ছেলে ভাল ..
মুমু পড়ার টেবিলে বসে আছে। সামনে প্রাণি বিজ্ঞান বই। কাল সকালে এই বিষয়ে প্রাইভেটে পরীক্ষা আছে। এসময় না পড়লে আর পড়া হবে না। অথচ না পড়লে কাল পরীক্ষায় এক কলম লেখারও ক্ষমতা হবে না।
পড়ায় মন দিতেই হবে। কিন্তু কোন ভাবেই পড়ায় মন বসছে না।
আজও সন্ধ্যে সাতটায় কিশোর মুমুর মায়ের ফোনে ফোন দিয়েছিল। প্রতিদিন এই সময়ে ছেলেটা ফোন দেয় আর মুমু কেটে দেয়। মুমুর যখন নিজস্ব ফোন ছিল দিন রাত কিশোরের সাথে কথা হত।
কিশোর ঢাকায় ইউনিভার্সিটি ভর্তি কোচিং করছে। পড়াশোনার অবস্থা খারাপ। লাইফটাকে নিয়ে সিরিয়াস না কেমন পাগল টাইপ ছেলে একটা। তবে মুমুর ব্যাপারে খুব সিরিয়াস। মুমু একবার বলেছিল রাত তিনটায় উঠে তাকে ডেকে দিতে।
তার পর থেকে এমন কোন দিন যায়নি যে কিশোর মুমুকে রাত তিনটায় ডেকে দেয় নি। মুমু ভোরে উঠে পড়তে বসত। মুমু দিনের বেলায় ফাকা পেলেই ফোন দিত। কথা হত। তবে এখন আর এমন নেই।
মুমুর সামনে পরীক্ষা। প্রস্তুতি যাতে ভাল হয় সেজন্য মনে মনে কিশোরের সাথে কথা কমিয়ে পড়ায় বেশি সময় দিতে চেয়েছিল। কিন্তু কিশোর কিভাবে যেন তার মনের কথা পড়ে ফেলল। একরাতে হঠাৎ শুভ কামনা জানিয়ে গুরু জনের মত অনেক উপদেশ দিয়ে বলল এখন থেকে কথা অফ, ফোন অফ শুধু হবে পড়াশুনা। তারপর কিছু না বলতে দিয়ে ফোন অফ করে রাখল।
মুমুর খুব রাগ হয়েছিল এটা কেমন ব্যবহার! হুট করে কথা অফ বললে কথা অফ রাখা যায় নাকি? তার পরদিন মুমু ট্রাই করল। কিশোর ফোন বন্ধ রেখেছে তো রেখেছে খোলার নাম নেই।
মুমু কথা অফের দ্বিতীয় দিন বাসায় ফোন জমা দিয়ে দিল। মুমুর মা কিছুদিন আগে মুমুর বাবাকে খুব করে বকে দিয়েছিল এই ছোট বয়সে কেন মেয়ের হাতে ফোন দিয়েছে। মুমুর সেদিনই ইচ্ছে করছিল ফোনটাকে আছাড় মেরে ভেঙে মাকে দেখিয়ে দিতে।
কিন্তু এই কিশোরের জন্য পারেনি। কিশোরটাও যে কি না মুমুকেও কিছু বলতে দিল না ফোন অফ করে দিল। আচ্ছা এই কারণে কি কিশোর কথা অফ করল? কিন্তু সেতো কিছু বলেনি। সেদিনের ঘটনার কথা চেপে গিয়েছিল। কিশোরকে শুধু বলেছিল সামনে পরীক্ষাতো মা ফোন নিয়ে খুব ঝামেলা পাকাচ্ছে।
এটুকুই। নাকি ওর নিজের কোন কারণে এমন করেছিল । মুমু ভাবে। ছেলেরা করে এমন অনেক অসৎ চিন্তাও মাথায় আসে।
কথা অফের তিনদিনের মাথায় মুমুর মায়ের নম্বরে হঠাৎ কিশোর ফোন দিয়েছিল।
