হঠাৎই বিস্ময় ছড়িয়ে পড়ল গোটা বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। এটা কী করলেন রেফারি জালালউদ্দিন? গোলরক্ষক বল ক্লিয়ার করলেন। স্ট্রাইকার গিয়ে পড়লেন তাঁর শরীরের ওপর। পেনাল্টি!
ক্ষোভে ফেটে পড়ল মুক্তিযোদ্ধা। ম্যাচ বর্জনেরও একটা আলামত দেখা গেল।
রেফারি এক ফাঁকে ধাক্কা-টাক্কাও খেলেন মুক্তিযোদ্ধার খেলোয়াড়দের হাতে। সেই পেনাল্টি থেকে বাঙ্গুরার গোলে ম্যাচে ফিরল বিজেএমসি (১-১)।
ফেডারেশন কাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালের তখন আর চার মিনিট বাকি। এই সময়ে আর গোল হয়নি, অতিরিক্ত ৩০ মিনিটেও গোলের দেখা পায়নি কেউ। টাইব্রেকারে হাসি মুক্তিযোদ্ধারই।
৫-৩ গোলে জয় তুলে ২০০৫ সালের পর এই প্রথম কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনাল্রে খেলার সুযোগ। মুক্তিযোদ্ধার আনন্দ যেন আর ধরে না!
কিন্তু ভাগ্যের খেলায় মুক্তিযোদ্ধা না জিতলে কী হতো বলা মুশকিল। কারণ রেফারির বিতর্কিত পেনাল্টি তারা নাও মানতে পারত। গোলমাল হতো। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন রেফারি জালাল।
তবে মাঠে সবারই অভিন্ন মত ওটা কোনোভাবেই পেনাল্টি নয়। স্ট্রাইকারের ফাউল না ধরে উল্টো বাঁশি বাজালেন রেফারি!
ঘটনাটা এ রকম, মুক্তিযোদ্ধার গোলরক্ষক আমিনুল প্রথমার্ধের শেষ দিকে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন। তাঁর জায়গায় নামেন রাসেল মাহমুদ (লিটন)। শেখ রাসেলের ডিফেন্ডার মামুন মিয়ার সহোদর ভালোই আগলাচ্ছিলেন মুক্তিযোদ্ধার পোস্ট। ৮৬ মিনিটে বক্সে একটা বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে বলটা লাগে তাঁর হাতে।
আগুয়ান বিজেএমসির স্ট্রাইকার বাঙ্গুরা এসে পড়েন তাঁর গায়ের ওপর।
এই বিতর্কিত পেনাল্টিই ম্যাচ-পরবর্তী সংবাদ সংম্মেলনের বেশির ভাগজুড়ে থাকল। টাইব্রেকারে বিজেএমসির তারার শট আটকে নায়কে পরিণত হওয়া মাহমুদ চলে গেলেন আড়ালে। জাহেদ পারভেজের কর্নারে এলিটা কিংসের দুর্দান্ত হেডে ৭৬ মিনিটে মুক্তিযোদ্ধাকে এগিয়ে নেওয়া গোলও পেছনের পাতায়।
ম্যাচে দুই পক্ষই শারীরিক শক্তি প্রয়োগ করে খেলেছে।
সমান মানের দল হওয়ায় টক্কর হলো সেয়ানে-সেয়ানে। একক প্রাধান্য ছিল না কারোরই। ৯০ মিনিট প্রায় সমানতালে খেলার পর অতিরিক্ত প্রথম ১৫ মিনিট মুক্তিযোদ্ধার, পরের ১৫ মিনিট আবার সমান সমান। প্রথমার্ধে মুক্তিযোদ্ধা গোল করার সুযোগ পেয়েছে গোটা চারেক। একটা বারে লেগেছে, মিস করেছেন বিপ্লব এবং দুই স্ট্রাইকার এলিটা কিংসলে ও এন কে ওচা কিংসলে।
এই অর্ধে গোল বের করতে পারলে নির্ধারিত সময়েই মুক্তিযোদ্ধা জিতে যায়।
মুক্তিযোদ্ধা আগের দুটি ম্যাচে পাঁচ মিডফিল্ডার নিয়ে খেললেও কাল খেলিয়েছে চার মিডফিল্ডার। জাহেদ পারভেজ মাঝমাঠ থেকে এগিয়ে খেলেছেন দুই স্ট্রাইকারের পেছনে। এই কৌশলে কাজও হচ্ছিল মুক্তিযোদ্ধার। ওদিকে আগের ম্যাচে দুবার পিছিয়েও শেখ রাসেলের বিপক্ষে টাইব্রেকারে জেতা বিজেএমসি মানসিকভাবে ছিল উজ্জীবিত।
ফেলেক্স, সামসির নেতৃত্বে মাঝমাঠ অনেক আক্রমণ তৈরি করেছে। কখনো কখনো লম্বা থ্রু বাড়িয়েছে মুক্তিযোদ্ধার বক্সে। তবে মুক্তিযোদ্ধার রক্ষণ জমাট থাকায় গোলের দেখা মেলেনি।
শেষ পর্যন্ত রেফারির আনুকূল্যে পেনাল্টি পেয়েও ভাগ্যের খেলায় আর জেতা হলো না। টাইব্রেকারে মুক্তিযোদ্ধার এনামুল, বিপ্লব, চৌমরিন, এন ওচা কিংসলে ও এলিটা কিংসলে গোল করলেন।
বিজেএমসির ইলিয়াসু, বাঙ্গুরা, ইকাঙ্গা পেলেন গোল। ফেড কাপ এখানেই শেষ বিজেএমসির। শুক্রবার ফাইনালে শক্তিশালী শেখ জামালের সামনে মুক্তিযোদ্ধা। গত আট বছরে লিগে রানার্সআপ হলেও কোনো টুর্নামেন্টের শিরোপা জয়ের দাবি নিয়ে এই প্রথম তারা শেষ মঞ্চে। সেটিও বিজয়ের মাসে!
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।