আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুন্নাতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নিয়ে আলোচনা (৩য় পর্ব) A_Z

الحمد لله رب العالمين، والصلاة والسلام على خاتم الأنبياء والمرسلين، وعلى آله وصحبه أجمعين، وعلى من تبعهم بإحسان إلى يوم الدين

নামাযে সাধারণ ঘটে যাওয়া ভুলসমূহঃ-

কাতারের ভুলসমূহঃ-

১. দাগের উপরে বা দাগে আঙ্গুল রেখে দাগের পিছনে দাঁড়ানো। নিয়ম হলো দাগের আগে গোড়ালী রেখে উভয় পা কিবলামুখী সোজা করে দাঁড়ানো।

২. কাতার ইমামের ডানে বাড়িয়ে ফেলা। অথচ নিয়ম হলো, ইমামের সোজাসুজি পিছনে একজন দাঁড়িয়ে তাঁর দু’দিক থেকে সমানভাবে কাতারে লোক দাঁড়াবে। কোন দিকে কাতার লম্বা করবে না।

(আলমগীরী ১ : ৮৭)

৩. সামনের কাতারে খালি জায়গা রেখে পিছনের কাতারে বসে থাকা বা পিছের কাতারে দাঁড়ানো। নিয়ম হল সবচেয়ে সামনের যে কাতারে খালী পাওয়া যায় সেখানে চলে যাওয়া। (শামী, ১ : ৫৭০)

৪. কাতারে মিলে মিলে না দাঁড়ানো এবং দু’জনের মাঝে এতটুকু ফাঁকা রাখা যার মধ্যে আর একজন দাঁড়াতে পারে। (মাসায়িলে নামায, ৮৭ পৃষ্ঠা)

৫. শেষ কাতারে শুধু একজন দাঁড়ানো। নিয়ম হলো কেউ কাতারে একা হলে, সামনের কাতার হতে মাসআলা জানেন এমন একজন মুসল্লীকে হাতে ধরে পিছনে নিয়ে আসবে, তিনিও সিনা ঠিক রেখে দু-এক কদম হেঁটে পিছের কাতারে আসবেন।

মাসআলা জানেন এমন লোক না পাওয়া গেলে সেক্ষেত্রে একাই পিছনে দাঁড়াবে। (শামী, ১ : ৫৬৮)

৬. জামা‘আত শুরু হওয়ার পর কাতারে দাঁড়িয়ে সুন্নাত পড়া। নিয়ম হলো ইকামত শুরু হয়ে গেলে একমাত্র ফজরের সুন্নাত ছাড়া অন্য কোন সুন্নাত শুরু না করা। আর ফজরের সুন্নাত জামা‘আত পাওয়ার শর্তে কাতারের পিছনে বা বারান্দায় পড়া। (আলমগীরী, ১ : ১০৮)

ইকামাতের সময় ভুলসমূহঃ-

১. ইকামতের সময় বা তাহরীমা বাঁধার পূর্বে অনেকেই হাত বেঁধে দাঁড়ায়।

অথচ এমনটি করা মাকরূহ। নিয়ম হলো এ সময় হাত ছেড়ে রাখা। (ফাতাওয়ায়ে রহীমিয়া, ৩ : ১৪)

২. অনেকে ইকামাতের জবাব দেয় না। অথচ আযানের ন্যায় ইকামাতের জবাব দেয়াও মুস্তাহাব। (আবু দাউদ, হাঃ নং ৫২৮)

তাকবীরে তাহরীমার ক্ষেত্রে ভুলসমূহঃ-

১. অনেকে তাকবীরে তাহরীমার জন্য হাত উঠানোর সময় মাথা ঝুঁকায়, এটা নাজায়েয।

সুন্নাত হলো মাথা সোজা রেখে সিজদার জায়গায় নজর রাখা। (শামী ১ : ৪৪৪)

২. তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় পুরুষদের অনেকে চাদরের ভিতর থেকে হাত বের করে না। অথচ পুরুষদের জন্য চাদর থেকে হাত বের করে কান পর্যন্ত উঠানো মুস্তাহাব। তবে মহিলারা কাপড়ের ভিতর হতে হাত বের করবে না। (শামী, ১ : ৪৭৮)

