আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কী তামসা ! জিএসপি বাতিল হোক, তবু গার্মেন্টস মালিককে শাস্তি দেয়া হবে না

জীবন বুনে স্বপ্ন বানাই মানবজমিনে অনেক চাষ চাই খবরটি হল, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা বা জিএসপি বাতিল করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। শ্রমিক ইউনিয়ন করতে না দেয়া, শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম হত্যা ও হত্যার ঘটনায় কোন ব্যবস্থা না নেয়া, তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ড প্রভৃতি অভিযোগ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। বিশেষত শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার না থাকা এবং নিরাপদ কর্ম পরিবেশ না থাকাটা সবচেয়ে বড় অভিযোগ। আমেরিকান ফেডারেশন অব লেবার এন্ড কংগ্রেস অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্গানাইজেশন (এএফএল-সিআইও) ২০০৭ সালে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বাতিলের আবেদন করে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে। তাজরীনের অগ্নিকাণ্ডে শত শ্রমিক পুড়ে মরার পর আমরা কী দেখলাম ? মালিক দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা তো নেয়াই হল না বরং বিজিএমইএ মালিককে বাঁচানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।

সংসদীয় কমিটি পর্যন্ত বিজেএমইএর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেছে। যারা মারা গেছে তাদের অনেকে ক্ষতিপূরণ পায়নি। যারা আহত অবস্থায় আছে, তারা অনেকে বকেয়া বেতন পায় নি। চাকুরিচ্যুত শ্রমিকরা বকেয়া বেতন-ভাতা পায়নি। মালিক দিব্যি বহাল তবিয়তে আছে।

তার বিরুদ্ধে দু’টি মামলা দায়ের করা হলেও তাকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। দাড়িওয়ালা এই দেলোয়ার হোসেন টিভি ক্যামেরার সামনে তার গার্মেন্টেসে গভীর ষড়যন্ত্রের কথা বলেছে, শ্রমিকদের সব বকেয়া পরিশোধের অঙ্গীকার করেছে। কিন্তু বাস্তবে কিছুই করে নি। এ হল বিরাট বাটপার। তাকে গ্রেফতার করে আচ্ছামতো প্যাদানি দিলে কমপক্ষে বাইরের দেশে আমাদের দেশের ভাবমূর্তি ঠিক থাকত।

কিন্তু এই সব অমানুষদের আসকারা দিয়ে দেশের রপ্তানী বাজারকে হুমকি মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। দেশ গোল্লায় যাক, রপ্তানী বাজার গোল্লায় যাক, একজন দেলোয়ার দেশ এবং রপ্তানী বাজারের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। ট্রেড ইউনিয়ন তো নাইই, বরং কিছু গার্মেন্টস কয়েক দিন পর পর বকেয়া বেতন ভাতা না দিয়েই বন্ধ করে দেয়া হয়। শ্রমিকরা আন্দোলনে গেলে অভিযোগ তোলা হয় গভীর ষড়যন্ত্রের। তারপর কয়েক মাস পর আবারও গার্মেন্টস চালু হয়, কিন্তু পুরোনো শ্রমিকদের বেতন ভাতা আর দেয়া হয় না।

গার্মেন্টসের নারী শ্রমিকদের কোন ইজ্জত সম্মান নাই। ৫ মিনিট দেরি করে এলে দিনের বেতন কাটা যায়। অথচ ওভারটাইমের টাকা দেয়ার ব্যাপারে তালবাহানার শেষ নাই। এদের বেতন ভাতার ঠিক নাই। চাকুরির নিশ্চয়তা নাই।

ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নাই। কর্মঘণ্টার কোন ঠিক নাই। সকাল ৮টা থেকে রাত ১০ টা বা ১২ টা পর্যন্ত কাজ চলে। নানা অজুহাতে সাপ্তাহিক ছুটি নাই বা লোক দেখানো ছুটি আছে। অতিরিক্ত কাজ করালেও নানা অজুহাতে ওভারটাইমের টাকা মেরে দেয় মালিক পক্ষের লোক।

আন্দোলন দমনের জন্য আছে ঝুট সন্ত্রাসী যারা মালিকপক্ষের পালিত। আর শ্রম অধিদপ্তরের কিছু ঘুষখোর কর্মকর্তা সব সময় মালিক পক্ষের সেবাদাস। এদের কাছে শ্রমিকরা অভিযোগ করে কোন সুফল পায় না। কাগজে কলমে গার্মেন্টস সেক্টরে কোন শিশু শ্রমিক নাই, কিন্তু আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে শিশু শ্রমিকও দেখা যায়। এত সব মধ্যযুগীয় অত্যাচারের কারণে কিছু দিন পর পর গার্মেন্টস শ্রমিকরা ফুসে ওঠে।

তখন পুলিশ তাদের নিষ্ঠুরভাবে বেধড়ক পেটায়। হামলা-মামলা-জেল জরিমানার শিকার হয় শ্রমিকরা। গার্মেন্টস মালিকরা তখন মুখস্থ অভিযোগ তোলে গভীর ষড়যন্ত্রের। গভীর ষড়যন্ত্র তত্ত্বের নিচে চাপা পড়ে যায় শ্রমিকদের অধিকার। সরকার মাঝে মাঝে শ্রমিক অধিকারের কথা বলে।

কিন্তু বাস্তবে কিছুই করে না। শ্রমিকরা মালিকপক্ষের মার খায়, মাস্তানদের হাতে মার খায়, পুলিশের হাতে মার খায়, আগুনে পুড়ে মরে, তারপরও তারাই সব সময় ষড়যন্ত্রের হোতা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। হায়, আমার সভ্য দেশ ! বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টর কতগুলো অমানুষের হাতে জিম্মি। এদের কারণে বাংলাদেশের অন্যান্য রপ্তানীকারকরাও জিএসপি সুবিধা বঞ্চিত হতে যাচ্ছে। এই দেশে কোন বিচার নাই।

বিচারহীন-বিবেকহীন এক রাষ্ট্রব্যবস্থার কারণে আমাদের সকল সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।