আমার একটা ভাল নাম ছিল - "আকাশ" যতদিন তুমি ছিলে
“অ্যাঁহ ! ব্যাথা লাগছে ত “
মিঠু বেশ ইতস্তত বোধ করছিল । বুকের ভেতর এত জোরে ঠক ঠক শুরু হয়েছে যে বাইরে থেকে ও শব্দ শোনা যাচ্ছে । বেশ ভয়েই নাকি ঠকঠকানিতে ইস্পিতার হাত চেপে ধরেছে বুঝতে পারছে না । ইস্পিতা আবার ককিয়ে উঠল । মিঠুর বোধদয় হল , হাত ছেড়ে ভিড় মারিয়ে দৌড়ে লাফে খোলা মতন একটা মাঠে এসে বসে পড়ল ।
বুক এখন রেলগাড়ির মতন ঝিকঝিক করছে । নাহ ! আমি এইটা কি করলাম ? মনে মনে ভাবছিলো মিঠু । এবার যদি বড় গুরুজনদের বলে দেয় তাহলে ত মান সম্মান সব যাবেই উপরন্তু বাসায় ধোলাই মাস্ট । ধুর কোন কুলক্ষনে যে এলাম এখানে । দুদিন আগেই মিঠু এসেছে বন্ধুর সাথে এক বিয়েতে ।
বাসা থেকে অনেক কস্টে মানিয়ে সিলেট আসতে হয়েছে । এমনিতে বাসা থেকে বাইরে থাকার এলাউড নেই তারপর এতদূর কয়েকটা রাত কাটাতে হবে ভেবেই বনিবনা হচ্ছিলো মিঠুর সাথে । মন খারাপ করে যখন গাল ফুলিয়েছিলো বড় আপু এসেই তাকে নিয়ে গিয়ে মা-বাবা কে রাজি করিয়ে ছেড়েছিলো , তবে কথা দিয়েছিলো কোনরকম গণ্ডগোল করবে না । হলুদের রাতেই গানের অনুস্টানে প্রথম দেখে ইস্পিতাকে । বেশ সুশ্রী আর কম কথা বলছিলো ।
হাসিতে তার এত সেক্সি লাগছিলো যে বারবার মনিশা কইরালার কথা মনে হচ্ছিলো । তবে সবচেয়ে বেশি যেটা আকর্ষিত করেছিলো সেটা হচ্ছে তার খোলা চোখ । বরত্মানে মেয়েদের চোখ তিন প্রকার হয়ে থাকে ।
১/ খোলা চোখ – এরা চোখের দিকে তাকায় কম উল্টো চোখ দিয়ে দেখে বেশি ।
২/ চশমাওয়ালা চোখ- এদের ক্লাস ওয়ান থেকে দ্বাদশ শ্রেনী পর্যন্ত পড়তে পড়তে চোখের পাওয়ার কমে যায় ।
৩/ গিরগিটি চোখ – এরা খালি লেন্স পালটায় আর চোখের রঙ পরিবর্তন করে ।
খোলা চোখে ইস্পিতাকে যা লাগছিলো না অসম্ভব সুন্দর । সেই চোখে আরচোখে তার দিয়ে কয়েকবার তাকাতেই চোখে চোখ চোখাচুখি হয়ে কখন যে মনের চোখে ঠুকাঠুকি শুরু হয়েছিলো কেউ বলতেও পারেনি । মিঠু লক্ষ করেছে মেয়েটা কয়েকবার ই তার সামনে দিয়ে ফোস করে চলে যেত । বেশ কয়েকবার ই বান্ধবীরা মিলে হাসাহাসি করছিলো তার সামনে ।
একবার সুযোগ বুঝেই ক্যাঁৎ করে হাতটা চেপে ধরেছিলো মিঠু । তারপর যে কি হল বুঝতেই পারছিলো না , বুকের কাঁপুনির সাথে সাথে হাতের জোড় বৃদ্ধি পাচ্ছিলো । স্তম্বিত ফিরে ফেলো ইস্পিতার ককিয়ে উঠার সময় , তারপর ই ছেড়ে ছুড়ে পড়িমরি করে এই মাঠে এসে বাঁচল । বেশ খানিকটা সময় পেরুনোর পর বাড়ির পথে হাটতে লাগল । বাসার সামনেই মূল ফটকের নিচে চেয়ার নিয়ে ইস্পিতা বসে ছিলো ।
মিঠুকে দেখেই ডাক দিয়ে দিলো । মিঠু এবার সামনে এগুবে নাকি পেছনে যাবে বুঝতে পারছিলো না । ইস্পিতা বলে উঠলো ভাইয়া একটূ এদিকে আসেন কথা আছে আপনার সাথে ?
