সাজেদা বেগম তার একমাত্র ছেলে নিয়ে খুব চিন্তিত। নিকট আত্নীয়দের নজর তার ছেলের উপর। খোকাকে সবাই পছন্দ করে্। তার চাঁদের টুকরা ছেলে। একটু সহজসরলটাইপ।
কোন নষ্ট মেয়ের পাল্লায় পড়লে মহাবিপদ্ । তার সহজ সরল বউ চাই। তার দুসম্পর্কের বোন আনোয়ারা তার হাতির মোটা মেয়ের জন্য তার ছেলেকে পছন্দ করেছিলেন। হাতি ঘোড়া গেল তল মশা বলে কত জল। অনেক কষ্টের আর ত্যাগের বিনিময়ে সেই বিয়ে ভঙ্গ হয়।
ফলে আনোয়ারা আর সাজেদা বেগমের সাথে কথা বলেন না। আনোয়ারা আপার মেয়ে মুনা। মুনার ছোট ভাই রোহান খোকার কছে পড়তো। খোকা ছাড়া আর কারো কথা শুনতো না। মা কিংবা বড় ভাইবোন কারো না।
খোকার এক নম্বর শিষ্য রোহান। তাদের মধ্যে অনেক ভাব। অসম বন্ধুত্ব। রোহান,খোকা আর রনি তারা তিনজন কম্পিউটারে বসে একসাথে ফুটবল গেমস খেলতো। তিনজনই ব্রাজিল বলতে অজ্ঞান।
কিন্তু তারা মেসির ভক্ত। মেসি কেন ব্রাজিলের খেলোয়ার হলো না এই নিয়ে আফসোসের শেষ নাই। রোহান হওয়ার তিন মাসের মাথায় তার বাবা মারা যায়। রোহান পানিতে ডুবে মারা যায় প্রাইভেট মেডিকেল এ ভর্তি হওয়ার বছরই। বনভোজনে গিয়ে নদী সাতরে পার হতে গিয়ে করুন মৃত্যু ।
রোহান কথা বলত তুতলিয়ে। তাকে সবাই খুব আদর করতো। বাবা না থাকাতে সবাই একটু বেশিই স্নেহ করতো। তাই সবাইকে নিদরুণ কষ্ট দিয়েই তার চিরপ্রস্থান মাত্র আঠারো বছর বয়সে্।
খোকাকে নিয়ে তার ভয়ের শেষ নাই।
গতবছর বঙ্গবাজারে বাসে ওঠে ডাবের পানি খেয়ে খোকা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। ভাগ্যের জোরে সে যাত্রা খোকা বেঁচে ওঠে। বাসের এক যাত্রী তার পকেটে আইডি কার্ড দেখে অজ্ঞান খোকাকে বাসায় নিয়ে আসে। ভেবে ছিলেন খোকা মরেই গেছে। তিনদিন হাসপাতালে থাকার পর তার জ্ঞান ফিরে।
সে কথা ভাবলে তার গা শিউরে ওঠে।
খোকার ভোলাভালা চেহারার কারণে প্রা্য়ই খারাপ লোকের পাল্লায় পরে। এপর্যন্ত চারটি মোবাইল হারিয়েছে। পকেট মারের পাল্লায় পরে সব টাকা হারিয়েছে কয়েকবার। একবার তো বিশ্বইজতেমায় গিয়েও মোবাইল হারিয়েছে।
খোকাকে গ্রামের বাড়ী পাঠালে হাতে একটা পুটলামতন ধরিয়ে দেন যাতে খারাপ লোকের নজরে না পরে। একবার খোকা বাসে ঘুমিযে টঙ্গি বোর্ডবাজার চলে যায় পরে অনেক রাতে বাড়ি ফেরে। খোকাকে নিয়ে তার চিন্তার শেষ নেই। কাঁচা বাজার করতে তার জুড়ি মেলা ভার । সবজিনিস বেশি দাম দিয়ে কিনে।
একবার তো বাইম মাছ মনে করে কুইচ কিনে আনে।
ছোট্ট বেলায় একবার খোকা মিরপুর বাজার থেকে হারিযে যায়। তখন তার বয়স ৪ বছর। রাত দশটায় তাকে মামুন নামের একজন রাজমিস্ত্রী বাসায় নিয়ে আসে। খোকা তার হারিযে পাওয়া রতন।
হস্তরেখা বিশারদ আলকাস মিয়া খোকার হাত দেখে বলেছিলো তার ছেলে পথ চলতে গিযে জীবন নাশের আশংকা আছে। বুধবার তার জন্য খুব কু। বুধবারে সে হারিয়ে গিয়েছিলো। এক বুধবারে চুল ছোট করতে গিয়ে কান কেটে রক্তাক্ত হযেছিলো। ডাবের পানি খেয়ে অজ্ঞানও সেই বুধবারে।
আজ বুধবার । আগামীকাল হরতাল। দিনটা খুব খারাপ। গতরাতে দুস্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙেছে।
কাজের বুয়া গ্রামের বাড়ী যাওয়ার কথা বলে গেছেন আর আসার খবর নেই।
