হু
আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পরে মুঘল শাসন ব্যবস্থা ধীরে ধীর দূর্বল হয়ে পড়ে । তার পরবর্তী সম্রারাটগন যোগ্যতার পরিচয় না দিতে পারায় দূরবর্তী প্রাদেশিক শাসকগন নামমাত্র আনুগত্য স্বীকার করে প্রায় স্বাধীন ভাবে রাজ্য পরিচালনা করতে থাকেন । মুঘলদের এই দূর্বল ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে মুর্শিদকুলি খান নবাবী শাসন যুগের সূচনা করেন ।
মুঘল সমরতন্ত্রের অবনমন এবং নবাবী শাসনের উত্থান:
সুবাহদারি শাসন আমলে বাংলা নিয়ন্ত্রিত হতো দিল্লি থেকে । এই সময় প্রশাসনে বাঙ্গালীর ভূমিকা তেমন ছিল না ।
সুবাহদার সহ সকল দ্বায়িত্বপূর্ণ পদ অলঙ্কৃত করেছে সকল মুঘল সামরিক অভিজাত্যের সদস্যরা । পরবর্তী সময়ে মুঘল শাসন যখন ধীরে ধীরে দূর্বল হয়ে পড়ে তখন সুবাহদারগন কেন্দ্রীয় শাসকদের আর তেমন মূল্যায়ন করতো না । এই সময় তারা নামমাত্র মুঘল শাসকদের অনুগত্য স্বীকার করতো । এই সময় মুর্শিদকুলী খান কেন্দ্রীয় মুঘল শাসনের অবনমনের কারণে তিনি তার নিজস্ব ক্ষমতার বলয় তৈরির চেষ্টা করেন । এই বলয়ে নিজস্ব প্রতিপত্তি তৈরি করার জন্য প্রথমে তিনি তার রাজধানী ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে স্থানান্তর করেন ।
১৭০৪ সাল বাংলার ইতিহাসে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই বছরই বাংলার রাজধানী মুর্শিদাবাদে স্থানান্তরিত হয় এবং মুর্শিদকুলী খান বাংলার সুবাদার নিয়োগ প্রাপ্ত হন । আবার অন্যভাবে বলা যায় যে তিনি মুঘল বলয় থেকে বের হওয়ার জন্য রাজধানী ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে নিয়ে যান । এখানে রাজধানী স্থাপনের পর থেকে তার চিন্তা চেতনার বিকাশ ঘটতে শুরু করে । তিনি সুবাহদারি গ্রহণ করার পরেই নিজেকে নবাব বলে ঘোষনা করেন । তার এই পরিবর্তন বাংলার সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সুদূর প্রসারী ভূমিকা পালন করে ।
এই সময় মুঘল শাসকগন দূর্বল হওয়ার কারণে এর বিরূদ্ধে তেমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি । মুর্শিদকুলী খানের পূর্বে সুবাহদার নিয়োগ দিতেন মুঘল স¤্রাটগণ কিন্তু এই সময়ে এসে তা বংশানুক্রমিক হয়ে পড়ে । মুর্শিদকুলী খান নাম মাত্র স¤্রাটের আনুগত্য প্রকাশ করতেন এবং তিনি বার্ষিক ১ কোটি ৩ লক্ষ টাকা রাজস্ব পাঠাতেন । এর মাধ্যমেই বুঝা যায় মুঘল কেন্দ্রীয় শাসন কতটা দূর্বল ছিল । এই ক্ষমতা গ্রহণের পেছনে জনগনের নীরব ভূমিকা রয়েছে ।
শাসক শ্রেণীর সাথে ক্ষমতা ভাগা-ভাগি করার কথা জনগন কখনো চিন্তা করেনি । তাদের চিন্তা ছিল, শাসক যেই হোক না কেন, তাদের ধর্ম, জীবন যাত্রা, বর্ণে কোন প্রকার আঘাত না আসলে তাদের সেই শাসকে মেনে নিতে কোন আপত্তি নেই । মুর্শিদকুলী খানের সময় থেকে দেশী অভিজাত হিন্দুদের নিয়ে উচ্চ আমলাতন্ত্র গঠনের প্রবণতা দেখা যায় । এর কারণ হিসেবে বলা যায় তিনি সধারণ জনগন সহ উচ্চ পর্যায়ের হিন্দুদের আস্থা অর্জন করতে চেয়ে ছিলেন । এই সময় এক কথায় বলতে গেলে মুসলিমদের তিনি প্রায় দমন করেই রেখেছিলেন যাতে কোন প্রকার বর্ণবাদের প্রশ্ন না আসে ।
