আসসালামু-আলাইকুম..........
হে আত্ত্বসমর্পনকারী!
তাওহীদের উপর ভিত্তিশীল মুসলিম ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য তখনই সুদৃঢ় হবে, যখন তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক হবে আল্লাহ্ তা’আলার সন্তুষ্টি ও ছওয়াব লাভের উদ্দেশ্যে নিবেদিত। যেমন আল্লাহ্ বলেন:
“তারা (মুমিনগণ) আল্লাহর ভালবাসা লাভের প্রত্যাশায় অভাবগ্রস্থ, ইয়াতীম ও বন্দীদেরকে আহার্য দান করে থাকে। তারা বলে যে, আমরা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তোমাদেরকে আহার্য দান করে থাকি এবং তোমাদের নিকট থেকে কোন প্রতিদান ও কৃতজ্ঞাত কামনা করি না। ” (সূরা দাহার- ৮-৯)
আল্লাহ্ আরো বলেন:
“তারা যেন তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়, মার্জনা করে দেয়; তোমরা কি চাও না যে, আল্লাহ্ তোমাদের ত্রুটি ক্ষমা করেন। বস’ত: আল্লাহ্ পরম ক্ষমাশীল, অতীব দয়ালু।
” (সূরা নূর- ২২)
মুসলামানদের যাবতীয় সমস্যা, মতভেদ-মতবিরোধ সমাধানের সিদ্ধান- নিতে হবে পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ্ হতে। এর কোন বিকল্প নেই। আল্লাহ্ বলেন:
“হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ্র আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর ও (তার উপর ভিত্তিশীল) নেতৃবর্গের অনুসরণ কর। কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দিলে, উহাকে আল্লাহ্ ও তদীয় রাসূলের বিধানের দিকে ফিরিয়ে দাও- যদি তোমরা প্রকৃতই আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান পোষণ করে থাক। এটাই উত্তম এবং পরিণাম হিসেবে অতি সুন্দর।
” (সূরা নিসা-৫৯)
ইমাম আবু হানীফা (রঃ) ও ইমাম শাফেয়ী (রঃ) সঙ্গতই বলেছেন,
“ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী চলাই আমার মাযহাব। ”
জীবনের সকল পর্যায়ে ছোট-বড় সর্ব বিষয়ে পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ্ হতেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ অপরিহার্য। আর তা হলেই কেবল মাত্র আল্লাহ্ মুসলমানদের অস্তিত্ব ও ঐক্য বজায় রাখবেন এবং তাদেরকে উভয় কালীন কল্যাণ ও সফলতা প্রদানে ধন্য করবেন যখন তারা আল্লাহ্ ও তদীয় রাসূলের আদেশ-নিষেধের একান্ত অনুসরণ করবে এবং এ পথে আহ্বান করবে, এ পথে পরস্পরে সহযোগিতা করবে। অন্যথায় কি বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে তার জন্য আল্লাহর বাণীটি ভেবে দেখুন:
“যারা নিজেদেরকে নাছারা বলে দাবী করে আমি তাদের নিকট হতে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছি। অত:পর তাদেরকে যে উপদেশ প্রদান করা হয়েছিল তার একাংশ তারা ভুলে বসেছে।
পরিণামে আমি ক্বিয়ামত দিবস পর্যন্ত তাদের মধ্যে শত্রুতা ও আক্রোশের সৃষ্টি করেছি। আর আল্লাহ তাদের কর্ম কান্ড সম্পর্কে তাদেরকে অচিরেই অবহিত করবেন। ” (সূরা মায়েদা- ১৪)
