আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কনডেম সেল! লাল টুপি! রাজাকার কাদের মোল্লা ও ফাঁসি হাউ টু!!!

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।
ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের মূল ফটক পেরিয়ে পরপর আরো ৬টি ছোট-বড় ফটক। সরু কালো পিচঢালা পথ ধরে হেঁটে গেলে কারাগারের একেবারে দক্ষিণ-পূর্ব কোণে খোলা মাঠ। ছোট রাস্তাটি পেরিয়ে মাঠের শেষ দিকের দেয়াল ঘেঁষে এক কোণে লাল রঙের টিন দিয়ে ঢাকা ছোট্ট একটি ঘরের মতো।

এটাই কেন্দ্রীয় কারাগারের ফাঁসির মঞ্চ। গত ৪ বছর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের এই মঞ্চে কোনো ফাঁসি কার্যকর না হওয়ায় সোমবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সেখানে বালুর বস্তা ফেলে মহড়া সম্পন্ন হয়। প্রায় ৪ বছর আগে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ফাঁসির আসামিদের মধ্যে পাঁচজনকে এই মঞ্চেই ঝুলিয়ে ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা প্রসঙ্গে আইন মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে।

বৈঠকে আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজিপি, আইজি – প্রিজন সহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায়। গতকাল (ডিসেম্বর ৮) রাত ১২টা পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট থেকে পাঠানো রায়ের নথিপত্র নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কারা-২ শাখা কাজ করেছে। যদি কাদের মোল্লা কারাবিধি ৯৯১ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চান তাহলে যেন অতি দ্রুত এ সংক্রান্ত কাগজপত্র রাষ্ট্রপতির কাছে পৌঁছানোর জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। রোববার বিকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ডেপুটি রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তী লাল কাপড়ে মোড়ানো কাদের মোল্লার মৃত্যু পরোয়ানার কপি কারাগারে পৌঁছে দেন। এর পর পরই তাকে রায়ের কপি পড়ে শোনান কারাগারের জেলার মাহবুবুর রহমান।

রায়ের কপি হাতে পেয়ে কাদের মোল্লাকে কনডেম সেলে কয়েদির পোশাক ও মাথায় লাল টুপি পরানো হয়। জেল কোড অনুযায়ী অন্যান্য ফাঁসির আসামিদের জন্য আলাদা কনডেম সেল বা ফাঁসির সেলে রাখা হয়েছে কোদের মোল্লাকে। সোমবার সকালে জেলের বিধান অনুযায়ী তাকে নাস্তার জন্য পাতলা আটার রুটি, ডিম ও সবজি দেয় জেল কর্তৃপক্ষ। ফাঁসির আসামিদের জন্য আলাদা কোনো খাবারের মেনু নেই বলেও জানিয়েছেন সিনিয়র জেল সুপার। তিনি আরো জানান, ফাঁসির আদেশ হাতে পাওয়ার পর কারা কর্তৃপক্ষও ফাঁসি কার্যকরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

আর এ জন্য কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর ফাঁসির মঞ্চ ধোয়া মোছার কাজ শুরু করা হয়েছে। ফাঁসি কার্যকর করার জন্য একাধিক জল্লাদ নির্বাচন করার কাজও করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৩২ জনকে ফাঁসি দেয়া জল্লাদ শাহজাহানসহ তিনজনকে। প্রচলিত প্রথায় কাদের মোল্লার ফাঁসি দেওয়া হবে। ফাঁসি কার্যকর করার জন্য যে দড়ি ব্যবহার করা হবে তার নাম ‘ম্যানিলা রোপ’।

স্বাধীনতার আগে নিয়ে আসা বিপুল পরিমাণ ম্যানিলা রোপ এখনও ফাঁসি কার্যকরে কেন্দ্রীয় কারাগারে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষ রশি 'ম্যানিলা রোপ'-এর পরিচর্যাও শেষ পর্যায়ে। একজন ডেপুটি জেলার রশি পরিচর্যার কাজ করছেন। ডেপুটি জেলারের পরিচর্যার পর ওই রশি জেলারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। জেলার তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সিনিয়র জেলসুপারের কাছে হস্তান্তর করবেন।

সর্বশেষ সিনিয়র জেল সুপার তা নিজের কাছে রাখবেন ফাঁসি কার্যকর হওয়ার আগ পর্যন্ত। ফ্রান্স থেকে নিয়ে আসা এক ধরনের গাছের লতা জাতীয় এ দড়ি দিয়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এ জন্য ফাঁসির কয়েক দিন আগে থেকে তৈলাক্ত দ্রব্য ম্যানিলা রোপে মাখিয়ে রোদে শুকানো হয়। যেভাবে ফাঁসি কার্যকর করা হবে সাধারণত রাত ১২টার পরেই আসামির ফাঁসি কার্যকর করা হয়। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে ফাঁসি দেওয়ার আগে গোসল করিয়ে একজন মাওলানার মাধ্যমে তওবা পড়িয়ে নেন কারা কর্তৃপক্ষ।