এ ভাবেই মুর্শিদকুলী খান বাংলায় স্বাধীন নবাবী শাসন শুরু করেন।
কর্পোরেট বাণিজ্যের বিকাশ:
পলাশী যুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ স্বচ্ছল ছিল । এই সময় বাংলা ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, কৃষি ক্ষেত্রে বেশ সুনাম অর্জন করেছিল । এই সময় বাংলা একটি বিশাল রপ্তানি কারক দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল । এরই ফলশ্রুতিতে বাংলায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশের বণিকগন এসেছেন বাণিজ্য করতে ।
দেশের অধিনায়ক তখন নিজেকে শুধু মাত্র বাংলার বাদশা হিসেবে গণ্য করতো না, তাকে বিশ্বের বাদশা হিসেবে গণ্য করা হতো । বাদশাকে অনুগত্য প্রকাশ করলে বিশ্বের যে কেউ তার রাজ্যে বসবাস করতে পারত । এই সময় বিদেশী বণিক ও অভ্যাগতদের জন্য দেশকে উন্মুক্ত রাখা হয়েছিল ।
কর্পোরেট বাণিজ্যের সূচনা ঘটে নবাব মুর্শিদকুলী খানের সময় থেকে এবং এটি পরিপূর্ণ রূপ লাভ করে আলীবর্দী খনের সময় । ইউরোপীয় বণিকগন প্রথম দিকে বাংলা থেকে বিভিন্ন পণ্য তাদের দেশে নিয়ে যেতো ।
এই সময়ে ভারতে ইউরোপীয় কোন পন্য আমদানী করা হতো না । কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই ধারার পরিবর্তন ঘটে। ইউরোপীয় বণিকগন তাদের বিভিন্ন পণ্য জাহাজ ভর্তি করে নিয়ে এসে স্থানীয় বাজারে বিক্রয় করে যে অর্থ লাভ করতো তা দিয়ে পুনরায় এই দেশের পণ্য ক্রয় করে ইউরোপে নিয়ে যেতো । প্রথম দিকে এই ধরণের বাণিজ্য শুধুমাত্র ইউরোপীয়দের কাছে জিম্মি ছিল। এই সময় নবাবগন বণিকদের কাছ থেকে উচ্চ হারে শুল্ক আদায় করতো ।
এই অর্থ বিভিন্ন খাতে ব্যায় করা হতো । এমনকি যদি কোন অঞ্চলে যদি বিদ্রোহ দেখা দিত, বিদ্রোহ দমনের জন্য এই অর্থ ব্যায় করা হতো ।
পরবর্তী সময়ে এই সকল ইউরোপীয় বণিকদের সাথে স্থানীয় বণিকদের সম্পৃক্ততা গড়ে উঠে । প্রথম দিকে তারা স্থানীয় বাজারে ইউরোপীয়দের এজেন্ট হিসেবে কাজ করলেও পরবর্তী সময়ে তারা ইউরোপীয় বাণিজ্যে অংশ গ্রহণ করতে থাকে । এর মাধ্যমেই কর্পোরেট বাণিজ্যের সূচনা ঘটে ।
পূর্বে যেমন ব্যবসা- বাণিজ্য শুধু মাত্র ইউরোপীয়রা নিয়ন্ত্রন করতো এখন তা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে রূপ লাভ করে । এই সময় ইউরোপীয় বণিকদের সাথে দেশের স্থানীয় বণিকগনও বিনিয়োগ করতে পারতো । এমনকি নবাবও ইউরোপীয় বণিকদের সাথে অর্থ বিনিয়োগ করতো । এই সময় ইউরোপ থেকে মোটা কাপড় আমদানি করা হতো এবং বাংলা থেকে মসলা, মসলিন কাপড় সহ বিভিন্ন ধরণের হস্তশিল্প রফতানি করা হতো ।
বিদেশী বণিকদের স্থানীয় বাজারে সংশ্লিষ্টতা :
প্রথম দিকে মুঘল সরকারের “মুক্তদ্বার” নীতির কারণে এই দেশে বিদেশী বণিকগন বাণিজ্য করার সুযোগ লাভ করে।
