জানি না কেন লিখি! তবু লিখি মনের খেয়ালে, পরিবর্তন করার মানসে, পরিবর্তিত হওয়ার মানসে। যদিও জানি সব ব্যর্থ হচ্ছে। তবুও আমি আছি সেদিনের সেই আলোকময় প্রত্যুষার আগমনের অপেক্ষায়
দেশের রাজনীতিবিদগণ দেশের রাজনীতির যে অবস্থা সৃষ্টি করেছেন তাতে সমঝোতা ও শান্তি আশা করা পুরোপুরি বৃথা বললে বোধ হয় কোন অত্যুক্তি হবে না। দেশের থিঙ্ক ট্যাঙ্কখ্যাত সকল বুদ্ধিজীবী, পণ্ডিতশ্রেণী ও সুশীল সমাজ বক্তব্য-বিবৃতি ও টকশোগুলোতে অন্তত তাই নিয়মিতভাবে প্রকাশ করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে গত সোমবার নির্বাচন কমিশন প্রধান জনাব রকিব উদ্দিন আহমদ কর্তৃক আগামী ২০১৪ সালের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর তা আরো পরিষ্কার হয়ে গেছে।
এমতবস্থায় এরা সবাই একপ্রকার উপায়হীন। কিন্তু যখন তাদেরকে ভবিষ্যত সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হয় তখন তাদের স্বভাব সুলভ ভঙ্গিতে একটা উত্তরও প্রকাশ করছেন। আর তা হচ্ছে গণতন্ত্রের সঠিক চর্চা, গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান। কিন্তু এখানেও সমাধান নেই। কারণ, গণতন্ত্রের সঠিক চর্চা করার যথেষ্ট সময় রাজনীতিবিদগণ পেয়েছেন এবং তা করতে করতেই তারা আজকের এই অবস্থায় পতিত হয়েছেন।
এমতবস্থায় কেউ কেউ অবশ্য তৃতীয় শক্তির উত্থানের কথা বলছেন। মত প্রকাশ করছেন তৃতীয় শক্তির উত্থান অতীব জরুরী হয়ে পড়েছে বলে। তবে তারা যার যার অঙ্গন এবং যার যার দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই তৃতীয় শক্তির ইঙ্গিত করছেন এবং নিজেদেরকেই তৃতীয় শক্তির দাবিদার প্রমাণ করতে আকার ইঙ্গিত দিচ্ছেন। কিন্তু আমরা বলতে পারি এরাও প্রচলিত সিস্টেমেরই একটি অংশ। তাদের দলীয় নামটাই শুধু আলাদা।
কার্যতঃ তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তারাই যদি তৃতীয় শক্তির ভূমিকায় অবতীর্ণ হোন তাহলে দেখা যাবে বর্তমান ক্ষমতাসীন জোট এবং বিরোধী দলীয় জোট যা করছে তারাও তাই করবেন। তারা যেমন রাষ্ট্রক্ষমতায় গিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদ তসরুপ করে তদ্রুপ তারাও অনায়াসে তাই করবে। এটা অনেকটা ‘যে যায় লঙ্কায় সে হয় রাবণ’ প্রবাদ বাক্যের মত। এর কারণও রয়েছে।
আর তা হচ্ছে সিস্টেম। প্রবাদ আছে ‘যস্মিন দেশে যদাচার’। আপনি যদি বাঁকা রাস্তায় গাড়িতে চালাতে যান তবে আপনাকে গাড়ি আঁকাবাঁকাভাবেই চালাতে হবে। ইচ্ছে থাকলেও আপনি সোজা চালাতে পারবেন না। আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে গিয়ে যে সকল নিয়ম-নীতি অনুসরণ করতে হয় তাতে করে এটা নিঃসন্দেহ যে আপনাকে এখনকার রাজনীতিকদের মতই চরিত্র ধারণ করতে হবে।
সৎ, ভদ্র ইত্যাদি গুণ নিয়ে আপনি রাজনীতিতে টিকে থাকতে পারবেন না। সিস্টেমই আপনাকে দূরে ঠেলে দেবে। তাই এটা হলফ করে বলা যায় সিস্টেমের পরিবর্তন না করে শুধু ব্যক্তি পরিবর্তন করে পরিস্থিতির পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। আর পরিবর্তিত রূপটাকে যদি তৃতীয় শক্তি বলে প্রচার করা হয় তাও সার্থকতা পাবে না।
তাহলে তৃতীয় শক্তির রূপ কেমন হবে? এর উত্তর হচ্ছে তৃতীয় শক্তি এমন এক নতুন সিস্টেমের উপর দাঁড়াবে যা নিখুঁত এবং নির্ভেজাল।
হতে পারে সেটা আমাদের কাছে অপরিচিত, হতে পারে আমাদের কাছে সেটা নতুন। কিন্তু মনে রাখতে হবে তৃতীয় শক্তির নামে বর্তমান রাজনীতিতে সক্রিয় কোন একটা অংশের উত্থান হলে সেটা নতুন বোতলে পুরনো মদের মতই ঠেকবে। এমনিতেই রাজনীতিতে অনেক জল ঘোলা হয়েছে, রাজনীতিবিদগণ তাদের অবস্থান হারিয়েছেন, সাধারণ মানুষের আস্থা হারিয়েছেন। এই অবস্থায় নতুন করে তৃতীয় শক্তি তৃতীয় শক্তি করে নতুন করে জল ঘোলা করবেন না। তৃতীয় শক্তি তার সময়মতই উত্থিত হবে।
সে তার আপন স্থান নিজ থেকেই করে নেবে। অযথা আস্থা হারানো ব্যক্তিগণ এ নিয়ে ঘাটাঘাটি না করলেও চলবে। বরং যোগ্যতা অর্জন করে একে গ্রহণ করার জন্য, নিজেদের সৌভাগ্যবান প্রমাণ করার জন্য পবিত্র হওয়ার চেষ্টা করুন। মোট কথা তৃতীয় শক্তির উত্থান হবে সত্যিকার পরিবর্তন নিয়ে। পরিবর্তন নিয়ে আসবে ঐক্যে, শৃঙ্খলায়, আনুগত্যে ও সততায়।
পরিবর্তন স্বভাবে, আচরণে, চরিত্রে। আর যদি তৃতীয় শক্তি তা করতে ব্যর্থ হয় তবে কোন তৃতীয় শক্তি বলেই গন্য হবে না। এটা হবে জনগণের আবেগ নিয়ে আরেক জোচ্চুরি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।