আগামী ৫ জানুয়ারি ১৪৬টি আসনে দশম সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। বিজিবি-র্যাবের স্কটেই সারা দেশে ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী মালামাল পাঠানো গতকাল শেষ হয়েছে। এদিকে নির্বাচনী আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ২৬ ডিসেম্বর থেকে টহল শুরু করেছে সেনাবাহিনী। এ ছাড়াও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে রয়েছে র্যাব ও বিজিবি। জানা গেছে, ১৪৬ আসনে প্রার্থী রয়েছে ৩৮৬ জন।
নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ হেভিওয়েট প্রার্থীরা। আর আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের লড়তে হবে জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে। ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে মরিয়া আওয়ামী লীগ। এর আগে দেশের অর্ধেক আসনে সংসদ নির্বাচনের নজির নেই। এ অবস্থায় অনেকে মনে করছেন আসন পাওয়ার ক্ষেত্রে নবম সংসদকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে আওয়ামী লীগ।
নবম সংসদে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সরকার গঠন করেছিল। ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৪৬ আসনে প্রার্থী রয়েছেন ৩৮৬ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ১১৯, জাতীয় পার্টির ৬৩, স্বতন্ত্র ১০৩ এবং অবশিষ্ট ১০১ জন প্রার্থী ১০টি দলের। দেশের নির্বাচনী ইতিহাসে সবচেয়ে কম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এবং সর্বোচ্চ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীদের নিয়ে দশম সংসদ নির্বাচন হচ্ছে। সরকার গঠনেও হতে পারে নতুন কোনো ইতিহাস।
আর মাত্র সাত দিন পরেই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এর মধ্যে ব্যালট পেপার, ব্যালট বঙ্, অমোচনীয় কালি, কাট পেন্সিল, স্কেল নির্বাচনী এলাকায় পেঁৗছে গেছে। ৫৯ জেলায় এসব মালামাল বিজিবি ও র্যাবের সহায়তায় পাঠানো হয়েছে। এবার ব্যালট পেপার মুদ্রণ করা হয়েছে ৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬৮ হাজার ৪১টি। এ ছাড়া প্রতিটি আসনের জন্য ১০০০ করে পোস্টাল ব্যালটও ছাপানো হয়েছে।
১৪৬টি আসনে ভোটার রয়েছে ৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬৮ হাজার ৪১ জন। তবে আদালতের নির্দেশে গতকাল আরও ৩ জন প্রার্থী প্রার্থিতা ফিরে পেতে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে নির্দেশনা ঠিক থাকলে প্রার্থী সংখ্যা হবে ৩৮৯ জন। ইসি সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে ১৫৪ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন একক প্রার্থী। তবে গতকাল আদালতের নির্দেশনায় ৩ জন প্রার্থী প্রার্থিতা ফিরে পেতে যাচ্ছেন।
এক্ষেত্রে কুমিল্লা-৮ আসনে আগে একক ছিল। যদি কমিশন আপিল না করে তবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতের সংখ্যা ১টি কমতে পারে এবং এ আসনটিতে নির্বাচন হবে। তবে আর বাকি দুজন প্রার্থী হচ্ছেন চট্টগ্রাম-৩ ও নীলফামারী-১ আসনের। তবে আদালতের নির্দেশনা ঠিক থাকলে ভোটগ্রহণের আসন সংখ্যা ১টি বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে মোট ১৪৭ আসনে ভোট হবে।
জানা গেছে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সামরিক বিমান এবং হেলিকপ্টার প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। ১ জানুয়ারি থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত এসব বিমান এবং হেলিকপ্টার নির্বাচনী কাজে ব্যবহৃত হবে বলে ইসি সূত্র জানায়। বতর্মান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতার কারণে দেশের সব জায়গায় ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাঙ্ পাঠাতে সমস্যা হতে পারে এ জন্য এসব সরঞ্জাম ও লোকবল পাঠাতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সামরিক বিমান ও হেলিকপ্টার প্রয়োজন হতে পারে।
নতুন তিন প্রার্থী : আদালতের নির্দেশনায় ৩ জন প্রার্থিতা ফিরে পেতে যাচ্ছেন। এর মধ্যে নীলফামারী-১ আসনে জাপার প্রার্থী জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, কুমিল্লা-৮ স্বতন্ত্র প্রার্থী এ এস এম কামরুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম-৩ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাহফুজুর রহমান।
সূত্র জানায়, ইসির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা অনুযায়ী এবার সংসদ নির্বাচনে মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে ১৪ থেকে ১৬ জন, আর মেট্রোপলিটন এলাকায় ১৮ থেকে ২০ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করার প্রস্তাব রাখছে ইসি। এ ছাড়া বিশেষ এলাকায় (পার্বত্য, দিপাঞ্চল, হাওর) ১৭ থেকে ১৮ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য রাখা হবে।
আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় সেল : নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে ১ জানুয়ারি সকাল ১০টা থেকে আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় সেল স্থাপন করা হবে। এই সেলে একজন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থাকবেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য পহেলা জানুয়ারি থেকে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে ও রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে মনিটরিং সেল খোলা হবে।
প্রাপ্ত পরিস্থিতি সম্মিলিত বাহিনীকে অবহিত করবে এই সেল। মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স : নির্বাচনী এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে স্ট্রাইটিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, র্যাব, আর্মড পুলিশ নিয়োগ করা হবে। ব্যাটালিয়ন আনসার সহযোগী ফোর্স হিসেবে পুলিশের সঙ্গে মোবাইল টিম দায়িত্ব পালন করবে। ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তা : ভোটগ্রহণের দিন নির্বাচনী দ্রব্যাদিসহ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের ভোটকেন্দ্রে নিরাপদে পেঁৗছানোর জন্য এবং ভোট গণনার ফলাফলসহ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসারের অফিসে গমনের লক্ষ্যে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা : ৪ জানুয়ারি মধ্যরাত থেকে ভোটগ্রহণের দিন মধ্যরাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় সব ধরনের যন্ত্রচালিত যানবাহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকবে।
একই সঙ্গে ইঞ্জিন বোর্ড এবং স্পিডবোট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। এ ছাড়া ৩ জানুয়ারি মধ্যরাত থেকে ৭ জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলের ওপরও নিষেধাজ্ঞা থাকবে। নির্বাচনী প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা : ৩ জানুয়ারি রাত ১২টার পরে সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা নিষিদ্ধ থাকবে। এ সময় নির্বাচনী এলাকায় সভা, সমাবেশ, মিছিল ও শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ থাকবে। একই সঙ্গে ভোটগ্রহণের পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা বিজয় মিছিলের ওপরও নিষেধাজ্ঞা থাকবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।