খোলা মাঠে বিশাল মঞ্চ করেই হচ্ছে গান-বাজনার জলসা। কিন্তু বাজনার তালে তালে উন্মাতাল নাচ বা গানের সঙ্গে গলা মিলিয়ে উল্লাসে ফেটে পড়ার আয়োজন এটি নয়। এ গান-বাজনাতেও আনন্দ-উচ্ছ্বাস আছে। তবে তার প্রকাশ ভিন্ন। এ গান সুরের গভীরে গিয়ে আত্মনিমগ্ন হওয়ার।
এ জলসা সুরের মূর্ছনা, বাজনার তাল, লয়ের বিপুল বৈচিত্র্যময় নান্দনিক সৃজনশৈলীর প্রকাশে অভিভূত হওয়ার। সেই সুর যখন হূদয় ছুঁয়ে যায়, তখন শ্রোতার নিজের অজান্তেই মুখ থেকে বের হয়ে আসে ‘বাহ্ বাহ্’ ধ্বনি। কোলের ওপর ফেলে রাখা নিশ্চল হাত দুটো তৎপর হয়ে ওঠে করতালিতে শিল্পীকে অভিনন্দিত করতে। দুই রাত ধরে তাই করছেন উচ্চাঙ্গসংগীত শুনতে আসা কয়েক হাজার শ্রোতা-দর্শক।
বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের আয়োজনে আর্মি স্টেডিয়ামে উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের গতকাল শুক্রবার ছিল দ্বিতীয় দিন।
উৎসবের সহযোগী কলকাতার সংগীত রিসার্চ একাডেমি (এসআরএ)। এতে সার্বিক সহযোগিতা দিচ্ছে প্রথম আলো। সহযোগিতায় রয়েছে দ্য ডেইলি স্টার ও এবিসি রেডিও। সম্প্রচার সহযোগিতায় মাছরাঙা টেলিভিশন। ২৮ নভেম্বর থেকে দ্বিতীয় বারের মতো এ উৎসব শুরু হয়েছে।
চলবে কাল ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। অনলাইনে আগাম নাম নিবন্ধন করে শ্রোতারা এ উৎসবে অংশ নিচ্ছেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে ভোর পর্যন্ত চলছে গান-বাজনা ও নৃত্যের পরিবেশনা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান: দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানটি উৎসর্গ করা হয় পণ্ডিত বারীন মজুমদারকে। প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, বাংলা গান হলো বাণীপ্রধান।
হিন্দুস্তানি সংগীতে সুর প্রাধান্য পায়, বাণী সেখানে গৌণ। গায়ক সেই সুরের দোলা শ্রোতাদের মধ্যে ছড়িয়ে দেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘হিন্দুস্তানি সংগীতে বিশ্বসংসারকে বর্ণনার চেষ্টা রয়েছে। এ সংগীতের মধ্য দিয়ে সেই বৃহৎ পরিমণ্ডলে যাওয়ার সুযোগ আছে। আমাদের উদ্দেশ্য সংগীতের সংকীর্ণ সীমানা থেকে বৃহতের কাছে যাওয়া।
’
বিশেষ অতিথি ছিলেন সংগীতবেত্তা আলীমুর রহমান খান। তিনি জানান, আদম থেকে ইনসান হয়ে ওঠাই মানুষের সাধনা। এ জন্য চিন্তাচেতনা, ধ্যান-ধারণা ও সাধনার প্রয়োজন। সংগীতের সাধনা ইনসান হয়ে উঠতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন এসআরএর নির্বাহী পরিচালক রবি মাথুর ও বেঙ্গল গ্রুপের সভাপতি আবুল খায়ের।
সুরে-ছন্দে: বিদুষী আলারমেল ভাল্লির ভরতনাট্যম নৃত্য দিয়ে শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় দিনের অধিবেশন। তিনি শুরু করেন প্রকৃতি ও সূর্যের সৌন্দর্য বর্ণনা ও স্তুতিবিষয়ক ‘আদিত্য নমস্তপ্রিয়াম’ নামের নৃত্য দিয়ে। তাঁর শেষ পরিবেশনা ছিল ‘সুয়ারালায়া’। এ নাচে ভরতনাট্যমের বিভিন্ন মুদ্রাকে, বিশেষ করে পায়ের কাজগুলোকে বিশেষভাবে তুলে ধরেন শিল্পী। প্রতিটি নাচ শুরুর আগে শিল্পী নাচের বিষয়বস্তু, বোল ও অলংকরণের বর্ণনা দেন।
ফলে পরিবেশনাগুলো দর্শকদের কাছে আরও বেশি উপভোগ্য হয়ে উঠেছিল।
এরপরে ছিল সাকেত সাহুর বেহালাবাদন। তাঁর বাদনে করুণ সুরের মূর্ছনা ছড়িয়ে পড়ে হেমন্তের স্তব্ধ হিমেল রাতের হাওয়ায়। রাত নয়টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় রাগ ও বেহাগ দিয়ে বেহালাবাদন শুরু করেন তিনি।
গতকাল আরও ছিল কর্ণাটকি সংগীতশিল্পী বিদুষী বম্বে জয়শ্রীর পরিবেশনা, বাংলাদেশের অসিত দের কণ্ঠসংগীত, পণ্ডিত পূর্বায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের সেতারবাদন, পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর কণ্ঠসংগীত ও ওস্তাদ রইস খানের সেতারবাদন।
আজকের অনুষ্ঠান: রাজরূপা চৌধুরীর সরোদবাদন দিয়ে শুরু হবে অধিবেশন। এরপর কণ্ঠসংগীত পরিবেশন করবেন কুমার মাধুর। পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা পরিবেশন করবেন সন্তুরবাদন। পণ্ডিত উদয় ভাওয়ালকরের কণ্ঠসংগীত, পণ্ডিত স্বপন চৌধুরীর তবলাবাদন, রিনাত ফোওজিয়ার সেতারবাদন, বিদুষী পদ্মা তালওয়ালকর পরিবেশন করবেন কণ্ঠসংগীত। শেষ হবে পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার বাঁশির সুরে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।