الحمد لله رب العالمين، والصلاة والسلام على خاتم الأنبياء والمرسلين، وعلى آله وصحبه أجمعين، وعلى من تبعهم بإحسان إلى يوم الدين
মৃত্যু কালীন সুন্নাত সমুহঃ-
১. মৃত্যুশয্যায় শায়িত ব্যক্তির চেহারা কিবলামুখী করে দেয়া এবং তার সামনে বসে তাকে শুনিয়ে কালিমা শরীফ পড়তে থাকা। তবে তাকে কালিমা পড়ার হুকুম দিবে না এবং তার পাশে বসে সূরা ইয়াসীন পড়া। উল্লেখ্য, কালিমা শরীফ একবার পড়ে নিয়ে তারপর যদি দুনিয়াবী কোন কথা না বলে তাহলে দ্বিতীয় বার কালিমার তালকীন না করা।
(মুস্তাদরাক, হাঃ নং ১৩০৫/ মুসরিম, হাঃ নং ৯১৬/ আবু দাউদ, হাঃ নং ৩১২১)
২. স্বীয় মৃত্যু নিকটবর্তী মনে হলে এই দু‘আ পড়তে থাকা :
اللهم اغفرلى وارحمنى والحقنى بالرفيق الاعلى-
(তিরমিযী, হাঃ নং ৩৪৯৬/ আবু দাউদ, হাঃ নং ৩১২১)
৩. যখন রূহ বের হচ্ছে বলে অনুভব হতে থাকে, তখন এই দু‘আ পড়া :
اللهم اعنى على غمرات الموت او سكرات الموت-
(তিরমিযী, হাঃ নং ৯৭৮)
৪. কোন মুসলমানের মৃত্যু সংবাদ শ্রবণে এই দু‘আ পড়া :
انا لله وانا اليه راجعون اللهم اجرنى فى مصيبتى واخف لى خيرا منها
(মুসলিম, হাঃ নং ৯১৮)
৫. মৃত ব্যক্তির চক্ষুদ্বয় ও মুখ খোলা থাকলে বন্ধ করে দেয়া। প্রয়োজন বোধে মাথার উপর ও থুতনীর নীচ দিয়ে কাপড় বেঁধে দেয়া।
চেহারা দেখা,আত্মীয়-স্বজনদের আসা,জানাযায় লোক কম হবে এসব কথা বলে দাফনে বিলম্ব করা নিষেধ।
(মুসলিম, হাঃ নং ৯২০)
৬. মৃত ব্যক্তিকে খাটে রাখার সময় বা মৃত ব্যক্তির লাশবাহী খাট কাঁধে উঠানোর সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলা।
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, হাঃ নং ১২০৬২)
৭. যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি মৃত ব্যক্তিকে গোসল, কাফন ও জানাযার নামায সম্পন্ন করে নিকটস্থ গোরস্থানে দাফনের ব্যবস্থা করা। দাফনের জন্য বিনা অপারগতায় দূরের গোরস্থানে বা এক শহর থেকে অন্য শহরে নেয়া মাকরূহ।
(আবু দাউদ, হাঃ নং ৩১৮, ৩১৬৫)
বি. দ্র. জানাযার পরে দাফনের পূর্বে হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা নিষেধ এবং জানাযার পর থেকে মুর্দার চেহারা দেখানো নিষেধ।
(আহসানুল ফাতাওয়া, ৪ : ২১৯/ ইমদাদুল মুফতীন, ৪৪৪ দারুল উলূম, ৫ : ৩০৫)
৮. মৃত ব্যক্তির লাশ কবরে রাখার সময় এই দু‘আ পড়া :
بسم الله وعلى ملة رسول الله
(আবু দাউদ, হাঃ নং ১০৪৬/ মুসনাদে আহমাদ, হাঃ নং ৪৯৮৯)
৯. কবরে লাশ পুরোপুরি ডান কাতে শোয়ানো অর্থাত তার চেহারা ও সীনা কিবলামুখী করে দেয়া। এর জন্য কবরের তলদেশে পশ্চিম পার্শ্বে উত্তর দক্ষিণে লম্বাভাবে এক হাত পরিমাণ গর্ত করতে হবে অথবা পিঠের পেছনে ও মাথার নীচে মাটির চাকা দিয়ে ডান কাতে শোয়াতে হবে। মৃত ব্যক্তিকে কবরে চিত করে শুইয়ে শুধু তার চেহারা কিবলামুখী করে দিলেই সুন্নাতের অনুসরণ হবে না।
(মুস্তাদরাক, হাঃ নং ১৯৭)
