বিদেশি ফুটবলারদের মান নিয়ে ঢালাওভাবে সমালোচনা হচ্ছে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে পেশাদার লিগ শুরুর পর কোনো ক্লাবেই মানসম্পন্ন বিদেশি নেই। এক সময়ে শুধু বড় বড় দলগুলোতে বিদেশিদের দেখা গেলেও এখনতো প্রতি দলে চারজন কর মাঠে নামছেন। এরপরও মাঠ কাঁপানো বিদেশি ফুটবলার খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। হাইপ্রোফাইল বায়োডাটা দেখে তাদেরকে রেজিস্ট্রেশন করা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তার প্রমাণ মিলছে না।
এ নিয়ে ফুটবলসংশ্লিষ্ট অনেকেই বিরক্ত। তাদের কথা অযথা বিদেশি নামিয়ে দেশের ফুটবলারদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিচ্ছে। জাতীয় দলের সাবেক দুই ফুটবলার রুম্মন ওয়ালি বিন সাবি্বর ও ছাঈদ হাসান কানন বলেন, ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ঢাকার মাঠে যেসব ফুটবলার আসতেন তাদের কাছে অনেক কিছু শেখার ছিল। সাবি্বর স্বীকারও করেছেন, মোহামেডানে নালজেগার, বিজন তাহেরী ও এমেকারা যখন খেলতেন তখন ফুটবলে অনেক কিছু শিখেছি। বলতে পারেন তাদের শিক্ষা কাজে লাগিয়ে মাঠে নিজেকে তুলে ধরতে পেরেছি।
আর কাননতো বললেন, নাসের হেজাজি যখন আসলেন তখন উনি যে শিক্ষা দিলেন তাতে আমি অবাক। উনি আমাকে বুঝালেন, প্রতিপক্ষ যখন আক্রমণে আসবে তখন গোলরক্ষককে কোথায় দাঁড়িয়ে থাকতে হবে বা ওপর ও নিচের বল কীভাবে সেভ করত হয়। আমি কোনো দেশি কোচকে হেয় করছি না কিন্তু এটা সত্যি যে হেজাজির শিক্ষাগুলো আমার খুব কাজে এসেছে।
এখন যেসব বিদেশি খেলছেন, তাদের কাছে কিছু শেখার নেই বলে দেশের অনেক ফুটবলারই বলছেন। দেশসেরা স্ট্রাইকার জাহিদ হাসান এমিলিতো স্পষ্ট করে বলেছেন, ঢাকার মাঠে এখন সনি নর্দে ছাড়া মানসম্পন্ন কোনো বিদেশি ফুটবলারই নেই।
একমাত্র তার কাছে কিছু শেখার আছে। কিছুদিন আগে এক টকশোতে তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন, মানহীন বিদেশিদের দলে অন্তর্ভুক্ত করে অনেক তরুণ ফুটবলারের জ্বলে উঠার সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে এমিলি বাফুফে ও দলগুলোকে বিষয়টি ভাববার অনুরোধ রাখেন। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আলফাজ আহামদ বলেন, দেশে নতুন ফুটবলারের সন্ধান মিলছে না। এ অবস্থায় প্রতিটি দলে চারজন করে বিদেশি নামানোর কোনো যুক্তি খুঁজে পাচ্ছি না।
মানতাম যদি মানসম্পন্ন হতো। বিদেশিদের নিয়ে আক্ষেপ আসলে অনেকেরই। তবে লক্ষ্য করলে দেখা যায় মান যাই থাকুক না কেন গত কয়েক মৌসুমে বড় বড় দলগুলোতে বিদেশিরা জয়ের পেছনে মুখ্য ভূমিকা রাখছেন। গতবার লিগে মোহামেডানের পজিশন সম্মানজনক না হলেও দেশের সব তারকা ফুটবলারকে পেছনে ফেলে এ দলের নাইজেরিয়ান ফুটবলার মরিসন সর্বোচ্চ গোলদাতা হন। যে কারণে আবাহনী এবার তাকে মোটা পারিশ্রমিককে দলে টেনেছে।
আর সনি নর্দেকে বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক দিয়ে শেখ জামাল কাছে পেয়েছে। এ দুই বিদেশি ফেডারেশন কাপে ঠিকই নিজেদের তুলে ধরছেন। তাছাড়া বিদেশিদের নিয়ে আক্ষেপ করলেও মৌসুমের প্রথম আসরে দেশিদের পারফরম্যান্স কি চোখে পড়ার মতো? প্রতিটি ম্যাচে জয়ের পেছনে ভূমিকা রাখছেন বিদেশিরাই। ফেডারেশন কাপে শেখ জামাল ধানমন্ডি, ঢাকা আবাহনী, মুক্তিযোদ্ধা ও টিম বিজেএমসি শেষ চারে ঠাঁই পেয়েছে। পারফরম্যান্স বিচার করলে দেখা যাবে এখানে আশিভাগ অবদান বিদেশিদেরই।
দেশসেরা স্ট্রাইকার এমিলি বা আক্রমণভাগে দেশের ফুটবলারদের এক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয় মনে হচ্ছে। প্রথম ম্যাচে রহমতগঞ্জের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করলেও এরপর এমেলিকে খুঁজেই পাওয়া যায়নি। আবাহনী ও শেখ জামালে যেমন মরিসন, সনি নর্দের দাপট তেমনিভাবে মুক্তিযোদ্ধার নাইজেরিয়ার কিংসলে এলিটা পিছিয়ে নেই। বিজেএমসিও সেমিতে এসেছে বিদেশিদের দাপটে। মানসম্পন্ন না হওয়ার পরও দলগুলোকে তো বিদেশিদের ওপরই ভরসা রাখতে হচ্ছে।
তাহলে কি বলব দেশের ফুটবলারদের মান এতটা খারাপ হয়ে গেছে যে কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। এ ব্যাপারে জাতীয় দলের ফুটবলাররা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় দলের সাবেক এক কোচ বলেন, আসলেও ঢাকার মাঠে এখন ভালোমানের বিদেশি নেই। তবে বাস্তবতা হচ্ছে দেশিদের আরও করুণ অবস্থা। অনেকের মান এত খারাপ যে ৪৫ মিনিট খেলার যোগ্যতা রাখে না।
কিন্তু উপায় কি, এদেরকে ছাড়া দলতো আর চলবে না। দেশেতো নতুন ফুটবলার সৃষ্টিই হচ্ছে না। তিনি বলেন, ফুটবলে দেশের বেহাল দশার চিত্র এখানেই ফুটে উঠছে। ক্লাবগুলোও কম দায়ী নয়, পারফরম্যান্স নেই তারপরও দেখুন আকাশছোঁয়া পারিশ্রমিক দিচ্ছে। আর এতেই বেজে যাচ্ছে তাদের বারোটা।
কেননা খেলোয়াড়রা দেখছেন খেলতে পারি আর নাইবা পারি লাখ লাখ টাকা পাচ্ছি। ক্রিকেটের মতো ক্লাবগুলো ফুটবলারদের পারিশ্রমিক নির্ধারিত করে দিক, তাহলে টের পাবে। তারা নিজ থেকেই তখন মান বাড়ানোর উদ্যোগ নেবে। তা না হলে আমি বলব দেশীয় ফুটবলারদের মান আরও নিচে নামতে থাকবে। পুরো ব্যাপারটি ফুটবল ফেডারেশনকেও গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।