আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এরশাদ ও রওশনের বাসায় দফায় দফায় পৃথক বৈঠক

৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এ লক্ষ্যে গতকাল নির্বাচন কমিশনে চিঠি পাঠিয়েছেন জাতীয় পার্টির কাউকে লাঙ্গল প্রতীক বরাদ্দ না দেওয়ার জন্য। বুধবার তিনটি আসন থেকেই এরশাদ মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু ঢাকা-১৭ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাহারের আবেদনে ত্রুটি থাকায় রিটার্নিং অফিসার গ্রহণ না করায় গতকাল আবারও সংশোধন করে আবেদন জমা দিয়েছেন। আজকের মধ্যে জাতীয় পার্টির সব প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নির্দেশও রয়েছে এরশাদের।

এদিকে জাপা চেয়ারম্যান এরশাদের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে অনড় রওশন এরশাদের নেতৃত্বে পার্টির একাংশ। সূত্র জানায়, এ অংশটি প্রয়োজনে এরশাদকে মাইনাস করে নির্বাচনে অংশ নিতে চায়। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছেছে তারা। রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির এ অংশটিকে আওয়ামী লীগ ৬১ আসন ছেড়ে দেবে। এসব আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের কোনো প্রার্থী থাকবে না।

নিজ নিজ অবস্থানে অনড় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও রওশন এরশাদ তাদের লক্ষ্যে পৌঁছতে গতকাল দফায় দফায় বৈঠক করেছেন নিজ নিজ বাসভবনে। বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কে থাকেন এরশাদ আর রওশন থাকেন গুলশানে। এদিকে এরশাদ ও রওশন এরশাদ দ্বিমুখী সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় বিপাকে রয়েছে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। তবে আজ মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন হওয়ায় এ নাটকের অবশান হচ্ছে বলেও মনে করছেন নেতা-কর্মীরা। জানতে চাইলে পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, নির্বাচন হবে কি হবে না এ নিয়ে সংশয় ও অনিশ্চয়তা আছে।

তিনি জানান, পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়ে অনড় রয়েছেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সিদ্ধান্ত অমান্য করে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে পার্টির বড় একটি অংশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে এমন খরর শোনা যাচ্ছে? জবাবে জাপা মহাসচিব বলেন, জাতীয় পার্টি একটি বড় দল। বহু নেতৃত্বের সমন্বয়ে এ দলের ব্যাপকতা। এখানে মতপার্থক্য কিছু থাকলেও চূড়ান্ত বিবেচনায় পার্টির চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত সব নেতা মেনে নেবেন। কারণ পার্টির চেয়ারম্যানের নেতৃত্বের প্রতি সব নেতার রয়েছে অগাধ বিশ্বাস ও আনুগত্য।

রুহুল আমিন হাওলাদার জানান, তিনি তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন পাঠিয়ে দিয়েছেন। জানা যায়, এরশাদ তার বারিধারার বাসভবনে রুহুল আমিন হাওলাদার, জিএম কাদেরসহ শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। কীভাবে পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটানো যায় এ নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এরশাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে রুহুল আমিন হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া জাতীয় পার্টি নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে এখনো অনড় রয়েছে। তিনি বলেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়নপত্র দাখিলকারী প্রার্থীরা আজকের মধ্যে তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করবেন।

এদিকে রওশান এরশাদের বাসায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতায় আসা ৬১ প্রার্থীর অধিকাংশই বৈঠক করেছেন। বেলা ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তাদের অনেকেই গতকাল পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন করেননি। এরশাদের ভাই বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদেরও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তবে এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ, রুহুল আমীন হাওলাদার, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, মুজিবুল হক চুন্নু এবং সালমা ইসলামসহ প্রায় দুইশ প্রার্থী এখনো মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি।

তবে রুহুল আমিন হাওলাদার জানিয়েছেন, তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহারের আবেদন পাঠিয়ে দিয়েছেন। ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জিয়াউদ্দিন বাবলু গতকাল দিনভর গণভবনে অবস্থান করেছেন রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাপার একটি অংশ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রক্রিয়ার কাজ এগিয়ে নিতে। সঙ্গে ছিলেন রেজাউল ইসলাম ভূইয়া। যোগাযোগের জন্য জিয়াউদ্দিন বাবলু, রেজাউল ইসলাম ভূইয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগোযোগ করা হলেও পাওয়া যায়নি। জিয়াউদ্দিন বাবলু প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হওয়ার পর তাকে কোনোদিন ফোনে পাওয়া যায়নি।

এদিকে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মুখপাত্র কাজী ফিরোজ রশীদ রওশন এরশাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি জানান, রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাপা নির্বাচনে যাওয়ার খবর স্রেফ গুজব। রওশন এরশাদের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ম্যাডাম এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে আমাকে জানিয়েছেন। কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ম্যাডাম বলেছেন, পার্টি চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তই তার সিদ্ধান্ত। চেয়ারম্যান যা করবেন তাতে তার কোনো দ্বিমত নেই।