৩. অনেকে হাতের তালু কিবলামুখী করে উঠায় না।

বরং হাতের তালু কানমুখী করে দু‘পার্শ্বে উঠিয়ে বা হাতের আঙ্গুলসমূহ কিবলার দিকে বাঁকা করে নিয়ত বাঁধ। এরূপ করা ভুল।

৪. হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি কানের লতি পর্যন্ত উঠাতে হয়। অথচ অনেকে তড়িঘড়ি করে হাত সামান্য একটু উঠিয়েই নিয়ত বাঁধে।

৫. আরবী নিয়ত বলতে গিয়ে অনেকে তাকবীরে উলা, আবার অনেকে রুকু পর্যন্ত হারিয়ে ফেলে।

অথচ আরবীতে নিয়ত বলা জরুরী নয়। বরং আরবীতে নিয়ত বলা জরুরী মনে করলে বিদ‘আত হবে। বাংলায় নির্দিষ্ট নামাযের ও ইমামের ইকতিদার নিয়ত করাই মুস্তাহাব আদায়ের জন্য যথেষ্ট। অধিকন্তু শুধু অন্তরে নির্দিষ্ট নামাযের সংকল্প করার দ্বারাই নিয়ত করার ফরয আদায় হয়ে যায়। নিয়ত মুখে বলা ফরয নয়, মুস্তাহাব।

সবচেয়ে মারাত্মক বিষয় হলো, অনেকে আরবী নিয়ত পড়তে যেয়ে সেদিকে অর্থ না বুঝে এত বেশী মনোনিবেশ করে যে, নির্দিষ্ট নামায ও ইমামের ইকতিদার এরাদা বা সংকল্প অন্তরে উপস্থিত থাকেনা সেক্ষেত্রে নিয়ত ফরয এটা না পাওয়ায় তার নামায হয় না।

৬. অনেকে তাকবীরে তাহরীমা ও অন্যান্য তাকবীরে ‘আল্লাহ’ শব্দ এর লামকে এক আলিফের চেয়ে বেশি লম্বা করে থাকে-এটা ভুল। এক আলিফকে এক আলিফই রাখতে হবে। বেশি লম্বা করা অনুচিত।

৭. অনেক সময় ইমামের তাকবীরে তাহরীমার পূর্বেই অনেকে তাকবীরে তাহরীমা বলে ফেলে।

সে ক্ষেত্রে ইমামের আগে যদি মুক্তাদীর তাকবীর শেষ হয়ে যায়, তাহলে তার ইকতিদা ও নামায সহীহ হবে না। পুনরায় তাকবীর বলে তাহরীমা বাঁধতে হবে।

৮. ‘আল্লাহু আকবার’ বলে হাত বাঁধার আগে অনেকে হাত দু’দিকে ছেড়ে দিয়ে ঝুলিয়ে তারপর বাঁধে। এরূপ না করে হাত উঠিয়ে সরাসরি বাঁধাই বাঞ্ছনীয়।

৯. ইমামের তাকবীরের পরে খামাখা তাকবীর বলতে দেরী করা।

অথচ ইমামের তাকবীরের পর সাথে সাথেই তাকবীর বলতে হয়।

কিয়াম বা নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায় ভুলসমূহঃ-

১. উভয় পায়ের মাঝে গোড়ালী ও আঙ্গুলের দিকে সমানভাবে চার আঙ্গুল পরিমাণ ফাঁক রেখে আঙ্গুলসমূহ কিবলামুখী করে রাখা সুন্নাত। কিন্তু অনেকেই তা এভাবে রাখে না। বরং পায়ের আঙ্গুলসমূহ উত্তর ও দক্ষিণ দিকে ছড়িয়ে রাখে। এতে পায়ের আঙ্গুলসমূহ কিবলামুখী থাকে না যা সুন্নাতের পরিপন্থী।



২. অনেকে দাঁড়ানো অবস্থায় মাথা ঝুঁকিয়ে রাখে। অথচ দাঁড়ানো অবস্থায় মাথা সোজা রেখে সিজদার স্থানে নজর রাখা সুন্নাত।

৩. দাঁড়ানো অবস্থায় অনেকে দু’পায়ে সমান ভর না দিয়ে এক পায়ে ভর দিয়ে বেঁকে দাঁড়ায়। অথচ এভাবে দাঁড়ানো উচিত নয়।