এসময় আসামির কাছ থেকে তার শেষ কোনো কথা থাকলে তাও শুনে নেন কারা কর্তৃপক্ষ। ফাঁসির মঞ্চে নেওয়ার পর আসামির মাথায় পরানো হয় একটি কালো রংয়ের টুপি। এই টুপিটিকে বলা হয় ‘যমটুপি’। ফাঁসির মঞ্চে তোলার পর দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির দুই হাত পিছন দিকে বাধা হয়। এ সময় ফাঁসির মঞ্চের সামনে উপস্থিত থাকেন কারা কর্তৃপক্ষ, সিভিল সার্জন ও একজন ম্যাজিস্ট্রেট।

ফাঁসির মঞ্চে প্রস্তুত থাকেন একজন জল্লাদ। মঞ্চে তোলার পর আসামির দুই পাও বাধা হয়। পরানো হয় ফাঁসির দড়ি। কারা কর্তৃপক্ষের হাতে থাকে একটি রুমাল। রুমালটি হাত থেকে নিচে ফেলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জল্লাদ ফাঁসির মঞ্চের লিভারে টান দেন।

লিভারটি টান দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফাঁসির মঞ্চের নিচে চলে যান আসামি। এ সময় আসামি মাটি থেকে ৪-৫ ফুট শূন্যে ঝুলে থাকেন। এতে মুহূর্তের মধ্যেই ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির ঘাড়ের হাড় ভেঙ্গে মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে যায়। এ অবস্থায় ১৫-২০ মিনিট দড়িতে ঝুলিয়ে রাখা হয় আসামিকে। ফাঁসির দড়ি থেকে নামানোর পর আসামির দুই পায়ের রগ কেটে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে কারা কর্তৃপক্ষ।

সবশেষে ভোরের দিকে আসামির মৃতদেহ তার পরিবার পরিজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। গত ৫ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এরপর রাজধানীর শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের নেতৃত্বে সারা দেশে তারসহ সকল যুদ্ধাপরাধীর সবোর্চ্চ শাস্তির দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলো। এ আন্দোলনের মুখে সরকার আইন পরিবর্তন করে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আপিল করে। আপিল শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ১৭ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনালের দেওয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন।

প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৫ বিচারপতির বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে (৪:১) আব্দুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসির দণ্ড দেন। বেঞ্চের অপর বিচারপতিরা হচ্ছেন, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী। ৭৯০ পৃষ্ঠার এ পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশিত হয় গত বৃহস্পতিবার। চূড়ান্ত রায়ের ভিত্তিতে রোববার দুপুরে কাদের মোল্লার মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর তিন বিচারপতি চেয়ারম্যান ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম। এরপর বিকেলেই মৃত্যু পরোয়ানাটি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছে দেয় ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার কার্যালয়।

রাষ্ট্রপতির ক্ষমা যেকোনো দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারেন। তবে রাষ্ট্রপতির কাছে কাদের মোল্লা প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না, বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়। গতকাল এ প্রশ্নের সরাসরি কোনো জবাব দেয়নি তাঁর পরিবার। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করার সুযোগ রয়েছে কাদের মোল্লার। সেখানে তিনি ক্ষমা না পেলে জেলকোড অনুযায়ী এই ডিসেম্বরেই রায় কার্যকরের সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়া-না চাওয়ার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটেছেন জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লা। প্রাণভিক্ষার সিদ্ধান্ত জানতে গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কাদের মোল্লার কাছে যান দু'জন ম্যাজিস্ট্রেট। এ সময় তারা কাদের মোল্লার কাছে জানতে চান, তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি-না। এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি এই যুদ্ধাপরাধী। উত্তর না পাওয়ায় কাদের মোল্লার কাছে একই প্রশ্ন কয়েক দফায় করা হয়।

তখনও তিনি নিশ্চুপ ছিলেন। কেন পুনর্বিবেচনা করা যাবে না? এ প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সংবিধানের ৪৭ক(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তির ক্ষেত্রে সংবিধানের ৪৭(৩) অনুচ্ছেদের আইন প্রযোজ্য হয়, সেই ব্যক্তির এই সংবিধানের অধীনে কোনো প্রতিকারের জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করার অধিকার থাকবে না। কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে ৪৭(৩) অনুচ্ছেদ প্রযোজ্য। সংবিধানের ৪৭(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, এই সংবিধানে যা বলা হয়েছে, তা সত্ত্বেও গণহত্যাজনিত অপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনের অধীন অন্যান্য অপরাধের জন্য কোনো ব্যক্তিকে আটক বা দণ্ড দেওয়ার বিধানসংবলিত কোনো আইন সংবিধানের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে গণ্য হবে না। সুত্রঃ Click This Link http://www.samakal.net/2013/12/10/25356 Click This Link Click This Link
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।