আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বানসালির রাম-লীলা

শেষ পর্যন্ত ছবির নামটাই পাল্টাতে বাধ্য হলেন পরিচালক সঞ্জয় লীলা বানসালি। অথচ রামলীলা নাকি ছিল তাঁর স্বপ্নের ছবি। প্রথম ছবি খামোশি ফ্লপ হওয়ার পরপরই রামলীলার গল্প মনে এঁকেছিলেন বানসালি। কিন্তু এর মধ্যে পাঁচ-পাঁচটি ছবি নির্মাণ করলেও কল্পনাতেই বন্দী ছিল রামলীলা। অবশেষে সেটাও হলো, বানসালির সেলুলয়েডের ফিতায় ধরাও পড়ল রামলীলা, কিন্তু মুক্তির আগেই আবার বিতর্ক।

ছবির ওই নামটিতেই আপত্তি কয়েকটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর। রামায়ণ মহাকাব্যের কেন্দ্রীয় চরিত্র শ্রীরাম আর রামলীলা হলো সেই মহাকাব্যেরই মঞ্চাভিনয়। রামের কাহিনি ভারতে এতটাই জনপ্রিয় যে ভারতীয় সংস্কৃতির মূল ধারায় ধর্মবর্ণভাষা-নির্বিশেষে রামলীলার বিচরণ। তাই নামটি শুনে মানুষ এমন প্রত্যাশা থেকে ছবিটি দেখবে যে এটা রামের জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত। কিন্তু শ্রীরাম বন্দনা রামলীলার সঙ্গে আসলেই যেকোনো সম্পর্ক নেই এই ছবির।

এটাই আঘাত হেনেছে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে। শেষমেশ তাই রামলীলা বদলে ছবির নাম হয়ে গেল গুলিয়োঁ কি রাসলীলা রাম-লীলা। লক্ষ করে দেখুন রাম ও লীলার মাঝখানে একটা হাইফেনও ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই গল্প এক জোড়া তরুণ-তরুণী রাম আর লীলার বাঁধভাঙা উদ্দাম প্রেমের কাহিনি।
নাম নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠলেও বক্স অফিস হতাশ করেনি বানসালিকে।

পুরো সপ্তাহ যে রাম-লীলাময় হয়ে থাকবে তার আভাস মিলেছে প্রথম দিনের রেকর্ডেই। যদিও কৃষ থ্রি জ্বর একটু লেগেই ছিল তবুও রাম-লীলা দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন দর্শকেরা। শুক্রবার শচীন টেন্ডুলকারের খেলা থাকার কারণে সারা দিন দর্শকেরা থিয়েটারমুখী না হলেও সন্ধ্যার শোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। দিল্লি, মুম্বাই, উত্তর প্রদেশের থিয়েটারগুলোতে ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ সিট দখলে ছিল গুলিয়োঁ কি রাসলীলা রাম-লীলার দর্শকদের। গত শুক্রবার মুক্তি পাওয়া ছবিটি প্রথম দুদিনেই তুলে নিয়েছে ৩৩.৫ কোটি রুপি।

তবে রাম-লীলা ছবির কাহিনিতে কিন্তু নতুন কোনো গল্প নেই। বলতে পারেন নতুন বোতলে পুরোনো মদই ঢেলেছেন বানসালি। আসলে রাম-লীলা ছবিটির কাহিনি আবর্তিত হয়েছে উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের অমর সৃষ্টি জনপ্রিয় ট্র্যাজেডি রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট নিয়েই। রোমিও ওরফে রাম আর জুলিয়েট ওরফে লীলার প্রেমলীলাই গুজরাটের পটভূমিকায় সাজানো হয়েছে এই ছবিতে। এতে রাম ও লীলা চরিত্রে অভিনয় করেছেন রণবীর সিং ও দীপিকা পাড়ুকোন।

রণবীর-দীপিকা জুটির এটিই প্রথম ছবি ।

ছবিতে বানসালি রামকে এমনভাবে গড়েছেন যেন চরিত্রটি ব্যক্তি রণবীরেরই প্রতিচ্ছবি। তবে একজন সুঠামদেহী গুজরাটি যুবকের ভূমিকায় নিজেকে গড়ে তুলতে বেশ কসরত করতে হয়েছে রণবীরকে। কঠিন অনুশীলনের মাধ্যমে পেশিবহুল শরীর গড়ে তুলতে হয়েছে। রাখতে হয়েছে লম্বা চুল-দাড়ি।

রণবীর বলেন, ‘আমি যেগুলো অনায়াসে সামলাতে পারি, যেমন নাচ, রোমান্স, অ্যাকশন সেগুলোই কিন্তু রাম-লীলায় আরও একবার করতে হয়েছে আমাকে। তবে বনসালিজি ভীষণ কঠিন একজন গুরু। শট পছন্দ না হলে কতবার যে তার টেক হতে পারে। তিনি অভিনেতাকে ঠেলতে ঠেলতে তাঁর লিমিটের বাইরে নিয়ে যান। তারপর যে কাজটা বেরিয়ে আসে, সেটা দেখে নিজেই অবাক হতে হয়।

’ অন্যদিকে লীলা চরিত্রে পরিচালক বানসালি শুরুতে কারিনা কাপুরকে নিতে চাইলেও ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ছবিটি ছেড়ে দেন কারিনা। প্রিয়াঙ্কা চোপড়াকেও নাকি প্রস্তাব দেওয়া হয়, কিন্তু রণবীর সিংয়ের সঙ্গে অভিনয়ে রাজি হননি তিনি। শেষ পর্যন্ত দীপিকাই মনোনীত হন লীলা চরিত্রের জন্য। আর দীপিকাই কিন্তু বলিউডের একমাত্র অভিনেত্রী, যার ছবি এ বছর প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। এ বছর দীপিকা পাড়ুকোন উপহার দিয়েছেন রেস টু, ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি ও চেন্নাই এক্সপ্রেস-এর মতো তিন তিনটি ব্লকবাস্টার মুভি।

রাম-লীলা ছবিটির মাধ্যমে তার সাফল্যের নতুন ধারাবাহিক রেকর্ড সৃষ্টি হতে যাচ্ছে তা আগেভাগেই বলা যায়। তবে এত দিন ধরে দীপিকা যে ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন, এ ছবিতে লীলা চরিত্রটি একেবারেই আলাদা। এ প্রসঙ্গে দীপিকা বলেন, ‘রাম-লীলায় অভিনয় করার সময় আমি নিজেকে অন্যভাবে ভেবেছি। কারণ, বানসালির ছবিতে নায়িকা চরিত্রগুলো থাকে আলাদা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। আমি বানসালির দেবদাস-এর চন্দ্রমুখী-পারু কিংবা হাম দিল দে চুকে সানাম-এর নন্দিনীর কথা ভেবেছি।

লীলা চরিত্রটিকে সেভাবে নিজের মধ্যে ধারণ করে রূপায়ণের চেষ্টা করেছি। ’

এ ছবির মধ্য দিয়ে সঞ্জয় লীলা বানসালি দ্বিতীয়বারের মতো সংগীত পরিচালনার কাজটিও করলেন। শেষ ছবি গুজারিশ-এর গান হিট না হলেও রাম-লীলায় বানসালির সংগীত ইতিমধ্যেই শ্রোতারা লুফে নিয়েছেন। যেন আবারও বানসালি জাদুতে মুগ্ধ হতে চলছে বলিউড।

সাজিদুল হক

মুম্বাই মিরর, ইন্ডিয়া টাইমস অবলম্বনে

 



সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।