বৈরি
কোথায় তোমার সবুজ আঁচল বনের সীমারেখা,
উঁচু পাহাড় সমান হল এমনতর দেখা।
বৃষ্টিধারার প্রবল তোড়ে পাহাড় গেল ধসে,
পল্লবিত বৃক্ষশাখা থেকে পাতা খসে।
দাবানলে বনবনানি হচ্ছে পুড়ে ছাই,
সবুজ যখন হারিয়ে গেছে কোথায় তাকে পাই?
আকাশ হল তামাবরণ মাটি পুড়ে খাঁক্
পাখির দলে থাকছে শুধু ধূসর পাতিকাক।
শহরগুলো মলিন হল ডাঁই জমানো বর্জে,
নদীর ছোবল টেনে নিল অযুত লোকের ঘর যে।
সকল কিছুই ধসিয়ে দিতে আজ পরিবেশ তৈরি,
সময় এখন প্রতিকূল এবং ভীষণ বৈরি।
নদী
নদীর বুকে বালু জমায় সোঁত হারিয়ে যায়,
এমন জীর্ণ দশা দেখে কান্না শুধু পায়।
ওরে আমার ঢেউ দোলানো ছলছলানো নদী,
তোমার কথাই জেনেছিলাম আমরা নিরবধি।
কোথায় গেল তোমার এমন তরতরানো রূপ,
সোঁত হারিয়ে এখন দেখি নিশ্চল, নিশ্চুপ।
কোথায় গেল তুমুল বেগে ছোটা মাছের ঝাঁক,
ভাঙার পালায় ছিন্ন হল নদীর কত বাঁক।
ধূসর বালির ভেতর নদী পথ হারিয়ে ফেলে,
মাছ না পেয়ে কাতর চোখে তাকিয়ে থাকে জেলে।
কেমন করে বদলে গেল নদীর আগের ধরন,
করুন চোখে দেখতে থাকি হচ্ছে নদীর মরন।
পরিরানি
রাত দুপুরে আমার দাদির বাড়ির কাজল ভিটায়,
পরিরানি উড়ে এসে স্বপ্ন বীজটি ছিটায়।
আমি তখন গহিন ঘুমে কাতর হওয়া বালক,
আমার কোমল বুকটি ঢাকে পরিডানার পালক।
নকশি-করা মলিন কাঁথায় জড়িয়ে ছিল উম,
রেশম নরম পালক ছোঁয়ায় নামল চোখে ঘুম।
ঘুমের ভেতর সোনার কাঠি, রূপোর কাঠি নড়ে,
আমি তখন উধাও হলাম পক্ষিরাজে চড়ে।
এক নিমেষে তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে যাই,
এমনি করেই পরিরানির দেখা তখন পাই।
পরিরানির দেখা যখন পেলাম অবশেষে,
স্বপ্নবীজের খোসা খুলে উড়ে গেলাম ভেসে।
জোলো হাওয়া
হাওয়া যদি হুট করে হয়ে যায় জোলো,
তবে তুমি ছুটে গিয়ে জানালাটা খোলো।
সিরসিরে হাওয়া এসে পড়ে ঝাঁপিয়ে,
এখানে এসেছে বুঝি পাতা কাঁপিয়ে।
কত নদী, জলাভূমি, খাল-বিল ছুঁয়ে,
পাতাপুতি উড়ে যায় বাতাসের ফুঁয়ে।
পাতারা কি ছেড়ে আসে দূর বনভূমি,
জানালায় ঝুঁকে গিয়ে দেখেছ কি তুমি!
নগরীর কানাগলি এ বাতাস পেয়ে,
উধাও সুরের তালে গান উঠে গেয়ে।
হাওয়া যদি এভাবেই হয়ে যায় জোলো,
খসেপড়া পাতাগুলো মুঠো ভরে তোলো।
পাতাজুড়ে আঁকা আছে দূরাগত চিন,
কীভাবে বদলে যায় ফ্যাকাশে এ দিন।
দিনগুলো পেলবতা ভেজা রূপ মাখে,
রোঁয়া ওঠা ফুল ফোটে কদমের শাখে।
ঝিরিঝিরি বৃষ্টির শব্দ কি পেল,
যখন হাওয়া হল পুরোপুরি জোলো।
পাখপাখালি
বৈঁচি ঝোপে ফুলচুষিদের শুধুই আসা-যাওয়া,
গহিন বনের মাঝে গেল পাখপাখালি পাওয়া।
গাছরা যেমন খসায় পাতা পাখি তেমনি পালক,
রঙিন পালক খুঁজতে থাকে পেখোরা এক বালক।
বনমোরগের উড়াল দেখে বালক ভাবে রাতা,
টুনটুনিরা বেগুন গাছে সেলাই করে পাতা।
পাখিগুলোর তখন শুধু পাতার ঝালর গোনা,
বাতাস এলে পাতা কাঁপার শব্দ যাবে শোনা।
হরেক রকম পাখি আসে, পাখি অগণন।
পাখির ডাকে মুখরিত গাছগাছালি বন।
চারপাশেতে সুর তুলেছে বাতাস হয়ে সেতার,
গায়ক পাখি ভাবতে থাকে গানের কাজটি যে তার।
আসলে যে গান রয়েছে পাঁখসাটেরই মাঝে,
বন ও পাহাড় জুড়ে সে সুর কাঁপন হয়ে বাজে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।