আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আউটসোর্সিংয়ে সেরা সাঈদ (বাংলাদেশ)।

পড়াশোনা করতেন কানাডায়। চাকরির সুযোগ পেয়েছিলেন বিশ্বখ্যাত সার্চইঞ্জিন গুগলে। তবে মন পড়ে ছিল বাংলাদেশে। তাই ফিরে আসেন দেশে। একসময় তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে দারুণ এক কাজের ক্ষেত্রে ঢুকে পড়েন সাঈদ ইসলাম।

নিজের মেধা খাটিয়ে দেশে বসে বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাজ করে যাচ্ছেন। ভালো আয়ের পাশাপাশি অনেকের কর্মসংস্থান যেমন করে দিতে পেরেছেন, তেমনি নিজের কাজের ক্ষেত্রগুলোতেও পেয়েছেন ‘সেরা’র স্বীকৃতি। সাঈদ ইসলামের কাজের ক্ষেত্রটা একটু ব্যাখ্যা করা যাক। কেতাবি ভাষায় একে বলা হয় ‘ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং’। বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তথ্যভান্ডার তৈরি, হাসপাতালের ব্যবস্থাপত্র, অনলাইন বিপণন, গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব প্রোগ্রামিং, গ্রাহকসেবা ব্যবস্থাপনা, ডেটা এন্ট্রি ইত্যাদি কাজ কম খরচে ভারত, বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইনের মতো দেশ থেকে করানো হয়।

আর এই কাজগুলো করেন মুক্ত পেশাজীবী বা ফ্রিল্যান্সাররা। আউটসোর্সিংয়ের কাজ পাওয়া যায় কিছু ওয়েবসাইটে, যেগুলোকে বলে অনলাইন মার্কেটপ্লেস। কাজদাতা কাজের ধরন, পরিমাণ, সময়সীমা, দরদাম সেখানে দিয়ে দেন। ফ্রিল্যান্সাররা সেই কাজ কত ডলারে করে দেবেন তা জানিয়ে ‘বিড’ করেন। এরপর কাজ পাওয়ার পালা।

নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হলে ফ্রিল্যান্সারের ব্যাংক হিসাবে ডলার চলে আসে। সাঈদ ইসলাম এই আউটসোর্সিংয়ের কাজই করছেন। কাজ পাওয়ার সবচেয়ে বড় ওয়েবসাইট ওডেস্ক ডট কম গত বছর বিভিন্ন কাজে দক্ষ ফ্রিল্যান্সারদের একটি তালিকা প্রকাশ করে। এই তালিকার গ্লোবালাইজেশন বিভাগের তিনটিতে গোটা দুনিয়ার মধ্যেই শীর্ষস্থান অর্জন করেন সাঈদ ইসলাম। তিনি ওডেস্কে কাজ শুরু করেন ২০১০ সালে।

এই সাইটের মাধ্যমে চার হাজার ঘণ্টার বেশি কাজ করেছেন। গত বছরের এপ্রিল মাসে ওডেস্কের ‘স্পট লাইট কন্ট্রাক্টর’ তালিকায়ও জায়গা করে নেন তিনি। ১৯৭৮ সালে জন্ম নেওয়া সাঈদ ইসলাম ছোটবেলা থেকেই কারিগরি বিষয়ে গভীর কৌতূহলী ছিলেন। ঢাকায় স্কুল ও কলেজের পর্ব চুকিয়েছেন ১৯৯৪ সালে। তবে তখন পর্যন্ত নিজের কোনো কম্পিউটার ছিল না।

বললেন, ‘১৯৯৫ সালে চলে যাই কানাডায়। ইউনিভার্সিটি অব উইন্ডসোরে কম্পিউটার বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করি। তখনো একটা কম্পিউটার ব্যবহারের জন্য বন্ধুদের কাছে যেতে হতো। ’ সেই সাঈদ ইসলামই পড়াশোনা শেষ করে ২০০১ সালে কানাডায় ‘টেকনিক্যাল সাপোর্ট’ হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেন। কম্পিউটার সফটওয়্যারের নানা কাজে দক্ষ হয়ে ওঠেন।

পাশাপাশি টেলিযোগাযোগ এবং মুক্ত অপারেটিং সিস্টেম লিনাক্স বিষয়ে গবেষণা করতেন। কাজ সম্পর্কে সাঈদ বললেন, ‘একবার এক প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটারের সমস্যা সমাধান করার পর সেই প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্ট অনুরোধ করেন সেখানে “সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার” হিসেবে যোগ দিতে। আমি যোগ দিই সেই নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির প্রতিষ্ঠানে। কানাডায় ভালোভাবে থাকার সুযোগ ছিল। গুগলের জ্যেষ্ঠ সিস্টেম প্রকৌশলী হিসেবে চাকরির সুযোগও পাই।

কিন্তু দেশে কিছু করব—এই ভেবে ফিরে আসি। ’ ২০০৬ সালে ঢাকায় চালু করেন নিজের সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান বিগমাসটেক কমিউনিকেশন লিমিটেড, যার কাজ তিনি চালাতেন কানাডা থেকেই। ২০০৯ সালে তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন। তখন এর বাইরে কানাডার একটি অনলাইন গেমস প্রতিষ্ঠানের তথ্যপ্রযুক্তি পরামর্শক হিসেবে কাজ শুরু করেন বাংলাদেশে থেকেই। দেড় বছর এ প্রতিষ্ঠানে সেবা দেন।

এর পর থেকে পুরোপুরি যুক্ত হয়ে যান আউটসোর্সিংয়ের সঙ্গে। কানাডা থেকে ফিরে এসে ‘এলেন, দেখলেন, জয় করলেন’—সাঈদের বেলায় এমনটা ঘটেনি। প্রথম বছর তেমন ভালো কিছু করতে পারেনি তাঁর প্রতিষ্ঠান। বললেন, ‘দেড় বছর চাকরি করি, এরপর আবার নিজের প্রতিষ্ঠানের কাজ শুরু করি। এখন আমার এই আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠানে ১০ জন ছেলেমেয়ে কাজ করছেন।

’ সাঈদ ইসলাম জিতেছেন বেসিস সেরা ফ্রিল্যান্সার পুরস্কার ২০১২। বিভিন্ন হিসাবে বাংলাদেশের প্রায় দেড় লাখ তরুণ এখন আউটসোর্সিংয়ে জড়িত। সাঈদ ইসলামের মতো সফল ফ্রিল্যান্সাররা প্রযুক্তিমনস্ক তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেন। সূত্র ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।