প্রিলিমিনারির ফল প্রকাশের চার মাস হয়ে গেলেও ৩৪তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। কবে নাগাদ এই পরীক্ষা শুরু হবে সে প্রশ্নেরও উত্তর দিতে পারছে না সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি)। ফলে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ৪৬ হাজার ২৫০ জন পরীক্ষার্থী।
পরীক্ষার্থীরা বলছেন, অতীতে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশের মাস খানেকের মধ্যেই লিখিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হতো এবং তিন থেকে চার মাসের মধ্যেই পরীক্ষা সম্পন্ন হতো।
পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পুনর্মূল্যায়িত ফলে বাদ পড়া আদিবাসীদের একটি মামলার কারণেই এই সংকট তৈরি হয়েছে।
এখন পিএসসি আদালতের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছে। আদালত নির্দেশনা দিলেই লিখিত পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেবে পিএসসি।
দুই হাজার ৫২টি পদে নিয়োগের জন্য এ বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি ৩৪তম বিসিএসের প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে পিএসসি। ২৪ মে হয় প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। এক লাখ ৯৫ হাজার পরীক্ষার্থী এতে অংশ নেন।
গত ৮ জুলাই ফল প্রকাশ করা হয়। এতে ১২ হাজার ৩৩ জন উত্তীর্ণ হন। তবে এবারই প্রথমবারের মতো প্রিলিমিনারিতে কোটাপদ্ধতি চালু করায় অনেক মেধাবী বঞ্চিত হন, অন্যদিকে অপেক্ষাকৃত কম নম্বর পেয়েও আদিবাসী ও মুক্তিযোদ্ধা কোটায় অনেকেই উত্তীর্ণ হন। এ নিয়ে সারা দেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়লে ১০ জুলাই ফল পুনর্মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নেয় পিএসসি।
এরপর ১৪ জুলাই আগের মতো প্রচলিত পদ্ধতিতে সংশোধিত ফল প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয়।
মোট ৪৬ হাজার ২৫০ জন পরীক্ষার্থী এতে উত্তীর্ণ হন।
তবে আদিবাসীরা অভিযোগ করেন, দ্বিতীয়বার প্রকাশিত ফলে তাঁরা ২৮১ জন বাদ পড়েছেন, যাঁরা প্রথমবার উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। তাঁরা তাঁদেরও উত্তীর্ণ করার জন্য পিএসসিতে আবেদন করেন। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত না পেয়ে প্রথম ফলে উত্তীর্ণ ৫৯ জন আবেদনকারীর পক্ষে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া গত ২৮ জুলাই হাইকোর্টে রিট করেন। রিটে প্রথম ফলে উত্তীর্ণ ২৮১ জনকে বাদ দিয়ে প্রকাশিত ৩৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পুনর্মূল্যায়িত ফল কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে রুল চাওয়া হয়।
এই রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমেদ সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ৩১ জুলাই বুধবার একটি আদেশ দেন। তাতে প্রথম ফলে উত্তীর্ণ ৫৯ রিটকারীসহ ২৮১ জনকে বাদ দিয়ে প্রকাশিত ফল কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
এ ছাড়া পুনর্মূল্যায়িত ফলে ‘আদিবাসী’ কোটায় আবেদনকারীদের বাদ দেওয়ার কারণ জানতে চান হাইকোর্ট। তিন সপ্তাহের মধ্যে পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।
পিএসসির একজন সদস্য বলেন, আদিবাসীদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা আছে।
সে কারণেই প্রথমবার তাঁদের জন্য সর্বনিম্ন যে কাট নম্বর রাখা হয় তাতে মোট ৫৩২ জন আদিবাসী উত্তীর্ণ হন। কিন্তু দ্বিতীয়বার সবার জন্য যে কাট নম্বর ঠিক করা হয়েছে তাতে ২৮১ জন আদিবাসী বাদ পড়েছেন। এখন যদি এই ২৮১ জন আদিবাসী নিতে হয় তাহলে কাট নম্বর এতটাই নিচে নামাতে হবে যে ৮০ হাজার ২৭ জন প্রার্থীকে উত্তীর্ণ করতে হবে। এটি একেবারেই অবাস্তব।
পিএসসির ওই সদস্য বলেন, দুই হাজার ৫২টি পদের জন্য ৪৬ হাজার ২৫০ জন প্রার্থীর লিখিত পরীক্ষা কীভাবে নেওয়া হবে তা নিয়েই সংকটে আছে পিএসসি।
পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করে এবং বাস্তব অবস্থা জানিয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর আদালতকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কিন্তু আদালত থেকে এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। এরপর ২৮ অক্টোবর পিএসসি থেকে আবারও আদালতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় ৩৪তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না পিএসসি।
জানতে চাইলে পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ক্যাডার) আ ই ম নেছারউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আদালতকে পিএসসির অবস্থান জানানো হয়েছে।
এখন আদালত থেকে নির্দেশনা পেলেই আমরা লিখিত পরীক্ষার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব। ’
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।