আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাবাজার পত্রিকায় দেওয়া আহমদ ছফার সাক্ষাৎকারের কিয়দাংশ:সাঈদী প্রসঙ্গ।

...............................।

বাংলাবাজার পত্রিকায় দেওয়া আহমদ ছফার সাক্ষাৎকারের কিয়দাংশ: বাংলাবাজার পত্রিকা: গণ আদালতের বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখেন? আহমদ ছফা: গোলাম আযমের প্রতি জনগণ যে রায় দিয়েছে, এটা ঠিক আছে। খুবই ভাল হয়েছে। এটার দরকার ছিল। সরকারগুলো বছরের পর বছর যা ইচ্ছা তাই করবে! জনগণেরও একটা রায় আছে, জনগণ সেটা সাহসের সাথে জানিয়ে দিয়েছে।

স্বাধীনতার এত বছর পর রাজাকার ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে একটা স্পষ্ট সীমারেখা সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু একটা বিষয়ে আমার ভয় হচ্ছে। এখন আমরা যেভাবে এগুচ্ছি তাতে গোলাম আযমকে একটা শহীদের মর্যাদা দিতে যাচ্ছি। জামাত-শিবিরকে মোকাবেলা করতে হলে একটু গভীরে যেতে হবে। এই যে পার্লামেন্টে জামাত এতগুলো সিট পেল–এটা কেন পেল? এটা তলিয়ে দেখতে হবে।

যেসব অপকৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে জামাত জনমনে প্রভাব বিস্তার করছে সেগুলোর পাশাপাশি পাল্টা মতামত ও বক্তব্য নিয়ে আমাদেরকে জনগণের কাছে যেতে হবে। আমি একবার গ্রামে গিয়ে আমার বড় ভাইয়ের স্ত্রীকে দেখলাম যে সে ক্যাসেটে সাঈদীর বক্তৃতা শুনছে। আমার মনে [প্রশ্ন] হলো, গ্রামের অন্তঃপুর পর্যন্ত যে ব্যক্তির প্রভাব পৌঁছে গেছে তার এই জনপ্রিয়তার উৎসটা কি। সাঈদী প্রতিটি মাহফিলে বক্তৃতার জন্য সম্মানী নেন পঁচিশ হাজার এক টাকা এবং এক বছরের আগে তাঁর শিডিউল পাওয়া যায় না। ওয়াজ মাহফিলে বক্তৃতা দিয়ে ও ক্যাসেটের রয়ালটি বাবদ সাঈদী যে অর্থ পায় তা বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে মাইকেল জ্যাকসন [তুল্য] বলা যেতে পারে।

সুতরাং এসব চিন্তা করে সাঈদীর বক্তৃতাগুলো আমি একদিন ভাল করে শুনলাম। শুনে আমার যেটা মনে হলো তা এই। সাঈদী যদি ওয়াজ না করে গান গাইতেন, তাহলেও খুব জনপ্রিয় গায়ক হতেন। দ্বিতীয়ত তাঁর বলার মধ্যে তিনি একধরনের ড্রামাটিক সাসপেন্স তৈরি করেন। তিনি একজন ভাল অভিনেতা এবং শ্রোতাদের মুগ্ধ করে রাখার ক্ষমতা রাখেন।

তৃতীয়ত নাটক বা গান শুনতে পয়সা লাগে, ওয়াজ শুনতে পয়সা লাগে না। চতুর্থত যৌন আবেদনমূলক ছায়াছবি মানুষ যে কারণে এনজয় করে, সাঈদীর বক্তৃতায় তাও রয়েছে। ওঁর বক্তৃতায় আধুনিক ব্লু-ফিল্মের উপাদান রয়েছে। তিনি যদি একঘণ্টা বক্তৃতা করেন তার মধ্যে অন্তত দশ মিনিট থাকবে যৌনতা। পঞ্চমত ব্লু-ফিল্ম দেখার পর দর্শকের মনে এক ধরনের পাপবোধ জাগে, অন্যদিকে ওয়াজ শোনার পর মনে পূণ্যের সঞ্চার হয়।

সুতরাং আমি দেখলাম যে সাঈদীর জনপ্রিয়তা অস্বাভাবিক কিছু নয়। অতএব আমাদের যেটা উচিত ছিল তা হলো এ বিষয়ে একটা পুস্তিকা লিখে জনগণকে সচেতন করে তোলা। আমরা এটা না করে সাঈদীর বক্তৃতাসভা পন্ড করার লড়াইয়ে নেমেছি এবং এর ফলে তাঁকে একজন স্টার বানিয়ে দিয়েছি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।