul Cézanne পৃথিবীতে এ পর্য্যন্ত সবচেয়ে চড়া দামে বিক্রি হওয়া এই ছবিটি, পাঁচটি ছবির সিরিজের মধ্যে একটি । কতো এর দাম ? দাম হাকা হয়েছিলো ২৫৯ মিলিয়ন ডলার ।

শেষমেশ রফা হয়েছে ২৬৮ মিলিয়ন ডলারে । আপনি যদি মাসে ৭৫ থেকে ৮০ হাযার টাকা বেতন পান তবে এই রকম একটি ছবি কিনতে আপনাকে মাত্র ২২ হাযার ৩৩৩ বছরের বেতন গুনতে হবে ! ঘর-সংসারের খরচ - খাওয়া-দাওয়া , লেখাপড়া, চিকিৎসা বাদ । কতো জন্মে সম্ভব ??? পোষ্ট ইম্প্রেসনিষ্ট শিল্পী পল সেজান ১৮৯৫ সালে এঁকেছিলেন ছবিটি । পাঁচটি ছবি নিয়ে “দ্য কার্ড প্লেয়ারস” সিরিজের একটি । সিরিজের সব ছবিই ফার্ম শ্রমিকদের নিয়ে ।

সম্ভবত সেজানের র্ফাম হ্যান্ডসদের কেউ । মুখে পাইপ টানতে টানতে তারা তাস খেলায় মশগুল । সতের শতকের ফ্রেঞ্চ বা ডাচ শিল্পীদের আঁকা তাসারুদের মতো নয় তাদের চেহারা কিম্বা হাবভাব । তখোনকার ছবিতে এই কার্ড প্লেয়ারদের চেহারা সুরৎ ছিলো মাতালদের মতো , বন্য-রুক্ষ । সারা ছবি জুড়ে থাকতো উচ্চকিত ড্রামার মূহুর্তগুলি ।

সেজান সেইসব অভব্য কার্ড প্লেয়ার আর তাস খেলার ড্রামাটিক পরিবেশ সযতনে বাদ দিয়েছেন এই সিরিজের ছবিগুলোতে । এনেছেন একটা টানটান সমাহিত ভাব , কি তাসারুদের চেহারায় , কি পরিবেশে ! তার কার্ড প্লেয়াররা নিমগ্ন খেলায়, চোখ নিবদ্ধ তাসে । সিরিজের সব ছবিতেই তাই । প্রথম দু’টিতে একাধিক ফার্ম শ্রমিকদের উপস্থিতি থাকলেও শেষের তিনটিতে সেজান রেখেছেন মাত্র দু’জন করে যারা খেলছেন শুধু । কোনও দর্শক রাখেননি ।

সিরিজের প্রথম ছবিতে রয়েছে পাঁচজন । তিনজন তাসারু , খেলছেন মগ্ন হয়ে । ঢিলেঢালা পোষাক সবার । দু’জন দর্শক , একজন কিশোর , চোখ তার স্থির তাসের দিকে । অন্যজন আলস্য ভরে দেয়ালে হেলান দিয়ে আছেন যেন অপেক্ষা করছেন, কখোন তার পালা আসবে খেলার ।

কেউ কেউ বলেন , সেজান ছবিতে গভীরতা আনতেই এই লোকটিকে এখানে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন । সিরিজের দ্বিতীয় ছবিটিতে কিশোরটি উধাও । দেয়ালের তাকের ফুলদানী আর ঝোলানো ছবিটিও নেই । যেমন ঝোলানো ছিলো তেমনিই ঝোলানো আছে শুধু তামাক পাইপ চারটি । ছবিটি আগেরটির চেয়ে বেশ “কনডেন্সড” মনে হয় ।

