লেন্দুপ দর্জি ১৯০৪ সালের ১১ই অক্টবর সিকিমের পালইয়ংয়ে জন্ম গ্রহন করেন। তিনি সিকিম ন্যাসনাল কংগ্রেসের প্রতিস্ঠাতা। হিমালয়ের পাদদেশে সবুজে ভরা অনিন্দ্য সুন্দর একটি দেশ সিকিম। ৭০৯৬ কিলোমিটার আয়তনের এই দেশটি ছিলো স্বাধীন স্বার্বভৌম একটি দেশ। ১৮৪৪ সালে তিব্বত দখলের জন্য বৃটিশরা দখল করে দেশটি।
কিন্তু ৪ বছর পরেই আবার স্বাধীনতা ফিরে পায় সিকিমবাসি। ১৯৪৭ সালে ইংরেজরা ভারত ছেড়ে চলে গেলে স্বাধীনতা অথবা ভারত প্রশ্নে সিকেমে গণভোট হয় এবং সিকিমের জনগণ স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দেয়।
১৯৭০ সালে লেন্দুপ দর্জির সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস দল দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করে। রাজপ্রাসাদের সামনে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়লে ইন্দিরাগান্ধী সরকার রাজার নিরাপত্তায় সৈন্য পাঠায়। রাজা তখন গৃহবন্দী হন।
এরপর ভারত সরকার বিএস দাশ নামের একজনকে সিকিমের প্রধান প্রশাসক নিয়োগ করে। ভারতের তাঁবেদার লেন্দুপ দর্জির নেতৃত্বাধীন সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস (এসএনসি) ১৯৭৪ সালে পাতানো নির্বাচনে সংসদের ৩২ আসনের মধ্যে ৩১টি আসনে বিজয়ী হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে গণতন্ত্রের সংগ্রাম চলছে, চলবে এই শ্লোগান দিয়ে দর্জির নেতৃত্বে ২৭ মার্চ ১৯৭৫ সালে রাজতন্ত্র বিসর্জন দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। রাজা কে সেইদিনই ভারতীয় সেনারা গ্রেফতার করে এবং ভারতীয় সেনারা সিকিমে স্থায়ী ঘাঁটি স্থাপন করে।
১৯৭৫ সালের ৬ এপ্রিল লেন্দুপ দর্জি সিকিমকে ভারতের সঙ্গে একত্রীভূত করার প্রশ্নে গনভোটের আয়োজন করে এবং সিকিমবাসী ভারতের সঙ্গে মিশে যেতে চায় বলে রায় দেয়।
ঐ বছরের ১৬ মে সিকিম হাজার বছরের স্বাধীনতা বিকিয়ে ভারতের অঙ্গরাজ্যে পরিণত হয়।
এভাবেই একটি স্বাধীন দেশের অপমৃত্যু ঘটে। এর পেছনে ভারতে ‘র’ সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিল বলে অভিযোগ করা হয়। ভারতের প্রখ্যাত সাংবাদিক সুধীর শর্মা তার Pain Of Loosing Nation বইতে লিখেছেন, "আমাকে লেন্দুপ দর্জি নিজে বলেছেন যে, বছরে তিন-চার বার আমার সাথে "র" এর লোক দেখা করতো এবং দেশে অশান্তি, অরাজকতা ও সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে বলতো। কাজ হাসিলের পর পরই ভারত এই শয়তানটাকে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়।
জীবনের পড়ন্ত বেলায় (২০০৪ সালে) নেপালের একটি সাপ্তাহিকের সাথে কথা (বাণীবদ্ধকৃত) বলতে গিয়ে আত্ম অপরাধ স্বীকার করে দর্জি বলেন, সিকিমকে ভারতভুক্ত করার জন্য আমি সবকিছুই করেছি। কিন্তু কার্যসিদ্ধির পর ভারত আমাকে ভুলে গেছে, আমাকে উপেক্ষা করেছে। তিনি বলেন, আগে আমাকে লালগালিচা অভ্যর্থনা দেয়া হতো, এখন দ্বিতীয় সারির রাজনীতিকের সাথে সাক্ষাৎ করতে আমাকে চাইলে কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়। ’
২০০৭ সালের ২৮ জুলাই, দীর্ঘ দিন লিভার রোগের যন্তনা সহ্য করার পর লেন্দুপ দর্জি পশ্চিম বঙ্গের কালিম্পং এ মারা যান। মারা যাওয়ার সময় লেন্দুপ দর্জি ছিলেন একেবারে নিঃসঙ্গ, নিঃস ও স্বেচ্ছানির্বাসিত।
- See more at: Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।