হ্যা আমি যে রিজভির কথা বলছি তিনি হলেন বিএনপির রুহুল কবির রিজভি যিনি নয়াপল্টনের বিএনপি কেন্দ্রিয় কার্যালয়কে নিজের বাসভবন বানিয়ে নিয়েছেন। যার প্রধান কাজ হল প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা সাংবাদিকদের ব্রিফ করা। এবং কেউ যদি তার কথা শুনে থাকেন তাহলে দেখবেন তার প্রতিটা কথাই হয় এরকম-
সরকারের দুঃশাসনে অতিষ্ট জনগণ রাস্তা নেমে এসেছে (শুধু তিনি ছাড়া,তিনি কেন্দ্রিয় কার্যালয় ছেড়ে বেরই হতে চাননা) আর সরকারের বিরূদ্ধে গনঅভ্যুত্থান শুরু হয়ে গেছে কিন্তু বাকশালি সরকার পুলিশ দিয়ে সেই অভ্যুত্থানকে দমন করে চলেছে।
আসলে কি তাই?সেটা তো আপনিই দেখছেন।
বিএনপি এখানে যে চাল টা চেলেছিল সেটার অনুপ্রেরণা তারা পেয়েছে আওয়ামি লীগের 'লগি-বৈঠা' আন্দোলন থেকে!
কিভাবে?বলছি।
লগি বৈঠার কথা যাদের মনে আছে তারা নিশ্চই জানেন সেসময় রাজপথে কয়েকদিন ব্যাপি সংঘর্ষ চলছিল দুপক্ষের মধ্যে। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে জারি করা হয় 'জরুরি অবস্থা'। বিএনপির (জামাত বলাই ভাল) ধারণা ছিল যদি এরকম হরতাল দিয়ে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধানো যায় তাহলে আবার জরুরি অবস্থার মত পরিস্থিত তৈরি হবে। সেনাবাহিনী আসবে,পরের পরিস্থতি পরে সামাল দেয়া যাবে। তাদের কর্মকান্ড দেখলে এটাই প্রতীয়মান হয়।
কিন্তু আসলে তা হয়নি।
গতবার লীগ যখন ইয়াজুদ্দিন তত্ত্বাবধায়ক বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছিল তখন লীগের প্রতিটা নেতা কর্মী মাঠে ছিল। একটা ব্যাপক জনসমর্থনও ছিল সাধারন মানুষের। কিন্তু আপনারাই দেখুন বিএনপির এসব হরতালে সাধারন মানুষের অংশ গ্রহণ দূরে থাক তাদের নিজেদের নেতা-কর্মীরাই মাঠে নেই। ৫-৬ জনের "বিশাল" মিছিল বের করে সেখান থেকে ১-২ টা ককটেল ফাটিয়ে তারা হাওয়া।
রাজপথে শক্ত আন্দোলন গড়ে তোলার পরিবর্তে বাসে আগুন দিয়ে,নীরিহ মানুষ মেরে সন্ত্রাসি কর্মকান্ড করেই তারা তাদের উদ্দেশ্য পূরণ করতে চাচ্ছে।
আমরা যারা লীগের পক্ষে অনলাইন-অফলাইনে প্রচারণা চালাই তারা জানি বেশ কয়েকমাস আগেও লীগের ভাবমূর্তি সাধারণ মানুষের কাছে বেশ খারাপ ছিল নানা রকম অপপ্রচারের কারণে। কিন্তু এই অবস্থার এখন অনেক পরিবর্তন হয়েছে। নানা রকম প্রচার প্রচারণা,সত্য তুলে ধরা আর অপপ্রচার খন্ডানোর ফলে লীগের জনপ্রিয়তা ও গ্রহনযোগ্যতা আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে। পক্ষান্তরে বিএনপির ক্রমাগত ধ্বংসাত্মক কর্মসূচিতে সাধারন মানুষের মৃত্যুর ফলে তাদের প্রতি মানুষ বিরক্ত হচ্ছে।
রিজভি সাহেব কার্যালয়ে বসে বসে যেরকম 'গণঅভ্যুত্থান'এর স্বপ্ন দেখছেন সেই গনঅভ্যুত্থানতো হচ্ছেইনা বরং তাদের 'কর্মী অভ্যুত্থান'ও হচ্ছেনা।
বিশাল গণ-অভ্যুত্থান
সাধারন মানুষের তাদের উপর যে কিছুটা সহানুভূতি জন্মেছিল সেটাও দূর হয়ে গেছে হরতালের নৃশংসতায়।
ধর্ম রক্ষার অভ্যুত্থান!