৪. অনেকে নাভী বরাবর বা নাভীর উপর হাত বাঁধে।

অথচ হানাফী মাযহাবে নিয়ম হলো নাভীর নীচে হাত বাঁধা।

৫. ইমামের সাথে নামায পড়ার সময় ‘ছানা’ না পড়া। অথচ একা হোক বা জামা‘আতে হোক, সর্বাবস্থায় ছানা পড়া সুন্নাত। তবে যাহেরী ক্বিরা‘আতে ইমামের ক্বিরা‘আত শুরু হয়ে গেলে, ছানা পড়বে না। তাছাড়া মুক্তাদী আউযুবিল্লাহ এবং বিসমিল্লাহও পড়বে না।



ক্বিরা‘আত অবস্থায় ভুলসমূহঃ-

১. অনেকে ইমামের পিছনে বিড়বিড় করে সূরা ফাতিহা বা অন্য কিছু পড়তে থাকে। অথচ মুক্তাদীর জন্য সূরা ফাতিহা বা অন্য কোন সূরা মুখে পড়া নিষেধ।

২. অনেকের ধারণা অনুচ্চ স্বরে ক্বিরা‘আত পড়লে মদ, গুন্নাহ, ইযহার, ইখফা ইত্যাদির প্রতি লক্ষ্য করার প্রয়োজন হয় না। এটা সঠিক নয়। বরং সব কিরাআতেই তাজবীদ জরুরী।

তাই সিররী নামাযেও জাহরী নামাযের মত সময় ব্যয় করে তাজবীদসহ ক্বিরা‘আত পড়া উচিত।

৩. যোহরের নামাযে ‘তিওয়ালে মুফাসসাল’ (লম্বা ক্বিরা‘আত ) বা কমপক্ষে ‘আওসাতে মুফাসসাল’ (মধ্যম ক্বিরা‘আত ) পড়া সুন্নাত। অথচ অধিকাংশ ইমামগণ যোহরের নামাযে ‘কিসারে মুফাসসাল, (ছোট সূরা) পড়ে থাকেন যা সুন্নাত পরিপন্থী।

৪. অনেকে ক্বিরা‘আত এত বেশি ধীরে পড়েন যার কারণে সুন্নাত পরিমাণ ক্বিরা‘আত পড়া সম্ভব হয় উঠে না। অথচ নিয়ম হলো বেশি ধীরেও না পড়া, আবার বেশি তাড়াতাড়িও না পড়া; বরং মধ্যম গতিতে হদরের সাথে সুন্নাত পরিমাণ ক্বিরা‘আত পড়া।

তারাবীহ নামাযে অধিকাংশ হাফেযগণ এত দ্রুত ক্বিরা‘আত পড়ে থাকেন যে, তাদের পড়া বুঝাই যায় না। এমন দ্রুত পড়া কুরআন বিকৃত করার শামিল, যা নাজায়েয। এতে নামাযের সওয়াব হাসিল হওয়া তো দূরের কথা, নামায সহীহ হওয়ার ব্যাপারেই সন্দেহ রয়েছে।

৫. অনেকে তিন রাক‘আত বা চার রাক‘আত বিশিষ্ট ফরয নামাযের সব রাক‘আতেই সূরা মিলিয়ে থাকে। অথচ ফরযের শুধু প্রথম দু’রাকা‘আতে সূরা মিলাতে হয়।

আবার অনেকে চার রাকা‘আত বিশিষ্ট সুন্নাত ও নফরের মধ্যে শেষের দু’রাকা‘আতের মধ্যে শুধু সূরা ফাতিহা পড়ে থাকে। অথচ সুন্নাত ও নফরের সব রাকা‘আতেই সূরা ফাতিহার পর সূরা মিলানো জরুরী।

৬. অনেক ইমাম প্রথম রাকাআতকে দ্বিতীয় রাকাআত থেকে তিন আয়াত বা তার বেশি লম্বা করে থাকেন অথচ সুন্নাত হলো একমাত্র ফজরের নামায ব্যতীত অন্য চার ওয়াক্তে উভয় রাকা‘আতে কিরাআতের পরিমাণ সমান রাখা এবং এক দু‘আয়াতের বেশি না বাড়ানো।