সেজান কি আমাদের দৃষ্টি কেবল মাত্র কার্ড খেলার দিকেই “ফোকাস” করতে চাইছেন ? তাই কি তার বাকী তিনটি ছবিতে শুধু দু’জন কার্ড প্লেয়ারের উপস্থিতি রেখেছেন ? ক্রমান্বয়ে ছোট করে আনছেন দৃশ্যপট ? জুম–ইন ষ্টাইল ? The Card Players, 1890–92, Barnes Foundation, Philadelphia, Pennsylvania ( প্রথম ভার্সন) The Card Players, 1890–92, Metropolitan Museum of Art, New York( দ্বিতীয় ভার্সন) ছবির ইতিহাস কিম্বা গপ্পের খোঁজে আর্ট গবেষকরা বা ক্রিটিকরা পারলে যে কোনও ছবি যেমন করে পরতে পরতে খুলে ন্যাংটো করে দেখতে চান , তেমনি দ্বিতীয় ছবিটির কাটাচেরা হয়েছে অনেক । ছবিটির এক্স-রে আর ইনফ্রারেড সমীক্ষায় দেখা গেছে ছবির নীচে স্তরে স্তরে রয়েছে গ্রাফাইটের আন্ডার-ড্রয়িং আর তেল রংয়ের ভারী আবরন । আর এ থেকেই ধারনা যে, সম্ভবত এটাই হলো সেজানের কার্ড প্লেয়ার সিরিজের প্রাথমিক ছাদটি যা থেকে অন্যগুলো আঁকা হয়েছে । যদিও ঐতিহাসিক ভাবে বিশ্বাস করা হয় এটাই দ্বিতীয় ছবি । আবার আন্ডার-ড্রয়িং থাকার কারন বিশ্লেষনে এটাও মনে করা হয় যে, সেজানকে বেশ খাটুনী খাটতে হয়েছে পরবর্তী ছবিতে মানুষগুলিকে সরাতে যা প্রথম ছবিটিতে একটি ক্যানভাসে আঁকা হয়েছিলো একত্রে ।

কেবল মাত্র “এ্যাবসোল্যিউট এসেনসিয়াল”- অর্থাৎ দু’জন কার্ড প্লেয়ারকে সামনে আনতে,দর্শক আর অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলোকে হটিয়ে শেষ পর্য্যন্ত সেজান যে পরবর্তী তিনটি ছবিতে স্থান সংক্রান্ত এই ধাঁধা কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন সে ধারনারও জন্ম হয়েছে এই আন্ডার-ড্রয়িং থেকে । ২৬৮ মিলিয়ন ডলার দামের ছবিটিতে তাই আপনি দেখতে পাবেন দু’জন কার্ড প্লেয়ারকে মাত্র । মাঝখানে না-খোলা মদের বোতল । মদের গ্লাস নেই টেবিলে , নেই টাকাও । নিমগ্ন তারা নিজেদের হাতে থাকা কার্ডের দিকে একাগ্র চিত্তে ।

যেন কার্ডগুলিই তাদের ধ্যান-জ্ঞান । প্রথমদিকের ছবিতে থাকা পর্দাটি আর তামাক পাইপগুলো উধাও, বদলে এসেছে সাধারন একটি দেয়ালের দৃশ্যপট । সেজান কি চেয়েছেন , দর্শকদের দৃষ্টি যেন কার্ড প্লেয়ারদের দিকেই শুধু নিবদ্ধ থাকে ! যেন শিল্পী নিজেই নিমগ্ন থেকেছেন এই ছবিটি আঁকতে, তা বোঝাতে ! নিঃসঙ্গ মদের বোতলটি দু’জনার ঠিক মাঝখানে রেখে কি বোঝাতে চেয়েছেন সেজান ! দু’জন প্রতিযোগীর মাঝখানের অতিক্রম্য দেয়াল ? নাকি ছবির ফ্রেমের সিমেট্রি বোঝাতে ছবির কেন্দ্র বিন্দু ? এই হলো “দ্য কার্ড প্লেয়ারস”ছবির বৃত্তান্ত । বিষয়বস্তু কিম্বা আঁকার ধরনে আলাদা, অসাধারন কিছু কি ? তবুও সব বাঘা বাঘা ছবিকে একশো হাত পেছনে ফেলে সবচেয়ে চড়া দামে বিক্রি হয়ে গেছে ছবিটি । ক্রেতা, তেল বেচা টাকায় বিশ্বের সেরা ধনী দেশগুলোর একটি ; ছোট্ট দেশ – কাতার এর রাজ পরিবার ।