তাহলে দেখা যাচ্ছে সত্যিকারের আন্দোলনের বদলে নাশকতা সৃষ্টিই প্রধান উদ্দেশ্য। তবে আমরা যা দেখছি তার থেকেও বড় ধরনের নাশকতা ঘটতে পারত,ঘটেনি শুধু মাত্র আমাদের গোয়েন্দা বাহিনী ও পুলিশের সতর্ক অবস্থানের কারণে। গত কয়েকদিনে সারা দেশ থেকে প্রায় ১০০০ এর উপরে তাজা বোমা উদ্ধার করা হয়েছে যার মধ্যে গতকাল রাজধানীর আজিমপুরে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বোমার মজুদ ধরা পরে।
সর্বমোট ২৫০ টি তাজা বোমা এবং আরও প্রায় ৫০০ বোমা তৈরির কেমিকেল উদ্ধার করে র্যাব পুলিশের যৌথ বাহিনী। তার আগে শিবিরের একটা মেস থেকে বিপুল বোমা উদ্ধার করা হয়।
যদি এসব বোমা উদ্ধার না হত তাহলে এই ১০০০ এর মত বোমা কম হলেও ৫০০ জায়গায় ব্যবহার হত,সেই ৫০০ বোমা হামলায় অন্তত আরো ১০০ মানুষ হতাহত হত!ব্যাপারটা কি ভাবতে পারছেন?কল্পনা করতে পারছেন?ঐ ১০০ জনের মধ্যে থাকতে পারতাম আমি,আপনি অথবা আমাদের কোন আপনজন। গোয়েন্দা বাহিনীর তৎপরতার ফলে এই হামলা থেকে আমরা বেঁচে গেছি।
তার মানে দাড়াচ্ছে নাশকতা দিয়ে অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরির চেষ্টাও পুরোপুরি সফল হচ্ছেনা আইন শৃংক্ষলা ব্যবস্থার উন্নতির কারণে।
আইন শৃংক্ষলা রক্ষাকারি বাহিনীর তৎপরতার ফলে।
যার ফলে তাদের সেই কাংক্ষিত অভ্যুত্থান ঘটছেনা।
অপরদিকে শেখ হাসিনা প্রতিদিন গ্রামে গঞ্জে সভা সমাবেশ করছেন,যেখানে যাচ্ছেন সেখানে নানা রকম উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করছেন। আমাদের একটা দাবি ছিল যেন গ্রাম গুলোতে জনসংযোগ করা হয় কারণ সেখানে অপপ্রচার বেশি ছড়ানো হচ্ছে আর মানুষ সেগুলো বিশ্বাসও করছে কারণ তারা ফটোশপ বোঝেনা। সেই কাজটিই করছেন স্বয়ং শেখ হাসিনা।
এরফলে গ্রাম-গঞ্জের মানুষের কাছে তাঁর এবং সেই সাথে আওয়ামি লীগের আস্থা ফিরে আসছে।
আওয়ামি লীগ এর মধ্যে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে। নির্বাচনে জিতে আসার জন্যে সঠিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেয়ার বিকল্প নেই,বিতর্কিতদের বাদ দেয়াই সমিচীন হবে। আওয়ামি লীগের সব জনপ্রতিনিধি সফল সেটা বলার কোন অবকাশ নেই। যেমন আমার গ্রামের বাড়িতে,পিরোজপুর-৩ আসনের যে জনপ্রতিনিধি ছিল সে সরকারের সকল উন্নয়ন প্রকল্প থেকে টাকা খেয়েছে,শুধু যে খেয়েছে তা না রাখডাক না রেখে খেয়েছে এবং সেজন্য তার বদহজমও হয়েছে!সরকার কিন্তু উন্নয়নের জন্য ঠিকই টাকা দিত কিন্তু ঐ ব্যক্তিটির জন্য সেটা জনগণের কাছে পৌছাতো না,দোষ হত সরকারের!তবে এবার যে তিনি মনোনয়ন পাবেন না সেটা তিনি নিজেও জানেন।
সরকার যদি এভাবে আইন শৃংক্ষলা রক্ষা করে চলতে পারে আর বিএনপি যদি তাদের এই ভ্রান্ত অবস্থান থেকে ফিরে না আসে তাহলে আওয়ামি লীগের জনপ্রিয়তা ঊর্ধমুখি আর বিএনপির নিম্নমুখিই হবে। তবে একটা বিষয় মাথায় থাকা দরকার।
বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ না নেয় তাহলে যত স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনই হোক সেটা গ্রহণযোগ্য হবেনা। সেই সরকারও বেশিদিন টিকতে পারবেনা। এটা এখন পর্যন্ত বিএনপির প্লাস পয়েন্ট কারণ বিএনপি এটা জানে।
তবে হ্যা,আওয়ামি লীগ দেশের সব থেকে পুরানো রাজনৈতিক দল হিসবে সব থেকে অভিজ্ঞ দল। তারা যা করবে,যে রাজনৈতিক চাল চালবে তা বুঝে শুনেই চালবে। দেখাই যাক না কি হয়!
তবে এই দেখাদেখির খেলায় সাধারন মানুষ গুলোকে যেন মরতে না হয়। বিএনপি এত বড় একটা দল অথচ তারা রাজপথে সত্যিকারের আন্দোলন করতে পারছেনা?সন্ত্রাসের পথ বেছে নিতে হচ্ছে?আরেকটা জিনিস হয়তো লক্ষ করেছেন এই হরতালে তুলনামূলক ভাবে শিবিরের উপস্থিতি কম দেখা যাচ্ছে। এটা ভাবার কোন কারণ নেই তারা ভয় পেয়ে গেছে,তারা নতুন কোন ফন্দি আটছে।
আমাদের গোয়েন্দা বাহিনীও নিশ্চই সমভাবেই সজাগ না হলে এত বোমা তারা ধরতে পারতনা।
দেশের জন্য যেটা ভাল হবে সেটাই আমাদের চাওয়া। শেষ করব একটা সুখবরের কথা বলে। ২০০৮ এর নির্বাচনে আওয়ামি লীগের ইশতেহারে বিদ্যুৎ উদপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭০০০ মেগাওয়াট। আজ ১২ নভেম্বর দেশ পালন করবে ১০,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উদপাদনের রেকর্ড করার আনন্দ!
দুটোই রেকর্ড।
একটা ঘাটতির,একটা প্রাপ্তির!
দেশটা আপনার,সিদ্ধান্তও আপনার...
জয় বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।