যদি ঠাঁই দিলে তবে কেন আজ হৃদয়ে দিলে না প্রেমের নৈবদ্য
যে কোন দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়েই আগ্রাসন চালায় সাম্রাজ্যবাদী শক্তি, এটা ইতিহাসেরই ভাষ্য। বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংঘাত নিরসনের অজুহাত দিয়ে এদেশের উপর নিরঙ্কুশ আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টায় তৎপর আম্রিকা/ জাতিসঙ্ঘ। অলরেডি শাসকগোষ্ঠীর উভয় জোটই আম্রিকার প্রতি তাদের তাঁবেদারির যথেষ্ট প্রমান দিয়েছে, এবং আগামীতে যেই ক্ষমতায় আসুক টিকফা চুক্তি বাস্তবায়ন, তেল গ্যাস লুণ্ঠনের চুক্তি বাস্তবায়ন, সম্ভাব্য আকসা চুক্তি স্বাক্ষর, গভীর সমুদ্র বন্দরে মার্কিন ঘাঁটি স্থাপন এসব বিষয়ে সেবাদাসের ভূমিকা রাখবেই। এখন তাহলে নির্বাচনে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ বিষয়ে আমাদের অবস্থান কি হবে? জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন মানে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র বলে এখনো যা কিছু আছে তার কাঠামো আরও নড়বড়ে হয়ে যাবে, এই ভঙ্গুর রাষ্ট্রকাঠামোর উপর অন্যায্য ও অবৈধ নীতি চাপিয়ে দেয়া আম্রিকার মত শক্তির পক্ষে আরও অনেক সহজ হয়ে যাবে। এসব দিক মাথায় রাখলে আমাদের টকজীবীদের লজ্জা হওয়া উচিত জাতিসঙ্ঘের হস্তক্ষেপকে এসেনশিয়ালাইজ করার জন্য।
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের পক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়ে সেই শাসনকে বুদ্ধিবৃত্তিক বৈধতা দিয়েছিলেন এদেশের কথিত তৎকালীন বিদ্বৎসমাজ ( মানে যারা বিদ্যা বুদ্ধিতে পারঙ্গম) যার মাঝে এমন অনেক কবি, সাহিত্যিক, রাজা, ছিলেন যাদের আমাদের ইতিহাসের পাঠে হিরো হিসেবে তুলে ধরা হয়। তেমনি একইরকমভাবে আজকের বিদ্বৎসমাজ ও (যাদের অনেকে সুশীল সমাজ বলেন) দেখি তারানকো / মজেনা/ সুজাতা/পংকজ দের অবৈধ হস্তক্ষেপকে হয় নিরবে সহে যাচ্ছেন অথবা নগ্নভাবে এই তৎপরতাকে জায়েজ করতেছেন। এদের যুক্তি বাংলাদেশ নাকি ফেইলড স্টেট! এই ফেইলড স্টেট থিউরি একটা একপেশে এবং সাম্রাজ্যবাদী বয়ান। বাংলাদেশে যা চলছে এটাকে আমরা কোনভাবেই মেনে নিতে পারি না, এই সহিংস রাজনীতিতে আমরা হতাশ, কিন্তু তার মানে এই না যে এই দেশকে মজেনা, তারানকো , দিশাই-সুজাতারা ফেইলড স্টেট ভেবে এখানে তাদের আগ্রাসী নীতি বাস্তবায়নের চক্রান্ত করবেন। বাংলাদেশের চলমান সহিংসতার চেয়ে হাজারগুণ সহিংসতা ভারতে হয়, সেখানে ৭ টি রাজ্য সেনাকবলিত, কাশ্মীরে নিয়মিত যুদ্ধবস্থা, তো বান কি মুন কেন ভারতকে ফেইলড স্টেট ঘোষণা দিয়ে হস্তক্ষেপ করে না? সেই মুরোদ নাই বানের।
পাকিস্তানে তো এদেশের চেয়ে অনেক গুন খুনাখুনি হচ্ছে, সেখানে কেন তারানকো মার্কা হস্তক্ষেপ হয় নাই।
বাংলাদেশের সিভিল সোসাইটির উচিত পশ্চিমা মিডিয়ার ফেইলড স্টেট থিউরি কপচানো বন্ধ করে তারানকো/ সুজাতা মার্কা হস্তক্ষেপ এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো! বিজয়ের মাসে দেশের স্বাধীনতা রক্ষার প্রধান কাজ হবে এসব বাইরের শক্তির হস্তক্ষেপকে না বলা!!
