শপথ নেওয়ার ২৪ ঘণ্টা আগেও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ দলের জ্যেষ্ঠ প্রেসিডিয়াম সদস্যের কাছে ‘সর্বদলীয় সরকারে’ যোগ দেওয়ার বিষয়টি চেপে গেছেন। এ নিয়ে জাতীয় পার্টির বিএনপিপন্থী অংশটির সঙ্গে এরশাদের দূরত্বও সৃষ্টি হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সকালে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ মহানগর পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা প্রথম আলো ডটকমকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, মামলার ভয়, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের চাপ, বিএনপির প্রতিশ্রুতি না রাখা—এসব কারণেই ‘সর্বদলীয় সরকারে’ যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এরশাদ।
জাতীয় পার্টির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, মহাজোট ছাড়ার ব্যাপারে জাতীয় পার্টির একটি বড় অংশের চাপ ছিল এরশাদের ওপর।
কয়েকটি বন্ধু রাষ্ট্রের পরামর্শও ছিল। সে কারণে তিনি কাজী জাফর আহমেদকে বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। বছর খানেক আগে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে এরশাদের কথাও হয়েছিল। এরশাদ জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে মৌখিক সম্মতি দিয়েছিলেন, দাবি ছিল ৭০টি আসনের। খালেদা জিয়া তাঁকে আসনসংখ্যা নিয়ে চিন্তা করতে না বলেছিলেন।
প্রেসিডিয়ামের ওই সদস্য বলেন, প্রথম দিকে জাতীয় পার্টির চিন্তা ছিল মহাজোট থেকে বেরিয়ে আসা এবং হয় বিএনপির সঙ্গে জোট বাঁধা, নয়তো তৃতীয় একটি ফ্রন্ট গঠন। দুদিকেই কথাবার্তা এগোচ্ছিল। মাস খানেক আগে কাজী জাফর আহমেদ দলের চেয়ারম্যানকে বলেন, বিএনপির সঙ্গে কথা হয়েছে। বিএনপি জাতীয় পার্টিকে ৫০টি আসন দেবে। চেষ্টা করলে আরও পাঁচটি আসন হয়তো পাওয়া যাবে।
এর মধ্যে গত পরশু দিন চট্টগ্রামে হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফীর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার আগে এরশাদকে জানানো হয় বিএনপি জাতীয় পার্টিকে ৩০টি আসন দেবে।
এ ছাড়া এরশাদকে প্রেসিডেন্ট করবে ও সংসদে চারটি সংরক্ষিত মহিলা আসন দেবে। ক্রমশ কমতে থাকা আসনসংখ্যা দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এরশাদ। এর মধ্যে বিএনপির তিন নেতাকে গ্রেপ্তার ও কাজী জাফর আহমেদ অসুস্থ হওয়ায় বিএনপির সঙ্গে জাতীয় পার্টির যোগাযোগ একটু শিথিল হয়ে পড়ে। এ ছাড়া ১৫ নভেম্বর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী টাঙ্গাইলের সখীপুরে সমাবেশ করেন।
কাজী জাফর আহমেদ ওই সমাবেশে উপস্থিত হন এরশাদকে না জানিয়েই। ওই সমাবেশে কাদের সিদ্দিকী এরশাদের সমালোচনা করেন। এ ঘটনাগুলোকে কাজে লাগায় জাতীয় পার্টির মধ্যকার আওয়ামী লীগপন্থী অংশ। শেষ পর্যন্ত তাঁরাই সফলতার মুখ দেখেন।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বর্ষীয়ান নেতা কাজী জাফর আহমেদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়।
তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘আপনারা যেসব কথা জানতে চাইছেন, সময় হলেই তা জানানো হবে। এ মুহূর্তে কাজী জাফর আহমেদ কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে নেই। ’
জাতীয় পার্টির অপর একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, দলের চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া যা-ই থাকুক না কেন, তাঁর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তিনি আরও বলেন, ‘এরশাদ সাহেব যখন মহাজোট ছেড়ে সর্বদলীয় সরকারে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেন, তখনই ৪৩ জন প্রেসিডিয়াম সদস্যের মধ্যে মাত্র পাঁচজন উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের চারজনই আবার সংবাদ সম্মেলনের কিছুক্ষণ পর শপথ নিতে বঙ্গভবনে গেছেন।
’
এদিকে এরশাদের নয় বছরের শাসনামলে মন্ত্রিত্ব পাননি, দলেরও প্রভাবশালী কোনো পদে ছিলেন না এমন একজন নেতা বলেন, দলের মধ্যে সর্বদলীয় সরকারে যাওয়া নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা আছে। তিনি বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম, স্যার এমন একটা সিদ্ধান্ত নিন, যাতে করে দলটি তাঁর মৃত্যুর পরও টিকে থাকে। আমরা তাঁকে অন্তত এক বছর আগে মহাজোট ছেড়ে দল গঠনের কাজে মন দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম।
এরশাদ তাঁর নয় বছরের শাসনামলে ১২৪ জনকে মন্ত্রী করেছেন। তাঁদের মধ্যে ১০৯ বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন, ছয়জন আওয়ামী লীগে।
জাতীয় পার্টিতে আছেন মাত্র নয়জন। মূলত এই মন্ত্রীরাই ছিলেন নিন্দিত। এ পর্যায়ে নতুনভাবে শুরু করার সুযোগ ছিল। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচনে এককভাবে অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টি একটা শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারত। ’
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।