স্তন্যপায়ী, পাখি, মাছ, সরীসৃপ, পোকামাকড় সবার মাঝেই দেখা যায় যৌন প্রজনন। অনেকের ধারণা, যৌন মিলনে দুটি প্রাণী পরিতৃপ্তি পায় বলেই এর মাত্রা বেশি। কিন্তু বিবর্তনের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, যৌন প্রজননের প্রক্রিয়া প্রাণীদের মধ্যে অনেক আগে থেকেই। তারও অনেক পরে এর মাধ্যমে পরিতৃপ্তি লাভের সূচনা হয়।
প্রশ্ন থেকে যায়, তাহলে প্রথম দিকে যৌন মিলনের কারণ কী ছিল? বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর পেছনে 'স্বার্থপর জিন' বা পরজীবী জিনের হাত আছে।
এই জিনটিকে 'স্বার্থপর' বলার কারণ হচ্ছে, এটি মানুষের শরীরে কোনও উপকার করে না, শুধুমাত্র প্রাণীদের মিলনে উৎসাহীত করে যেন তারা অন্য জিনকে প্রভাবিত করতে পারে।
প্রসেডিং অব রয়েল সোসাইটি বি (Proceedings of the Royal Society B) জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশ হয়েছে, নিউজিল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব অকল্যান্ডের বিজ্ঞানীদের একটি গবেষণা। সেখানেই তারা মত প্রকাশ করেন যে, 'স্বার্থপর জিন' গুলো প্রাণীদের মিলনে উৎসাহিত করে যাতে এরা অন্য জিনকে প্রভাবিত করতে পারে। 'স্বার্থপর জিন' বা পরজীবী জিন হলো সেইগুলো যারা মেন্ডেলের বংশগতির সূত্র মানে না। মানে অনেকটা ভূতের মতো এরা মানুষের ওপরে চেপে বসে থাকে এবং মানুষকে প্রভাবিত করে।
আরেকটু সহজভাবে বলা যায়, বাবা-মা উভয়ের শরীর থেকে জিন সন্তানের শরীরে আসার সময় দুই ভাগ হয়ে যায়। এই দুই অর্ধাংশ একসাথে হয়ে সন্তানের জেনেটিক গঠন তৈরি করে। এই ভাগ হবার সময় কিছু জিন বাদ পরে যায়। কিন্তু 'স্বার্থপর' জিনগুলো এভাবে ভাগ হয় না। বাবা-মায়ের শরীরে এই জিন থাকা মানে সন্তানের শরীরে এটা অবশ্যই থাকবে।
এছাড়া এই জিনগুলো মানুষের শরীরে কোনও উপকারও করে না। এ কারণেই এদেরকে বলা হয় স্বার্থপর।
এই জিন নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। এর গঠন এবং বিবর্তন সম্পর্কে গবেষকরা অনেক কিছুই জানতে পেরেছেন। কিন্তু এসব জিন বাহকের শরীরে কি ভূমিকা রাখে তা অজানা রয়ে গেছে।
তা জানতেই এই নতুন গবেষণা যা পরিচালিত হয় ইউনিভার্সিটি অব অকল্যান্ডের পলিনা জিরাল্ডো-পেরেজ এবং ম্যাথিউ আর গডার্ডের দ্বারা।
নিউজিল্যান্ডের এই গবেষকরা ধারণা করেন, স্বার্থপর জিনগুলো শুধু যৌন প্রজননের মাধ্যমেই ছড়াতে পারে। মানুষের শরীরে এই জিন থাকে, তবে যত বেশি মানুষের সাথে তিনি মিলিত হবেন তত বেশি পরিমাণে এই জিন ছড়ানোর সুযোগ পাবে। আর মানুষ যদি মিলনে আনন্দ পায় তবে তিনি অবশ্যই বেশি পরিমাণে এবং বেশি মানুষের সাথে মিলিত হতে চাইবেন। এ থেকেই ধারণা করা যায়, মানুষের যৌন প্রজননে যে আনন্দ লাভের প্রক্রিয়া তার পেছনে এই স্বার্থপর জিনের হাত আছে।
তারা গবেষণা করেন ইস্টের একটা প্রজাতি, Saccharomyces cerevisiae তে উপস্থিত হোমিং এন্ডোনিউক্লিয়েজ জিন (HEGs) নিয়ে। ইস্টের এই প্রজাতি প্রাচীনকাল থেকে রুটি বেক করতে এবং অ্যালকোহল তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
অতীতের বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, এই এইচইজি (HEG) গুলো অন্য জিনের তুলনায় অনেক দ্রুত ছড়ায়। এদের এভাবে ছড়ানোর প্রক্রিয়ার নাম হলো 'হোমিং'। মেন্ডেলের সূত্র অনুযায়ী, কোনও বাবা কিংবা মায়ের শরীর থেকে একটি জিন পরবর্তী প্রজন্মে পরিবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ৫০ শতাংশ।
কিন্তু এক ধরণের HEG জিনের মধ্যে দেখা যায়, এটি পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে পরিবাহিত হয়ে থাকে ৭৫ থেকে ৯০ এই গবেষণা থেকে। এতে যে তথ্য পাওয়া যায় তাতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে বাহকের যৌন প্রবৃত্তি বৃদ্ধি ও বজায় রাখার ক্ষেত্রে এই স্বার্থপর জিন প্রভাব রাখে। অন্যদের সাথে মিলিত হবার জন্য মানুষ যতো উৎসাহী হবে, ততই এই জিনের সুবিধা। তাই যৌন মিলনে আনন্দের প্রক্রিয়া সম্ভবত এসব জিনের প্রভাবেই এসেছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।