আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

২০১৩: ব্যাংক খাতের ‘চ্যালেঞ্জের’ বছর

রাজনৈতিক অস্থিরতায় সার্বিক অর্থনীতির স্থবিরতার কারণে গেল বছর দেশে নতুন বিনিয়োগ হয়নি বললেই চলে। এ কারণে ব্যাংকাররা এ বছরকে চিহ্নিত করেছেন ‘বিনিয়োগের জন্য বন্ধ্যা’ বছর হিসাবে।
নতুন বছরে পরিস্থিতির উন্নতি হবে- এই আশাই ব্যাংকাররা করছেন।   
২০১৩ সালে কমেছে অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। কাঙ্খিত বিনিয়োগ করতে না পারায় প্রয়োজনীয় আয়েরও দেখা পায়নি ব্যাংকগুলো।

 
ব্যাংকাররা বলছেন, যেহেতু দেশের ব্যাংকগুলো সরাসরি বিনিয়োগের তুলনায় ‘ট্রেডিংয়ে’ অর্থায়ন করে বেশি, তাই তাদের সুদ বাবদ আয়ের তুলনায় কমিশন বাবদ আয়ই বেশি। পাশাপাশি সারা বছরে যে সুদ তারা মওকুফ করে- তার পরিমাণও কম নয়।
এর বাইরে পুরানো বিনিয়োগ থেকে সময়মত অর্থও ফেরত পাচ্ছে না ব্যাংক, যা খেলাপি ঋণ বাড়িয়ে দেয়ার আশংকা সৃষ্টি করছে।
৪১৯টি শাখা নিয়ে কার্যক্রম চালানো দেশের সবচেয়ে বড় বেসরকারি ব্যাংক পূবালী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমেদ চৌধুরী বলেন, এককথায় ২০১৩ সাল ছিল ‘চ্যালেঞ্জিং’ একটি বছর।
আর এজন্য কয়েকটি আর্থিক কেলেংকারির ঘটনা এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাকেই দায়ী করেছেন তিনি।


ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক বাণিজ্যের সিংহভাগ আসে তৈরি পোশাক খাতের মাধ্যমে। কিন্তু ২০১৩ সালে এ শিল্পে উল্লেখ করার মত নতুন বিনিয়োগ না হওয়ার প্রভাব পড়েছে ব্যাংক খাতে।

তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকরা বলছেন, বারবার দুর্ঘটনা, রাজনৈতিক ও শ্রমিক অসন্তোষসহ বিভিন্ন কারণে ক্রেতারা পণ্যের ক্রয় আদেশ কমিয়ে দিয়েছে। ফেলে গেল বছরে যেমন ব্যাংকিং কার্যক্রম কমেছে, তেমনি সময়মতো ব্যাংক ঋণ পরিশোধও সম্ভব হয়নি।

ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) ভাইস চেয়ারম্যান হেলাল আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত কয়েক মাসের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ব্যাংকিং খাতের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে।

ঋণ বিতরণ কমেছে। আদায়ও সময়মত হয়নি। এ কারণে খেলাপী ঋণ বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ”
অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপী ঋণের নীতিমালা কিছুটা শিথিল করায় ব্যাংকগুলো কিছুটা ‘স্বস্তি’ পাবে বলে মনে করছেন তিনি।
“সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ঝিমিয়ে পড়ায় ব্যাংক খাতেও তার প্রভাব পড়েছে।

এতে তৈরি হয়েছে নতুন চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েই ২০১৪ শুরু করতে যাচ্ছে দেশের ব্যাংক ব্যবস্থা”, বলেন তিনি।
অবশ্য বছর শেষে আর্থিক সূচকগুলো নিয়ে তৈরি করা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদন বলছে, ২০১৩ সালে নানা প্রতিকূলতা থাকলেও অর্থনীতি সুদৃঢ় অবস্থানেই ছিল।  
খেলাপি ঋণ
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, ২০১২ সালের পুরো সময়ের তুলনায় ২০১৩ সালের ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৩ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা।
২০১২ সালের ডিসেম্বর শেষে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪২ হাজার ৭২৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ।


আর ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর শেষে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৬ হাজার ৭২০ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
ব্যাংকাররা বলছেন, ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে, যে হিসাবটি পাওয়া যাবে আরো প্রায় এক মাস পর।
খেলাপি ঋণ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ায় শ্রেণীকৃত (খেলাপি) ঋণের হার বেড়েছে।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপি ঋণের নীতিমালা কিছুটা নমনীয় করাসহ কিছু পদক্ষেপ নেয়ায় বছরের শেষ প্রান্তিকে এই ঋণের হার সহনীয় মাত্রায় থাকবে বলে প্রতিবেদনে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে প্রভিশন ঘাটতি পূরণে তৎপর এবং স্টেকহোল্ডারদের ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে ‘রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি’ বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।


ঋণ বিতরণ
রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বেসরকারি খাতে চাহিদা না থাকায় ব্যাংকগুলো লক্ষ্য অনুযায়ী ঋণ বিতরণ করতে পারেনি।
বাংলাদেশ ব্যাংক জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ১৫ শতাংশ ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করলেও নভেম্বর শেষে তা ৯ শতাংশেরও কম ছিল।
ডিসেম্বরে ঋণ বিতরণ আরও কমেছে বলে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন।
নাশকতা
২০১৩ সালের প্রায় পুরোটা সময়ই রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার হয়েছে বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা অফিস, এটিএম বুথ।
ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) হিসাবে ২০১৩ সালে বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা ও এটিএম বুথ মিলিয়ে প্রায় ২০০ স্থাপনায় হামলা হয়েছে।


গত বছর হরতাল-অবরোধে ৬৫ দিন অচল ছিল দেশ। এসব দিনে ব্যাংক কর্মকর্তাদের পাশাপাশি গ্রাহক উপস্থিতিও ছিল কম।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক শুক্রবার ব্যাংকিং কার্যক্রম চালানোর সার্কুলার জারি করে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করলেও তাতে ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি বলে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন।
রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে বছর জুড়ে কয়েক হাজার যানবাহনে আগুন দেয়া হয়েছে। নিরাপত্তাহীনতায় প্রথম সারির পরিবহন কোম্পানিগুলোও ব্যবসা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়।


ফলে পরিবহন খাতে ব্যাংকগুলোর প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা ঋণের একটি বড় অংশ এখন খেলাপী হওয়ার পথে।  
নতুন ব্যাংকের চ্যালেঞ্জ
নানা অস্থিরতার মধ্যেই ২০১৩ সালে রাজনৈতিক বিবেচনায় নতুন নয়টি ব্যাংকের অনুমোদন এ খাতের চ্যালেঞ্জে নতুন মাত্রা এনেছে।
নতুন ব্যাংকের সবগুলো এখনও কার্যক্রম শুরু না করলেও যে কয়েকটি কার্যক্রম শুরু করেছে, তারা এই চ্যালেঞ্জের আঁচ এরই মধ্যে টের পেতে শুরু করেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

সোর্স: http://bangla.bdnews24.com     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.