যে ছবিটি দেখছেন’ তা ফটোগ্রাফারের তোলা বিখ্যাত কোন ছবি নয়। এটা Bicycle Thieves(Lardi de bicilette-1948) মুভি থেকে সংগ্রহ করে নেয়া একটি স্থির চিত্র।
মুভি সম্পর্কে আমার ধারণা খুবই কম। তারপরেও বন্ধুদের কাছ থেকে রিভিউ গুলো জেনে ভালো মুভিগুলো দেখতে মিস্ করি না।
সত্যিকার অর্থেই যারা ইন্টেলেকচুয়াল,তাদের কোন জাত নেই,নেই কোন সময়।
এরা সবসময়ই আধুনিক। সময়ের সাথে তাদের কাজগুলো আরও বিশালাকায় ধারণ করে। Vittori de sica তেমনই একজন চলচ্চিত্র পরিচালক। তার সৃষ্ট মাস্টার পিচ “Bicycle Thieves” পৃথিবীর অন্যতম সেরা একটা মুভি হিসাবে ধরা হয়। মুভিটা আজ থেকে ৬৫ বছর আগের।
আমি হলফ করে বলতে পারি মুভিটা দেখার সময় আপনার একবারও মনে হবে না যে আপনি ৬৫ বছর আগের মুভি দেখছেন,শুধু সাদাকালো প্রিন্টের ব্যাপারটা আমলে না নিলে। ক্যামেরার আঙ্গেল,পজিশন সবকিছু একদম পারফেক্ট। বাংলায় যেটাকে বলা হয় নিখুঁত।
মুভিটিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন lamberto maggiorani আর Enzo staiola। চরিত্রগুলো সম্পর্কে বলার আগে একটা কথা বলে নেয়া দরকার।
মুভিটা যখন মুক্তি পায় তখন ইতালিতে “নিওরিয়েলিজম”(১৯৪৪-১৯৫২) আন্দোলন চলছিলো। “ইতালি নিওরিয়েলিজম ” এর প্রধান কথা ছিলো মুভির কাহিনী অবশ্যই বাস্তববাদী হতে হবে। মুভির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে হবে ওয়ার্কিং ক্লাস লোকের জীবনযাত্রা তাদের দারিদ্রতা,অভাব অনটন। আর এ সকল মুভিতে যাদেরকে নেয়া হত তারা সকলেই নন-প্রোফেসনাল অভিনেতা হতে হবে। মুভিটা দেখার পর আমার কাছে কখনই মনে হয়নি যে যারা অভিনয় করেছে তারা নন-প্রোফেসনাল।
Lamberto maggiorani এর অভিনয়ের তুলনা আমি কারও সাথে করব না। অভিনয়ের মাধ্যমে বাস্তবতা এত ভালো করে কেউ ফুটিয়ে তুলতে পারবে কি না আমার সন্দেহ আছে।
Enzo staiola মাত্র ৭ বছর বয়সে মুভিটিতে অভিনয় করেছিলেন। কথা বলার ভঙ্গি,মুখের এক্সপ্রেসান আর কনফিডেন্স আপনাকে ঘায়েল করবে অনবরত। বিস্মিত করবে পলে পলে।
মুভির প্লট সম্পর্কে এবার কিছু বলি। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পরে ইতালির আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট নিয়ে মুভিটি সৃষ্ট। একটা চাকরির জন্য সাধারণ মানুষগুলোর আকুতি দেখতে পাবেন মুভিটির শুরুতেই। Ricci(lamberto maggiorani) নামের চরিত্রটি চাকরি পায়। কিন্তু সাথে শর্ত জুড়ে দেয়া হয়।
সাথে অবশ্যই সাইকেল থাকতে হবে চাকরীটি করার জন্য। ছোট্ট কিছু ত্যাগ করে বড় কিছু পওয়ার উদ্দেশ্যে কিনে ফেলতে হয় সাইকেল। কাজে যাওয়ার প্রথম দিনই চুরি হয়ে যায় সাইকেল। বাবা আর ছেলে মিলে খুঁজতে বের হয় হারিয়ে যাওয়া সাইকেল। এর পর থেকে শুরু হবে মুভির প্রধান আকর্ষণ।
মুভিটির প্রায় শেষ পর্যন্ত ও হতাশ হতে দেখা যায়নি চরিত্র দুটিকে। লড়ে গেছে খুঁজে পাওয়ার উদ্দেশ্যে। একটু ভালো করে বেচে থাকার সন্ধানে। এক একটা অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটতে থাকবে আপনার চোখের সামনে। এক সেকেন্ডের জন্য আপনার মনে হবে না যে আপনি একঘেয়েমি অনুভব করছেন।
সেই সময়কার আর্থ-সামাজিক অবস্থা অত্যন্ত সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে মুভিটিতে।
আমি যদি পুরো কাহিনীটা বলে দেই তবুও আপনাকে মুভিটা দেখতে হবে। ক্যামেরার ফ্রেম ধরা দেখতে। আর অভিনয় যে একটা আর্ট এটা বুঝতে একবার হলেও মুভিটা দেখা উচিৎ। যারা মুভিটা এখনও দেখেননি তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললাম কথাগুলো।
Vittori de sica এর Lardi de bicilette-1948 মুভিটা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছেন আমাদের উপমহাদেশের বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার বিমল রায়। তৈরি করেছেন “দো বিঘা জমিন(দুই বিঘা জমিন)”। , এছাড়াও অনুপ্রাণিত হয়েছেন আমাদের মুভি পাগল সম্প্রদায়ের কাছে অত্যন্ত পরিচিত নাম-সত্যজিৎ রায়। তৈরি হল আরেক মাস্টার পিচ “পথের পাঁচালী”। , বিখ্যাত ইরানীয়ান চলচ্চিত্র পরিচালক জাফার পানাহি এবং দেরিয়াশ মেহেরজু মনে করেন তাদের কাজের উপর মুভিটির অনেক প্রভাব অনেক।
শেষ করার আগে আমার একটা প্রিয় ডায়ালগ বলব। যেটা মুভিটি থেকেই সংগৃহীত------
“সকল সমস্যা ই সমাধান করা যায়,শুধুমাত্র মৃত্যু ছাড়া ”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।