আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার ক্যামেরায় শচীন

১৯৯৫ থেকে ২০১৩। শচীন টেন্ডুলকারের ছবি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করেছেন আমাদের আলোকচিত্রী শামসুল হক। এই অভিজ্ঞতাই তিনি জানাচ্ছেন অধুনার পাঠকদের। সঙ্গে তাঁর ক্যামেরায় শচীনের কিছু ছবি

মানুষ যত বড় হোক না কেন, তার হাসিই বলে দেয় সে কত বড় মনের মানুষ। শচীন টেন্ডুলকার এমনই একজন মানুষ, যাঁর সঙ্গে কেউ না মিশলে বুঝবে না, ব্যক্তি শচীন কতটা অমায়িক।

আমার মতে, শচীন টেন্ডুলকার ক্রিকেট বিশ্বে অন্যতম বিনয়ী একজন ক্রিকেটার। সারাক্ষণ যাঁর মুখে একচিলতে হাসি লেগেই থাকে।

আমি শচীনের প্রথম ছবি তুলি ১৯৯৫ সালে শারজায় এশিয়া কাপে। সেই শুরু হলো। এরপর নানা সময়ে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে শচীন আমার ক্যামেরাবন্দী হন।

২০১০ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ক্রিকেট খেলা ছিল ঢাকা ও চট্টগ্রামে। সেবার খেলার পরে আর্মি গলফ মাঠে শচীন গলফ খেলতে যান। ভাবলাম, এই সুযোগ তো হাতছাড়া করা যাবে না। তাঁকে বুঝতে না দেওয়ার জন্য চোখ ক্যামেরার লেন্সে না লাগিয়ে ছবি তোলার চেষ্টা করি। কিন্তু শচীন বুঝে যান।

তখন শচীন আমাকে কাছে ডেকে অনুরোধ করেন আমার তোলা সেই ছবি যেন কাউকে না দিই। পরের দিন অনুশীলনের পর আমি ভারতীয় দলের খুব কাছে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছিলাম। হঠাৎই শচীন আমাকে ‘দাদা, দাদা’ বলে ডাক দেন। আমি কাছে যেতেই আমাকে আগের দিনের ঘটনা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আপনার তো ছবি তুলতে চোখ লাগে না। গতকালই তো তার প্রমাণ দেখলাম।

আজকে যে ক্যামেরায় চোখ লাগিয়ে ছবি তুলছেন?’ শচীনের সঙ্গে গলফ মাঠের ছবি তোলার ঘটনা নিয়ে আমি বেশ হাসাহাসি ও রসিকতা করেছিলাম। আমি শচীনকে উত্তর দিই, কাল আপনি নিষেধ করেছিলেন, তাই ছবি কাউকে দিইনি। এমনকি ভারতীয় সাংবাদিককেও নয়। শচীন অনুরোধ করেছেন তা তো রাখতেই হবে। সেবার ওয়ানডে ও টেস্ট খেলা শেষে সব ক্রিকেটারকে ক্রিকেটার আশরাফুল তাঁর বাসায় দাওয়াত দেন।

শচীনও গিয়েছিলেন। সেখানে শচীনের ইলিশ মাছ খাওয়ার ছবি তুলেছিলাম আমি।

মাঝে আরও খেলার মাঠে আমার ক্যামেরায় ধরা পড়েন শচীন। তবে ঢাকায় ২০১২ সালে এশিয়া কাপের সময় আবার সুযোগ এল শচীনের সঙ্গে একান্তে সময় কাটানোর। বাংলাদেশের সঙ্গে খেলার আগে হোটেল সোনারগাঁওয়ে আমি ক্রিকেটারদের সম্মানে দেওয়া এক আয়োজনে গিয়েছিলাম।

সেখানে আমাকে দেখে শচীন স্মিত হেসে বলেন, ‘আপনি এখানেও এসেছেন ছবি তুলতে, তাই না?’ আমি বলি, না আজকে আমি শুধু দাওয়াতই খেতে এসেছি। শচীনের সঙ্গে হোটেলে এক রুমে সোফায় বসে আড্ডা দিই। আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে শচীন ভক্তদেরও অটোগ্রাফ দেন। সেই আড্ডায় ক্রিকেটার শচীনকেই খুঁজে পেলাম না। মানুষ শচীনই যেন আড্ডা জমিয়ে রাখলেন।

আমি যখন বললাম, আপনার শততম সেঞ্চুরির জন্য কোটি কোটি বাংলাদেশি দর্শক অপেক্ষা করে। তারা আপনার জন্য প্রার্থনা করে। এ কথা শুনে শচীনের ভ্রু কুঁচকে যায়। শচীন বলেন, ‘তাই নাকি? কেন আপনারা প্রার্থনা করেন?’ আমি বলি, ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকার তো ভারতের নয়। শচীন তো সারা বিশ্বের ক্রীড়ামোদী দর্শকদের জন্য আনন্দ।

শচীনের সেঞ্চুরির জন্য সবাই বসে থাকে। আমার কথা শুনে শচীনের কি সেই লাজুক হাসি। আমি শচীনকে বলেছিলাম, পরের দিনের বাংলাদেশের সঙ্গে খেলায় শচীন সেঞ্চুরি করবেন, কিন্তু ভারত হেরে যাবে। আমার কথা শুনে শচীন বেশ অবাকই হয়েছিলেন। কাকতালীয়ভাবে আমার সেই কথা সত্য হয়েছিল, শচীন শততম শতরান পেয়েছিলেন এবং ভারত হেরে গিয়েছিল।

শচীন সব সময়ই বেশ বিনয়ের সঙ্গে অমায়িকভাবে কথা বলেন। শচীনের সঙ্গে সেই আড্ডাতে তাঁর পরিবারের কথাও উঠে আসে। আমি জানতে চেয়েছিলাম, শচীনের ছেলেও কি ক্রিকেটার হবে কি না? শচীন জানিয়েছিলেন, ‘ছেলে কিংবা মেয়ে বড় হয়ে যা হতে চায়, তা-ই হবে। আমার নিজের কোনো পছন্দ নেই। ’

সেই আড্ডায় বুঝেছিলাম শচীন বেশ খাদ্যরসিক।

ম্যাকারনি-পাস্তা খুব পছন্দ করেন । রুমে শেফকে ডেকে নিয়ে শচীন কম তেলে হালকা আঁচে ম্যাকারনি রান্না করার পদ্ধতি শিখিয়ে দেন। সেই আড্ডায় শচীন ইংরেজি আর হিন্দি ভাষার মিশ্রণে তাঁর গল্পের ঝুলি খুলে বসেছিলেন।

শচীন আমার ছবি তোলার ক্যারিয়ার নিয়েও আমার গল্প শুনতে চান। আমার কথা এত বড়মাপের একজন ক্রিকেটার শুনেছেন, সেটা ভেবে আজও আমি অবাক হই।

কখনো কোনো ক্রিকেটারের কাছে ম্যাচ টি-শার্ট চাইনি। সেবার প্রথম শচীনের কাছে একটি ম্যাচ টি-শার্ট চেয়েছিলাম। শচীন আমাকে বলেন, ‘কি, আমাকে তাড়াতাড়ি অবসরে পাঠাতে চান? আমি অবসরে গেলেই তো টি-শার্ট দেব। ’

আমার তোলা একটি ছবিতে তিনি আমাকে অটোগ্রাফ দিলেন।



সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.