বিক্রেতা , গ্রীক শিপিং ম্যাগনেট – জর্জ এম্বিরিকোস । বেশ কয়েক বছর ধরে ছবিটি বিক্রি নিয়ে এম্বিরিকোস পরিবারের দো-টানা আর দর কষাকষির পরে ২০১১ সালের এপ্রিলে বিজয়মাল্যটি ছিনিয়ে নেয় কাতারের রাজ পরিবার । আধুনিক ছবির বাজারকে কাৎ করে দিয়ে সর্বকালের অসম্ভব চড়া দামে পাঁচটি ছবির একটি কিনে কাতার যেন ছবির জগতের “এক্সক্লুসিভ ক্লাব” মেম্বার হয়ে উঠলো । ছবি সংগ্রাহকদের আঁতেল ঘরানায় নাম লেখালো যেন । বাকী চারটি রইলো পৃথিবী খ্যাত মিয়্যুজিয়মগুলোতে ।

একটি ছবির জন্যে ২৬৮ মিলিয়ন ডলার , তা ও আবার ভ্যান গ্যঁ’র ক্লাসিক ল্যান্ডস্কেপ কিম্বা ভারমীর এর আঁকা অনবদ্য কোনও পোর্টেট নয়; আপনার মাথা ঘুরিয়ে দেয়ার জন্যে যথেষ্ট । তবে এটা কিনে পোষ্ট ইম্প্রেসনিষ্ট একটি মাষ্টারপীস এর মালিক বনে যাওয়ার চেয়েও কাতারের অর্জন আরো বেশী কিছু । এর মধ্যে দিয়ে মাষ্টারপীস ছবির কালেকশান করেন এমোন সম্ভ্রান্তদের কাতারে সামিল হবার টিকিটটি কিনে ফেলা হ’ল তার । এবার তারা অন্য সুরে কথা বলতেই পারেন । এ কথা তো আপনি জানেনই, কাতারের সব কিছুই যে বড় বড় ।

কাতার যে ছবির জগতেও প্রথম আর বড় স্থানটি দখল করতে চাইবে এটাও স্বাভাবিক । আর তার চেষ্টাও সে করে যাচ্ছে গেল ক’বছর ধরে । ২০০৮ সালে গড়ে তুলেছে মিয়্যুজিয়ম অব ইসলামিক আর্ট । এর উদ্বোধনে ছিলো বিশাল নাটকীয়তা । অনুষ্ঠান স্থলে পৃথিবীখ্যাত মিয়্যুজিয়মগুলোর প্রতিনিধিদের আনা হয়েছে ভিনটেজ জাহাজে চড়িয়ে ।

২০১০ সালের মধ্যেই আবার গড়ে তুলেছে “এ্যারাব মিয়্যুজিয়ম অব মডার্ণ আর্ট” এবং “ কাতার ন্যাশনাল মিয়্যুজিয়ম” । সুপারষ্টার আর্কিটেক্ট জিন নওভেল এটিকে আবার নতুন সাজে সাজানোর কাজটি শেষ করবেন ২০১৪ সালের মধ্যেই । সম্ভবত এখানেই রাখা হবে এই ২৬৮ মিলিয়ন ডলারের ছবিটি । তাই সেরাদের সেরা হতে কাতার দু’হাতে কিনছে ছবির পর ছবি । রথকো, ওয়ারহলস, হির্স্ট, পিকাসো সহ নামীদামি শিল্পীদের ছবি কিনছে বিয়ের কনের শাড়ী কেনার মতো করে ।