রুকু অবস্থায় ভুলসমূহঃ-

১. অনেকে রুকুতে গিয়ে মাথা, পিঠ, কোমর বরাবর করে না এবং পিঠ বিছিয়ে রাখে না এবং কেউ মাথা উঁচু করে রাখে, আবার কেউ মাথা নীচু করে রাখে, এসবই মাকরূহ। কেউ পিঠ গোল করে রাখে।

অথচ মাথা, পিঠ, কোমর বরাবর রাখা এবং পিঠ বিছিয়ে রাখা সুন্নাত।

২. অনেকে হাঁটু বাঁকা করে তা সামনে বাড়িয়ে রাখে। আবার কেউ এমনভাবে দাঁড়ায় যে, উপরের অংশ পিছের দিকে বাঁকা হয়ে থাকে। উভয় পদ্ধতিই পা সম্পূর্ণ সোজা না থাকায় ভুল। পা সম্পূর্ণ সোজা রাখা সুন্নাত।

এর নিয়ম হল শরীরের ভার সামনের দিকে সামান্য ঝুঁকিয়ে রাখা।

৩. অনেকে রুকু অবস্থায় হাতের আঙ্গুলসমূহ মিলিয়ে রাখে এবং হাতকে হাঁটুর উপর একেবারে হালকাভাবে রেখে দেয়। অথচ পুরুষদের জন্য নিয়ম হল আঙ্গুলসমূহ ফাঁকা রাখা এবং উভয় হাত দ্বারা হাঁটুতে শক্তভাবে ধরা।

৪. অনেকে কনই বাঁকা করে রাখে, যা ভুল। রুকু অবস্থায় হাত সম্পূর্ণ সোজা রাখতে হয়।



৫. অনেকে কোন রকম রুকুতে গিয়েই তাড়াতাড়ি আবার দাঁড়িয়ে যায়। অথচ নিয়ম হলো রুকুতে গিয়ে ধীরস্থিরভাবে কমপক্ষে তিনবার তাসবীহ পড়ে তারপর দাঁড়ানো।

৬. অনেকে রুকু থেকে সোজা হয়ে হাত ছেড়ে স্থিরভাবে দাঁড়ায় না, বরং সামান্য মাথা উঁচিয়েই সিজদায় চলে যায়। এতে ইচ্ছাকৃতভাবে দু’টি ওয়াজিব (অর্থাত রুকু থেকে সম্পূর্ণ সোজা হওয়া এবং সোজা হয়ে দাঁড়ানোর পর এক তাসবীহ পরিমাণ বিলম্ব করা। ) তরক করায় নামায নষ্ট হয়ে যায়।

এমন নামায পুনরায় পড়া ওয়াজিব।

সিজদা অবস্থায় ভুলসমূহঃ-

১. অধিকাংশ লোকই দাঁড়ানো হতে সিজদায় যাওয়ার সময় বিনা ওযরে বুক ও মাথা নীচের দিকে ঝুঁকিয়ে সিজদায় যায়। এটা মারাত্মক ভুল। এতে এক রাকা‘আতে দুই রুকু হয়ে নামায খেলাফে সুন্নাত হয়ে যায়। সিজদায় যাওয়ার সময় হাঁটু মাটিতে লাগার আগ পর্যন্ত বুক ও মাথা সম্পূর্ণ সোজা রাখা উচিত।



২. সিজদায় যাওয়ার সময় বা সিজদা থেকে উঠার সময় অনেকে তাকবীর এক আলিফ থেকে বেশি টানতে থাকে, এটা ভুল। তারতীলের সাথে এক আলিফ লম্বা করা উচিত।

৩. অনেকে সিজদায় গিয়ে দুই হাতের আঙ্গুলসমূহ ছড়িয়ে রাখে। অথচ সিজদায় হাতের আঙ্গুলসমূহ মিলিয়ে রাখা সুন্নাত। এরূপ অনেকে হাতের আঙ্গুলসমূহ কান বরাবর রাখে না।

