...
বিভিন্ন সময় আমরা যখন একসাথে হই তখন অনেক মজার গল্প শেয়ার করি। ভাষা বিভ্রাটেই মূলতঃ মজার কান্ডগুলো ঘটে থাকে। এর আগে একটি পর্ব লিখেছিলাম। আজ আরো কিছু নিয়ে হাজির হলাম।
১/ আমি যখন এখানে চাকরিতে নতুন জয়েন করি, তখন আমার ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা।
কোন কিছুই ঠিকমতো হয় না। সৌদিরা সবাই আরবি বলে। কিছু বুঝি না, বোঝাতেও পারি না। যাই হোক কাজের প্রয়োজনে কিছু কিছু আরবি শব্দ শিখলাম। স্ট্যাপলার মেশিনকে ওরা বলে “ডাব্বাসা”।
একদিন আমার স্ট্যাপলার মেশিনটা খুঁজে পাচ্ছিলাম না তাই নতুন আরেকটা আনতে গেলাম। বললাম, “একটা ‘বাম্বুসা’ দাওতো”। অফিস সহকারি অবাক চোখে তাকিয়ে থাকল, কিছুতেই বোঝাতে পারিনা। তারপর তার টেবিলে রাখা মেশিনটা দেখিয়ে নতুন একটা নিয়ে আসলাম। আমার বাংলাদেশি কলিগদের যখন এ ঘটনা বললাম- তারা হাসতে হাসতে শেষ।
২/ এরা রেস্টুরেন্টে সমুচা বিক্রি করে। ভেতরে পুদিনা পাতা আর বিফ অথবা মাটন কিমা দেয়। খেতে বেশ লাগে। আরবিতে কি বলে জানেন? “সাম্বুসা”।
৩/ সাউথ আফ্রিকান টিচারের এক ছাত্র প্রায়ই ক্লাসে ফাঁকি দেয়।
জিজ্ঞাসা করলেই বলে – মাথা ব্যাথা ছিল। সাউথ আফ্রিকান সাহেব এই ছেলের উপর মোটামুটি বিরক্ত। আরেকদিন ছেলেটি একই কারন দেখালে উনি রাগে ফেটে পড়েন, “আজ Headache, কাল Legache, পরশু Assache, সমস্যা কি তোমার?”
৪/ আদিল ভাই ক্লাসে এক ছেলেকে ক্লাসে জিজ্ঞাসা করলেন, “ What’s your hobby?”
- “Eating Khebsa” ছেলেটির তড়িৎ উত্তর।
(খেবসা এখানে বিরিয়ানি বিশেষ একটি খাবার এবং অনেক জনপ্রিয়। এ ধরনের খাবারের করনে এখানে শাররীক স্থুলতা একটি সাধারণ ব্যাপার।
)
৫/ তখন আদিল ভাই ও আমি ড্রাইভিং স্কুলে ভর্তি হয়েছি। ড্রাইভিং স্কুলে যাওয়াটা ছিল বিরাট এক বিরক্তিকর কাজ। বিকাল হওয়া মানেই আতংক। ১৫ কি.মি দূরের ড্রাইভিং স্কুলে যাবার জন্য এক বাংলাদেশি ভাড়া করলাম। কিন্তু সে ৫ দিন পর থেকে আর আসল না।
তারপর আমরা সৌদি গাড়িতে যেতাম। রাস্তায় দাঁড়ালেই সৌদি গাড়ি থামত, তাকে ভুলভাল আরবিতে বোঝাতে হত, দর কষাকষি করতে হত। এতো হ্যাপা কার ভালো লাগে? একদিন আদিল ভাই দুঃখে, কষ্টে, বিরস বদনে বলেই ফেললেন, “আহ! যদি আমার গাড়ী থাকত, তাহলে সেটা চালিয়ে ড্রাইভিং স্কুলে যেতাম। ”
কত বড় রিয়েল টাইম Paradox !
