বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ও শহর এলাকায় প্রভাবশালীরা দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করায় প্রায় ৫০টি খাল বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া আরও প্রায় ২০টি খাল নাব্যতা হারানোর হুমকির মধ্যে রয়েছে। এসব খাল হারিয়ে যাওয়ায় সেচ সংকট ও জলাবদ্ধতাসহ নানাভাবে সাধারণ মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে বোরো চাষ।
গৌরনদী উপজেলা ভূমি অফিস সার্ভেয়ার মো. ইউসুফ জানান, গৌরনদী উপজেলার এসএ নকসা অনুযায়ী (এসএ ১৯৫৪ থেকে ১৯৫০ সালের জরিপ) এ উপজেলায় শতাধিক ছোট বড় খালের অস্তিত্ব ছিল।
গৌরনদী উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসের দেওয়া তথ্যমতে এসএ নকশায় শতাধিক খাল থাকলেও বর্তমান মাঠ জরিপে (১৯৮৭ সালে শুরু করা জরিপ যা চলমান) গৌরনদী উপজেলায় ৭০টি ছোট বড় খালের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসার মো. জিয়াউল কবির জানান, বিএস (বাংলাদেশ সার্ভে) জরিপ করতে গিয়ে দেখা গেছে, এসএ নকশায় ১১০টি খাল ছিল। বাস্তবে শতকরা ৫০ ভাগ খালের কোনো অস্তিত্ব নেই। গত ৪৩ বছরে ৫০টি খাল বিলীন হয়েছে। এর মধ্যে প্রভাবশালী কর্তৃক দখলের কারণে ১২টি, অপরিকল্পিত স্লুইসগেট নির্মাণের কারণে ২০টি নাব্যতা হ্রাসের কারণে ১৮টি খাল বিলীন হয়ে গেছে।
পৌর শহরে বিলীন হয়ে যাওয়া খালের সংখ্যা ১০টি। তারা আরও বলেন, এসএ নকশা অনুযায়ী বাস্তবে খালগুলো পাওয়া না গেলেও আমরা নতুন নকশায় খালগুলোর অস্তিত্ব বজায় রেখেছি। উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নের মাহিলাড়া বাজার সংলগ্ন মাহিলাড়া-ছয়গ্রাম খালের সংযোগ মুখে মাহিলাড়া বাসস্ট্যান্ড ব্রিজের পশ্চিম পাশে কতিপয় প্রভাবশালী খালের মধ্যে নির্মাণ করেছেন বহুতল পাকা ভবন। ফলে ক্রমেই খালটি অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলছে। টরকি সাউদের খালের সুন্দরদী এলাকার প্রায় পৌনে ১ কিলোমিটারজুড়ে পাকা-আধাপাকা ভবন নির্মাণ করায় খালটি বিলীন হয়ে বন্দরে পরিণত হয়েছে।
গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ইলা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, মহাসড়ক-সংলগ্ন ইলা-খাঞ্জাপুর খালটির সংযোগ মুখে প্রভাবশালীরা খাল দখল করে তার ওপর পাকা স্থাপনাসহ চালকলের চাতাল তৈরি করেছেন। স্থানীয় আবুল কালাম, আবদুর রাজ্জাক, মো. সেলিমসহ অন্যরা জানান, অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের কারণে খালের কোনো অস্তিত্ব নেই। এ ছাড়া উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের ৬টি, নলচিড়া ইউনিয়নে ৮টি ও শরীকল ইউনিয়নে ৫টি খাল বিলীন হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা জানান। গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের মাগুরা, সমরসিংহ, বাকাই, মেদাকুল, বার্থী ইউনিয়নের বাঘমারা, বাউরগাতি, তারাকুপি, ধানডোবা, চাদশী ইউনিয়নের চাদশী, উত্তর চাদশী, পশ্চিম শাওড়া, দক্ষিণ নাঠে, মাহিলাড়া ইউনিয়নের বিল্লগ্রাম, বেজহার, শরীফাবাদ, ভীমেরপাড়, বাঘার গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা জানান, অবৈধ দখল ও নাব্যতা হ্রাসের ফলে খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় সেচ সংকটের কারণে বোরো মারাত্দকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ হাসান পাটোয়ারী খাল বিলীন হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, কতটি খাল বিলীন হয়েছে তার সঠিক কোনো হিসাব নেই।
সেটেলমেন্ট অফিসের বিএস জরিপে অর্ধশতাধিক খাল বিলীনের বিষয়টি শুনেছি। তবে খালগুলো পুনরুদ্ধারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।