বরং আগ-পাছ করে রাখে, এটাও ভুল।

৪. অনেকে সিজদায় উভয় পায়ের মাঝে দাঁড়ানোর ন্যায় চার আঙ্গুল ফাঁক রাখে না এবং আঙ্গুলসমূহ মুড়িয়ে কিবলা মুখী করে উভয় পা খাড়া করে রাখে না বরং উভয় গোড়ালী মিলিয়ে রাখে অথবা পায়ের আঙ্গুলগুলোর মাথা পূর্ব দিকে করে রাখে যা সুন্নাতের খেলাফ।

৫. অনেকে সিজদায় পা যমীন থেকে উঠিয়ে রাখে। অথচ সিজদা আদায় হওয়ার জন্য পা যমীনে লাগিয়ে রাখা জরুরী।

৬. সিজদা অবস্থায় অনেকে উভয় উরু সোজা খাড়া রাখে না।

বরং উপরাংশ পূর্বদিকে বা পশ্চিম দিকে বাঁকা করে রাখে যা ভুল। এই ভুল থেকে বাঁচার পদ্ধতি হলো সিজদার সময় হাঁটু থেকে আনুমানিক এক হাত দূরে হাত রেখে উভয় হাতের মাঝে চেহারা রেখে সিজদা করবে।

৭. সিজদায় অনেক সময় পুরুষরা কনুই মাটির উপর বিছিয়ে রাখে বা কনুই হাঁটুর সাথে মিলিয়ে রাখে আবার অনেকে বাহু বা হাত পাঁজরের সাথে মিলিয়ে রাখে। অথচ এসব অঙ্গ পৃথক রাখতে হয়। তবে মহিলারা জড়সড় ও সংকুচিত হয়ে এক অঙ্গের সাথে আরেক অঙ্গ মিলিয়ে সিজদা করবে।



৮. মহিলারা অনেক সময় পুরুষদের মত পা খাড়া করে সিজদা করে। অথচ মহিলাদের সিজদা করার সময় উভয় পা ডান দিক দিয়ে বের করে কিবলামুখী করে বিছিয়ে রাখতে হয়।

নামাযে বসা অবস্থায় ভুলসমূহঃ-

১. অনেকে দুই সিজদার মাঝে সোজা হয়ে না বসেই আরেক সিজদায় চলে যায়। অথচ এতে ইচ্ছাকৃতভাবে দুটি ওয়াজিব (সিজদা থেকে সোজা হয়ে বসা এবং বসার পর এক তাসবীহ পরিমাণ বিলম্ব করা) তরক করায় নামায নষ্ট হয়ে যায়। এমতাবস্থায় নামায পুনরায় পড়া ওয়াজিব।



২. অনেকে দুই সিজদার মাঝে এবং তাশাহুদ (আত্তাহিয়্যাতু) পড়ার সময় ডান পা খাড়া রাখে না, বরং বাঁকা করে রাখে। অথচ তা সুন্নাতের খেলাফ।

৩. দ্বিতীয় সিজদা থেকে উঠার সময় বা মধ্যবর্তী বৈঠক হতে দাঁড়ানোর সময় অনেকে বিনা ওযরে হাত দিয় যমীনে ভর করে দাঁড়ায়। অথচ তা মাকরূহ।

সালামের ভুলসমূহঃ-

১. অনেকে উভয় সালাম ফিরানোর সময় কোন নিয়ত করে না।

অথচ উভয় দিকে সালাম ফিরানোর সময় মুসল্লী, ফেরেশতা, নামাযী জ্বিন ও ইমামের প্রতি সালাম করার নিয়ত করতে হয়।

২. অনেকে ‘আসসালামু’ বলা শুরু করার সাথে সাথে চেহারা ডানে বা বামে ঘুরিয়ে ফেলে অথচ ‘আসসালামু’ বলা পর্যন্ত উভয় সালামে চেহারা কিবলার দিকে রাখতে হয়। তারপর ‘আলাইকুম’ বলার সময় চেহারা ঘুরাতে হয়। অনেকেই দ্বিতীয় সালাম কিবলার দিক হতে শুরু করে না। বরং ডান দিকে চেহারা থাকা অবস্থাতেই দ্বিতীয় সালাম শুরু করে দেয়, এটা ভুল।