মনে হচ্ছে যেন, মানি হ্যাজ নাথিং টু ডু উইথ আর্ট , জাষ্ট বাই টু বি এ্যাট দ্য টপ ! জাষ্টিফাইড ? নং ৫ , ১৯৪৮ / জ্যাকসন পোলক No. 5, 1948 / Jackson Pollock ছবির নাম না পেয়ে অবাক হবেন না ! এ ছবির কোনও নাম নেই । কেবল একটি সংখ্যা । প্রচলিত ধারার বাইরে । বাইরে অবশ্য আমার- আপনার ধারনারও । সাদা চোখে কোনও বিষয়বস্তু এখানে ধরা দেবেনা আপনাকে ।

এলোমেলো হাযারো রেখা টেনে জঞ্জালের মতো কিছু একটা । এরকম না বোঝা বিষয়বস্তুর পোষাকী নাম, বিমূর্ত অভিব্যক্তিবাদ (Abstract Expressionism ) ! এর দামটি শুনলে আপনার মুখের চেহারা যা হবে তাকেও বিমূর্ত অভিব্যক্তিবাদ বললে খুব একটা দোষের কিছু হবার কথা নয় ! বিডিং প্রাইস ১৪০ মিলিয়ন ডলার ধরা হলেও ছবিটির দাম উঠেছে ১৬১.৭ মিলিয়ন ডলার । বেশীদিনের কথা নয় , ১৯৪৮ সালে আমেরিকান শিল্পী জ্যাকসন পোলক এঁকেছেন ছবিটি । আঠারো-উনিশ শতক পেরিয়ে ততোদিনে ছবি আঁকার ষ্টাইলে এসেছে নতুন নতুন ভাবনারা । মূলস্রোতে এসেছে “ইনোভেটিভ আর্ট ষ্টাইল” ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক পরে পরেই যা গতিময় হয়েছে আরো । আমরা যাকে বলি “বিমূর্ত” । একটি ক্যানভাসের জমিনে নিজের অনুভূতি মিশিয়ে কি ফসল বোনা যায়, আর কি দিয়েই বা যায় শিল্পীরা তার কসরৎ করে চলেছেন সময়ের সাথে সাথে । আর ছবিপ্রেমীরা খুঁজছেন ছবির পেছনের ইতিহাস কিম্বা বিভিন্ন শিল্পীর আঁকার ষ্টাইল ও টেকনিক । ( আমার নিজের ও একটা ধারনার কথা আছে, কি করেই বা বিমূর্ত ছবি আঁকা যায় তা নিয়ে ।

সুযোগ হলে বলতে চেষ্টা করবো । হয়তো আপনার ধারনার সাথে মিলেও যেতে পারে ) আট বাই চার ফুটের একটি ফাইবার বোর্ডে আঁকা হয়েছে ছবিটি । জ্যাকসন পোলক এখানে ঢেলেছেন তরল রং । প্রচলিত আঁকার ধরনের বাইরে গিয়ে , মনের মাধুরী মিশিয়ে রং ঢেলে গেছেন ফাইবার বোর্ডটিকে মাটিতে শুইয়ে । জ্যাকসন পোলক অন এ্যাকশন .... বোর্ডের বেশীর ভাগটাতেই ফোঁটায় ফোঁটায় ছিটিয়েছেন হলুদ আর বাদামী রং ।

ছিটিয়েছেন বোর্ডের চারদিকে ঘুরে ঘুরে । খড়কুটো দিয়ে গড়া পাখির বাসাটির মতো মনে হবে ছবিটিকে । অথবা আপনারা ঢাকা শহরের রাস্তা আর অলিগলির টেলিফোন বা লাইটপোষ্টে কেবল নেট্ওয়র্ক প্রোভাইডারদের জগা খিচুরী পাঁকানো কেবলগুলো ঝুলতে দেখেছেন নিশ্চয়ই ! এটি তার চেয়েও জঘণ্য রকমের জটিল । ছবিতে এই জটিলতা আর এটি আঁকতে গিয়ে শিল্পীর গভীর অভিনিবেশ ছবিটিকে নিয়ে গেছে বিমূর্ত ছবির শীর্ষে । স্বতঃস্ফুর্ত রং ছেটানো , তাকে আবার প্রলেপ দেয়া এটাই পোলক এর নিজস্ব ষ্টাইল ।

