আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বাস্থ্যে বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্বের কাছে রহস্য

বিশ্বখ্যাত জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেট বলেছে, স্বাস্থ্যসেবায় কম বরাদ্দ, দুর্বল স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও ব্যাপক দারিদ্র্য সত্ত্বেও গত চার দশকে স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের অর্জন ব্যতিক্রমী। পাঁচ বছরের কম বয়সীদের জীবন রক্ষা, মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি, টিকাদান কর্মসূচি, যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ—এসব ক্ষেত্রে দেশটির সাফল্যের কাহিনি উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের এই সাফল্য বৈশ্বিক স্বাস্থ্যব্যবস্থায় রহস্যের মতো।

ল্যানসেট বলেছে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের আগামী দিনের চ্যালেঞ্জও দৃশ্যমান হচ্ছে। দ্রুত নগরায়ণ, বস্তিবাসীর সংখ্যা বৃদ্ধি, অসংক্রামক রোগের ক্রমবর্ধমান বোঝা মোকাবিলা করার জন্য বাংলাদেশকে তৈরি হতে হবে।

পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বৈশ্বিক পর্যায়ে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার (ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ) যেসব ধারণা ও কর্মকাণ্ডের কথা বলা হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অগ্রগতি নেই।

ল্যানসেট-এর ২১ নভেম্বরের সংখ্যায় এসব কথা বলা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গতকাল বৃহস্পতিবার একটি অভিজাত হোটেলে আনুষ্ঠানিকভাবে এর মোড়ক উন্মোচন করেন। এই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, বড় ধরনের রাজনৈতিক উত্থান-পতনের পরও স্বাস্থ্য খাতের এই উন্নতি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ল্যানসেট, ব্র্যাক ও আইসিডিডিআরবি যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য নিয়ে ল্যানসেট-এর একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করার ঘটনাকে জনস্বাস্থ্যবিদেরা বিরল ও গুরুত্বপূর্ণ বলছেন। এই সংখ্যার ছয়টি প্রবন্ধ লিখেছেন ৩৫ জন গবেষক, তাঁদের ১০ জন বিদেশি। এ ছাড়া এসব প্রবন্ধের ওপর নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন এবং ব্র্যাকের চেয়ারপারসন ফজলে হাসান আবেদের মতামতও ছাপা হয়েছে। ১৯০ বছরের পুরোনো এই সাময়িকী লন্ডন, নিউইয়র্ক ও বেইজিং থেকে প্রকাশিত হয়। স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, পুষ্টির মতো বিষয়ে বৈশ্বিক নীতিনির্ধারণে ল্যানসেট বড় ভূমিকা রেখে আসছে।

এর গ্রহণযোগ্যতা বিশ্বব্যাপী সর্বমহলে স্বীকৃত।

ল্যানসেট-এর এই সংখ্যাকে মূল্যবান বর্ণনা করে অমর্ত্য সেন তাঁর মতামত অংশে বাংলাদেশের সাফল্যের পেছনে চারটি কারণ আছে বলে উল্লেখ করেছেন। নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর করার জোর পদক্ষেপ, সরকারি ও বেসরকারি কর্মোদ্যোগ, কমিউনিটির শক্তির বুদ্ধিদীপ্ত ব্যবহার এবং দেশটির প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার ক্ষমতা স্বাস্থ্য খাতে এই সাফল্য এনে দিয়েছে।

গবেষকেরা বলছেন, স্বাস্থ্য খাতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগ, অসংগঠিত স্বাস্থ্যসেবা ও এনজিওগুলোর কর্মকাণ্ড সাফল্যের পেছনে রয়েছে। বেসরকারি পর্যায়ে ৪০ হাজার চিকিৎসক ও পাঁচ হাজার নার্সের সঙ্গে ৫০ হাজার সনাতন স্বাস্থ্যকর্মী, ৯০ হাজার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক, এক লাখ ৮৫ হাজার গ্রাম চিকিৎসক মানুষকে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন।

এ ছাড়া এক লাখ ৭০ হাজার ওষুধের দোকান থেকে মানুষ ওষুধ ও পরামর্শও পায়। পাশাপাশি এনজিওগুলোর পাঁচ হাজার প্যারামেডিক ও এক লাখ পাঁচ হাজার গ্রামীণ স্বাস্থ্যকর্মী স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন। দেশব্যাপী সরকারের স্বাস্থ্য নেটওয়ার্ক ও কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংগঠিত ও অসংগঠিত স্বাস্থ্যসেবা এই সাফল্য এনে দিয়েছে।

ল্যানসেট বলছে, স্বাস্থ্যের ওপর বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব ৪০ বছরে কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। টিকাদান কর্মসূচি, খাবার স্যালাইনের ব্যবহার, স্বাস্থ্যসেবার বিস্তৃতি এবং স্বল্পমূল্যের ওষুধের প্রাপ্যতা এতে ভূমিকা রেখেছে।

দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি এনজিওগুলোর কর্মকাণ্ড ও জনসচেতনতা এ ক্ষেত্রে কাজ করেছে।

গত ৪০ বছরের ঘটনাকে ল্যানসেট বলছে প্রথম প্রজন্মের সাফল্য। এই সাফল্য ধরে রাখতে বা অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে হলে দ্বিতীয় প্রজন্মের স্বাস্থ্য উদ্যোগগুলোর লক্ষ্য হবে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জন। স্বাস্থ্য খাত সংস্কারে বহুমাত্রিক কৌশল নিতে হবে, যেন মানুষ সামর্থ্যের মধ্যে ন্যায়সংগত ও উচ্চমানের সেবা পায়।

ফজলে হাসান আবেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ল্যানসেট-এর সম্পাদক রিচার্ড হর্টন বলেন, স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশ নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।

এটি একটি জাতির সাফল্যের ইতিহাস। পৃথিবী এই সাফল্য দেখছে।

দুপুরে বৈজ্ঞানিক অধিবেশনে ছয়টি প্রবন্ধের মূল বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেন সংশ্লিষ্ট গবেষকেরা। পরে বিকেলে প্যানেল আলোচনায় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, শহরে বস্তির মানুষের কাজের সুযোগ থাকলেও তারা স্বাস্থ্য ও শিক্ষার সুযোগ তুলনামূলক কম পাচ্ছে। অসুস্থ হলে বহু মানুষ নিঃস্ব হয়ে যায়।

এই সমস্যা মোকাবিলার পদ্ধতিগত কোনো উদ্যোগ দেশে নেই। একই অধিবেশনে ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট এ কে আজাদ খান বলেন, অসংক্রামক ব্যাধির প্রকোপ মোকাবিলা বাংলাদেশে আগামী দিনের বড় চ্যালেঞ্জ। ওয়াটার এইড বাংলাদেশের এ দেশীয় প্রতিনিধি খায়রুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার পাশাপাশি রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, ইঞ্জিনচালিত নৌকা এবং মুঠোফোন স্বাস্থ্যের উন্নতিতে অবদান রেখেছে।

এর আগে সকালে ল্যানসেট, ব্র্যাক ও আইসিডিডিআরবির পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। তাতে আইসিডিডিআরবির উপনির্বাহী পরিচালক আব্বাস ভূইয়া ও ব্র্যাকের ভাইস চেয়ার মোস্তাক রাজা চৌধুরী জানান, ২০১০ সালে এই বিশেষ সংখ্যার কাজ শুরু হয়।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।