বিচ্যুত যৌবনে জোছনা আমায় করেছে উম্মাদ
১.
পঙ্কজ বাবু মন খারাপ করে বসে আছেন ড্রইং রুমে, ড্রইং রুটা বিশাল বড়। বিশাল ড্রইংরুমে আরাম করে সোফার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন জায়গাটায় তিনি বসে আছেন। সাধারনত এখানে বসলে তার নিজেকে খুবই গুরুত্বপূর্ন একজন মনে হয়। পঙ্কজ বাবু আসলেও অনেক গুরুত্বপূর্ন ব্যাক্তি। কিন্তু আজ তার নিজে কে খুবই অগুরুত্বপূর্ন মনে হচ্ছে।
নিজের বাসায় নিজেকে অগুরুত্বপূর্ন মনে হওয়াটা খুবই অপমানজনক। তিনি আজ খুবই অপমানিত হয়েছেন বলে ধরে নিচ্ছেন।
বিকেলে বাসায় একটা চা-পানের নিমন্ত্রন উৎসব ছিলো। সাধারানত দেশী বিদেশী দালালদের তিনি এমন সাপ্তাহিক পার্টিতে নিমন্ত্রন করেন। আজো তার ব্যতিক্রম ছিলো না।
পঙ্কজ বাবু নিজে ফোন করে করে গুরুত্বপূর্ন সব ব্যাক্তিকে নিমন্ত্রন করেছেন। ড্যান মজিনা, রবার্ট গিবসন, গ্রেগ উইলকোক, শিরো শডাশিমা, হেদার ক্রুডেন, ইইউ আমবেসেডর কাউকে বাদ রাখেন নি। অত্যন্ত আদবের সাথে, নমস্তে সহকারে তিনি তাদেরকে আজকের চা-পানের নিমন্ত্রন করেছেন।
এছাড়াও তার এই নিমন্ত্রনের তালিকায় ক্ষমতাসিন পার্টির কয়েকজন দালাল যারা সারাদিন তাকে জি হুজুর জি হুজুর করে তাদেরকেও দাওয়াত করেছেন।
একটা খচ খচ ছিলো তার মনে একটা লোক কে নিমন্ত্রন করতে পারেন নি বলে।
আসলে পঙ্কজ বাবু চান না ছেলেটা আজই আসুক তার পার্টিতে। বোঝ-জ্ঞান কম থাকায় বলা যায় না কখন কোন অসুবিধায় ফেলে দেয়। তাছাড়া ইদানিং তার কাছে বিভিন্ন ধরনের তথ্য আছে বলে তাকে বেশ বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে।
ক্রিং ক্রিং করে তার বাসার ফোনটা বেজে উঠলো।
ফোনটা হাতে নিয়ে বেশ মনমরা হয়ে ধরলেন পঙ্কজ বাবু।
- হ্যালো।
বেশ বাজখাই একটা কন্ঠস্বর শুনতে পেলেন। বুঝতেই পারছেন ওটা রাশিয়ান আ্যামবেসেডর। পৃথিবীতে এমন বাজখাই সুরে কথা বলতে পারে বলে কেউ আর আছে কিনা সন্দেহ। এমনকি গাব্বার সিংও এমন করে কথা বলেনা।
তাই রাশিয়ান আ্যামবেসেডর যখন ফোন করেন তখন পঙ্কজ বাবুর আত্মারাম খাঁচা ছাড়া হয়ে যায়। যেনো হুকুম দিয়ে কথা বলে।
- মিস্তার পানকাঝ?
শালা নামটারেই বাজখাই বানিয়ে দিলো।
- ইয়েস মিস্টার নিকোলায়েব।
- আই জাস্ট ওয়ান্ত তু তেল ইউ, ইউর ঘেইম ইজ ওভার নাউ।
- ইয়েস স্যার আই আন্ডারস্টান্ড। হিস এক্সেলেন্সি ড্যান মজিনা জাস্ট ফোনড মি আ্যান্ড কনফার্ম দ্যাট হি ইজ নট কামিং আজ ওয়েল।
- আ্যান্দ মি তু আইদার নত কামিং। আওয়ার গভর্নমেন্ত অলসো নত ইন্তারেস্তেদ টু ইনভল্ব। বাই মিস্তার পানকাঝ।
সর্বশেষ বন্ধুকেও পাশে না পেয়ে আরো বিমর্ষ হয়ে পড়লেন পঙ্কজ বাবু। একটা একটা করে ফোন আসে আর সবাই আজকের নিমন্ত্রনে না আসার কথা জানাচ্ছে। পঙ্কজ বাবু চিন্তা করলেন আসলে কি তিনি বেশি গেইম খেলে ফেলেছিলেন। বিএনপিকে তো এখন কোনভাবেই আটকাতে পারছেন না তিনি। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ও তার বিশ্বস্ত কয়েকজন "র" এর এজেন্ট মিলে যে জাল বুনেছিলেন আজ সেই জাল ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাচ্ছে।
২.
