আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনলাইনে আবেদনের নিয়ম, পরীক্ষার প্রস্তুতি

দেশে বর্তমানে ক্যাডেট কলেজ রয়েছে ১২টি। এর মধ্যে ছেলেদের জন্য নয়টি এবং মেয়েদের তিনটি। মেয়েদের ক্যাডেট কলেজগুলো হচ্ছে_ ময়মনসিংহ, ফেনী ও জয়পুরহাট গার্লস ক্যাডেট কলেজ। ক্যাডেট কলেজগুলো স্বায়ত্তশাসিত আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এগুলো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাডজুটেন্ট জেনারেলের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত।

কলেজগুলোয় লেখাপড়ার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রম সমান গুরুত্ব দিয়ে পরিচালিত হয়। সামরিক অফিসারদের তত্ত্বাবধানে ক্যাডেটদের প্রাথমিক সামরিক প্রশিক্ষণ এবং নেতৃত্বের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এতে তারা সুনাগরিক ও চৌকস ব্যক্তি হিসেবে গড়ে ওঠার মধ্য দিয়ে সশস্ত্র বাহিনীসহ সমাজের সবক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা গ্রহণ করে। তাই প্রয়োজনীয় যোগ্যতা সাপেক্ষে ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিকের। ২৫ নভেম্বর থেকে ২০১৪ সালের ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষার অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণের কাজ শুরু হয়েছে।

চলবে ২৬ ডিসেম্বর বেলা ২টা পর্যন্ত। আর ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আগামী বছরের ১০ জানুয়ারি। ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের যোগ্যতা কি, কিভাবে আবেদন করা যায়, আবেদন ফি কত, আবেদনের সময় কি কি কাগজপত্র লাগবে তা নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন।

আবেদনের যোগ্যতা : ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণে ইচ্ছুকদের প্রথমত অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। এ ছাড়া তাদের ৬ষ্ঠ শ্রেণী বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে, ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত বয়স হতে হবে সর্বোচ্চ ১৪ বছর এবং ছেলেমেয়ে উভয়েরই উচ্চতা থাকতে হবে নূ্যনতম ৪ ফুট ৮ ইঞ্চি।

এ ছাড়া আরও কিছু শারীরিক ও মানসিক স্বাভাবিক যোগ্যতা প্রদর্শন করতে হয়। উল্লেখ্য, কোনো শিক্ষার্থী ক্যাডেট ভর্তি পরীক্ষায় একবারই অংশ নিতে পারে। তাই ইতোমধ্যে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হতে পারেনি এমন শিক্ষার্থীরা আবেদনের অযোগ্য। এ ছাড়া বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা যেমন গ্রস নক নী, ফ্ল্যাট ফুট, কালার স্লাইন্ড ও অতিরিক্ত ওজন এবং বিভিন্ন রোগ যেমন এজমা, মৃগী, হৃদরোগ, বাত, যক্ষ্মা, পুরনো আমাশয়, হেপাটাইটিস, রাতকানা, ডায়াবেটিসসহ আরও কয়েকটি রোগে আক্রান্ত কেউ আবেদনের অযোগ্য বিবেচিত হয়।

আবেদনের নিয়ম : ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদের অনলাইনে আবেদন করতে হবে।

এ জন্য শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের ব্যবহার করতে হবে  www.cadetcollege.army.mil.bd এই ওয়েবসাইটি। আবেদনের সময় প্রার্থীদের অনধিক ১৮০X২১০ পিঙ্লে এবং ২০০ কিলোবাইটের পাসপোর্ট সাইজের ছবি ব্যবহার করতে হবে। ছবি অবশ্যই ১৫ দিনের বেশি পুরনো হওয়া যাবে না। অনলাইনে প্রার্থীর ছবি অবশ্যই জেপিজি ফরমেটে আপলোড করতে হবে।

আবেদন ফি ও জমাদান পদ্ধতি : প্রার্থীরা পরীক্ষার আবেদন ফি Trust Bank Mobile Money, Q Cash অথবা টেলিটক প্রিপেইড সিমসংবলিত যেকোনো মোবাইল থেকে এসএমএস- এই তিনটির যেকোনো একটি মাধ্যম ব্যবহার করে জমা দিতে পারবে।