এমনিভাবে সালামের সময় বুক ফিরানো ভুল। বরং শুধু চেহারা এতটুকু ঘুরাবে, যেন পিছনের কাতার হতে চোয়াল দেখা যায়।

৩. ইমামের জন্য দ্বিতীয় সালামের আওয়াজ প্রথম সালামের আওয়াজের তুলনায় ক্ষীনস্বরে বলা সুন্নাত। কিন্তু অনেকেই তা পালন করেনা এবং উভয় সালামে এক সমান আওয়াজ করে, যা ভুল।

৪. মাসবূক ইমামের দ্বিতীয় সালাম ফিরানো শুরু করার সাথে সাথে উঠে পড়ে।

অথচ ইমামের দ্বিতীয় সালাম সম্পূর্ণ শেষ হওয়ার পরই মাসবূকের জন্য দাঁড়ানো উত্তম।

মুনাজাতের সুন্নাতসমূহঃ-

১. উযুর সাথে কিবলামুখী হয়ে দু‘আ করা। মুনাজাতের শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা করা এবং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর দরূদ শরীফ পাঠ করা। (তিরমিযী, হাঃ নং ৩৪৭৬)

২. উভয় হাত সিনা বরাবর সামনে রাখা। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাঃ নং ৩২৩৪)

৩. হাতের তালু আসমানের দিকে প্রশস্ত করে রাখা।

(তাবরানী কাবীর, হাঃ নং ৩৮৪২)

৪. হাতের আঙ্গুলসমূহ স্বাভাবিক ফাঁক রাখা। (হিসনে হাসীন, ২৭)

৫. দু‘হাতের মাঝখানে সামান্য ফাঁক রাখা। (ত্বাহত্বাবী, ২০৫)

৬. মন দিয়ে কাকুতি-মিনতি করে দু‘আ করা। (সূরা আ‘রাফ আয়াত নং ৫৫)

৭. আল্লাহর নিকট দু‘আর বিষয়টি বিশ্বাস ও দৃঢ়তার সাথে বারবার চাওয়া। (বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৬৩৩৮)

৮. ইখলাসের সাথে নিঃশব্দে দু‘আ করা মুস্তাহাব।

তবে দু‘আ সম্মিলিতভাবে হলে এবং কারো নামাযে বা ইবাদতে বিঘ্ন সৃষ্টির আশংকা না থাকলে, সশব্দে দু‘আকরাও জায়েয আছে। (সূরা আ‘রাফ, ২০৫/ বুখারী শরীফ, হাঃ নং ২৯৯২)

৯. আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা ও দরূদ-সালাম যেমন- ‘সুবহানা রাব্বিকা রাব্বিল ইয্‌যাতি’ শেষ। পর্যন্ত পড়া ও ‘আমীন’ বলে দু‘আ শেষ করা।

(তাবরানী কাবীর, হাঃ নং ৫১২৪/ মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাঃ নং ৩১১৭/ আবু দাউদ, হাঃ নং ৯৩৮) ১০. মুনাজাতের পর হস্তদ্বয় দ্বারা মুখমণ্ডল মুছে নেয়া। (আবু দাউদ, হাঃ নং ১৪৮৫)

বি.দ্র. ফরয নামাযের পর মুনাজাত করা মুস্তাহাব, সালাম শেষ হওয়ার পরে ইমামের ইকতিদাও শেষ সুতরাং মুনাজাতের মধ্যে

মহিলাদের নামাযের পার্থক্যঃ-

১. তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় উভয় হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠানো।

(তাবারানী কাবীর ২২ : ১৯)

২. হাত কাপড়ের ভিতর হতে বের না করা। (তিরমিযী, হাঃ নং ১১৭৩)

৩. হাত বুকের উপর রাখা। (শামী, ১ : ৪৮৭)

৪. আঙ্গুলসমূহ মিলিয়ে ডান হাতের তালু বাম হাতের পিঠের উপর স্বাভাবিকভাবে রাখা। পুরুষদের মত বাম হাতের কব্জি না ধরা। (ফাতাওয়া রাহীমিয়া, ৭ : ২২২)

৫. রুকুতে পুরুষদের তুলনায় কম ঝুঁকা।

(মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাঃ নং ৫০৬৯)