- হ্যালো ম্যাডাম বলছেন।
- জ্বি না আপা, আমি শিমুল বিশ্বাস বলছি। ম্যাডাম তো ১৮ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করছেন।
- শিমুল, ভাই আমার, আমার একটা উপকার করো, দয়া করে ম্যাডামকে একটু ফোনটা দাও। প্লিজ, প্লিজ, খুব জরুরী দরকার।
শিমুল বিশ্বাস, মিটিং কক্ষে ঢুকে ম্যাডামকে কানে কানে কি যেন বলে ফোনটা দিলেন। তারপর ম্যাডাম ফোনটা হাতে নিয়ে, জোট ও স্থায়ী কমিটির নেতাদের বললেন,
"এক্সকিউজ মি"।
- হ্যালো
- হ্যালো ম্যাডাম, আমি তো বাংলাদেশের দুই বারের প্রধানমন্তরী। সে হিসেবে আপনাকে কি একটা অনুরুধ করতে পারি?
- আপনি প্রধানমন্ত্রী না হলেও আমাকে অনয়াসে যে কোন কিছু বলতে পারেন।
- থ্যাংক ইউ ম্যাডাম।
আপনি কি দয়া করে আমাকে একটু ইন্ডিয়া যাওয়ার অনুমতি দেবেন?
- আমিতো বাংলাদেশের অথরিটিটিভ কোন ক্ষমতা রাখিনা যে কাউকে যেতে দিতে বা কাউকে আসতে। সে জন্যতো আপনাকে যথাযথ কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
- দেখুন যথাযথ কতৃপক্ষ এখন আপনিই। আপনি যা বলবেন দেশে তাই হবে।
- এটা সত্য নয়।
আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী মাত্র।
- ম্যাডাম, পঙ্কজ বাবু বলে দিয়েছেন ইন্ডিয়া আর আমাকে সাহায্য করতে পারবেনা। এখন যদি আমি বাংলাদেশে থাকি বাংলাদেশের সাধারন মানুষ যাদেরকে আমি ইন্ডিয়ার কথায় নির্যাতন করেছি, খুন করেছি তারা আমাকে ছিড়ে খেয়ে ফেলবে। প্লিজ এই অবস্থা থেকে একমাত্র আপনিই বাঁচাতে পারেন আমাকে।
- আমি কাউকে বাঁচানোর ক্ষমতা রাখিনা।
সব ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর।
- তবুও প্লিজ আমাকে একটু দয়া করুন। আমার বাবা বাংলাদেশের জাতির জনক আপনাকে অনেক স্নেহ করতেন। তাছাড়া আপনি "স্বাধীনতার ঘোষক" মহান মুক্তিযোদ্ধা জনাব জিয়াউর রহমানের স্ত্রী হিসেবে আমি কি আপনার কাছ থেকে একটু করুনা পেতে পারিনা?
ইতোমধ্যে জোট ও স্থায়ী কমিটির নেতাদের মধ্যে টুকটাক কানাকানি শুরু হয়ে গেছে। তার মধ্যে দু-চারজন যারা গতকালও সরকারী পুলিশের নির্যাতনের চিহ্ন বয়ে নিয়ে আজকের মিটিং এ এসেছেন তাদের মুখ লাল হয়ে আছে ক্ষোভে।
ম্যাডাম এবার বললেন, মাননীয় জননেত্রী, আমি একটা জরুরী মিটিং এ আছি। আপনি আমাকে পরে ফোন করুন। ম্যাডাম ফোনটা ছেড়ে দিয়ে জোট নেতাদের সাথে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করা শুরু করে দিলেন।
৩.
