মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ক্রীড়াবিদদেরও ভূমিকা ভুলবার নয়। ১৯৭১ সালে বেশ ক'জন ফুটবলার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভারতে পাড়ি জমান। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গঠন করে তারা ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে প্রদর্শনী ম্যাচে অংশগ্রহণ করেন। ম্যাচের অর্থ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ফান্ড সংগ্রহ করা হয়। কিংবদন্তি ক্রিকেটার নবাব মনসুর আলী পতৌদি ছাড়াও প্রখ্যাত অভিনেতা দিলীপ কুমার ফান্ড সংগ্রহে সহযোগিতা করেন।
বিশ্বে স্বাধীনতা যুদ্ধে এভাবে ফুটবল দল গঠনের নজির নেই। ১৯৭১ সালে কারা কারা স্বাধীন বাংলা দলে ছিলেন তাদের নামের তালিকা তৈরি করে বাসায় হামলা করা হয়। আত্দীয়-স্বজনদের নানারকম হয়রানির শিকার হতে হয়। রাজাকার, আল বদরের সহযোগিতায় পাক আর্মিরা অনেক ফুটবলারের বাসায় আগুন জ্বালিয়ে পুরোপুরি ধ্বংসও করে দেয়। ফুটবলাররা যে শুধু মাঠেই খেলেছেন তাও নয়।
অনেকে সক্রিয়ভাবে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ করেন। হাফিজউদ্দিন ও নুরুন্নবীসহ আরও ক'জন ফুটবলার বড় ধরনের অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন। শুধু কি ফুটবলার? ক্রিকেটার, অ্যাথলেট অন্য ইভেন্টের খেলোয়াড়ও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে ছিলেন না। অনেক সংগঠকও সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
সত্যি বলতে কি মুক্তিযুদ্ধে কতজন খেলোয়াড়, সংগঠক অংশগ্রহণ করেছেন বা শহীদ হয়েছেন এর প্রকৃত তালিকা এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মুক্তিযুদ্ধে ক্রীড়াঙ্গনে অবদানের কথা বলতে আমরা বুঝি স্বাধীন বাংলা দলকেই। অথচ এই দল কিভাবে গঠন হয়েছিল বা কারা উদ্যোক্তা ছিলেন তা কখনো স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়নি। অবাঙালি ফুটবলার হয়েও মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রেখেছিলেন ফুটবলার গফুর বেলুচ। মাজহারুল ইসলাম তান্না স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গঠনে বড় ভূমিকা রাখেন। ফুটবলার আলী ইমাম ছিলেন দল গঠনে প্রধান উদ্যোক্তা।
তিনিই মূলত খেলোয়াড়দের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্বাধীন বাংলা দল গঠনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখেন। দলে অংশ নেওয়া বেশ ক'জন ফুটবলার বিভিন্ন সময়ে সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছিলেন আলী ইমাম উদ্যোগ না নিলে স্বাধীন বাংলা দল গঠন করা মুশকিল ছিল। অথচ আলী ইমামের অবদানের কথা আড়ালেই থেকে গেছে। খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ার ও প্রশিক্ষক হিসেবে তিনি আলোড়ন তুললেও তার মূল্যায়ন কখনো করা হয়নি। অনেকের কপালে জাতীয় পুরস্কার জুটলেও আলী ইমাম আছেন সেই তালিকার বাইরে।
১৯৮৯ সলে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর অনেক বছর পরও অনেকে মরণোত্তর পুরস্কার পাচ্ছেন। মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখার পরও তিনি থাকছেন সবার আড়ালে। মুক্তিযুদ্ধে অনেক ক্রীড়াবিদ বা সংগঠক শহীদ হয়েছেন। ক্রিকেটার জুয়েল ও আজাদ বয়েজের সংগঠক মুস্তাকের নামটাই সবারই জানা।
সারা দেশে কতজন শহীদ হয়েছেন তার প্রকৃত তালিকা তৈরির প্রয়োজনও মনে করেননি কেউ। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই উদ্যোগ নিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে যেসব ক্রীড়াবিদ বা সংগঠক শহীদ হয়েছেন তাদের নামের স্মৃতিফলক তৈরির। তৎকালীন ঢাকা স্টেডিয়ামেই এ স্মৃতিফলক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ৪২ বছরেও ক্রীড়াঙ্গনে স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়নি। অনেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী স্মৃতিফলক নির্মাণে প্রতিশ্রুতি দেন।
কিন্তু আজো তা বাস্তবায়ন হয়নি। আর এতেই মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া প্রকৃত ক্রীড়াবিদদের নাম অজানায় থেকে গেছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।