আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এরশাদ অনড়, রওশনের সরকারমুখী তৎপরতা

সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে গতকাল শনিবারও অনড় অবস্থানের কথা জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। তবে নির্বাচনকালীন সরকার থেকে জাপার সব মন্ত্রী-উপদেষ্টার পদত্যাগ করা ও রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাপার একটি অংশের সরকারমুখী তৎপরতা নিয়ে সৃষ্ট ধূম্রজাল কাটছে না।

জাপার উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র জানায়, সরকারের নানামুখী তৎপরতা ও চাপের মুখেও এরশাদ ‘একতরফা’ নির্বাচনে না যাওয়ার ব্যাপারে অনড় থাকলেও তাঁর স্ত্রী রওশন এরশাদসহ জাপার তিন মন্ত্রী-উপদেষ্টা সরকারে থেকে যাওয়ার তৎপরতায় যুক্ত আছেন। এ কারণে এরশাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছুটা জটিলতা দেখা দিয়েছে। তাই এরশাদ ও তাঁর দলের চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার হতে আরও কয় দিন সময় লাগতে পারে।

এরশাদ গত মঙ্গলবার নির্বাচন বর্জনের আকস্মিক ঘোষণা ও পরদিন সরকারে থাকা তাঁর দলের মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের পদত্যাগের নির্দেশ দেন। এতে বেশ চাপে পড়ে এরশাদের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র আওয়ামী লীগ। এ অবস্থায় জাপাকে নির্বাচনে ধরে রাখতে রাজনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে নানা চাপ দেওয়া হচ্ছে। এরশাদের মত পাল্টাতে সরকার রওশন এরশাদকে কাজে লাগাচ্ছে বলেও দলীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, এরশাদকে বাগে আনার চেষ্টার পাশাপাশি সরকার এখন রওশন এরশাদকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করে জাপাকে নির্বাচনে রাখার বিকল্প কৌশল নিয়ে তৎপরতা চালাচ্ছে।

এ ধরনের তৎপরতার কথা এরশাদও জেনেছেন। তিনি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, তিনি রওশনকে বলেছেন, এ ধরনের কোনো প্রস্তাব এলেও যেন তা অগ্রাহ্য করেন।

এদিকে এরশাদকে বাদ দিয়ে গঠিত নতুন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমদ গতকাল দুপুর ১২টায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বিশ্বস্ত সূত্রে তিনি জানতে পেরেছেন, রওশন এরশাদকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়ে এইচ এম এরশাদ অবসরে যাবেন বা বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাবেন।

এরপর বেলা সোয়া দুইটায় এরশাদ বারিধারায় তাঁর বাসার নিচে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি যত দিন জীবিত আছি, আমিই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। আমি জীবিত থাকতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হয় কী করে?’ তিনি বলেন, জাপা এই নির্বাচনে যাবে না, এটাই শেষ কথা।

আর বিদেশে পাঠানোর যে কথা উঠেছে, সে বিষয়ে এরশাদ বলেন, ‘এখন আমি এতটা বিপদে নেই। ’

যদিও গতকাল সকাল ছয়টায় গলফ খেলতে যাওয়ার সময় এরশাদ বাসার নিচে অপেক্ষমাণ দলের নেতা-কর্মী ও সাংবাদিকদের কাছে গ্রেপ্তারের আশঙ্কা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি যেভাবে চলছে, তাতে মনে হয় ওরা আমাকে জেলে দেবে। তবে আমিও ছাড়ব না। জেলে গেলে আট-দশজনকে নিয়েই যাব।

এদিকে জাপার সাত মন্ত্রী-উপদেষ্টার পদত্যাগ করা, না করা নিয়ে গতকালও দিনভর ছোটাছুটিতে ছিলেন গণমাধ্যমের কর্মীরা। একবার এরশাদের বাসায়, আরেকবার বিমানমন্ত্রী রুহুল আমিন হাওলাদার, আবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী রওশন এরশাদের বাসায় ছুটেছেন। খুঁজে বেড়িয়েছেন পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা জিয়াউদ্দিন আহমেদের তৎপরতা।

বেলা ১১টায় এরশাদ প্রথম আলোকে আর বেলা সোয়া দুইটায় অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের মহাসচিব (রুহুল আমিন হাওলাদার) প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিতে যাচ্ছেন। ’

কিন্তু বেলা সাড়ে তিনটায় রুহুল আমিন হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সময় চেয়েছিলাম।

কিন্তু সময় পাওয়া যায়নি। আগামীকাল (আজ রোববার) যখনই সময় দেবেন, তখনই পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া হবে। ’

রওশন এরশাদ, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জিয়াউদ্দিন আহমেদও পদত্যাগপত্র দিয়েছেন কি না জানতে চাইলে জাপার মহাসচিব বলেন, ‘তাঁরাও করবেন। তাঁদের সঙ্গে কথা হয়েছে। ’ এ বিষয়ে সকালে এরশাদ প্রথম আলোকে বলেন, রওশন, আনিসুল ইসলাম ও জিয়াউদ্দিনও পদত্যাগপত্র পাঠাবেন।

আর না পাঠালেও কিছু যায়-আসে না।

এদিকে সরকারের একটি সূত্র জানায়, গতকাল রুহুল আমিন হাওলাদার প্রধানমন্ত্রীর কাছে কোনো সময় চাননি, বরং আজ রোববার জাপার কিছু নেতার সঙ্গে সরকারি দলের বৈঠক হতে পারে।

গতকাল বেলা সোয়া একটার দিকে রওশন এরশাদের বাসায় বৈঠক করেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ। এর কিছু সময় পর ওই বাসায় যান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক ও সালমা ইসলামও। এই দুজন এরশাদের বাসা হয়ে সেখানে যান।

আর বেলা দেড়টার দিকে রুহুল আমিন হাওলাদারের বাসায় যান জি এম কাদের। তাঁরা প্রায় এক ঘণ্টা কথা বলেন।

বৈঠকের বিষয়ে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ কোনো কথা বলতে রাজি হননি। এ কয় দিন ধরে তাঁরা সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছেন।

 



সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।