- জী ইয়ে মানে ....
- ভাইয়া আপনাকে আমি খুব ভাল মনে করেছিলাম কিন্তু আপনি
- আমি সত্যিই দুঃখিত আসলে আমি বুঝতে পারছিলাম না
- কি বুঝতে পারছিলেন না ?
- না মানে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না .... আসলে আপনাকে প্রথম দেখার পর কেমন জানি ..
- থামেন ..... আপনাদের মতন ছেলেদের আমার খুব ভাল করে চেনা আছে । একটু ভাল করে তাকানো মানে এই নয় যে আপনি অন্য কিছু ভেবে বসে থাকবেন ।
মিঠুর যেনো মাথায় আসমান ভেঙ্গে পড়ল ।
ছি ছি আসলেই ত আমি এত ছোট মনের মানুষ আগে ত ছিলাম না । মিঠুর চোখ ঝাপসা হয়ে এলো , মাটির দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলে মাটি তুমি ফাঁক হয়ে যাও আমি ঢুকে পড়ি ।
- আমি সত্যিই খুব দুঃখিত । আমি লজ্জিত ... এমন ভুল আর কখন ও হবে না । প্লিজ আমাকে ভুল বুঝবেন না আমি ভুল করে ফেলেছি ।
ইস্পিতার কেনো জানি মনটা খারাপ হয়ে গেলো । ধাড়ি ছেলে ক্ষমা চাচ্ছে তাও আবার চোখে পানি ।
- থাক ভাইয়া ইটস অকে ....
মিঠু একবার ইস্পিতার দিকে তাকিয়ে সরি বলে ঘাড় ঘুরিয়ে বাসার দিকে পা বাড়ালো । কিছুদূর যাবার পর পেছন থেকে ইস্পিতা বলে উঠল –
“ ভাইয়া মেয়েদের এত শক্ত করে ধরতে নেই , তাদের মন শক্ত হতে পারে কিন্তু শরীর নয় “ ।
*****
যাত্রাবাড়ী থেকে মহাখালি যেতে যে জাহান্নামী জ্যাম পেরুতে হয় মিঠু সেটা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করে ফেলেছি কিন্তু কিসের কি , সাইট দেখতে তাকে প্রতিদিন ই আসতে হয় ।
জীবনটা শেষ হয়ে গেলো । মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে এসব ছেড়ে ছুড়ে কোনও এক হিমালয়ের চুড়োয় গিয়ে বসে থাকা । সবচেয়ে অভাগ্যবান ত তখন মনে হয় নিজেকে যখন বাসে উঠে যুতসই সিট না পেয়ে দাঁড়িয়ে থাকা । আজ কিছুটা সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে নিজেকে , মহিলা সিটের সামনে সিট পেয়েছে । সমস্যা একোটাই তা হলে ইঞ্জিনের গরম ভাপ লাগছে ।
ক্ষতি কি দাঁড়িয়ে থাকার চেয়ে ত বেটার নাকি ? নিজেকেই যেনো বোঝালো মিঠু । মৌচাক সিগন্যালে বাসে হুড়মুড় করে কিছু ললনা উঠে পড়ল। বাসের সব যাত্রিদের চাহনি তাদের দিকে , কিছুক্ষন এর মধ্যেই বাসের সব পিনপতন নিরবতা থেকে শুধু ললনাদের কিচিরমিচির শোনা যাচ্ছিল । একজন এর হাসির আওয়াজ কেমন জানি পরিচিত মনে হচ্ছিলো । মিঠু ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো হাসির উপস্তিতি দেখার জন্য ।
