রাজধানীর উত্তরার বুক চিরে অবস্থান চমৎকার একটি লেকের। এর নয়নাভিরাম সৌন্দর্য কাছে টানে সব শ্রেণীর মানুষকে। তবে এই সুন্দর, নয়নাভিরাম লেকটিতে এখন ক্ষত। অভিযোগ উঠেছে, ডিসিসি, রাজউক, ওয়াসা ও পরিবেশ অধিদফতরের চরম উদাসীনতায় দখল আর দূষণে হারিয়ে যেতে বসেছে রাজধানীর নয়নাভিরাম উত্তরা লেক।
লেকের পাড়ের অধিবাসীদের অভিযোগেরযেন অন্ত নেই, তাদের প্রধান অভিযোগ, লেক এলাকা এখন অপরাধীদের আখড়াস্থল।
লেকপাড়ে দিনের বেলায়ও কেউ চলাফেরা করার সাহস পাচ্ছে না। সেখানে নিরাপত্তাহীন পরিবেশে অহরহ ঘটছে ছিনতাই-রাহাজানি। আছে মাদকাসক্তদের বখাটেপনা আর ভ্রাম্যমাণ যৌনকর্মীদের অবাধ দৌরাত্ম। ময়লা, আবর্জনা, নর্দমা ও স্যুয়ারেজের বর্জ্য মিশে লেকের পানিকেও বিষাক্ত করে তুলেছে। এর তীব্র দুর্গন্ধে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।
পরিবেশ অধিদফতর এরই মধ্যে লেকটিকে 'প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা' বলে ঘোষণা দিয়েছে। তবে বিপন্নতা রোধে নেওয়া হচ্ছে না কার্যকর পদক্ষেপ, ঠেকানো যাচ্ছে না জবরদখল। রাজধানীর লেকগুলোর অন্যতম নিয়ন্ত্রক সংস্থা হচ্ছে ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি)। রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। আর পয়ঃনিষ্কাশনের দেখভাল করে থাকে ঢাকা ওয়াসা।
অন্যদিকে লেক ও সংলগ্ন এলাকার পরিবেশ বিপর্যয় রোধে রয়েছে পরিবেশ অধিদফতর। লেক এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, এ চারটি সংস্থার কেউই তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে না। এমনকি তাদের মধ্যে সমন্বয় পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আবু নাসের খান জানান, রাজধানীর পরিবেশ ও সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব বহন করে লেকগুলো। আর সুস্থ পরিবেশের চিন্তা করলে লেকগুলো যে কোনো মূল্যে উদ্ধার ও দূষণমুক্ত করতে হবে।
তিনি বলেন, যারা দখলকারী তারাই দূষণ করে চলেছে। অন্যান্য লেকের চেয়ে উত্তরা লেকটি সবচেয়ে বেশি সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এ বিপর্যয়কর পরিস্থিতি। দখলে-দূষণে এখন নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে উত্তরা এলাকার মনোমুঙ্কর এই লেকটি। পার্শ্ববর্তী ভবন, বাড়িঘর, অফিসের স্যুয়ারেজ সংযোগ সরাসরি লেকে স্থাপন করা হয়েছে।
স্থানীয় কাঁচাবাজারগুলোর ময়লা-আবর্জনাও ফেলা হচ্ছে লেকে। পাহারা বসিয়েও এসব রোধ করা যাচ্ছে না। প্রতিদিন এ লেকে ১০-১৫ টন বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। তাই প্রতিনিয়ত বাড়ছে দূষণমাত্রা। পানি বিষাক্ত হয়ে পড়ায় মাছ মরে ভেসে উঠছে প্রায়ই।
কোথাও কোথাও লেক ভরাট করে অবৈধ প্লট সৃষ্টি করে নির্মাণ হচ্ছে একাধিক বহুতল ভবন অথবা বস্তি। উত্তরা লেক এলাকায় নিয়মিত বসছে বখাটেদের আড্ডাবাজি ও তাস খেলা। মাদক বেচাকেনা ও সেবন সহজলভ্য হওয়ায় বিকাল পেরোতেই আড্ডা জমছে জম্পেশ। ঘুরতে এসে তরুণীরা শিকার হচ্ছে ইভ টিজিংয়ের। নির্জনতার সুযোগে চলছে ছিনতাই-রাহাজানি।
দীর্ঘ তিন দশকের ধারাবাহিক অবহেলায় উত্তরা লেকের অবস্থা আজ বিপন্ন। আনুমানিক তিন কিলোমিটার দীর্ঘ ও ২০০ ফুট প্রশস্ত উত্তরা লেকটির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এরই মধ্যে জবরদখল হয়ে গেছে। বাকি জায়গাও প্রভাবশালী মহল কৌশলে হাতিয়ে নেওয়ার ধান্ধায় ব্যস্ত। উত্তরা ক্লাবের সাবেক সভাপতি কেএমআর মঞ্জুরসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই জানান, মিছিল-মিটিং, মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশের মতো আন্দোলনের ভূমি খেকোদের হাত থেকে লেকটি রক্ষা করা যাচ্ছে না। লেক-সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেই অভিযোগ করে জানান, বিকাল হলেই লেক এলাকায় অপরাধীদের মিলনমেলা জমে ওঠে।
গভীর রাত পর্যন্ত চলে মাদক বেচাকেনা ও সেবনের হৈ-হুল্লোড়। ছিনতাইকারীদের অবাধ দৌরাত্মে এটি এখন 'আতঙ্কের স্থান'। লেকের জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে ৩০-৩৫ ঘরের বস্তিপাড়া। স্থানীয় একটি সন্ত্রাসী চক্র বস্তির খুপরিঘরগুলো থেকে মাসে এক-দেড় হাজার টাকা ভাড়া আদায় করে থাকে। বস্তিপাড়ার খোলা পায়খানা, মলমূত্র, নর্দমা আর লেক মিলেমিশে একাকার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।