কল না ধরে মুমুর মা মুমুর হাতে ফোন দিয়ে মুমুকে অনেক বাজে বাজে খোটা দিতে লাগল। মুমু কল না ধরে কেটে দিল। মুমুর ফোন এখন ওর মামার কাছে। সেখানেও কি কিশোর কল করেছিল ? মুমুর ভয় হয় মামা যদি ফোন ধরে কিশোর মুমু দুজনেরই খবর আছে। মুমুর হাতের ফোনটা আবার বেজে ওঠে।
কিশোর ফোন দিচ্ছে। বারবার কেটে দিতেই থাকে। শেষে আর যেন কোনফোনেই ফোন না করে সেটা লিখে মুমু এস এম এস দেয়। দেয়ার সাথেই রিপ্লাই আসে সে পারছে না। আগের মত হতে চায়।
মুমু জানে এটা সম্ভব না। পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত মুমু আর ফোন হাতে পাবে না। সে কোন রিপ্লাই দেয় না।
কিশোর তার আর ডিসটার্ব করেনি। কিন্তু তৃতীয় দিন থেকে সন্ধ্যা সাতটায় আবার ফোন দেয়।
মুমু কেটে দেয়। এভাবে দিনের পর দিন চলছে। মুমু সন্ধ্যা সাতটা বাজলেই ফোন হাতে নেয় আর কিশোরের কল কেটে দেয়ার ওয়েট করে। আজও যথারীতি হয়েছে। তবে একবারের জায়গায় আজ পরপর দুবার কিশোর ফোন দিয়েছিল।
সেটা তেমন কোন বড় ব্যাপার না। কিন্তু কোন এক বিচিত্র কারণে আজ এমন হচ্ছে। পড়া হচ্ছে না । এর আগে কিশোরের কারণে কখনও পড়ায় কোন সমস্যা হয়নি। মুমু হাল ছেড়ে দেয়ার কথা ভাবে।
এর চেয়ে এখন শুয়ে পড়ে কাল যদি সকালে একটু টাইম পাওয়া যায় তাতেই পড়তে হবে। কিশোরটা থাকলে ভাল হত রাত তিনটায় ডেকে দিত। এখন ঘড়িতে ১১টা ৪০ মিনিট বাজে ।
মুমু লাইট অফ করে ছোট বোনের পাশে শুয়ে পড়ে। আগের কথা গুলো মনে পড়তে থাকে।
কত কথা কত স্মৃতি। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করেই কিশোরের আজ দুবার ফোন করার কারণটা মাথায় আসে। নিজের কাছেই কেমন যেন লাগে। আজ কিশোরের জন্মদিন ছিল। ক্ষমা চাওয়া ছাড়া এখন আর কিছু করার নেই।
কিশোর নিশ্চই রাগ করে আছে । ওহ্যা কাল তো প্রাণি বিজ্ঞান প্রাইভেটে পরীক্ষা আছে ঘুমাতে হবে। মন থেকে সব ঝেড়ে ফেলে মুমু চোখ বোজে।
রাতের আকাশে তারারা জেগে থাকে। চাঁদ আপন মনে কখন যেন এদিক থেকে আকাশের ওদিকে চলে যায়।
শীত আসছে। হুহু করা ঠান্ডা বাতাসের আনাগোনা চারপাশে। হিমুরা রাস্তায়। রাত ৩টা। কিশোর জেগে আছে ।
রাত জেগে জেগে তিনটায় মুমুকে ডাকতে গিয়ে রাত জাগার অভ্যেস হয়ে গেছে। এখন আর চারটার আগে ঘুম আসে না। একা জীবনে ওই একজন আছে মুমু। এখন সেও কথা বলে না । বুকের মাঝে হু হু করতে থাকে ।
নিজের চুলে হাত দেয় কিশোর। বড় হয়েছে খুব। অনেকদিন হল চুল কাটা হয়না । কাল কাটাতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।