৬. রুকুতে উভয় বাহু পাঁজরের সঙ্গে পরিপূর্ণ মিলিয়ে রাখা। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাঃ নং ৫০৬৯)

৭. রুকুতে উভয় হাত হাঁটুর উপর স্বাভাবিক রাখা এবং হাতের আঙ্গুলসমূহ মিলিয়ে রাখা। পুরুষদের ন্যায় আঙ্গুল ছড়িয়ে হাঁটু না ধরা। (ত্বাহত্বাবী, ২১৫)

৮. রুকুতে উভয় পায়ের গোড়ালী পরিপূর্ণ মিলিয়ে রাখা। (শামী, ১ঃ ৫০৪)

৯. অত্যন্ত জড়সড় ও সংকুচিত হয়ে সিজদা করা।

(মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাঃ নং ৫০৬৯)

১০. সিজদায় পুরুষদের ন্যায় কনুইদ্বয় খোলা ও ছড়িয়ে না রাখা। (মারাসীলে আবী দাউদ, হাঃ নং ৮৭)

১১. উভয় রানের সঙ্গে পেট মিলিয়ে রাখা। (মারাসীলে আবী দাউদ, হাঃ নং ৮৭)

১২. বাহুদ্বয় সাধ্যানুযায়ী পাঁজরের সঙ্গে মিলিয়ে রাখা। (মারাসীলে আবী দাউদ, হাঃ নং ৮৭)

১৩. উভয় কনুই সাধ্যমত মাটিতে মিলিয়ে রাখা। (মারাসীলে আবী দাউদ, হাঃ নং ৮৭)

১৪. সিজদায় উভয় পা খাড়া না রাখা, বরং ডান দিক দিয়ে উভয় পা বের করে মাটিতে বিছিয়ে রাখা এবং উভয় পায়ের আঙ্গুলসমূহ যথাসম্ভব কিবলামুখী করে রাখা।

(মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাঃ নং ২৭৮১, ২৭৯২)

১৫. বৈঠকের সময় বাম নিতম্বের উপর বসা। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, ৩ : ১৩৯)

১৬. এবং উভয় পা ডান দিকে দিয়ে বের করে কিবলামুখী করে মাটিতে বিছিয়ে রাখা। (আল ইস্তিযকার, ১ঃ ৪৮০)

১৭. বৈঠকের সময় হাতের আঙ্গুলসমূহ মিলিয়ে হাঁটু বরাবর রাখা।

(মুসানাফে ইবনে আবী শাইবা, হাঃ নং ২৭৮৫)

বি.দ্র. দাঁড়ানো অবস্থায় মহিলাদের উভয় পা মিলিয়ে রাখার স্পষ্ট কোন প্রমাণ না থাকায় হযরত থানবী (রহ.) দু’পায়ের মাঝে পুরুষদের ন্যায় চার আঙ্গুল ফাঁক রাখার ফতওয়া দিয়েছেন। (ইমদাদুল ফাতাওয়া, ১ : ২২২)

জুমু‘আর দিনের বিশেষ আমলঃ-

যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিনে ছয়টি কাজ করবে, সে জুমু‘আর নামাযের যাওয়ার পথে প্রতি কদমে (পা ফেলায়) এক বছরের নফল নামায ও এক বছরের নফল রোযার সওয়াব পাবে।



ছয়টি কাজ এই- ১. জুমুআর নামাযের উদ্দেশ্যে ভালভাবে গোসল করা।

২. ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে (আযানের অপেক্ষা না করে) মসজিদে যাওয়া।

৩. পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়া।

৪. ইমাম সাহেবের নিকটে বসা। অর্থাত, যতদূর সম্ভব সামনের কাতারে বসা।



৫. মনোযোগ সহকারে খুতবা শুনা।

৬. খুতবার সময় কোন কথা না বলা ও কোন কাজ না করা।


(সহীহ ইবনে খুযাইমাহ, হাঃ নং ১৭৫৮/ নাসায়ী, হাঃ নং ১৩৮৪, তিরমিযী, হাঃ নং ৪৯৬/ আবু দাউদ, হাঃ নং ৩৪৫)