অবাধ বাণিজ্য এবং বিদেশী অভ্যাগতদের জন্য দেশকে উন্মুক্ত রাখা ছিল এই দেশের একটি রাজনৈতিক ঐতিহ্য । প্রথম দিকে বণিকদের অভ্যন্তরীন বাণিজ্যের সুযোগ ছিল না । কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই সুযোগ দেওয়া হয় । এই সময় থেকে বিদেশী বণিকগন দেশীয় বাজার ব্যবহার করতে পরত অর্থাৎ এই দেশ থেকে একটি পণ্য ক্রয় করে এই দেশেই বিক্রয় করতে পারত । এর ফলে বণিজ্যে একটি নতুন রূপ দেখা দেয় ।
এতে বাংলায় একটি নতুন বাজারের সৃষ্টি হয় । এই সময় তারা বাংলার বড় বড় বাজারগুলোতে বিদেশীরা অবাদে বাণিজ্য করতে পারত । এই সময় তারা বাংলার স্থানীয় বাজার ব্যবহার করে বিভিন্ন স্থান হতে বিভিন্ন পণ্য আমদানী করে বাংলার বাজারে বিক্রয় করতো । বণিকদের এই অবাদ অভ্যন্তরীন বাণিজ্য করার অধিকার প্রদানের একটি বিশেষ কারণ হতে পারে এই য়ে, এর ফলে দেশের শাসক শ্রেণীর লোকেরা বিদেশীদের ব্যবসায় অংশী হয়ে পুঁজি বিনিয়োগ করতে পারতো এবং পুঁজি বিনিয়োগ ছাড়াও বিদেশী বণিকদের কাছ থেকে বিপুল পরিমানে পেশকাশ, নজরানা, ও পুরষ্কার গ্রহণ করত । এই ভাবে বিদেশী বণিকগন স্থানীয় বাজারের সাথ সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে ।
রাজনীতিতে বণিক সম্প্রদায় :
রাজনীতিতে বণিক সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততাকে বেশ কয়েক ভাবে আলোচনা করা যেতে পারে । কারণ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রেক্ষিতে বণিকগন বাংলার রাজনীতির সাথা জড়িয়ে পড়েন । নিন্মে বণিকদের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ততার কথা আলোচনা করা হলো ঃ-
নবাব মুর্শিদকুলী খানের সময় থেকেই দেশী হিন্দু অভিজাত শ্রেণীর ব্যাক্তিকে নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের আমলাতন্ত্র গঠনের প্রবণতা দেখা যায় । নবাবি আমলের আমলাতন্ত্রে, ভূমি নিয়ন্ত্রেণে এবং ব্যবসাবাণিজ্যে মূলত এরাই ছিল অগ্রপথিক । মুশির্দকুলী খান এবং তার পরবর্তী নবাবদের অধীনে আরেকটি অতিশয় প্রভাবশালী শ্রেনীর উদ্ভব ঘটে ।
এরা হচ্ছে দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের সাথে জড়িত বণিক । দেশের অভ্যন্তরীন ও বহির্বাণিজ্য এবং ব্যাঙ্কিং থেকে এ বণিক অধিক সম্পদের অধিকারী হয় । মুর্শিদকুলী খান এ নব্য ধনী বণিক শ্রেণীকে রাজ্য পরিচালনয় অংশগ্রহণ করতে সুযোগ দেন । এই সকল বণিকদের সাথে আঁতাত করে সরফরাজকে সিংহাসন চ্যুত করেন । অনুরূপ ভাবে আলীবর্দি খানও ক্ষমতায় আহোরন করেন ।
এই সময়ে বিদেশী বণিকদের কাছে নবাব অর্থ লগ্নি করতেন । এর ফলে নবাব যখন বাণিজ্যের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে তখন নবাব শসক থেকে বণিকে রূপন্তরিত হয় । এই ব্যবসায় সম্পৃক্ত হওয়ার কারণে রাংলার রাজনীতি বণিক কেন্দ্রিক হয়ে পড়ে । এই সময় থেকে সামরিকতন্ত্রের চেয়ে অর্থেকে বেশী গুরুত্ব দেয়া শুরু হয় । একজন নবাব যখন বাণিজ্যের সাথে যুক্ত হয়ে যায় তখন একার্থে বলা যায় যে সকল বণিকগনই রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে গেল ।
