আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রুবেনের তুলিতে গ্রীক মিথলজী

There is but one moment when the Goddess of Fortune wafts by, and if you don’t grab her by the hem, you won’t get a second chance.
জার্মানদের মেশিন বলে একটা দূর্নাম থাকলেও সর্বক্ষেত্রে কিনতু সেটা ঠিক বরা যাবে না। তাদের মাঝেও জন্ম নিয়েছে চিত্রশিল্পের শ্রেষ্ঠ সাধকরা। পিটার পল রুবেন তার অন্যতম। ১৫৭৭ সালের ২৮ জুন জার্মানীর সিগনে জন্ম গ্রহন করেন। মিথলজীর উপর তার করা পেইন্টিং গুলোর কারনে তিনি অমর হয়ে আছেন।

তার এই কর্ম স্বরুপ ইংল্যান্ড রাজার কাছ থেকে তিনি নাইটহুড বা স্যার উপাধী লাভ করেন। চিত্রশিল্পীর পাশাপাশি পেইন্টিং জোগাড়েও তার একটা বিশেষ শখ ছিল। মানবতাবাদী হিসাবে পরিচিত রুবেন কুটনীতিক হিসাবে কাজ করেছেন স্পেনের চতুর্থ ফিলিপ ও ইংল্যান্ডের প্রথম চার্লসএর রাজ দরবারে। ০১. প্রমিথিউসের শাস্তি মানব জাতির ত্রানকর্তা বলে প্রাচীন গ্রীসে সম্মান করা হতো প্রমিথিউসকে। যদিও সে দেবতা ছিল না তারপরও গ্রীসে তার সম্মান দেবতা থেকে কোন অংশে কম ছিল না।

প্রথমে পৃথিবীতে আগুন ছিল না। প্রমিথিউস প্রথম মানব জাতির উপকারের জন্য স্বর্গ থেকে আগুন চুরি করে। ফলে বেজায় ক্ষেপে জান দেবরাজ জিউস। প্রমিথিউসকে বন্দি করেন ককেশাস এর পর্বতে। আর প্রতিদিন দেবরাজ জিউস তার ঈগলকে পাঠাতেন প্রমিথিউসের হৃদপিন্ড খাদ্য হিসাবে গ্রহন করার জন্য।

সেই থেকে প্রমিথিউসকে গন্য করা হয় অসহায়ের ত্রানকর্তা রূপে। তুলির আচঁড়ে প্রমিথিউসকে অত্যাচারের দৃশ্যটি একেছেন জার্মান চিত্রশিল্পী পিটার পল রুবেন। তৈলচিত্রটি আঁকা হয়েছে ১৬১১ থেকে ১২ সালের মাঝে। তৈলচিত্রটি বর্তমানে আমেরিকারে ফিলাডেলফিয়ার ফিলাডেলফিয়া মিউজিয়াম অব আর্টে সংরক্ষিত আছে। ০২. প্যারিসের ন্যায় বিচার যারা গ্রীক মিথ সম্পর্কে একটু হলেও জানেন, তাদের ট্রয়ের যুদ্ধের কথা নতুন করে বলবার কিছু নেই।

কিন্তু ট্রয়ের যুদ্ধের কারনটা হয়তো অনেকেই জানেন না। যুদ্ধটা শুরু হয়েছিল সুন্দরী শ্রেষ্ঠা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। একদিন দেবরাজ জিউসের প্রসাদে সকল দেবতাদের ভোজের জন্য নিমন্ত্রন করা হয়। কিন্তু সেখানে আমন্ত্রন পান না অ্যারস। কলহ প্রিয় বলে তাকে সবাই এড়িয়ে চলতো।

তো সে এর প্রতিশোধ নিতে চান। সে একটা স্বর্ণের আপেলের উপর শ্রেষ্ঠ সুন্দরীর জন্য। সব দেবী এই আপেল প্রথমে নিতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত প্রতিযোগিতা নেমে আসে ভেনাস বা আফ্রিদিতি, হেরা ও অ্যাথিনার মাঝে। সৌন্দর্যের ব্যাপারে দেবরাজ জিউসকে বিচারক মানলে তিনি নিজে এই দায়িত্ব এড়িয়ে ট্রয় যুবরাজ প্যারিসকে বিচারক নিয়োগ করেন। প্যারিস দেবীদের বলেন যে তাকে সেরা উপহার দিতে পারবে তাকে তিনি আপেল উপহার দিবেন।

হেরা তাকে গ্রীস-ট্রয় যুদ্ধে বিজয়ী করবেন, অ্যাথিনো তাকে গ্রীস ধ্বংস করে গ্রীসের রাজা বানানোর ঘোষনা দেন। এবং আফ্রিদিতি তাকে বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দরীর সাথে তার বিবাহ দেয়ার প্রতিস্রুতি দেন। পরবর্তীতে ভীরু ও কাপুরুষ প্রমানিত প্যারিস আফ্রিদিতিকে আপেলটি উপহার দেন। পরে আফ্রিদিতির প্ররোচনায় প্যারিস মেনোলাউসের স্ত্রী হেলেনকে অপহরন করে ট্রয় নিয়ে আসে। ফলে শুরু হয় ট্রয় যুদ্ধ।

