এতকিছু ... ওই সিনেমার জন্যই... লতিফুল ইসলাম শিবলী বাংলা গানের এক কিংবদন্তী গীতিকার। একের পর এক অসাধারন গান লিখে জয় করেছেন সহস্র মানুষের হৃদয়। এটাই তার একমাত্র পরিচয় নয়। বিভিন্ন সময়ে যুক্ত হয়েছেন মঞ্চ নাটকে, অভিনয়ে, মডেলিংয়ে, কবিতায় এমনকি সিনেমার চিত্রনাট্য লেখায়। সাম্প্রতিক সময়ের কাজগুলো নিয়ে তার সাথে কথা বললাম...
কেমন আছেন? আপনার অ্যালবামের কী খবর? আপনি কিছুদিন আগে একটি সলো’র কাজ শুরু করেছিলেন।
লতিফুল ইসলাম শিবলী: আমার একক অ্যালবামটির কাজ চলছে। খুব শিঘ্রিই আসবে ওটা। আর এই অ্যালবামের একটা গান ‘সবুজ শার্ট’ এর মিউজিক ভিডিওর শ্যুটিং হবে এ মাসেই। আর আসলে এই মুহূর্তে আমি অন্য একটি কাজে বেশী মনোযোগ দিচ্ছি। তিনটি সিনেমা নিয়ে কাজ করছি।
পদ্ম পাতার জল নামে একটি সিনেমা আসছে। এটির শ্যুটিং শুরু হয়ে গেছে। আর বাকী দুটির ছবির গল্প নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে, খুব তাড়াতাড়ি কাজ শুরু হবে।
সিনেমায় জড়ালেন কিভাবে?
ল.ই.শী: আমার ফুল কনসেনট্রেশন এখন ফিল্মে। স্ক্রিপ্টটা ভালো হওয়া দরকার।
আমাদের ফিল্মে বড় দুর্বলতা হচ্ছে গল্পে। সবাই চেস্টা করছে ভালো কিছু করার জন্য। আমাদের এখানে সিনেমায় ভালো মেকিং হচ্ছে, চিত্রায়ন ভালো হচ্ছে। কিন্তু গল্পটা খুব বেশী ভালো হচ্ছে না। চোরাবালি নিয়ে অনেক হৈ চৈ হয়েছে কিন্তু চোরাবালির গল্পটা গতানুগতিক, নতুন কিছু নয়।
মেকিংয়ে মুন্সিয়ানা আছে, উপস্থাপনায় নতুনত্ব আছে। তবে ভালো ছবির গল্পটাও অনেক শক্তিশালী হতে হবে। এমন একটা গল্প বলবো যে গল্প এর আগে আর মানুষ শোনেনি। পদ্ম পাতার জল এই অর্থে এগিয়ে থাকবে। পদ্ম পাতার জল পুরোমাত্রার বানিজ্যিক ছবি।
এই সিনেমায় আপনি কী কী করছেন?
ল.ই.শি: এই ছবির গল্প ও চিত্রনাট্য থেকে শুরু করে গান লেখা ও অন্যান্য অনেক কাজের সাথে গভীরভাবে জড়িয়ে গিয়েছি আমি। এটা খুব সাহিত্য নির্ভর একটা গল্প। একজন কবির সাথে একজন বাঈজির প্রেম। সেই বাঈজির আবার হৃদয় বলতে কিছু নাই। কবি তার কবিতা দিয়ে বাঈজির হৃদয় জয় করার চেস্টা করে।
আলটিমেটলী কবিতারই জয় হয়। তো সেটা করতে গেলে কাব্যময়তার একটা ব্যাপার লাগবে। তো যারা ওখানে কাজ করছে তারা সব অকবি। আমাকে অনেক ধরে ধরে ওদের সাথে শেয়ার করতে হচ্ছে। স্ক্রিপ্টটারও কাটাছেঁড়া হচ্ছে।
যাতে সাধারন মানুষের বোধগম্য হয়, ভালো লাগে। সাধারন মানুষেরও কিন্তু সাহিত্য ভালো লাগে যদি সেটা ওইভাবে উপস্থাপন করা হয়। রবীন্দ্রনাথের গল্পের সিনেমাও কিন্তু সাধারন মানুষকে টেনেছে।
সেসব ছবি ব্যবসাসফলও। এমনকি শরৎচন্দ্রের গল্প থেকে সিনেমাগুলিও মানুষকে টেনেছে।
আসলে মানুষের বেসিক ইনসটিংক্ট এর মধ্যে হয়তো সাহিত্য আছে।
ল.ই.শী: একদম ঠিক। তা না হলে গাছের পাতার মর্মর আওয়াজ আর পাখির কলকাকলীতে মানুষ কেন মুগ্ধ হবে। মানুষকে কেন এটা টানবে? গান কে না পছন্দ করে। তা হলে কবিতা আর কেউ পড়তো না, লিখতো না।
পদ্ম পাতার জল ছবিটি কে নির্মান করছেন?
