অসংখ্যবার আমি বলেছি, মহাজোটের মুখে লাথি মার, মহাজোট থেকে বেরিয়ে আস। জাতীয় পার্টি একটা জিন্দা লাশ হয়ে গেছে। এরশাদ সাহেব সব সময় বলেছেন, সময় হলেই বেরিয়ে আসবেন। বলেছেন, 'আই অ্যাম এ সোলজার। আই নো হোয়েন টু ফাইট, হোয়েন টু ফায়ার'।
আসলেই তিনি সোলজার, পলিটিশিয়ান নন। আমি যেমন সেনাবাহিনী সম্পর্কে খুব বেশি জানি না, তেমনি রাজনীতি সম্পর্কেও এরশাদ সাহেব খুব অভিজ্ঞ তা বলা যাবে না। মঙ্গলবার চ্যানেল আইয়ের 'তৃতীয় মাত্রা' অনুষ্ঠানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমদ এ কথা বলেন। সম্প্রতি এরশাদ নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিলে কাজী জাফর তার বিরোধিতা করেন। এর পরই একে-অন্যকে দল থেকে বহিষ্কার করেন।
জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রেসিডিয়াম সদস্য হায়দার আকবর খান রনো। হাসপাতাল থেকে দুই ঘণ্টার জন্য বাইরে আসার অনুমতি নিয়ে টকশোয় যোগ দেন কাজী জাফর। তিনি বলেন, আমার রাজনৈতিক অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার। আমি প্রায় ১৮ মাস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম জাতীয় পার্টি যাতে মহাজোট থেকে বেরিয়ে আসে। এরশাদ সাহেব বললেন, সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচনে যাবেন না।
শেষ বয়সে বেইমান হয়ে মরতে চান না। এ মুহূর্তে একদলীয় পাতানো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে লোকে তাকে থুথু দেবে। সত্যি বলতে কী, আমি তার কথা বিশ্বাস করেছিলাম। কারণ একজন ভদ্রলোক, একজন রাজনীতিবিদ, একটা পার্টির চেয়ারম্যান জনগণের সামনে এতসব প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, ধারণা ছিল তিনি কথা রাখবেন। রাখেননি।
এখন আবার জাপা প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। এ সিদ্ধান্তে তিনি অনড় থাকবেন কি না তা আমার মুখ দিয়ে না বলানোই ভালো। আশা করি তিনি শেষ পর্যন্ত কথা রাখবেন। তবে এই নাটকের শেষ কোথায়, তা তিনিই জানেন।
এরশাদের জাতীয় পার্টির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর আহমদ বলেন, টেলিভিশনে দেখলাম এরশাদ সাহেব বলেছেন, 'আমাদের প্রার্থীরা সব মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিচ্ছে।
নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। তার কাছে আমার সবিনয় প্রশ্ন_ এটা কি তিনি আগে জানতেন না? অসংখ্যবার আমি বলেছি একতরফা নির্বাচন হলে রক্তপাত হবে, অভ্যুত্থান হবে। তিনি বলেন, হঠাৎ টেলিভিশনের পর্দায় দেখলাম সাতজন মন্ত্রী জাতীয় পার্টি থেকে হচ্ছে। এরপর হঠাৎ দেখলাম তিনি মহাজোট থেকে বেরিয়ে এলেন। দুই ভাবে বের হওয়া যায়।
এক. বেরিয়ে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করা। দুই. গৃহপালিত বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করা। উনি দ্বিতীয়টি গ্রহণ করলেন। এককভাবে নির্বাচন করবেন। অথচ, এত দিন তিনি বলে এসেছেন সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচনে যাবেন না।
এমনকি আওয়ামী লীগের সঙ্গে তিনি বেহেশতে যেতেও প্রস্তুত নয়। জাতীয় পার্টি আবার একীভূত হবে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা ১৮ ডিসেম্বর কাউন্সিল ডেকেছি। সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে। সঞ্চালকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত প্রায় দেড় বছর ধরে উনি বিএনপির সঙ্গে গোপন আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। আলোচনার দায়িত্বটা আমার ওপরই দিয়েছিলেন।
তিনি নিজ দলের ৯২ জন প্রার্থীর একটা তালিকাও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের কাছে দেন। পরে স্বাক্ষরিত একটা রেফারেন্স লেটারসহ ৭৬ জনের আরেকটা তালিকা খালেদা জিয়ার কাছে পাঠান। একদিকে তিনি মহাজোট ছাড়ছেন না, একই সঙ্গে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তাহলে এ কথা বলা যায় না তিনি ক্ষমতার সিঁড়ি হতে চান না। কাজী জাফর বলেন, দেশ একটা গণঅভ্যুত্থান বা গৃহযুদ্ধের দিকে যাচ্ছে।
রাজধানীর রাস্তায় যেভাবে খণ্ডযুদ্ধ দেখছি, পুলিশ যেভাবে গাড়ির ওপর বসে পাখি শিকারের মতো মানুষ মারছে, বিরোধী দলের অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গুলি_ এ অভিজ্ঞতা আমাদের কখনো ছিল না। আমরা সব সময় দেখেছি সরকারের দিক থেকে প্রচেষ্টা থাকে বিরোধী দলকে নির্বাচনে আনার। এই প্রথম দেখছি সরকার চাইছে বিরোধী দল না আসুক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।