চোখের দিকে তাকিয়ে বুকটা ধুক করে উঠলো । মেয়েটা ও অনেক্ষন তার দিকেই তাকিয়ে ছিলো অবশ্য আড়চোখে , মিঠু তাকাতেই যেনো চোখে চোখাচুখি হয়ে গেলো । ৬/৭ সেকেন্ড পর চোখ নামিয়ে মিঠু সামনে তাকিয়ে রইলো । ভাবতে লাগলো কোথায় যেনো দেখেছি । মিঠুর খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো আরেকবার তাকাই কিন্তু শত ইচ্ছেকেই সে দমন করে ফেলেছে তখন ।
একটা সময় ছিল যা ইচ্ছে হত করে ফেলা যেতো কিন্তু এখন সেটা ইচ্ছে থাকা সত্তেও সম্বভ নয় । অনেকগুলো বছর কেটে গিয়েছে মিঠু চোখের ব্যাবহার করে না, ঠিকমতন মেয়েদের দিকে তাকানো ত দূরের কথা নিজের দিকে ও তাকিয়ে থাকতে পারে না অনেক্ষন । নাবিস্কো আসতেই কন্টাক্টর চেচাতে লাগলো “ যারা মহাখালী নামবেন গেইটে আসেন , সামনের সিগন্যালে থামলেই নামতে অইব । মিঠু কোনরকমে গেটের কাছে এসে দাড়ালো । মেয়েগুলো থেকে একজন মেয়ে মহাখালী নামবে , কন্ডাক্টর আবার চেচাতে লাগলো “ ঐ লেডিস নামবো স্লো স্লো “ ।
মিঠু চেঁচিয়ে উঠলো “ তুই গেটের কাছ থেক সড় , তবেই না লেডিস নামবে গাধা “ । কন্ডাক্টর ভেচকি দিয়ে কইলো হ সার নামতাছি । তরুনী গেটের কাছে দাঁড়িয়ে আর পেছনে মিঠু সাহেব । বাস স্লো করলে কন্ডাক্টর নেমে বলতে লাগলো “ আফা বা পা দিয়া নামেন “ । নামতে যাচ্ছে কিন্তু মেয়েটা বেসামাল হয়ে গেলো , ফট করে মিঠু হাত ধরে ফেলে তাকে সামলানোর চেস্টা করল কিন্তু তার হাত পিছলে গেলো ।
ভাগ্যিস কন্ডাক্টর শক্ত করে ধরে ফেলছিলো না হলে নির্ঘাত কন্তু হাটু ছুলে যেতো । মিঠু ও নামলো তারপর বাস চলে গেলো । মিঠু নেমে তরুনির দিকে তাকিয়ে আছে । মেয়েটা আরেক হাত দিয়ে কব্জি ডলছেন যেটাতে কন্ডাক্টর চেপে ধরে তাকে থামিয়েছিলো । মিঠু অন্যদিকে তাকিয়ে চলে আসছিল তখন ই একটা ডাক শুনে থেমে গেলো ।
- জী বলুন । মিঠুর জবাব যেনো সে নিজেই শুনতে পেলো না । গলাটা বসে গেলো । খাকাড়ি দিয়ে আবার একই কথা রিপিট করলো ।
- আপনি কি পুরুষ নাকি মহিলা , ভাত খান না
- মানে কি বলতে চাচ্ছেন
- আপনি যদি ঠিক মতন ধরতেন তাহলে আমি ....
- ঠিক মতন ধরলে আপনি ব্যাথা পেতেন
- তাই বলে এমন নরম ভাবেই কেউ ধরে নাকি ...ভাগ্যিস নিচে কন্ডাক্টর ছিলো
মিঠু ঠোঁটের কোনে একটা মৃদু হাসি নিয়ে বলল – কোন একদিন কেউ একজন বলেছিলো মেয়েদের এত শক্ত করে ধরতে নেই , মেয়েদের মন শক্ত হতে পারে কিন্তু শরীর নয় ।
সন্ধ্যা হয়ে এলো প্রায় । মিঠু হাটতে লাগলো । মনের ভেতর কেমন যেনো একটা পরিতৃপ্ত অনুভব করছে । আজকের বাতাসটা ও খুব মিষ্টি । শরীর ছুয়ে হালকা দোলা দিয়ে যাচ্ছে ।
মিঠু চোখ বন্ধ করে একটা নিশ্বাস নিলো । গভীর নিশ্বাস ....
( গল্পের সাথে বাস্তবের মিল আছে , তার জন্য লেখক দায়ী নয় )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।