তবে মাধ্যমভেদে পরীক্ষার ফিতে পার্থক্য রয়েছে। Trust Bank Mobile Money  এর মাধ্যমে ফি ১ হাজার ৫ টাকা, Q Cash এর মাধ্যমে ১ হাজার ১০ টাকা এবং টেলিটকের মাধ্যমে ১ হাজার ১০০ টাকা।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও জমাদান পদ্ধতি : প্রার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বা প্রাথমিক ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার সত্যায়িত সনদপত্র; ৫ম শ্রেণীতে ইংরেজি মাধ্যমে অধ্যয়নকৃত শিক্ষার্থীদের তাদের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্তৃক উত্তীর্ণের প্রত্যয়নপত্র; প্রার্থীর জন্মনিবন্ধন বা জন্ম সনদপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি; প্রার্থীর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্তৃক ৬ষ্ঠ বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণের সাল উল্লেখপূর্বক সনদপত্র; ফলাফল প্রকাশিত না হয়ে থাকলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্তৃক প্রার্থী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে এই মর্মে প্রদত্ত সনদ; প্রার্থীর বাবা-মা বা অভিভাবকের মাসিক আয়ের স্বপক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়নপত্র; প্রার্থীর অভিভাবক বা বাবা-মা উভয়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি (পরিচয়পত্র না থাকলে যথাযথ কারণ প্রদর্শনপূর্বক প্রত্যয়নপত্র) এবং অনলাইন আবদেনপত্রে আপলোড করা প্রার্থীর ছবির অনুরূপ ১X পাসপোর্ট এবং ১X স্ট্যাম্প সাইজের রঙিন ছবি। সফলভাবে অনলাইনে আবেদনপত্র পূরণের পর উক্ত কাগজপত্রাদি ১৫ X১০ খামের উপরে প্রার্থীর ইনডেঙ্ নম্বর ও পরীক্ষা কেন্দ্রের নাম উল্লেখপূর্বক ৩ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখের মধ্যে প্রার্থীর প্রবেশপত্রে উলি্লখিত পরীক্ষাকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ক্যাডেট কলেজের ঠিকানায় রেজিস্টার্ড ডাক বা বাহকের মাধ্যমে প্রেরণ করতে হবে। উল্লেখ্য, কোটা সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রার্থীদেরকে অবশ্যই ক্যাডেট কলেজগুলোর ‘E-Booth Outlet’ এর মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন করতে হবে।

সেক্ষেত্রে কোটাধারীদের তাদের সংশ্লিষ্ট কোটার স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজসহ অন্যান্য কাগজপত্র ও ছবির সফট কপি সঙ্গে আনতে হবে। উল্লেখ্য, প্রার্থী ও অভিভাবকদের সুবিধার্থে অনলাইনে আবেদন ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি জমাদানের জন্য প্রতিটি ক্যাডেট কলেজে এবং ঢাকা আর্মি স্টেডিয়ামে একটি করে 'ই-বুথ আউটলেট' স্থাপন করা হয়েছে। এ সব ই-বুথে উপস্থিত হয়ে অনলাইনে আবেদন, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও আবেদন ফি জমা দেওয়া যাবে। ই-বুথগুলো ২৫ নভেম্বর থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ২৬ ডিসেম্বর দুপুর ২টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।

পরীক্ষার প্রস্তুতি : ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষা অন্যান্য পাবলিক পরীক্ষা থেকে ভিন্ন ধরনের। তাই এ পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পেতে দরকার দীর্ঘ প্রস্তুতি, কঠোর অধ্যবসায় ও সঠিক গাইডলাইন। নিয়মিত পড়াশোনা এতে বড় সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ক্যাডেট ভর্তি সহায়ক দেশের অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান ঢাকার উত্তরাস্থ শহীদ ক্যাডেট একাডেমি। ক্যাডেট কোচিং এবং মডেল টেস্ট বিষয়ে বিস্তারিত ০১৭১৪৩৫৯৬৯২ নম্বরে জানা যাবে।

উল্লেখ্য, বিগত বছরগুলোয় প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের সাফল্য চোখে পড়ার মতো।

পরীক্ষার মাধ্যম : বাংলা ও ইংরেজি, এ দুটি মাধ্যমে পরীক্ষা দেওয়া যায়। তবে প্রার্থীকে যেকোনো একটি মাধ্যম বেছে নিতে হবে।

পরীক্ষার মানবণ্টন : মোট ৩০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ইংরেজিতে মার্কস ৭৫, গণিতে ৫৫, বাংলায় ৪০ ও সাধারণ জ্ঞানে ৩০ মার্কস।

আর মৌখিক পরীক্ষার মার্কস ৫০ ও স্যুটবিলিটি টেস্টের জন্য রয়েছে ৫০ মার্কস। এ ছাড়া রয়েছে স্বাস্থ্যগত পরীক্ষা। উলি্লখিত সব ধাপের ভিত্তিতে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণদের তালিকা প্রকাশ করা হয়।

ফলাফল প্রকাশ : ভর্তি পরীক্ষার প্রাথমিক ধাপ অর্থাৎ ২০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আগামী বছরের ১০ জানুয়ারি। ওইদিন পরীক্ষা শুরু হবে সকাল ৯টায়।

পরীক্ষার জন্য বরাদ্দ সময় আড়াই ঘণ্টা। ৮ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হবে। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মৌখিক ও স্বাস্থ্যগত পরীক্ষা এবং স্যুটাবিলিটি টেস্টের সময়সূচি পরবর্তীতে ক্যাডেট কলেজগুলোয় এবং www.cadetcollege.army.mil.bd  ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। উল্লেখ্য, ভর্তি পরীক্ষার প্রসপেক্টাস ও সিলেবাসসহ অন্যান্য বিষয়ে বিস্তারিত জানতে উক্ত ওয়েবসাইটের Admission Menu- তে ক্লিক করুন। অনলাইনে আবেদনের পূর্বে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি ভালোভাবে পড়ে নিন এবং Admission Menu-র ‘How to Apply’ লিংকে ক্লিক করে বিস্তারিত নির্দেশনা জেনে নিন।

সশস্ত্র বাহিনীতে যোগদানে অগ্রাধিকার : ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনা শেষে ক্যাডেটদের সশস্ত্র বাহিনীর কমিশন্ড অফিসার পদে নির্বাচনী পরীক্ষায় অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে ক্যাডেটদের শুধু ISSB পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েই সশস্ত্র বাহিনীতে যোগদান করা যায় এবং তা বাধ্যতামূলক।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।