যা তাকে এনে দিয়েছে বিমূর্ত ছবির জগতে আলাদা খ্যাতি । দুঃখের ব্যাপারটি হলো , সেই খ্যাতি নিয়ে বেশীদিন শিল্পী পৃথিবীর আলো দেখেন নি । মদ খেয়ে ফেলেছে তাকে । মদ্যপ হয়ে গাড়ী চালাতে গিয়ে সময়ের আগেই মাত্র ৪৪ বছর বয়েসেই ঝরে পড়েছেন তিনি । বেশী ছবি এঁকে যেতে পারেনি পোলক ।

মাত্র নয় বছর ছবি এঁকেছেন । অল্প যে ক’টি এঁকেছেন তাই-ই তাকে আমেরিকার শ্রেষ্ঠ শিল্পীদের আসনে বসিয়েছে । বসিয়েছে বিমূর্ত অভিব্যক্তিবাদ নিয়ে আঁকা ছবির রাজার আসনে । যাবার আগে ছবি আঁকা সম্পর্কে নিজের ধারনার কথা বলে গেছেন জ্যাকসন পোলক । বলেছেন – “আমার অবচেতন আমার ছবি আঁকার প্রেরনা ।

আমি যখোন ছবি আঁকি, আমি মোটেও সচেতন থাকিনে, কি আঁকছি আমি তা নিয়ে । আঁকতে আঁকতে জিনিসটি পরিচিত হয়ে গেলে পরে মনে হয় , আসলেই কি করছি আমি !” তাই আপনি তার ছবিতে মূল কোনও বিষয় দেখতে পাবেন না । এ ছবিতে কেন্দ্র নেই, কোনও ফোকাস নেই, নেই কোনও ফিগার ও । আর একারনেই মনে হয় শিল্পী তার ছবির কোন্ও নাম দেননি । দিয়েছেন শুধু নাম্বার ।

ইজেল আর প্যালেট এর বদলে লাঠি বা কঞ্চি, কর্ণিক আর ‍ছুরি এইগুলোই তার আঁকার হাতিয়ার । তার এইসব হাতুড়ী দিয়ে ছবি আঁকার ষ্টাইল আর টেকনিক একই সাথে কিউবিজম, স্যারীআ্যালিজম আর ইম্প্রেশনিজমে মিলেমিশে ছাপিয়ে গেছে সবগুলো । আর্ট ক্রিটিক হ্যারল্ড রোজেনবার্গ পোলক এর আঁকার এই ধরনটাকে ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে – “ শিল্পীর এটা একটা এ্যাকশন পেইন্টিং । আঁকতে গিয়ে হঠাৎ করেই তার মনে হয়েছে এটা যেন একটা মল্লভূমি যেখানে এখোন তাকে লড়তে হবে । তাই ভুলে যান যে, এটা একটা ক্যানভাস যেখানে তাকে জন্ম দিতে হবে, ফুটিয়ে তুলতে হবে একটি বস্তু, হোক না তা বাস্তবিক কিমবা কল্পনার ।

পোলক এর আঁকার এই ধরনটা, ছবি যে কম বেশী একটি ফিনিসড প্রোডাক্ট সে ধারনাকে বাতিল করেছে । যেন বলতে চাইছে শিল্পের খাতিরেই শিল্প আর তাতে শিল্পীর অনুভব । তার এই বিমূর্ত ধরনটাই জন্ম দিয়েছে “বিমূর্ত অভিব্যক্তিবাদ ” এর । ” বিমূর্ত এই অভিব্যক্তিবাদকে ব্যাখ্যা করা বেশ ঝামেলাই বটে । ছবিটির সাম্প্রতিক কালের বিশ্লেষণ বলছে , ছবিটি আসলে বিশৃংখল মোটেও নয় ।