১০. আত্মীয়-স্বজনদের পক্ষ থেকে মৃত ব্যক্তির পরিবার পরিজনের জন্য প্রথম দিন খানার ব্যবস্থা করা উচিত। মৃত ব্যক্তির উপর যাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব ছিল, শুধু তারাই এ খানা খাবে।
আগন্তুক মেহমানগণ উক্ত খানায় শরীক হবে না। বরং তারা সান্ত্বনা দিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে যাবে। মৃত ব্যক্তির লোকদের উপর বোঝা সৃষ্টি করবে না। বর্তমানে বিষয়টিকে মোটেও খেয়াল করা হচ্ছে না। রেওয়াজ হিসেবে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে মৃতের পরিবারের পক্ষ হতে কোনরূপ খানার আয়োজন না করা চাই।
তেমনিভাবে ৪ দিনা, ৭/ ১০ দিনা, ত্রিশ-চল্লিশ কুলখানী ইত্যাদি বিধর্মীদের রসম। এগুলো থেকে কঠোরভাবে পরহেজ করবে। চাই মূর্খ লোকেরা যতই বদনাম করুক। আল্লাহর জন্য এ সব বদনাম বরদাশ্ত করে নিবে। ‘জীবনের শেষদিন’ কিতাব থেকে বিস্তারিত দেখে নিবে।
(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৫৪১৭/ মুসনাদে আহমাদ, হাঃ নং ৯০৫)
১১. কবর খুব বেশি উঁচু না করা এবং পাকা না করা।
(মুসলিম, হাঃ নং ৯৬৯, ৯৭০)
১২. কবরের উপর পানি ছিটিয়ে দেয়া।
(মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাঃ নং ৬৪৮১)
১৩. মৃত ব্যক্তির দাফনকার্য সম্পন্ন করার পর হযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে তার মাগফিরাত কামনায় দু‘আ করতেন এবং অন্যদেরকেও মাগফিরাতের দু‘আ করতে বলতেন। বিশেষত মুনকার নাকীর ফিরিশতাদ্বয়ের প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে সে যেন দৃঢ়পদ ও অবিচল থাকতে পারে, সে জন্য দু‘আ করতে বলতেন।
(আবু দাউদ, হাঃ নং ৩২২১)
১৪. কবরের মাথার দিকে এক ব্যক্তি সূরা বাকারার শুরু থেকে مفلحون পর্যন্ত এবং পায়ের দিকে অপর ব্যক্তি امن الرسول থেকে শেষ পর্যন্ত তিলাওয়াত করবে।
কবরের চার কোণায় খুটি গাড়া এবং চার কোণায় চার কুল পড়ার কোন ভিত্তি পাওয়া যায় না।
(শুআবুল ঈমান, হাঃ নং ৮৮৫৪)
সমাপ্ত
মুনাজাতের ভুলসমূহঃ-
১. মুনাজাতের সময় অনেকে উভয় হাত কাঁধ থেকে উপরে উঠিয়ে রাখে। অথচ এ সময় উভয় হাত বুক বা কাঁধ বরাবর রাখাই নিয়ম।
২. মুনাজাতের সময় অনেকে উভয় হাত অনেক বেশি ফাঁকা করে অথবা একেবারে মিলিয়ে রাখে। আবার কেউ কেউ দড়ি পাকানোর মত করতে থাকে।
এসবই ভুল। নিয়ম হল, উভয় হাতের মাঝখানে দু’এক আঙ্গুল পরিমাণ ফাঁকা রাখা।
৩. অনেকে হাতের তালু চেহারামুখী করে রাখে। অথচ হাতের তালু আসমানের দিকে করে রাখা উচিত।
৪. আল্লাহর হামদ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি দরূদ দ্বারা মুনাজাত আরম্ভ করা এবং হামদ ও দরূদ এবং আমীন দ্বারা মুনাজাত শেষ করা সুন্নাত।
অথচ অনেকে এ নিয়ম ব্যতিরেকেই ‘আল্লাহুম্মা আমীন’ বলে মুনাজাত শুরু করে এবং ‘বাহক্বে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ বলে মুনাজাত শেষ করে। এরূপ সব সময় করতে থাকা বিদ‘আত।