এছাড়া রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সৎ কাজের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধ ত্যাগকারীদের কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন, যেন একে অপরের বিরূদ্ধে লড়াইয়ে জড়িয়ে না পড়ে। যেমনটি বাণী ইসরাঈলীদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, তারা পরস্পরকে মন্দ হতে নিষেধ করত না। আল্লাহ্ বলেনঃ
“তারা যে অন্যায় অপকর্ম করত তা হতে তারা পরস্পরকে নিষেধ করত না।
তাদের কর্ম কান্ড কতই না জঘণ্য ছিল। ” (মায়েদা- ৭৯)
বর্তমান মুসলিম সমাজে সর্বোচ্চ বিপদ জনক অপকর্মগুলোর মধ্যে জঘণ্যতম বিষয় হল, আল্লাহর সাথে শির্ক করা। চাই তা আল্লাহর বিধান পরিপন্থী সংবিধান অনুযায়ী ফায়সালা প্রদানের মাধ্যমে বা আল্লাহর দুশমনদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপনের মাধ্যমে বা তাঁর প্রদত্ত ধর্মের কিছু অংশের সাথে উপহাসের মাধ্যমে অথবা ধর্মে নেই এমন কিছু ইবাদত প্রভৃতি উদ্ভাবনের মাধ্যমে বা আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো নিকট দু’আ করার মাধ্যমে অথবা আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো সন্তুষ্টির জন্য যবেহ করার মাধ্যমে। অথবা যাদু করা, গণক ও ভেল্কিবাজদের নিকট যাওয়া ও তাদের বিশ্বাস করার মাধ্যমে। তাদের নিকট হতে চিকিৎসা বা সমাধান তলবের মাধ্যমে।
অনুরূপভাবে মারাত্মক অন্যায় হল, ফরয ইবাদত সমূহ ছেড়ে দেয়া, যার শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে ছালাত আদায় না করা ও যাকাত প্রদান না করা। এ দুটি ফরয ইবাদত সম্পাদনের মাধ্যমে একজন ব্যক্তিকে আল্লাহ্ মুসলিম হিসেবে গণ্য করেছেন। আল্লাহ্ বলেনঃ
“যদি তারা তওবাহ্ করে, ছালাত প্রতিষ্ঠা করে ও যাকাত প্রদান করে তবেই তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই হবে। ” (তওবাহ্- ১১)
এছাড়াও ব্যাপকভাবে মুসলিম সমাজে ছড়িয়ে পড়া মহাপাপ, অন্যায়-অপকর্মের সীমা নেই। যার মধ্যে জঘণ্যতম কয়েকটি হল, খুন, ধর্ষণ, লুন্ঠন, চুরি, ডাকাতি, মদ্যপান, ব্যাভিচার, সুদ, ঘুষ, মিথ্যাবাদিতা, প্রতারণা, গান-বাজনা, পর্দাহীনতা, বর্বরতা, পিতা-মাতার সাথে অসদাচরণ, রক্তের সম্পর্ক ছিন্ন করণ, স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের প্রতি নির্যাতন… ইত্যাদি।
বর্তমান যুগের মত দু’শ বছর পূর্বে আরব উপদ্বীপে শির্কসহ অন্যান্য পাপাচারের ভীষণ ব্যাপকতা ছিল। সেখানে ছিল না কোন নিরাপত্তা, বরং চরম শংকা ও সীমাহীন নৈরাজ্যকর অবস্থা বিরাজমান ছিল। অত:পর আল্লাহ্ অনুগ্রহ করে মুহাম্মদ বিন আবদুল ওহাব (রহঃ) এবং মুহাম্মদ বিন সঊদ (রহঃ)কে তাওফীক দিলেন। তাঁরা দু’জন মিলে উক্ত বিশাল এলাকার মানুষের মধ্যে আল্লাহর রহমতে তাঁর দ্বীনকে পুন:প্রতিষ্ঠিত করলেন। ফলে ঐক্য সুপ্রতিষ্ঠিত হল, শান্তি-শৃংখলা ফিরে এল, জাতির কল্যাণের দ্বার হল উম্মোচিত।
এভাবেই কুরআন-সুন্নাহ্র আইন প্রবর্তিত হলে ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে জাতির প্রতিটি পর্যায় পর্যন্ত সুখ-সমৃদ্ধি আসবে ইনশাআল্লাহ্ এবং জান্নাতের পথ হবে সুপ্রসস্ত। আল্লাহ্ আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কুরআন ও সুন্নাহ্র পথে চলার তাওফীক দিন। আমীন॥
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।