বুয়া ক্রাইসিস মারাত্নক আকার ধারণ করেছে। আগে কাজের লোকের অভাব হতো না। এখন মহীলারা গামেন্টস এ চাকরি করে। বাসায় কাজ করে তাদের পোষায় না। নাসরিন নামের একটা কজের মেয়ে চার বছরকাজ করার পর বাল্য বিয়ের মধ্যে দিয়ে বিদায়।
এর পর আর কোন বুয়া তিন মাসের বেশি থাকে নাই। নাসরিনকে তিনি আরবি পড়া শিখিয়েছেন। বাংলা পড়তে শিখিয়েছেন। তার বাবা অল্প বয়সে মেয়ের বিয়ে দেয়। তার ভাইও বিয়ে করে ফেলেছে।
দরিদ্র শেণীর বিয়ে হলো ডাল ভাতের মতন। এদের অনেকেরই বাল্য আর বহুবিবাহ। আর বাচ্চা কাচ্চা কম পক্ষে এক হালি। জার্মানীর মতো দেশে এখন জনসংখ্যা বৃদ্ধি হার নেগেটিভ। এই শ্রেণীর লোকঐ্ সমস্ত দেশে থাকলে খুব ভালো হতো।
জনসংখ্যাবৃদ্ধির বিনিময়ে বেতন ভাতার ব্যাপার থাকলে তারা এই পেশায় সবচেযে সফল পেশাজীবি হতে পারতেন। বুয়াদের দাবি দাওয়া মেটাতে সাজেদা বেগম হাপিয়ে ওঠেন। এখনকার বুয়াদের হাতে মোবাইল। কথাবার্তাও কর্কশ। দাবি আদায় না করে ছাড়ে না।
সমস্যা হলো তারা চৌর্যবৃত্তিতে এক্সপার্ট। শাক সব্জি ডাল চাল মাছ সুযোগ পেলেই হাতিয়ে নেয়। একদিন বেশি কাপড় কাচালে তিন দিন আর খবর থাকে না। প্রায়ই অসুখ লেগে থাকে। সেই বাবদ চিকিৎসাভাতাও দেয়া লাগে।
ফোনে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলে। কাজ ফেলে টিভি দেখায় জুড়ি না্ই। ভারতীয় বাঙলা চ্যানেল দেখে। রাশি মেগা সিরিয়ালের একটি পর্বও মিস করবে না। কলির জমানা আসলো।
এক যুবতি কাজের বুয়া বাড়ীর বিবাহিত দারোয়ানের সাথে পরকিয়ায় জড়িয়ে যে ক্যাচাল সৃষ্টি করেছিল। দারোয়ানের বউ ছেলে মেয়ে গ্রাম থেকে এসে বাড়িটা কুরুক্ষেত্র বানিয়ে ফেলে। তারপর থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়ায়। পত্রিকাতে কাজের বুয়া এবং দারোয়ান মিলে মালিক হত্যার কাহিনিও সে পড়েছে। কি ভয়ানক।
তাই কাজের লোক হিসেবে তার পছন্দ নিজের গ্রামের লোক্। বুয়াদের দাবী দাওয়া সর্বাগ্রে মানতে হয়। কারণ তারা এখন বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতি। মহামূল্যবান। টাকায় বাঘের দুধও মেলে কিন্তু ভালো বুয়া মেলেনা এর জন্য টাকার সাথে ভাগ্যের সহায়তাও লাগে।
শীঘ্রই মনে হয় পেপারে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বুয়া নিয়োগ দেয়া লাগবে
। বুয়া ক্রাইসিস এখন চরমে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ভাষা কেমন হতে পারে?একটি জরুরী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি একজন সচ্চরিত্রবতি বুয়া আবশ্যক। বয়স অনুর্ধ্ব চল্লিশ হওয়া লাগবে। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন।
নামাযী হওয়া আবশ্যক। তাকে আবশ্যই হালকাপাতলা গড়নের হতে হবে। শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যুণতম পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত্। চাকরির মেয়াদ ৩ বছর পূর্তির আগে চাকরি ছাড়তে পারবে না। বাসায় বাচ্চা নিয়ে আসা যাবে না।
যে কোন সময় তাকে চাকুরীচ্যুত করা হতে পারে। উপযুক্ত বেতন দেযা হবে।