৫। অনেকে ফরয নামাযের পর দু‘আ, যিকির না পড়েই সালাম ফিরানোর সাথে সাথে সুন্নাত বা নফল পড়ার জন্য দাঁড়িয়ে যায়। এটাও সুন্নাতের খেলাফ।
ফরয নামাযের পর কিছু সময় দু‘আ-দরূদ, যিকির-আযকার ও তাসবীহ-তাহলীল ইত্যাদি পাঠ করা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, এর ব্যতিক্রমকারীকে হযরত উমর (রা.) কাঁধে ঝাঁকুনি দিয়ে বসিয়ে দিয়েছিলেন এবং হযরত নবী কারীম (সা.) হযরত উমর (রা.)-এর এ কাজকে সমর্থন করেছিলেন এবং বলেছিলেন, ফরয সুন্নাত ও নফল নামাযের মাঝে পার্থক্য না করায় বনী ইসরাঈলকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল।
(আবু দাউদ, হাঃ নং ১০০৭)
তবে মাগরিবের ফরয নামাযের পর সুন্নাত পড়তে অধিক সময় বিলম্ব করা অনুচিত। মনে মনে মুনাজাত করা মুস্তাহাব। কারো ইবাদতে বিঘ্ন সৃষ্টি না হলে আওয়াজ করে দু‘আকরা জায়েয। অনেক ইমাম সাহেব উচ্চৈঃস্বরে মুনাজাত করে মাসবূকদের অবশিষ্ট নামাযের মধ্যে বিঘ্ন সৃষ্টি করেন, এটা নাজায়েয।
পান করার সুন্নাতসমূহঃ-
১. পানির পেয়ালা ডান হাত দিয়ে ধরা।
(মুসলিম, হাঃ নং ২০২০)
২. বসে পান করা, বসতে অসুবিধা না হলে দাঁড়িয়ে পান না করা।
(মুসলিম, হাঃ নং ২০২৪)
৩. বিসমিল্লাহ বলে পান করা এবং পান করে আলহামদুলিল্লাহ বলা।
(তাবরানী আওসাতা, হাঃ নং ৬৪৫২)
৪. কমপক্ষে তিন শ্বাসে পান করা এবং শ্বাস ছাড়ার সময় পানির পাত্র মুখ হতে সরিয়ে নেয়া।
(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৫৬৩১)
৫. পাত্রের ভাঙ্গা দিক দিয়ে পান না করা।
(আবু দাউদ, হাঃ নং ৩৭২২)
৬. পাত্র যদি এমন হয়, যার ভিতর নজরে আসে না, সেটার মুখে মুখ লাগিয়ে পান না করা। কারণ, তাতে কোন বিষাক্ত প্রাণী ক্ষতি সাধন করতে পারে।
(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৫৬২৬)
৭. পানি পান করার পর এই দু‘আ পড়া :
الحمد لله الذى سقانا ماء عذبا فراتا برحمته ولم يجعله ملحا اجاجا بذنوبنا
৮. পানীয় দ্রব্য পান করে কাউকে দিতে হলে ডান দিকের ব্যক্তিকে আগে দেয়া এবং এই ধারাবাহিকতা অনুযায়ীই শেষ করা।
(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৫৬১৯)
৯. উযু করার পর যে পাত্রে হাত দিয়ে পানি নেয়া হয়, সে পাত্রের অবশিষ্ট পানি কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে পান করা। এতে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি হতে আরোগ্য লাভ হয়।
(শামী, ১ : ১২৯/ বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৫৬১৬)
১০. দুধ পান করার পূর্বে এই দু‘আ পড়া :
اللهم بارك لنا فيه وزدنا منه
(আবু দাউদ, হাঃ নং ৩৭৩০)
দুধ ব্যতীত অন্য কোন পানীয় দ্রব্য হলে وزدنا এর পরে خيرا বৃদ্ধিথ করা।
(আমালুল ইয়াওমি ওয়াল্লাইলাহ, ১২৭)
১১. যে ব্যক্তি পান করাবে তার সর্বশেষে পান করা।
(মুসলিম, হাঃ নং ৬৮১)
১২. যমযমের পানি কিবলামুখী হয়ে এ দু‘আ পড়ে পান করা :
