বিশ্বের একটি জটিল সংক্রমক ব্যাধি হচ্ছে যক্ষ্মা। আমাদের দেশেও এর থেকে ব্যতিক্রম নয়, বরং উন্নয়নশীল ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হিসেবে দেশে যক্ষ্মা বা টিবি রোগের মাত্রা বা প্রকোপ তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। সাধারণত বদ্ধ, স্যাঁতসেতে, ঘনবসতিপূর্ণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে এ রোগের প্রকোপ বেশি। যক্ষ্মা বা টিবির জীবাণুর সংক্রমণ বৈশিষ্ট্যের কারণেই এমনটা হয়। এ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে স্বাস্থ্য সচেতনতার মাত্রা কম থাকায় এ রোগের বিভিন্ন লক্ষণ বা উপসর্গ সম্পর্কে আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগেরই তেমন ভালো ধারণা নেই।
মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস নামক জীবাণু যক্ষ্মা রোগের জন্য দায়ী। এই জীবাণু শ্বাসের সময় শ্বাসনালীর মাধ্যমে মানবদেহে সংক্রমিত হয়। এ জন্য যক্ষ্মা বা টিবি রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলো ফুসফুসের সংক্রমণজনিত কারণে হয়। অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে কাশির সঙ্গে কফ বা রক্ত যাওয়া, সান্ধ্যকালীন বা রাত্রীকালীন হালকা জ্বর, শ্বাসকষ্ট বা বুকের ব্যথা, দ্রুত শরীরের ওজন হ্রাস পাওয়া ইত্যাদি নিয়েও যক্ষ্মা বা টিবি রোগী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে পারেন। অন্যান্য উপসর্গ নিয়ে রোগী অতটা ভীত না হলেও কাশির সঙ্গে রক্ত গেলে রোগী ভীত ও চিন্তিত হয়ে পড়ে।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী এ ধরনের অধিকাংশ রোগীই মনে করেন, কাশির সঙ্গে রক্ত যাওয়া মানেই যক্ষ্মা বা টিবি রোগ হওয়া। সর্বদা এ ধারণা সঠিক নয়। যক্ষ্মা বা টিবি রোগ ছাড়াও অন্য অনেক রোগ আছে, যাতে কাশির সঙ্গে রক্ত যেতে পারে। সাধারণ কারণগুলোর মধ্যে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসজনিত ফুসফুসের প্রদাহ বা ব্রঙ্কাইটিস হলে কাশির সঙ্গে রক্ত যেতে পারে। এটা কোনো ভীতিকর বা চিন্তা করার মতো কিছু নয়।
নিউমোনিয়া হলেও কাশির সঙ্গে রক্ত যেতে পারে। সাধারণত শিশু বা বয়োবৃদ্ধরা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয় বেশি। তবে এটা ঠিক যে, কফের সঙ্গে রক্ত যাওয়ার অন্যতম প্রধান দুটি কারণ হলো যক্ষ্মা বা টিবি ও ফুসফুসের ক্যানসার। যক্ষ্মা বা টিবি রোগীর ক্ষেত্রে কফের সঙ্গে যাওয়া রক্তের পরিমাণ বেশি। কিন্তু ক্যানসার রোগীর ক্ষেত্রে অল্প অল্প করে দীর্ঘসময় ধরে কাশির সঙ্গে রক্ত যায়।
ধূমপায়ী ব্যক্তিদের বেলায় ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে বেশি। অন্যদিকে জনাকীর্ণ, বদ্ধ, স্যাঁতসেতে পরিবেশে থাকা একজন মানুষের হঠাৎ করে কাশির সঙ্গে অনেক পরিমাণে রক্ত গেলে তার ক্ষেত্রে যক্ষ্মার সম্ভাবনা আগে আসে। অন্যদিকে ফুসফুসের ফোঁড়া হলেও কাশি বা কফের সঙ্গে রক্ত যেতে পারে। যক্ষ্মা বা টিবিসহ অন্যান্য ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ, ফুসফুসের ক্যানসার কিংবা কিছু পরজীবী জীবাণু যেমন অ্যামিবা দ্বারা ফুসফুসের ফোঁড়া হতে পারে। এ থেকেও রক্ত যেতে পারে।
যক্ষ্মা বা টিবি ও ক্যানসার ছাড়াও অন্য একটি রোগে অল্প থেকে বেশি পরিমাণে কাশি বা কফের সঙ্গে রক্ত যেতে পারে। এর নাম ব্রঙ্কিয়েকটেসিস। কিছু রক্তজনিত রোগের কারণেও কাশির সঙ্গে রক্ত যেতে পারে, যেমন- হিমোফিলিয়া বা অনুচক্রিকাজনিত রোগ আইটিপি। এসব ক্ষেত্রে কাশির সঙ্গে রক্ত যাওয়া ছাড়াও বিভিন্ন উপসর্গ থাকতে পারে। কাজেই কাশির সঙ্গে রক্ত যাওয়া মানেই যক্ষ্মা নয়।
লেখক : বক্ষব্যাধি ও অ্যাজমা বিশেষজ্ঞ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা। ফোন : ০১৭১১১৭১৬৩৪
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।