মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণের পর দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সক্রিয় হবেন আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতারা। দলটি মনে করছে, নির্বাচনে বিজয় ছিনিয়ে আনার পর এবার বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন মোকাবিলা করতে কোথাও কোথাও উপেক্ষিত তৃণমূলকে চাঙ্গা করে মাঠে নামাতে হবে। এ জন্য মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে শাসক দল আওয়ামী লীগ। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় নেতাদের এলাকা ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে দলীয় কর্মকাণ্ড ঢেলে সাজাতে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে তৈরি করবেন বিশেষ 'মাস্টার প্ল্যান'।
এর ভিত্তিইে দলটির আগামী দিনের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে। দলীয় সূত্র মতে, চলতি বছরের মে মাসের মধ্যেই ৫৯টি জেলা এবং এর অধিভুক্ত উপজেলার কাউন্সিল শেষ করা হবে। এ জন্য আগামী সপ্তাহের শুরুতেই জেলা কমিটিগুলোর কাছে কেন্দ্রের নির্দেশনা পাঠানো হবে। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে কাজের গতি ফেরাতে বেশ ঘটা করে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। কাউন্সিল অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে সাতটি বিশেষ কমিটি করা হচ্ছে।
ওই কমিটি সাত বিভাগে খোঁজখবর রাখবে। দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা এমন নির্দেশ দিয়েছেন। খবর দলীয় ঊধর্্বতন সূত্রের। এ ছাড়া দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে মন্ত্রিসভায় না রেখে সাংগঠনিক দায়িত্বে রাখা হতে পারে। কেননা, মন্ত্রী না করে ওইসব নেতাকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দায়িত্ব দিতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী।
বিগত মহাজোট সরকারে বেশির ভাগ নেতা মন্ত্রী হওয়ায় সাংগঠনিক কার্যক্রমে কিছুটা স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছিল বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করছেন। জানা গেছে, নবম সংসদের এমপিদের সঙ্গে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের দূরত্ব বাড়ে। এ জন্য বিএনপি-জামায়াতের সহিংস আন্দোলনের মুখে তেমনভাবে সক্রিয় ছিলেন না স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। নির্বাচন সামনে রেখে কেন্দ্রীয় নেতারা বিভিন্ন জেলা সফর করেন। এতে বেশ সক্রিয় হয়ে ওঠেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।
তাই নির্বাচন-পরবর্তী আন্দোলন ঠেকাতে স্থানীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের আরও চাঙ্গা রাখতে আগামী মাসেই কেন্দ্রীয় নেতাদের আরেক দফা জেলা সফর এবং জেলায় জেলায় সমাবেশের কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। ওইসব সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতারা বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা ও সরকারবিরোধী আন্দোলন ঠেকাতে নেতা-কর্মীদের মাঠে থাকার নির্দেশনা দেবেন। চলতি মাসেই বিএনপি-জামায়াতের সরকারবিরোধী অপপ্রচারের কাউন্টার এবং সরকারের সফলতা তুলে ধরা হবে বলে দলটির নেতারা জানিয়েছেন। দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের নিয়ে সংগঠনকে গতিশীল করা, দলীয় এমপিদের সঙ্গে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের দূরত্ব কমিয়ে আনা এবং সদস্য সংগ্রহ অভিযানে গতি আনতে এ সফর কর্মসূচি নিচ্ছে দলের উচ্চমহল। ক্ষমতাসীন দলটি মনে করছে, বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করে সফল না হয়ে এখন নতুন সরকারকে চাপে রাখতে হরতাল-অবরোধের মতো টানা কর্মসূচি পালন করতে পারে।
তখন সরকার কঠোর অবস্থানে থাকলেও তাদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড আরও বাড়াতে হবে। অন্যদিকে, যেসব ভোট কেন্দ্রে কোনো ভোট পড়েনি সেসব এলাকার কমিটিগুলোতে সবার আগে বিশেষ নির্দেশনা পাঠানো হবে, যাতে তারা মাঠে সক্রিয় হয়। তৃণমূলকে শক্তিশালী করে সরকারের পক্ষে সমর্থন আদায়ে চেষ্টা করা হবে। শুক্রবার বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা স্পষ্ট করে বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত যদি সহিংসতার পথ পরিহার না করে তবে সরকার যত কঠোর হওয়া দরকার তত কঠোর হবে। পাশাপাশি তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদেরও সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেন।
এটাও সংগঠনকে শক্তিশালী করার মহাপরিকল্পনারই অংশ। এ ছাড়া ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করে আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে শীর্ষ নেতাদের সক্রিয় হতে বলছেন দলের সভানেত্রী। বৃহস্পতিবার দলের সংসদীয় বোর্ডের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপিদের তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যারা খারাপ আচরণ করবেন, আমি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে বাধ্য হব। কারণ তৃণমূল নেতা-কর্মীরাই আওয়ামী লীগের বড় শক্তি।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, নির্বাচন-পরবর্তী যে কাজগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হবে তার মধ্যে অন্যতম দলের তৃণমূলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করা। কারণ দুর্বল সাংগঠনিক অবস্থা থাকলে বিরোধী দলের মোকাবিলা করা এবং আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় আসা যাবে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।