মূলতঃ এখানে রয়েছে ম্যাথেমেটিক্যাল প্যাটার্ণস । অনেকটা খন্ড খন্ড কিছু আকৃতি, যা স্তরে স্তরে একটি অন্যটির বর্ধিত ( ম্যাগনিফিকেশান) রূপ । আর আমার-আপনার মতো সাধারন মানুষ দেখবেন অন্য কিছু । অনুভব করবেন অন্য ধরনের একটি আবেগ , যা ছবিটির এলোমেলো লাইনগুলোতে খুঁজে বেড়াবে কিছু আকার – আকৃতির, হঠাৎ কিছু মুখ আবিষ্কারের আনন্দ । আমরা যেমন মেঘের আদলের ভেতর হঠাৎ হঠাৎ কিছু আকৃতি খুঁজে পাই তেমনি ।

আপনি যা ভাবছেন ছবিটি দেখে, তেমনটি কিন্তু ভাবছেনা আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ (CIA)। তাদের উর্ব্বর মস্তিষ্ক খুঁজে পেয়েছে অন্য কিছু । ঠান্ডা যুদ্ধের (Cold War) সময়কালটিতে ১৯৪৮ সালে ছবিটি প্রদর্শিত হলে তারা ধরে নিলেন , শিল্পী নিশ্চয়ই কিছু গোপন সংকেত লিখে রেখেছেন ছবির বিশৃংখল রেখাগুলোর ভেতর , সাংকেতিক কিছু । আমেরিকান কগ্রেস সদস্য জর্জ ডনডেরো আবার অভিযোগ তুলে বসলেন, “পোলক যে ছবিগুলো আঁকছেন তা গুপ্তচরবৃত্তির উদ্দেশ্যে । আর আপনি যদি জানেন এটা কি ভাবে পড়তে হয় তবে শত্রুদের কাছে আমেরিকার দূর্গ ব্যবস্থার দূর্বল দিকগুলো প্রকাশ হয়ে পড়বে অচিরেই।

” বুঝুন ঠ্যালা ! তবে রেখার এই বিশৃংখলতা থেকে সিআইএ যা শিখেছে তা হলো ঠান্ডা যুদ্ধকালীন সময়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করার বক্রতা । ধারনা করা হয় , ঠান্ডা যুদ্ধের একটি কৌশল হিসেবে এই জাতীয় Abstract Expressionist ছবি আঁকায় উৎসাহ দিতে সিআইএ গোপনে গোপনে টাকা ঢেলেছে যাতে শত্রুপক্ষ বিভ্রান্ত হয় । ২০০৬ সালের নভেম্বরে নং-৫ ছবিটি কিনে নেন ডেভিড মার্টিনেজ । ছবি নিলামঘর সোথবী’র মাধ্যমে এটা একটি ব্যক্তিগত বিক্রয় । বিক্রেতা ডেভিড গ্রিফিন, ১৬১.৭ মিলিয়ন ডলারে বেচে দিয়েছেন ছবিটি ।

অথচ ১৯৪৮ সালে জ্যাকসন পোলক নিজেই নিউইয়র্কের পারসন গ্যালারীর মাধ্যমে ছবিটি বিক্রি করে দেন মাত্র ১৫০০ ডলারে যা ছবি বিক্রিতে ইতিহাস সৃষ্টিকারী ২০০৬ সালে দাঁড়াতো মাত্র ১২৬১৫ ডলার । কোনক্রমেই তা লাখ বা মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবার কথা নয় । তাহলে কি এমোন সে কারন যা ছবিটিকে তুলে দিয়েছে মাল্টিমিলিয়ন ডলারে ? শিল্পবোদ্ধারা বলছেন, জ্যাকসন পোলক আমেরিকার শ্রেষ্ঠ একজন শিল্পী , ছবির জগতে আইকন । তার ছবি হাতে গোনা । তার উপর ছবিটি বিমূর্ত অভিব্যক্তিবাদের পথিকৃত ।

