আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সঙ্ঘবদ্ধ দান আনে অফুরন্ত কল্যান- ১



দান সর্বোত্তম মানবীয় গুণ দান সর্বোত্তম মানবীয় গুণ। মানুষ ও পশুর পার্থক্য হচ্ছে, মানুষ দান করতে পারে আর পশুর দান করার ক্ষমতা নেই। দান করার সামর্থ্যরে কারণেই পশুর স্তর থেকে মানুষের উত্তরণ ঘটেছে মানবীয় স্তরে। এ জন্যেই নবীজী (স.) বলেছেন, তোমার কাছে থাকা একটি খেজুরের একাংশ হলেও দান কর। আল কোরআন, পুরাণ, বেদ, বাইবেল, ত্রিপিটক, গীতা, তাওরাত, জবুর, জিন্দাবেস্তাসহ সকল ধর্মগ্রন্থেই দানের গুরুত্ব নানাভাবে বর্ণিত হয়েছে।

পরম প্রভু দাতাকে পছন্দ করেন। তাই যুগে যুগে মহামানবেরা নিজেরা দান করেছেন, অন্যদের দানে উৎসাহিত করেছেন, চারপাশের মানুষের দানকে সংগঠিত করে সৃষ্টির সেবায় ব্যয় করেছেন। দান প্রাচুর্য ও সমৃদ্ধির সোপান দান দরিদ্র ও নিঃস্বদের জীবনে স্বস্তি আনার সাথে সাথে দাতার জীবনেও আনে অফুরন্ত কল্যাণ। দাতা যা দান করেন, প্রাকৃতিক নিয়মেই তা হাজার গুণে ফিরে আসে দাতার কাছে। পরম প্রভু বলেন, ‘সৎ দান এমন একটি শস্যবীজ, যাতে উৎপন্ন হয় ৭টি শীষ আর প্রতিটি শীষে থাকে শস্যদানা।

আল্লাহ যাকে চান তাকে বহুগুণ প্রবৃদ্ধি দান করেন। ’ (সুরা বাকারা ২১৬)। দানে বৈষয়িক সমৃদ্ধির একটি বিবরণ রয়েছে মুসলিম শরীফে। এক আবেদ পাহাড়ে হেঁটে বেড়ানোর সময় হঠাৎ শুনতে পেলেন যে, ‘অমুকের বাগানে পানি দাও’। কিছুণ পরই বৃষ্টি শুরু হলো এবং পানি পাহাড়ের পাশে একটি নালা দিয়ে গড়াতে লাগলো।

তিনি কৌতূহলী হয়ে ঐ নালাকে অনুসরণ করলেন। কিছুদূর গিয়ে তিনি দেখলেন, একজন কৃষক কোদাল দিয়ে মাটি কেটে বাগানে পানি ঢোকার পথ করে দিচ্ছে। নাম জিজ্ঞেস করতেই তিনি চমকে উঠলেন। কারণ এ নামই তিনি শুনছিলেন পাহাড়ে হেঁটে বেড়ানোর সময়। তার কাছে জানতে চাইলেন যে, কোন পুণ্যের বিনিময়ে প্রকৃতি এভাবে তাকে সহযোগিতা করছে।

সে তখন বললো, পুণ্যের কথা আমি বলতে পারবো না। তবে আমি এ বাগানের ফসলকে তিন ভাগ করি। এক ভাগ পরিবারের ভরণ-পোষণ, এক ভাগ জমিতে বিনিয়োগ এবং বাকি এক ভাগ দান করি। এজন্যেই হয়তো আল্লাহ আমাকে এভাবে সাহায্য করেন। সকল ধর্মের শাশ্বত শিক্ষা হচ্ছেঃ  দান উপার্জনকে শুদ্ধ করে।

 দান পাপ মোচন ও অন্তরে তৃপ্তি প্রদান করে।  দান-বালা-মুসিবত ও রোগ-ব্যাধি দূর করে।  দান ভয়, পেরেশানি ও দুঃখ-কষ্ট দূর করে।  দান দারিদ্র বিমোচন ও সম্পদে বরকত প্রদান করে। দান ঈমানের শর্ত বিশ্বাসী বা ঈমানদার হওয়ার এবং কোরআন থেকে হেদায়েত লাভের অন্যতম শর্ত হচ্ছে দান।