৬/ এখানকার ইংলিশ ডিপার্টমেন্ট থেকে একটি টিম বাংলাদেশে রিক্রুটমেন্ট ইন্টারভিউয়ের জন্য গেছে। ওসামা খালিদ গেল ইন্টারভিউ দিতে।
ভাইস ডিন বললেন, “তোমার নাম খালিদ, আমার নাম খালিদ, আর যাচ্ছ কিং খালিদ ইউনিভার্সিটিতে। তোমার তো চাকরি হবেই। ” ওসামা খালিদের চাকরি হয়েছে এবং ভালোই আছে।
৭/ ওসামা। দ্য বিগ ম্যান।
যেন ইনজামামুল হক। ওর পাশে দাঁড়ালে আমাকেও লিলিপুটিয়ান লাগে। সম্প্রতি সে বাবা হয়েছে। আমি প্রায়ই ইমাজিন করতাম, বাচ্চা কোলে তাকে কেমন দেখাবে। একরাতে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে সে আদিল ভাইয়ের বাসায় আসল।
আমরা সবাই আড্ডা দিচ্ছিলাম। সে এক দেখার মতো দৃশ্য, এই ছবি বাধাঁই করে রাখার মতো।
৮/ ওসামা চাকরিতে জয়েন করার পরপরই বিপুল বিক্রমে আরবি শিখতে লাগল। একদিন তার গাড়ীতে দেখলাম আরবি শেখার বই, জ্যামে পড়লে মাঝে মাঝে দেখে। ওকে ফোন করলেও বিপদ।
ফোন ধরেই কি সব আরবি গড়গড় করে বলে। সে তার এই আরবি সৌদিদের উপর প্র্যাক্টিস করত। অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম সে সাবলিল ভাবে আরবি বলেই যাচ্ছে। পরে আসল কাহিনী ধরা পড়ল। সে আসলে আরবি, বাংলা, হিন্দি, উর্দু’র মিশ্রনে কথা বলছে।
তার কথা হচ্ছে আমি থামব না, বলেই যাব। সৌদিরাও যারা তার কথা শোনে, এমন ভাব ধরে যেন সবকথাই বুঝতেছে।
৯/ হাবিব স্যার ও শাহরিয়ার ভাই আবহা’র প্রাণ কেন্দ্রে থাকেন। যাকে আরবিতে “বালাদ” বা সিটি সেন্টার বলা হয়। ওনাদেরকে প্রায়ই সৌদি গাড়িতে ভার্সিটিতে আসা যাওয়া করতে হত।
হাবিব স্যার হাসি তামাশা ভালোই করেন। একদিন ড্রাইভার জিজ্ঞাসা করল, “কোথায় যাবেন?” হাবিব স্যার হেসে বললেন, “আনা বলদ” (আমি বলদ)। ড্রাইভার সেটাকে “বালাদ” বা সিটি সেন্টার ধরে নিল। শাহরিয়ার ভাই সাথেই ছিলেন। ড্রাইভার একই কথা তাকে জিজ্ঞাসা করল।
শাহরিয়ার ভাই কম কিসে? স্যার যদি বলদ হতে পারে, উনি তাহলে গাভী। শাহরিয়ার ভাই মজা করে বললেন, “আনা গাভী”।
ড্রাইভার অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল- এমন জায়গার নামতো সে শোনেনি।
১০/ ওসামা যেমন বিগম্যান, তেমনি কয়েকজন মেয়ে নতুন জয়েন করেছে যারা খুবই ক্ষীনাকৃতি। সূধা ও শিমু তেমনই।
মনে হয় যেন ক্লাস এইট এ পড়ছে। তারা যখন ডিপার্টমেন্টে রিপোর্ট করতে গেল, কোর্ডিনেটরের চোখ কপালে। বারবার জিজ্ঞাসা করল, “তোমরা মাস্টার্স কমপ্লিট করেছ তো?” যদিও এমন ভাবার কোন কারন ছিল না, কিন্তু কোর্ডিনেটর বিশ্বাস করতে পারছিল না।
স্টুডেন্টরা পর্যন্ত তাদের Tiny Tiny Teachers বলত।
(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।