ফিরোজ রশীদ বলেন, ম্যাডাম ময়মনসিংহে তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন পাঠিয়ে দিয়েছেন। আজকের মধ্যেই দেখতে পাবেন সব প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তিনি আজ ১০টায় নিজের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবেন বলে জানান এ প্রতিবেদককে।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, এরশাদ মানে জাতীয় পার্টি। আর জাতীয় পার্টি মানে এরশাদ।

তিনি বলেন, আজকের মধ্যে পার্টির সব প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবেন। তিনি জানান, চার দিন আগে তিনি মনোয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। জানা যায়, জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেওয়া আসন ও প্রার্থীরা হচ্ছেন- পঞ্চগড়-১ আবু সালেক, ঠাকুরগাঁও-৩ হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, দিনাজপুর-৬ দেলোয়ার হোসেন, নীলফামারী-৩ কাজী ফারুক কাদের, নীলফামারী-৪ শওকত চৌধুরী, লালমনিরহাট-৩ জিএম কাদের, রংপুর-১ মশিউর রহমান রাঙ্গা, রংপুর-২ আসাদুজ্জামান চৌধুরী, রংপুর-৩ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, কুড়িগ্রাম-১ এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান, কুড়িগ্রাম-২ তাজুল ইসলাম চৌধুরী, কুড়িগ্রাম-৩ গোলাম হাবিব দুলাল, গাইবান্ধা-২ আবদুর রশিদ সরকার, গাইবান্ধা-৩ ব্যারিস্টার দিলারা খন্দকার, জয়পুরহাট-১ আ স ম মোক্তাদির তিতাস মোস্তফা, বগুড়া-২ শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, বগুড়া-৩ অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম তালুকদার, বগুড়া-৪ নুরুল আমিন বাচ্চু, বগুড়া-৬ নুরুল ইসলাম ওমর, বগুড়া-৭ আলতাফ আলী, টাঙ্গাইল-৫ আবদুস সালাম চাকলাদার, জামালপুর-৪ ইঞ্জিনিয়ার মামুনুর রশীদ, ময়মনসিংহ-৪ রওশন এরশাদ, ময়মনসিংহ-৫ সালাউদ্দিন আহমেদ মুক্তি, ময়মনসিংহ-৭ এম এ হান্নান, ময়মনসিংহ-৮ ফখরুল ইমাম, কিশোরগঞ্জ-৩ মজিবুল হক চুন্নু, ঢাকা-১ সালমা ইসলাম, ঢাকা-৪ সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, ঢাকা-৬ কাজী ফিরোজ রশীদ, ঢাকা-১৭ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, নারায়ণগঞ্জ-৩ লিয়াকত হোসেন খোকা, নারায়ণগঞ্জ-৫ নাসিম ওসমান, পটুয়াখালী-১ এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, বরিশাল-৩ গোলাম কিবরিয়া টিপু, বরিশাল-৬ নাসরিন জাহান রত্না, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ জিয়াউল হক মৃধা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ রেজাউল ইসলাম ভুঁইয়া, কুমিল্লা-২ আমির হোসেন ভূঞা, কুমিল্লা-৩ জামাল উদ্দিন, কুমিল্লা-৪ ইকবাল হোসেন রাজু, কুমিল্লা-৮ অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মিলন, চাঁদপুর-৪ মাইনুল ইসলাম মানু, ফেনী-৩ রিন্টু আনোয়ার, নোয়াখালী-১ এ বি এম হারুন-এল-রশীদ, লক্ষ্মীপুর-২ মোহাম্মদ নোমান, চট্টগ্রাম-৫ ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, চট্টগ্রাম-৯ জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, চট্টগ্রাম-১৬ মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, কক্সবাজার-১ হাজী মোহাম্মদ ইলিয়াস, কক্সবাজার-২ কবির আহমেদ সওদাগর, পার্বত্য খাগড়াছড়ি- সোলায়মান আলম শেঠ, খুলনা-১ সুনীল শুভরায়, সাতক্ষীরা-২ এম এ জব্বার, সাতক্ষীরা-৪ আবদুস সাত্তার মোড়ল, সুনামগঞ্জ-৪ পীর ফজলুর রহমান, সিলেট-২ ইয়াহইয়া চৌধুরী, সিলেট-৫ সাবি্বর আহমেদ, মৌলভীবাজার-২ মাহবুবুল আলম শামীম এবং হবিগঞ্জ-১ মোহাম্মদ আবদুল মুনিম চৌধুরী (বাবু)। সূত্র জানায়, আজ বিকাল ৫টার মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের এসব আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম থেকে।

 

 



অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।