‘নিঃসন্দেহ কোরআন বিশ্বাসীদের পথপ্রদর্শক। বিশ্বসী তারাই যারা অদৃশ্যে বিশ্বাস করে, সালাত কায়েম করে এবং প্রদত্ত রিজিক বা উপার্জন থেকে দান করে। ’ (সুরা বাকারা ২-৩)। অর্থাৎ ঈমানদার হওয়া বা হেদায়েত লাভের জন্যে দান করা পূর্ব শর্ত। এ জন্যেই নবীজী (স.) সবসময় যার যা আছে সেখান থেকেই অংশবিশেষ দান করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন।

সাধারণ ভ্রান্ত হচ্ছে, আমার উপার্জন, আমার ধন-সম্পত্তির মালিক আমিই। জমিয়ে রাখা বা খরচ করা আমার ইচ্ছাধীন। এ থেকে কাউকে কিছু দেয়া না দেয়া আমার ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। কিন্তু আল কোরআনের শিক্ষা এর সম্পূর্ণ বিপরীত। সুরা (আয্-যারিয়াত)-এর ১৯ আয়াতে সুষ্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের সম্পদের নিঃস্ব ও অসহায়দের অধিকার রয়েছে।

’ অর্থাৎ আমরা যা দান করি, কোরআনের দৃষ্টিতে তা দয়া নয়; তা অসহায়দের অধিকার বা হক্কুল ইবাদ। আপনি যখন দান করেন, তখন আপনি সৃষ্টির অধিকারকেই সম্মান করেন। তখন স্বাভাবিকভাবেই আল্লাহ আপনাকে সম্মানিত করবেন। নবীজী (স.) খুব স্পষ্ট করে বলেছেন, সৃষ্টির সেবায় যা ব্যয় করবে, তা-ই হচ্ছে তোমার সম্পদ, তোমার পরিত্রানের কারক। আর যা জমিয়ে রেখে যাবে, তা তোমার নয়; তোমার উত্তরাধিকারীর ভোগে ব্যবহৃত হবে।

ঋগ্ বেদে বলা হয়েছে, ‘এসো প্রভুর সেবক হই। গরীব ও অভাবীদের দান করি। ’ প্রকৃতপক্ষে হক্কুল ইবাদ বা মানবতার সেবাই স্রষ্টাকে পাওয়ার সহজ ও প্রশস্ত পথ। যে দান নষ্ট হয়ে যায় (১) লোক দেখানো বা স্বার্থসিদ্ধির জন্যে দান যে দান লোক দেখানো, যা মানুষের প্রশংসা/বাহবা কুড়ানোর জন্যে দাতা পরিচয় বা স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে করা হয়, তা সৎ দান নয়। (২) দান করে খোঁটা দেয়া ও প্রতিদান আশা করা দান করে গ্রহীতাকে খোঁটা দেয়া, অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে শোষণ করা দানের বরকতকে নষ্ট করে।

দানের বিনিময়ে গ্রহীতার কাছ থেকে যদি কোন সুযোগ, আনুকূল্য, সমীহ বা বস্তুগত প্রাপ্তির প্রত্যাশা করা হয়, তবে তা যথার্থ দান নয়। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে দান করে ও তা গোপন রাখে এবং গ্রহীতাকে এজন্যে খোঁটা ও কষ্ট দেয় না তারা পুরস্কৃত হবে। তাদের কোন ভয় ও দুঃখ-কষ্ট থাকবে না। (সুরা বাকারা ২৬৩)। নিঃশর্ত দানের জন্যে রয়েছে চমৎকার পুরস্কার।

তারা লাভ করে আশীর্বাদধন্য দীর্ঘ জীবন ও অমরত্ব। (ঋগ্ বেদে ১:১২৫)। (চলবে)


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।