নবাবের এই বৈদেশিক বাণিজ্যে প্রীতির কারনে তার দরবারে নিয়মিত বিদেশী বণিকগনের নিয়মিত যাতায়ত ছিল । এই সকল বিভিন্ন সময়ে নবাবকে বিভিন্ন রাজনৈতিক উপদেশ প্রদান করে বাংলার রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে পড়ে ।
আবার বলা যায় নবাব যখন বাণিজ্যের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েছে তখন তার কিছু নিদৃষ্ট বণিক সম্প্রদায়কে প্রধান্য দিতে হয়েছে । এর ফলে দেখা যায় যে অন্যান বণিকগন নবাবের উপর মনোক্ষুন্ন হয়ে পড়েন । বাংলার নবাব সাধারণত ফরাসি বণিকদের প্রধান্য দিতেন ।
একেও বাংলার বাজনীতির মোড় পরিবর্তন কারী বিন্দু হিসেবে উল্লেখ করা যায় ।
আবার অন্যদিকে ফরাসি ও ওলন্দাজ বণিক গোষ্ঠী একত্রিত হয়ে ইংরেজ বণিকদের বিরূদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেছিল । এর প্রভাবও নবাবের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলেছিল । যদিও তারা এই যুদ্ধ ঘোষনার মূলে ছিল তাদের দুই দেশের অভ্যন্তরীন সপ্তবর্ষী যুদ্ধের ফলাফল । এই সময় ইংরেজ বণিকগন এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ভিন্ন পথ খুজার চেষ্টা করেন ।
তারা মনে করেন এই নবাব ক্ষমতায় থাকলে ভারতবর্ষে তারা ব্যবসা-বণিজ্য করতে পারবে না । তাই তারা নবাব কে উৎখাতে চেষ্টা করেন । তাদের এই প্রচেষ্টা প্রথম বারের মতো সামনে এসে ধরা পড়ে সিরাজ দৌলা যখন ক্ষমতা গ্রহণ করার পরে। এই সময় ইংরেজগন স্থানীয় ধনী বণিক সম্প্রদায়ের সাহায্য নিয়ে ছিলেন । তারা স্থানীয় বণিকদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেয়ার কথা বলেন ।
এই ষড়যন্ত্রে অংশ গ্রহন করেন নবাবের কাছের বণিক ও আত্মীয় স্বজনগন । এবং এর চুড়ান্ত পরিণতি হিসেবে পলাশী যুদ্ধে নবাবের পরাজয়ের মাধ্যমে পরিপূর্ন ভাবে ফুটে উঠেছে ।
এ ভাবেই দেখা যায় যে বিভিন্ন সময়ে বণিকগন বাংলার রাজনীতিতে ভূমিকা রেখেছে ।
নবাবের সামরিক বাহীনিতে বর্হিভারতীয়দের সংশ্লিষ্টতা :
নাবব বাণিজ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়ার করনে বেশ কয়েক জন বিদেশী বণিক তার রাজ দরবারে উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করতো । এর মধ্যে সেনাপতিও ছিল ।
ফরাসিদের সাথে ইংরেজদের বিরোধ পূর্ব থেকেই চলে আসছিল । পলাশী যুদ্ধের সময় ফরাসি সেনা সদস্য নবাবকে সাহায্য করেছিল । এর মধ্যে অন্যতম হলো ফরাসি সেনা প্রধান সিনফ্রে । তিনি পলাশীর প্রান্তরে ইংরেজদের বিরূদ্ধে যুদ্ধ করেন । তার এই অবদানের কথা কখনো বাঙ্গালী জাতি ভূলবে না ।
আবার নবাব যখন যুদ্ধে পরাজিত হয়ে পলাশী যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে রাজধানী মূর্শিদাবাদের ফিরে আসেন । পরবর্তী সময়ে তিনি ভাগলপুরের ফরাসি সেনাপতি মঁসিয়ে লালির সাথে একত্রিত হয়ে পুনরায় যুদ্ধ করার উদ্দোগ নেয়, কিন্তু তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় । এর পর থেকেই বাংলায় উপনিবেশিক শাসন শুরু হয় ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।