তুলির আচড়ে প্যারিসের ন্যায় বিচার তৈল চিত্রটি একেঁছেন জার্মান চিত্রশিল্পী পিটার পল রুবেন। তৈলচিত্রটি বর্তমানে মাদ্রিদের ডেল পোর্তো জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। ০৩. দ্য ফল অব ইকারাস আজ থেকে যদি ২০০ বছর আগে কোন মানুষকে বলা যেত মানুষ আকাশে উড়বে, তাহলে সে নির্ঘাত যে বলবে তাকে পাগল ভাবতো। কিন্তু গ্রীকরা আজ থেকে ৩০০০ হাজার বছর আগে স্বপ্ন দেখতো মানুষ আকাশে উড়বে। এবং মানুষের আকাশে উড়াকে কেন্দ্র করে তারা একটি মিথও তৈরি করে ফেলেছিল।

ক্লাস সিক্স বা সেভেনের বইয়ে ইকারাসকে নিয়ে একটা গল্প ছিল। ইকারাস ও তার পিতা ডেডলস ক্রিটের রাজা মাইসিনের কর্মচারী ছিল। কিন্তু রাজার আদেশ অমান্য করে তার মেয়ে আরিদনাকে তার ডিজাইন করা গোলকধাঁধাঁ থেকে বের হবার উপায় গ্রীক বীর থিসিউসকে দেবার কারনে মাইসিন তাকে বন্দি করে। ডেডলস ছিল তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে বিখ্যাত স্থাপতি। সে ক্রিট থেকে উরে যাবার উপায় বের করে।

সে ও তার পুত্র ইকারাস মোমের পাখা ব্যবহার করে ক্রিট থেকে উড়ে যায়। কিন্তু তরুনরা সবসময় নতুন কিছুর জন্য উৎসাহী। ইকারাস বেশি উপরে চলে যাওয়ায় সূর্যের তাপে তার মোমের পাখা খুলে যায় ও কৃঞ্ষ্ণ সাগরে পতিত হয় এবং ডুবে মারা যায়। তুলির আচড়ে তৈল চিত্রটি একেঁছেন জার্মান চিত্রশিল্পী পিটার পল রুবেন। তৈলচিত্রটি বর্তমানে নিখোঁজ আছে।

০৪. দ্য ফল অব এ ম্যান স্বর্গ থেকে আদম ও ইভের পৃথিবীতে আশা বিশ্বের প্রায় প্রতিটি ধর্ম গ্রন্থেই একটা গুরুত্বপূর্ন স্থান লাভ করেছে। কোরআন, ওল্ড টেস্টামেন্টে আদম ও ইভ/হাওয়াকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করা হয়েছে। এবং প্রতিটি ধর্ম গ্রন্থেই সারকথা এক, ইভ/হাওয়া শয়তানের প্ররোচনায় আদমকে নিষিদ্ধ ফল আপেল খাওয়ায় যার ফলে আদম ও হাওয়া স্বর্গ থেকে পতিত হয়। ক্লাসিকাল চিত্রকলা এই দৃশ্যকে বিভিন্ন ভাবে কল্পনা করেছে। একেছে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অসংখ্য চিত্রকর্ম।

ক্লাসিকাল চিত্রকলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ন এই বিষয়কে নিয়ে কাজ করেছেন অনেকেই। তৈলচিত্রে বেশকিছু কৌতুহল উদ্দিপক ব্যাপার। যেমন: এই তৈলচিত্রে শয়তান হিসাবে যাকে আকাঁ হয়েছে একটা বাচ্চা ছেলেকে। খুব সুন্দর এই ছেলেটাকে কেন শয়তান হিসাবে চিত্রিত করা হলো তা সত্যিই রহস্যজনক। তবে এই ব্যাপারের ব্যাখ্যাটা হলো, শিশুদের আসলে ভাল মন্দের কোন ঞ্জান থাকে না।

তাদের যা করানো হবে তাই করবে। এটাই সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা। আরো একটা ব্যাপার খেয়াল করবেন, শয়তানকে ওল্ড টেস্টামেন্টে সাপ হিসাবে স্বর্গে প্রবেশের কথা বলা হয়েছিল, কিন্তু চিত্রে তার কোন প্রতিফলনই নেই। এছাড়া ময়ুরের কথা বলা আছে, সেখানেও ময়ুরের স্থানে আছে একটা লাল টিয়া। মানে কিছু অসামঞ্জস্য থেকেই যাচ্ছে।

১৬২৮ থেকে ১৬২৯ সালের মাঝে আকাঁ এই চিত্রকর্ম বর্তমানে স্পেনের পারর্দো মিউজিয়ামে আছে। ০৫. ভেনাস এট মিরর ক্লাসিকাল চিত্রকলার এক বিরাট অংশ জুড়ে আছে পৌরানিক সব চরিত্র। পৌরানিক চরিত্রের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটা চরিত্র ভেনাস। গ্রীক ও রোমানদের প্রেমের এই দেবি নিয়ে আকাঁ হয়েছে অনেক তৈলচিত্র। রোমান্টিক মনের অধিকারি এই শিল্পীরা নিজেদের কল্পনায় বিভিন্ন ভাবে একেছেন প্রেমের এই দেবীকে।

ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন ভেনাসের ঔর্যকে নিজেদের মনের মতো করে। জার্মান চিত্রশিল্পী পিটার পল রুবেন এই তৈলচিত্রটি একেছেন ১৬১৫ সালে। আয়নাকে সামনে রেখে ভেনাসকে একেছেন তিনি। এবং আয়নায় শুধু ভেনাসের মুখটি দেখা যায়।
 


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।