اللهم انى اسئلك علما نافعا ورزقا واسعا وشفاء من كل داء
(মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাঃ নং ৯১১২/ সুনানে দারাকুতনী, হাঃ নং ২৭১২)
ঘুমানোর সুন্নাতসমূহঃ-
১. ইশার নামাযের পর যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি ঘুমাতে চেষ্টা করা, যাতে তাহাজ্জুদের জন্য উঠা সহজ হয়।
(বুখারী, হাঃ নং ৫৪৭)
বি.দ্র. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যমীন, চৌকি, কাপড়ের বিছানা, চাটাই, চামড়ার বিছানা ইত্যাদির উপর শয়ন করেছেন বলে হাদীসে বর্ণিত আছে।
(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ২০৬৯/ শামায়িলে তিরমিযী, পৃ. ২২)
২. উযু করে শয়ন করা।
(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৬৩১১)
৩. শোয়ার পূর্বে বিছানা ভালভাবে ঝেড়ে নেয়া।
(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৬৩২০)
৪. শয়নের পূর্বে পরিহিত কাপড় পরিবর্তন করে ঘুমের কাপড় পরিধান করা।
(আল মাদখাল, ৩ : ১৬২)
৫. শয়নের পূর্বে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে নিম্নে বর্ণিত কাজগুলো করা : ১. দরজা বন্ধ করা। ২. মশক বা পানির পাত্র এবং খাদ্য দ্রব্যের পাত্র ও অন্যান্য পাত্রসমূহ ঢেকে রাখা। যদি ঢাকার জন্য কোন বস্তু না পাওয়া যায়, তাহলে ‘বিসমিল্লাহ’ পড়ে তার মুখে একটি লাটি বা ছড়ি রেখ দেয়া, ৩. বাতি নিভানো।
(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৫৬২৩-২৪)
৬. ঘুমানোর পূর্বে উভয় চোখে তিনবার করে সুরমা লাগানা।
(মুস্তাদরাক, হাঃ নং ৮২৪৯)
৭. ঘুমানোর পূর্বে কিছু পরিমাণ কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা। যথা : আলহামদু শরীফ, সূরা কাফিরূন, আয়াতুল কুরসী, আমানার রসূল থেকে সূরা বাক্বারার শেষ পর্যন্ত, সূরা মুলক, আলিফ লাম মীম সিজদাহ ইত্যাদি তিলাওয়াত করা বেশি পড়া সম্ভব না হলে কমপক্ষে ছোট ২/ ৩ টি সূরা পড়ে নেয়া।
(তাবারানী কাবীর হাঃ নং-২১৯৫) (আল আদাবুল মুফরাদ, হাঃ নং ১২০৯/ বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৩২৭৫)
৮. ঘুমানোর পূর্বে কয়েকবার দরূদ শরীফ পাঠ করা এবং তাসবীহে ফাতেমী অর্থাত ৩৩ বার সূবাহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পড়া।
(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৩১১৩)
৯. সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস প্রত্যেকটা তিনবার করে পড়ে হাতে দম করে যতটুকু সম্ভব মাথা হতে পা পর্যন্ত সমস্ত শরীরে হাত মুছে দেয়া।
তিনবার এরূপ করা।
(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৫০১৭)
১০. ঘুমানোর সময় ডান কাতে কিবলামুখী হয়ে শোয়া সুন্নাত। উপুড় হয়ে শয়ন করতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ এভাবে শয়ন করাকে আল্লাহ তা‘আলা পছন্দ করেন না।
