ফিঙ্গে রাজার দুটো মেয়ে। ওরা খুব সুখে দিন কাটায়। ওদের সঙ্গে কেবল বনের নামিদামি পশুপাখিদের ভাব। ছোটদের সঙ্গে ওরা মিশেই না।
ফিঙ্গের রাজমহলে কোনো উৎসব হলে টোনাটুনিকে দাওয়াতই করে না।
এতটুকু পুঁচকে টোনাটুনি। ওদের সঙ্গে আবার বন্ধুত্ব কিসের? টোনাটুনিকে দেখলেই রাজমহলের সবাই ধমকে তাড়িয়ে দেয়।
একবার হলো কি- ফিঙ্গের এক মেয়ের ডেঙ্গু হলো। ডাক্তার, বদ্যি, ফকির কেউই আরোগ্য করতে পারছে না। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ওষুধপথ্য, তাবিজ, পড়াপানি সবই ফেলটুস।
বলল, ডেঙ্গু ভালো হয় না। রোগী নির্ঘাত মারা যাবে ।
এ নিয়ে সারা রাজমহল বেশ চিন্তিত। রাজমহলের এক কর্মচারীর ছেলেও জানাল বনের পশ্চিমপ্রান্তে আকন্দ, অতসী, বিষকাঠালীর ঝোপে থাকে টোনাটুনি। ওরা ছোট হলেও অনেক বুদ্ধিমান।
ওদের খবর দিলে ফিঙ্গের রাজার মেয়েকে সুস্থ করার একটা না একটা পথ বাতলে দিতে পারবে।
একগাল হাসল সবাই। বলল, এত বড় বড় ডিগ্রিধারী ডাক্তার, কবিরাজ ফেলটুস, আর কিনা ওই পুঁচকে দুটো দেবে সমাধান?
খবর দিয়েই দেখুন না।
টোনাটুনিকে খবর পাঠানো হলো। টোনাটুনি রাজমহলে এল।
ওরা প্রথমে রাজমহলের ভেতর ও চারপাশে ঘুরে ঘুরে দেখল। তারপর সভাসদের উদ্দেশে বক্তব্য দিল-
টোনা বলল, আপনাদের রাজমহলের ভেতরে-বাইরে যত্রতত্র আবর্জনা পড়ে আছে। প্রচুর ঝোঁপঝাড় দেখলাম আশপাশে, এখানে-ওখানে জমে আছে জল, তাতে মশার ডিম।
ফিঙ্গে রানী ধমক দিল- ডেঙ্গু ভালো করার উপায় কি। ওটা যাতে না হয় তার সমাধান কি তাই বল।
টুনি কেঁপে উঠল। ওর বুক কাঁপছে। এত বড় রাজবাড়ীতে এই প্রথম ঢুকেছে। তবুও একটু সাহস সঞ্চয় করে বলল- দেখুন প্রথমে ওই ময়লা আবর্জনা সরিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। আশপাশের নালা-নর্দমা পরিষ্কার করে তাতে ডিডিটি ও মশা নিধনের ওষুধ ছিটাতে হবে।
যে সব স্থানে কৌটা, ফুলের টব, নারিকেলের মালা পড়ে আছে সে সব জিনিসে জল জমে থাকে। তাতে এডিস মশা ডিম ছাড়ে, বংশ বাড়ায়। এডিস মশা নিধন করলেই রাজমহলের রাজডাক্তার সজারু- মোটা চশমার ওপর দিয়ে বিকট দৃষ্টি ফেলে বলল-এতটুকুই ডেঙ্গু থেমে যাবে? হে। হাসালে।
জী জনাব।
টোনা এবার বলছে ম্যালেরিয়ার কারণ ছিল এনোফিলিস মশা, এবার ডেঙ্গুর কারণ এডিস মশা। আর এটা নিধন না করলে ডেঙ্গু ঠেকাতে পারবেন না।
দিন গড়াল আরও। এবার ডেঙ্গুতে রাজমহলের আরও অনেকেই আক্রান্ত হলো। হাসপাতালগুলো ভরে যাচ্ছে ডেঙ্গু রোগীতে।
আবারও সভা ডাকল ফিঙ্গে রাজা। সবাই বিমর্ষ। এবার রাজমহলের পাঁচক বলল, রাজামশাই- টোনাটুনির প্রস্তাবটা ভেবে দেখলে ভালো হয় না? একটু ভেবেচিন্তে তা করেই দেখুন না। করে দেখতে তো দোষ নেই।
গম্ভীর ফিঙ্গে রাজা হুকুম দিলেন- ঠিক আছে, তাই কর।
শুরু হলো এডিস মশা নিধনের মহা উৎসব। সবাই অংশ নিল।
কিছুদিনের মধ্যেই নতুন করে কারও ডেঙ্গু হলো না। চারদিক বেশ পরিচ্ছন্ন। এডিস মশারা উধাও।
রাজা হুকুম দিলেন টোনাটুনিকে।
পাইক পেয়াদারা ছুটল টোনাটুনিকে আনতে। কিন্তু আকন্দ, অতসীর ওখানে টোনাটুনি নেই।
তাহলে কোথায় গেলে টোনাটুনি?
বুলবুলি আনমনে গান গাইছিল মাদারের ডালে। ও জানাল- টোনাটুনি অন্য আরেক বনে উড়ে গেছে।
ওখানে নাকি সিংহরাজা ডেকেছেন কী যেন সমস্যার সমাধান করতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।