পঙ্কজ শরনের গাড়ী ছুটছে এয়ারপোর্ট অভিমুখে। রাস্তায় হাজার হাজার গাড়ী হর্ন বাজিয়ে উল্লাস করছে।
গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা উড়ছে। লাখো লাখো মানুষ দেখতে পেলেন। তিনি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন মানুষগুলোর দিকে। মানুষগুলো চিৎকার করছে।
"বাংলাদেশ বাংলাদেশ
জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ"
শ্লোগানে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হচ্ছে।
চারিদিকের মানুষ উল্লাস ধ্বনি করেছে। কচি কচি শিশুরা বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে বাবা-মায়ের সাথে রাস্তায় সারি বেঁধে হাঁটছে। হাজার হাজার তরুন সেচ্ছাসেবকের কাজ করছে, শৃংখলা বজায় রাখছে। পুরো ঢাকা শহররাস্থায় বের হয়ে এসেছে। মোড়ে মোড়ে ছোট ছোট ক্যাম্প তৈরি করো সাধারন মানুষকে পানি, ফল-ফ্রুটস, বাংলাদেশের পতাকা বিলানো হচ্ছে।
সেইসব ক্যাম্পের মাইক থেকে ভেসে আসছে,
আমার সোনার বাংলা,
জিবন বাংলাদেশ আমার মরন বাংলাদেশ,
পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে
প্রভৃতি গান।
যেনো সুখের উল্লাসে মেতেূঠেছে বাংলাদেশীরা। বন্দি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছে। নাভিশ্বাস পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে সস্থির নিশ্বাস ফেলছে।
এ যেনো মিছিলের নগরী।
সে মিছিলে সব বাংলাদেশীকে দেখতে পেলেন পঙ্কজ বাবু। একটাও আওয়ামীলীগ নেই। তার মনে বিরাট প্রশ্ন জাগে আওয়ামীলীগ গেলো কই? প্রতিদিন আওয়ামীলীগের কাছ থেকে তদবিরের জন্য যত ফোন আসতো সেইসব লীগার আর তাদের বাচ্চ-কাচ্চারা আজ রাস্থায় থাকলে অন্তত পঙ্কজ বাবু বা ইন্ডিয়ার এতো বড় পরাজয় হতো না। আসলে সবই ছিলো আওয়ামীদের ধোকাবাজি। সব কটা রাজাকার।
তিনি এবার মনে মনে একটু খুশিই হলেন এতোবড় নিমক হারাম আওয়ামীলীগ আমাদেরকে কত্তবড় ধোকা দিয়েছে এতো দিন, শুধু বলেছে যে সারাদেশ নাকি তাদের সাথে। আসলে তো তাদের সাথে কয়েকটা নেড়ীকুত্তা ছাড়া কেউ ছিলোনা। আজ সেইসব নেড়ী কুত্তাগুলোও নেই। ভাবাতে ভাবতে পঙ্কজ বাবু হারিয়ে যান। আবার
ইশ্বরকে ধন্যবাদ দেন যে তিনি "ইন্ডিয়ান হয়ে জন্ম নিয়েছেন, আওয়ামী হয়ে জন্ম নেননি বলে"
-স্যার আমরা এয়ারপোর্ট চলে এসেছি।
পঙ্কজ বাবু, গাড়ি থেকে নেমে ভিআইপি গেট দিয়ে ঢুকছেন। শেষ বারের মতো বাংলাদেশটা দেখার চেস্টা করলেন। এয়ারপো্র্টেও মানুষ জন বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে হাটাহাটি করছে। মনে হচ্ছে বাংলাদেশ নতুন করে স্বাধীন হয়েছে। বিজয়ের এক নতুন স্বাদে বাংলাদেশিরা উৎসব করছে।
একটা পত্রিকা নিলেন হাতে। শিরোনাম গুলো দেখছেন, সারা বিশ্ব ইন্ডিয়াকে চরম নিন্দা করছে বাংলাদেশ নামক এক স্বাধীন রাস্ট্রের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের উপর হস্তক্ষেপ ও আভ্যন্তরীন রাজনীতিতে একটি বিশেষ দলকে একপেশে নির্লজ্জ সমর্থন দিয়ে শান্ত স্থিতিশীল একটা দেশকে অশান্ত করার জন্য।
তার পরবর্তী নিউজ, " ব্যার্থতার দায়ে পঙ্কজ শরনকে বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হলো" নিউজটি পড়তে পড়তে এক লজ্জাজনক পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে তিনি জেট এয়ারওয়েজ এর দিল্লীগামী ফ্লাইট ধরতে হাঁটা দিলেন।
(বি.দ্র: গল্পের চরিত্র কাল্পনিক। বাস্তবে কারো সাথে কোন মিল নেই)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।