ল.ই.শী: তন্ময় তানসেনের নিশ্চয়ই কথা মনে আছে সবার, ভাইকিংসের ভোকাল। সে নাটক আর টেলিফিল্ম বানিয়ে হাত পাকিয়েছে এতদিন। এখন সে সিনেমা নির্মান করছে। এটা তার প্রথম ছবি। ছবির পঁচিশভাগ কাজ শেষ।
এফডিসিতেই কাজ হচ্ছে।
আর কবিতার কী খবর?
ল.ই.শী: প্রচুর কবিতা লিখছি। এই মেলার পরের বইমেলাতে বই হবে হয়তো। আর বইমেলাতে মাহিদুল ইসলাম, স্বাত্বিক ফারুকের আবৃত্তির অ্যালবামে আমার কবিতা থাকছে।
আপনার প্যারিসের চিঠি কবিতাটি আবৃত্তির ক্ষেত্রে চিরায়ত বলা যেতে পারে।
অবশ্য ওটা থেকে গানও হয়েছে।
ল.ই.শি: এটা আমার খুবই ভালোলাগার জায়গা যে মানুষ এটাকে প্রানের আবেগ হিসেবে গ্রহন করেছে। আমার ব্যক্তিগত ভাবে একটা ব্যাপার খুব চমকিত করেছে যে, ভালোবাসার একশো কবিতা শিরোনামে একটি বইতে আমার কবিতাটিও রাখা হয়েছে; রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশের কবিতার পাশাপাশি। আমি হয়তো এর যোগ্য না তবে জীবনে কিছু প্রাপ্তির জায়গা থাকে যা উদ্দীপ্ত করে; অনুপ্রেরণা যোগায়। এইসব মহামনিষীদের নামের পাশে নিজের নাম দেখে একটু লজ্জা, একটু শঙ্কা, একটু ভয়, একটু কেমন কেমন ব্যাপার!
গান লেখার কথা বলুন।
ল.ই.শী: গানতো লিখছিই, তবু একটু কম। লুৎফর হাসান, তানভীর তারেক, সুবীর নন্দী ও রাজীবের জন্য গান লিখছি। এগুলো আসবে এ বছরেই। আর সুমনা হকের অ্যালবাম আসছে, এই অ্যালবামের সবকটি গানই আমি লিখছি। তার ভাষ্যমতে এটা তার সর্বশেষ এ্যালবাম।
এই তো...
রাজকুমারী নামে একটি নাটক আপনি লিখেছিলেন, অভিনয় করেছিলেন। অনেকদিন আগের কথা সেসব।
ল.ই.শি: আমি মানুষের ভেতরের মানুষটাকে বের আনার চেস্টা করেছি। এখানে মেয়েটা অন্ধ আর ছেলেটা কুৎসিত। বিউটি আর বিস্ট এর একটা সমীকরণ।
ছেলেটাকে সবাই ঘৃণা করছে চেহারার কারণে, ওই ঘৃণিত মানুষের ভেতরে আছে তীব্র সুন্দর এক মানুষ। ওই সাধারন মানুষটাকে সাধারন চোখ দিয়ে দেখা যাচ্ছে না। সেই দেখতে পাচ্ছে যার চোখ অসাধারন কিংবা সাধারন চোখ যার নাই। এই ছিলো রাজকুমারী নাটকের নির্যাস।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।