(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৬৩১৪/ সহীহ ইবনে হিব্বান হাঃ নং ৫৫৪৯)
১১. শয়ন করে এ দু‘আ পড়া :
باسمك ربى وضعت جنبى وبك ارفعه، ان امسكت نفسى فارحمها وان ارسلتها فاحفظها بما تحفظ به عبادك الصالحين
(বুখারী শরীপ, হাঃ নং ৬৩২০)
১২. ঘুমানোর পূর্বে তিনবার এই ইস্তিগফার পড়া :
استغفر الله الذى لا اله الا هو الحى القيوم واتوب اليه
(তিরমিযী, হাঃ নং ৩৩৯৭)
১৩. এই দু‘আটিও পড়া :
اللهم باسمك اموت واحيى
(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৬৩১৪)
১৪. সর্বশেষে এ দু‘আটি পড়া :
اللهم اسلمت وجهى اليك وفوضت امرى اليك والجأت ظهرى اليك رغبة ورهبة اليك لاملجأ ولا منجا منك الا اليك- اللهم امنت بكتابك الذى انزلت وبنبيك الذى ارسلت-
(বুখারী, হাঃ নং- ২৪৭)
১৫. শয়ন করার পর ভয়ে ঘুম না আসলে এই দু‘আ পড়া :
اعوذ بكلمات الله التامة من غضبه وعقابه وشرعباده ومن همزات الشياطين وان يحضرون-
(তিরমিযী, হাঃ নং ৩৫২৮)
১৬. স্বপ্নে ভয়ংকর কিছু দেখে চক্ষু খুলে গেলে তিনবার
اعوذ بالله من الشيطان الرجيم
পড়ে বাঁ দিকে থু-থু ফেলে পার্শ্ব পরিবর্তন করে শোয়া।
তাতে ক্ষতির আর কোন আশংকা থাকে না এবং এ দু‘আটি পড়া :
اللهم انى اعوذبك من شر هذه الرؤيا-
(মুসলিম, হাঃ নং ২২৬২)
১৭. সুযোগ হলে দুপুরে খানার পর কিছুক্ষণ কাইলূল্লাহ করা অর্থাত শয়ন করা। চাই ঘুম আসুক বা না আসুক।
(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৯৩৯)
কুরআনে কারীম তিলাওয়াতের তিনটি বিশেষ উপকার
১. দিলের জং (গুনাহের কালিমা) মুছে যায়। (শুআবুল ঈমান ৩ : ৩৯, হাঃ নং ১৮৫৯)
২. আল্লাহ তা‘আলার মুহাব্বত বৃদ্ধি পায়। (সূরা আনফাল, ২/ শুআবুল ঈমান, ৩ : ৩৯৪, হাঃ নং ১৮৬৩)
৩. প্রত্যেক হরফে কমপক্ষে ১০টি করে নেকী পাওয়া যায়, না বুঝে পড়লেও।
(তিরমিযী, হাঃ নং ২৯১০, মুস্তাদরাক, হাঃ নং ২০৪০) কেউ যদি বলে, না বুঝে পড়লে কোন লাভ নেই, তার এই কথা ঠিক না।
কুরআনে কারীম তিলাওয়াতের দু‘টি আদবঃ-
১. তিলাওয়াতকারী মনে মনে এই ধারণা করবে যে, মহান আল্লাহ তা‘আলা হুকুম দিচ্ছেন- পড়, দেখি আমার কালাম কত সুন্দর করে পড়তে পার। (৫ মুযযাম্মিল, ৪/ বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৭৫৪৪)
২. আর শ্রবণকারীরা অন্তরে এই ধারণা করবে যে, মহান আল্লাহ তা‘আলার পবিত্র কালাম তিলাওয়াত করা হচ্ছে, সুতরাং অত্যন্ত ভক্তি, মহাব্বত ও মনযোগসহ কুরআন শরীফ তিলাওয়াত শ্রবণ অপরিহার্য। (সূরা আ‘রাফ, ২০৪)
তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাতঃ-
বযুর্গানে দীন তাঁদের অভিজ্ঞতার আলোকে বলেছেন, তিনটি এমন সুন্নাত আছে, যেগুলোর উপর আমল করতে পারলে অন্তরে নূর পয়দা হয় এবং এর দ্বারা অন্য সকল সুন্নাতের উপর আমল করা সহজ হয়ে যায় এবং অন্তরে সুন্নাতের প্রতি আমল করার স্পৃহা জাগ্রত হয়।
১. সহীহ শুদ্ধ করে আগে আগে সালাম করা ও সর্বত্র সালামের ব্যাপক প্রসার করা।