আর শিল্পীও মৃত । তাই ছবিটি দুষ্প্রাপ্যতার ছাপ গায়ে মাখবে তো বটেই । তাই এমোন একটি মাইলষ্টোন ছবির মালিক হতে চাইবেন অনেকে সৌখিন ধনবানরাই । দূর্জনেরা কিন্তু বলছেন অন্য কথা । শিল্পী মৃত ।

তার হাত থেকে আর এরকম ছবি বেরুবেনা । তাই এর দাম দিনদিন চড়তেই থাকবে । ছবিকে যারা প্রফিটেবল বিজনেস বলে জানেন তারা তো হুমড়ি খেয়ে পড়বেনই ! ১৫০০ ডলারের ছবি যদি ৫০ বছরের মাথায় মাল্টিমিলিয়ন ডলার আপনার পকেটে এনে দেয়, তবে কে বলতে পারে আগামী ৫০ বছর পরে তা বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকবেনা ? চমকে উঠবেন না বা এরকম একটি ছবির মালিক হতে পারলেন না বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলবেন না । একখানা বোর্ড কিনে এখুনি মাটিতে ফেলুন । কয়েক ডাব্বা যেনতেন অয়েল পেইন্ট কিনে আনুন হার্ডওয়্যারের দোকান থেকে ।

তারপর নারকেল পাতার শলার ঝাড়ুখানা আপনার পিচ্চির হাতে ধরিয়ে দিন । বলবেন, বৎস ইচ্ছেমতো রং ছিটাও আর ঢালো । ব্যস, হয়ে গেলো বিমূর্ত একখানা ছবি । আর আরো উচ্চমার্গের বিমূর্ত ছবি পেতে হলে আমার ধারনা মতো কাজ করুন । রাস্তার পাশের নর্দমা থেকে একতাল ময়লা তুলে আনুন ।

এর সাথে আঠা মেশান । ক্যানভাসে পুরু করে লেপ্টে দিন বা ঢেলে দিন আপনি যেমনটি আকৃতি দিতে চান তেমন করে । এবড়ো থেবড়ো আর উঁচু নীচু হয়ে থাকে যেন । এবার রোদে শুকোতে দিন । শুকিয়ে গেলে ময়লা আরো ধূসর বা কালো হবে ।

গ্রানাইটের মতো । বাজারে যতো রকমের পেইণ্ট আছে তা কিনে আনুন । এবার উঁচু নীচু ফাঁক গুলোতে ইচ্ছে মতো এখানে সেখানে উজ্জল রং ঢেলে ক্যানভাসটিকে কাত করে ধরুন । রং নিজের ইচ্ছে মতো গড়িয়ে যেতে থাকবে । আপনার যেটুকু আর্টিষ্টিক সেন্স আছে তা খাটিয়ে যখন থামার থামুন ।

কিছু কিছু জায়গায় ভার্ণিশ ঢেলে দিন । ব্যাস.................. এবার শুধু সোথবী বা ক্রিষ্টি’জ এর নিলাম ঘরে ছবিটি পৌছে দিতে পারলেই কেল্লা ফতে । মাল্টিমিলিয়ন ডলারের ট্যাগ ছবিটার গায়ে উঠতে কতোক্ষন ? কিছু না হোক , নিদেন পক্ষে ওয়ান মিলিয়ন হলেই বা ক্ষতি কি ? [লেখাটি তিনটি পর্বের প্রথম পর্ব । প্রতিটি পর্বই স্বয়ং সম্পূর্ণ । অনুগ্রহ পূর্বক বাকী পর্ব গুলির অপেক্ষায় থাকুন ।

] ছবি ও তথ্য ইন্টারনেট থেকে ।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।