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব ফেরি করছেন তারানকো, এটা সরাসরি বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব বিরোধী, আমাদের জন্য জাতীয় লজ্জার । এ ধরনের প্রস্তাব দেয়ার পরিস্থিতি তৈরি করল গণবিচ্ছিন্ন রাজনীতিবিদরা। আর গণবিরোধী সুশীল বুদ্ধিজীবীরাও বাইরের শক্তির হস্তক্ষেপকে ইনিয়ে বিনিয়ে জায়েজ করতেছেন। মজেনা, পঙ্কজ, সুজাতা, তারানকো নয়, এদেশের রাজনীতির নিয়ন্ত্রক হতে হবে জনতাকেই।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর তত্ত্বাবধানে কোন নির্বাচন নয়।
"হয়ত আমাদের অনেকের কাছে ব্যাপারটা একটা সম্ভাব্য অপশন, বের হবার পথ মনে হবে। কিন্তু সোজা করে বললে, এটা বানরকে রুটি ভাগ করে দিতে বলা। যারা জাতিসংঘ শান্তি মিশনের ততপরতা সম্পর্কে নুন্যতম খবর রাখেন তারা সাক্ষ্য দিবেন। দুনিয়ার সব সমাজেই রাজনৈতিক লড়াই (শ্রেণী)সংগ্রামের মধ্য দিয়েই সবসময় নতুন করে রাষ্ট্র গড়ার চেষ্টা হয়েছে, প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, আবার নতুন উদ্যম নেয়া হয়েছে এভাবেই একমাত্র সমাজ আগায়, আগাতে পারে।
এটাই সারা দুনিয়ায় সব সমাজের রাষ্ট্র গড়ার লড়াইয়ের ইতিহাস, একমাত্র ও উপযুক্ত পথ। কিন্তু ১৯৯০ সালের পর থেকে এক মেরুর দুনিয়া হবার পর থেকে এই নতুন ফেনোমেনা - তথাকথিত শান্তি মিশন দিয়ে বাইরে থেকে তাদের ইচ্ছা মত রাষ্ট্র গড়ে দেবার নতুন ধান্দা। রাষ্ট্র গড়া একমাত্র আভ্যন্তরীণ শ্রেণীগুলোর লড়াই সংগ্রামের ফয়সালার ভিতর দিয়েই হতে পারে। এর বাইরে বাইরের সাহায্য নেয়া হস্তক্ষেপ করতে দিয়ে কোথাও থিতু রাষ্ট্র হয়নি, হতে পারে না। হয়েছে যেটা সেটা হলো, অন্যের জন্য এক পাপেট রাষ্ট্র, তামাশা।
এর প্রথম শিকার হবে আমাদের সেনাবাহিনী। এতদিন অন্য দেশে গিয়ে সেদেশের সেনাবাহিনীর উপর জাতিসংঘের রুস্তমি করেছে এখন নিজে সইতে হবে। .....................নিজ জনগোষ্ঠির রাষ্ট্র গড়ার লড়াই বাইরের কারও করে দেবার বিষয় বা কাজই নয়। নিজেরদের লড়াই নিজে লড়ে ফয়সালাই পৌছানো - এটাই একমাত্র পথ। " ... বাংলাদেশের নির্বাচনে জাতিসঙ্ঘের হস্তক্ষেপ প্রসঙ্গে Goutam Das
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।