বি.দ্র. কোন সহীহ হাদীসে বর্ণিত আমল ছাড়া অন্য কোন নফল আমলের ব্যাপারে এত বেশি ফযীলতের কথা পাওয়া যায় না। এছাড়াও জুমু‘আর দিনে আরো কিছু আমল করা সুন্নাত। যথা : উত্তম ও পরিষ্কার কাপড় পরিধান করা, আতর লাগানো, সূরায়ে কাহফ তিলাওয়াত করা, বেশি বেশি দুরূদ শরীফ পড়া, সালাতুত তাসবীহ পড়া, দুই খুতবার মাঝখানে হাত উঠানো ব্যতীত মনে মনে দু‘আকরা, পুরুষ ও মহিলা সকরের জন্য আসরের নামাযের পর নিজ স্থানে বসেই নিচের দরূদ শরীফটি ৮০ বার পাঠ করা।



اللهم صلى على محمدن النبى الامى وعلى اله وسلم تسليما

বি.দ্র. বর্ণিত দরূদ শরীফের ফযীলত এই যে, আমলকারীর আমলনামায় ৮০ বছরের ইবাদাত বন্দেগীর সওয়াব লেখা হয় এবং তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।

(ইবনু বাশকুয়াল, আল কাওসুল বাদী ফিস সালাতি ওয়াস সালামি আলাল হাবীবিশ শাফী, পৃ. ২৮৪)

এবং সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পূর্ব হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত গুরুত্বের সাথে যিকির ও দু‘আয় লিপ্ত থাকা।

(আবু দাউদ, হাঃ নং ৩৪৭/ আবু দাউদ, হাঃ নং ১২৯১/ মুস্তাদরাক, হাঃ নং ৩৩৯২/ মুস্তাদরাক, হাঃ নং ৮৬৮১)

ঈদের সুন্নাতসমূহঃ-

(১) অন্য দিনের তুলনায় সকালে ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া। (বাইহাকী, হাঃ নং ৬১২৬)

(২) মিসওয়াক করা। (তাবঈনুল হাকাইক, ১ : ৫৩৮)

(৩) গোসল করা।

(ইবনে মাজাহ, হাঃ নং ১৩১৫)

(৪) শরীয়তসম্মত সাজসজ্জা করা। (বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৯৪৮)

(৫) সামর্থ অনুপাতে উত্তম পোশাক পরিধান করা। (বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৯৪৮/ মুস্তাদরাকে হাকেম, হাঃ নং ৭৫৬০)

(৬) সুগন্ধি ব্যবহার করা। (মুস্তাদরাকে হাকেম হাঃ নং ৭৫৬০)

(৭) ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে মিষ্টি জাতীয় যেমন (খেজুর ইত্যাদি) খাওয়া। তবে ঈদুল আযহাতে কিছু না খেয়ে ঈদের নামাযের পরে নিজের কুরবানীর গোশত আহার করা উত্তম।

(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৯৫৩/ তিরমিযী শরীফ, হাঃ নং ৫৪২/ দারেমী হাঃ নং ১৬০৩)

(৮) সকাল সকাল ঈদগাহে যাওয়া। (আবু দাউদ, হাঃ নং ১১৫৭)

(৯) ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে ছাদাকায়ে ফিতর আদায় করা। (দারাকুতনী, হাঃ নং ১৬৯৪)

(১০) ঈদের নামায ইদগাহে আদায় করা, বিনা অপারগতায় মসজিদে আদায় না করা। (বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৯৫৬/ আবু দাউদ হাঃ নং ১১৫৮)

(১১) যে রাস্তায় ঈদগাহে যাবে সম্ভব হলে ফিরার সময় অন্য রাস্তা দিয়ে ফেরা। (বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৯৮৬)

(১২) পায় হেঁটে যাওয়া।

(আবু দাউদ, হাঃ নং ১১৪৩)

(১৩) ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাওয়ার সময় আস্তে আস্তে এই তাকবীর পড়তে থাকা- الله اكبر الله اكبر لا اله الا الله والله اكبر الله اكبر ولله الحمد

তবে ঈদুল আযহাতে যাওয়ার সময় পথে এ তাকবীর আওয়াজ করে পড়তে থাকবে। (মুস্তাদরাকে হাকেম, হাঃ নং ১১০৫/ বাইহাকী, হাঃ নং ৬১৩০)


চলবে...........

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৪ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।