একজন নগর পরিকল্পনাবিদ যে কিনা পৃথিবীরর বাইরে থেকে পৃথিবীকে দেখতে, জানতে ভালোবাসে।
উত্তরের দেরাদুন থেকে দক্ষিণের ভিশাখাপট্টম বা ভাইজ্যাগ যাওয়ার কারন ছিল মূলত সিম্পোজিয়ামে একটি পেপার প্রেজেন্ট করা এবং দীর্ঘ ৪৫ ঘন্টার ট্রেন যাত্রা উপভোগ করা তাও দুবার। এই ভ্রমনে আমি পাড়ি দিয়েছি সর্বমোট ৪১১৫ কিমি, পার হয়েছি ৮টি ভারতীয় প্রদেশ আর উপভোগ করেছি প্রকৃতির অপূর্বতা! আমার উপভোগ্য স্মৃতিগুলো নিয়েই তাই এ ধারাবাহিকের আয়োজন।
আজকের পর্বে থাকছে ভ্রমনের প্রথম অংশ। দেরাদুন থেকে দিল্লী হয়ে ভিসাখাপট্টমে পৌছাতে পার করা প্রথম ২৪ ঘন্টার (১লা ডিসেম্বর রাত ৯ট থেকে ২রা ডিসেম্বর রাত ১১টা পর্যন্ত) সচিত্র বর্ননা-
পথা চলা শুরু হল, সম্বল একটি হ্যাভারসেক ও হ্যান্ডব্যাগ।
দেরাদুন থেকে দিল্লী যাবার জন্য উঠে বসলাম এসি এক্সপ্রেসে আর বিছানা করেই শুয়ে পড়লাম কারন ভোর ৫.৩০ এ এটা দিল্লী পৌছে যাবে তাই ঘুমানোই সই।
দিল্লী পৌছেই মেট্রো ট্রেনে স্টেশন বদল করলাম এবং ছোলা-বাটুরা দিয়ে সকালের নাস্তা সেরে নিলাম।
উঠেলাম সমতা এক্সপ্রেসে আর সিট নন-এসি বিধায় সাথে আনা চাদর-বালিশ দিয়ে বিছানা পেতে বসে পড়লাম। এসিতে ৪ নং অপেক্ষমান তালিকায় এসে আর পাইনি তবে নন-এসিতে ভালোই হল। সব কয়টি ইন্দ্রীয় দিয়ে চারপাশেটা উপভোগ করতে পারব।
ট্রেন চলতে শুরু করল আর কিছুক্ষণের মধ্যেই শহর ছেড়ে উত্তর প্রদেশের গ্রামে প্রবেশ করলাম। চারিদিকে চাষাবাদ চলছে এখানে।
এরপর এল রাজস্থান। কিছুটা মরু-মরু আভাস পেলাম যেন চারিপাশে।
রাজস্থান পেরোতেই দুপুর হয়ে এল।
আন্ডা-বিরিয়ানী নামক চলে আর কি টাইপ খাবার দিয়ে পেট ভরালাম প্রথম দ্বি-প্রহরে যদিও তখন বুঝিনি ট্রেনের প্যান্ট্রি কারের খাবার কত মজার যা রাতে টের পেয়েছিলাম।
এসে পড়লাম মধ্য প্রদেশের চাম্বলে যা ছিল ফুলন দেবী আর পান সিং তোমারের আস্তানা। জানতে পারলাম এক সময় এখান থেকে ট্রেন যাওয়ার পথে ফুলন দেবীর ভয়ে সব দরজা-জানালা বন্ধ করে দিত লোকেরা। গেটে গিয়ে দাড়ালাম। কল্পনায় দেখলাম ফুলন দেবীকে ঘোড়ায় চড়ে আসতে, পান সিং তোমারকে বন্দুকক হাতে টিলার উপর বসে থাকতে।
৯.হঠাৎ একটি নদী পেরোলাম যার প্রায় পুরোটাই চরে ঢাকা। অনেকটা আমাদের পদ্মার মত। দেশের কথা মনে পড়ে গেল। কতদিন ট্রেনে চড়ে পার হইনি হার্ডিন্জ ব্রীজ!
১০. মধ্যপ্রদেশের চারপাশে কখনও দূরে টিলার উপরে দূর্গ, কখনও পাথুরে স্তম্ভ এইসব দেখতে পেলাম। তার মধ্য দিয়ে চলতে লাগল ট্রেন।
কখনও ভীষন একে-বেঁকে, কখনও হালকা কাত হয়ে..........পুরো ভ্রমনের এই সময়টা বেশ মজার ছিল ট্রেনের নানারূপী চলনের কারনে।
১১. সন্ধা নামে নামে এই সময় একটা বেশ বড় হাওড় বা এই রকম জলাভূমি দেখতে পেলাম। সেখানে কিছু বক দেখার আশা ছিল কিন্তু তাতে গুড়েবালি।
১২. রাত নেমে এল। প্রকৃতি দেখা বন্ধ তাই নজর দিলাম কোচের ভেতরে।
এক রিংওয়ালা এসেছে নানা রকম চাবির রিং, অলংকার, ইত্যাদি নিয়ে। দেখলাম আর কিনলামও।
প্যান্ট্রি কার থেকে রাতের খাবার চলে এল। ভাত, রুটি, পনির কারি, ডাল, সবজী সাথে কোল ড্রিংকস নিয়ে নিলাম। বলতে বাধ্য হচ্ছি যে এমন স্বাদু ভেজিটেবল কারি আমি ভারতে থাকাকালীন আর কোথাও খাইনি।
খাওয়ার শেষে আর বসে থাকলামনা। ঘুমিয়ে পড়লাম। জানালা খুলে দিলাম যাতে বাতাসের পরশে ঘুমটা ভালো হয়। মাঝে একবার জিপিএসে দেখলাম ট্রেন ১০৫ কিমি প্রতি ঘন্টা বেগে চলছে। যার ফলে দুলুনিও বেশী হচ্ছিল আর সেটাই ঘুমটাকে আরও জলদি এনে দিল- আমি ঘুমিয়ে গেলাম।
ঘুম দিয়েই পর্ব ১ এর সমাপ্তি। পর্ব ২ এ থাকবে ট্রেনে করে ভিশাখাপট্টপম পৌছানোর বাকি সময়ের ছবি সহ বর্ননা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।