আগ্রহী প্রর্থীদের ১২/১২/১২ তারিখে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ নিম্ন ঠিকানায় সরাসরি উপস্থিত হওয়ার অনুরোধ করা হলো। এই রকম্। বিয়ের পাত্রি খোজা আর কাজের বুয়ার বিজ্ঞাপন প্রায় একই রকম।
একটু তফাৎ আছে। সেটা হলো বুয়ার ক্ষেত্রে সুন্দরী ব্যাপরটা উল্রেখ করা যাবেনা ।
এখনকার বুয়া তার নিজ গ্রামের লোক। বৃদ্ধা । সে কি কাজ করবে?ওল্টো তার খেদমতে বাড়ীর সবাই নিয়োজিত।
কয়েকদিন পরপর তার অসুখ করে। তখন তিনিই বুয়ার খাবার পানি এগিয়ে দেন। অসুস্থ মানুষ। তার খেদমতের জন্যও একজন কাজের মানুষ চাই। পাঙ্গাস মাছ,আফ্রিকান মাগুর,বয়লার মুরগী,থাইকই পালা রুই তিনি খান না।
শুককুরীর মা তার গ্রামের লোক। তার সাথে সুখ দঃখের কথা শেয়ার করা যায়। তাছাড়া তার উপস্থিতি তার প্রিয় গ্রামের কথা মনে করিয়ে দেয়। বুযা গেছেন তার নাতনীর বিয়ে দিতে। মৃত শুক্কুরীর মেয়ে।
সাতদিন হয়ে গেছে তার কোন খবর নাই।
খোকার বাবা তবলীগে গেছেন। তার মোবাইল বন্ধ যোগাযোগ করার উপায় না্ই। সাজেদাবেগমের পীড়াপীড়িতে খোকার বাবা বৃদ্ধ বয়সে তবলীগে গেছেন। পরহেযগার ব্যক্তি হয়ে মারা যাওয়া উচিত সবারই।
আখেরাতের জীবনের শুরু আছে শেষ নাই। সেইখানে যে সুখি সেই প্রকৃত সুখি। তাছাড়া খোকার উপর দিয়ে যে দূর্ঘটনা গেছে গত বছর । মরেও যেত পারতো। বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে আন্জুমানে মফিদুল ইসলামের হাতে পরতো।
ডাক্তাররা তার খোকার শরীরে বিভিন্ন অংশ কেটে ব্যবহারিক জ্ঞান লাভ করতো। ভাবতেই গা শিউরে ওঠে। সাগর রুণি হত্যা,লাশকেটে ২০৬ টুকরো করা,অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পরে মারা যাওয়া এখনকার পত্রিকার নিয়মিত খবর। তাই তার মানতেরও কমতি নাই। খোকার বাবাকে তবলীগে পাঠিয়েছেন এই নিয়তেই।
খোকা যেন তার লম্বা নেক হায়াত পায়।
খোকাকে কল করে পাওয়া যাচ্ছে না। এ দিকে রাতও হয়ে গেছে অনেক। বাড়ীর গেট দশটায় বন্ধ। এই বাসার সমস্যা হলো লিফ্ট নাই।
চার তলা ভেঙে দারোয়ানকে বলা লাগবে খোকার আসতে দেরি হবে। আগামীকাল হরতাল। সন্ধ্যায় নাকি কোথায় গাড়ি পোড়িয়েছে। নাউন ও তাকে ফোন করে পাচ্ছেনা। রাত দশটার বেশি এখন খোকার ফোনে কল ঢুকছেনা ।
ফোন বন্ধ। গত বছর ঠিক এইভাবেই কল ঢুকছিল না। তারপর খোকা এল অজ্ঞান অবস্থায। সাজেদাবেগমের মাথা ঘুরছে । অস্থির লাগছে।
আজ বুধবার। গতরাতে দুঃস্বপ্ন দেখেছেন। কি যেন স্বপ্ন দেখলেন। খোকা ডাবের পানি খাচ্ছে গুলিস্তানে একটা গাড়ীর ভীতর। খোকা ডাব খেতে চায় নাই।
পাশে বসা লোকটি তাকে বলছে ভাই ডাব খাবেন। খোকা বলছে না। খেতে ইচ্ছে করছে না। লোকটি বলছে আরে খান। সস্তায় দিবো মনে হয়।
একজোড়া ডাবই আছে। এই ,ডাব জোড়া কত দাম?ভাই ষাট টাকা্। চল্লিশ টাকা লন। আচ্ছা নেন। এই একজোড়াই আছে।
তাই দিয়া দিলাম্। গাড়ী ছেড়ে দিচ্ছে খোকা নতুন ২০ টাকার একটা নোট দিল। তারপর ডাবের পানি খেল। গলা দিযে কেমন যেন একটা অনুভূতি পেল। তারপর অল্পসময়ের মধ্যেই শরীর নেতিয়ে পড়লো।
আজ বুধবার । খোকার মোবাইল বন্ধ। রাত সাড়ে এগারোটা বাজে। এর মধ্যে দূর থেকে পেঁচার অলুক্ষণে ডাক ভেসে আসলো কানে। এখানে পেঁচা আসলো কোত্থেকে?! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।