(মুসলিম শরীফ, হাঃ নং ৫৪; তিরমিযী, হাঃ নং ২৬৯৯)
বি.দ্র. السلام (আস্-সালামু) এর শুরুর হামযা এবং মীমের পেশ স্পষ্ট করে উচ্চারণ করতে হবে। সালামের উত্তর শুনিয়ে দেয়া ওয়াজিব। (আলমগিরী, ৫ : ৩২৬)
২. প্রত্যেক ভাল কাজে ও ভাল স্থানে ডান দিককে প্রাধান্য দেয়া। যথা : মসজিদে ও ঘরে প্রবেশকালে ডান পা আগে রাখা। পোশাক পরিধানের সময় ডান হাত ও ডান পা আগে প্রবেশ করানো এবং প্রত্যেক নিম্নমানের কাজে এবং নিম্নমানের স্থানে বাম দিককে প্রাধান্য দেয়া।
যথা : মসজিদ বা ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বাম পা আগে রাখা, বাম হাতে নাক পরিষ্কার করা, পোশাক থেকে বাম হাত বা বাম পা আগে বের করা।
(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ১৬৮/ মুসনাদে আহমাদ, হাঃ নং ২৫০৪৩) মুস্তাদরাক, হাঃ নং ৭৯১/ মুসলিম শরীফ, হাঃ নং ২০৯৭)
৩. বেশি বেশি আল্লাহ তা‘আলার যিকির করা।
(সূরায়ে আহযাব, ৪১/ মুস্তাদরাক, হাঃ নং ১৮৩৯)
তাছাড়া ক. উপরে ওঠার সময় আল্লাহু আকবার, নীচে নামার সময় সুবহানাল্লাহ, সমতল ভূমিতে চলার সময় লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ্ পড়তে থাকা।
(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ২৯৯৩/ তিরমিযী, হাঃ নং ৩৩৮৩)
খ. প্রতিদিন কুরআনে কারীম থেকে কিছু পরিমাণ তিলাওয়াত করা বা অন্যের তিলাওয়াত শ্রবণ করা।
(মুসলিম, হাঃ নং ৭৯১/ বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৫০৩৩)
গ. পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর সুন্নাত থাকলে সুন্নাতের পরে নতুবা ফরযের পরে তিনবার ইস্তিগফার, একবার আয়াতুল কুরসী, একবার সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক্ব, সূরা নাস এবং তাসবীহে ফাতেমী অর্থাত ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ্, ৩৩ বার আল-হামদুলিল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পড়া।
(মুসলিম শরীফ, হাঃ নং ৫৯১/ ইমাম নাসায়ীর সুনানে কুবরা, হাঃ নং ৯৮৪৮, তাবারানী কাবীর, হাঃ নং ৭৫৩২/ নাসায়ী শরীফ, হাঃ নং ১৩৩৬/ আবু দাউদ, হাঃ নং ১৫২৩/ মুসলিম শরীফ, হাঃ নং ৫৯৬)
ঘ. সকাল-বিকাল তিন তাসবীহ আদায় করা অর্থাত ১০০ বার কালিমায়ে সুওম-সুবহানাল্লাহি ওয়াল্ হামদুলিল্লাহি ওয়া লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, ১০০ বার ইস্তিগফার ও ১০০ বার কোন সহীহ দরূদ শরীফ পড়া।
(মুসলিম শরীফ, হাঃ নং ২৬৯২, ২৬৯৫/ মুসলিম, হাঃ নং ২৭০২/ ইতহাফ, ৫ : ২৭৫)
ঙ. প্রত্যেক কাজে মাসনূন দু‘আ পড়া।
(মুসলিম, হাঃ ৩৭৩/ তিরমিযী শরীফ, হাঃ নং ৩৩৮৪)
১ম পর্ব
২য় পর্ব
৩য় পর্ব
৪র্থ পর্ব
৫মপর্ব
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে নাবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর আদর্শে আদর্শিত হওয়ার তওফিক দান করুন। আমিন
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।