তিনি কে ছিলেন; কী ছিলেন; কেন তিনি খুব অভিমানে “হিরণদাহ, বিজনব্যথা অথবা আগুণ” হয়েছিলেন; তা নিয়ে নৈব্যক্তিক আলোচনা খুবই কম হয়েছে।
হয় শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত “ব্লাসফেমির” চৌকিদারেরা তাঁকে অতিমানবীয় সিং হ-আসনে বসিয়ে অজ্ঞেয় রেখেছে সাধারণ্যের কাছে; অথবা দুইপাতাবিজ্ঞান পড়িয়ে “লিবেরেলিজম”-এর চৌকিদারেরা মুহাম্মদ নামের এই আইকনের প্রতীকে অবিরাম কুতসার ঢিল ছুঁড়েছে।
যে শিশুটি তার পিতাকে দেখেনি, মেষ চরিয়ে শৈশবের কষ্টময় দিনগুলো পার করেছে শোকে-ক্ষুধায়-তৃষ্ণায়-স্নেহহীনতায়; সে তার সততার শক্তিতে মক্কার সুশীল-কুশীল সমাজে ক্রমে একটি ‘আস্থা’র প্রতীকে পরিণত হয়েছিল। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি যখন প্রতিষ্ঠিত; যখন মক্কার পুরবাসীরা তাকে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করেছে; তখন কোন কুক্ষণে ‘মুহাম্মদ’ শহরের উপত্যকার ঢালের নীচে হেরা-পর্বতের গুহায় চলে গেলেন; রাতের পর রাত একা একা ভাবতে থাকলেন জীবনের গভীরের জীবন নিয়ে!
তারপর তাঁর কাছে ‘ঐশী’ বাণী আসার যে ঘটনাটি ঘটে; সেটিকে একটি ধাপ্পা বলে প্রমাণ করার জন্য দু’পাতা পোস্ট-মর্ডানিজম পড়িয়ের দল; কাটিয়ে দিচ্ছে দিবানিশি। অন্যদিকে “ওহী নাজেলে”র ঘটনাটি নিয়ে দুইচক্ষু জলের প্লাবনে ভাসিয়ে হাপুস নয়নে বুক থাবড়ে হু হু করে ওঠে বুঝে না বুঝে কুরান-হাদিস নিয়ে ব্যবসা করে খাওয়ার দল।
মুহাম্মদের কাছে “সৃষ্টি-কর্তা”র কাছ থেকে বাণী এসেছিল; নাকি তার নিজের ভেতরের “ভাবনার-আলোকায়ন” ঘটেছিল তা নিয়ে আলোচনা সম্ভবতঃ সময় নষ্ট। রাতের পর রাত একা থেকে যে ঘটনাটি হেরা গুহায় ঘটে মুহাম্মদের সঙ্গে; সেটিকে প্রথমে তিনি নিজের ওপরে কোন “অপশক্তি”র ভর করার মত ভয়াবহ ঘটনা ভেবে আতংকিত হয়েছিলেন। গিরিশৃঙ্গ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। প্রাচীন মুহাম্মদ জৈবনিকে এর উল্লেখ থাকলেও “মুহাম্মদ”-এর নাম ভাঙ্গিয়ে করে খাওয়ার দল, ছি ছি জাত যাবে বলে তা মুছে দেয় লোকের স্মৃতি থেকে। কেউ যদি “ওহী” নাজেল হয়েছে বলে নিজের সুপারম্যানহুড প্রমাণের চেষ্টা করে; সে হাসতে হাসতে বেরিয়ে আসবে হেরা গুহা থেকে।
গিরিখাঁজে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করতে চাইবে না।
হেরা-পর্বতের ট্রমার পর মুহাম্মদকে সুস্থ করে তোলেন উনার স্ত্রী খাদিজা ও বন্ধুরা। সুস্থ হয়ে মুহাম্মদ নিজে মক্কার ‘এলিট’ সমাজের অংশ হওয়ার পরেও চ্যালেঞ্জ করেন প্রচলিত সমাজ ও রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে। তাকে মদিনায় নির্বাসিত হতে হয় তাঁর সামাজিক-সুবিচারের দর্শনটি প্রচারের দায়ে। তারপর অনেক সংগ্রাম, অনেক লড়াই, অনেক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আবার তিনি বিজয়ী হয়ে ফিরে আসেন।
তারপর বাকিটা ইতিহাস।
খৃস্ট ধর্মের অসম-সম্মান ও সম্পদের দর্শন ও রাজনীতিকে অজনপ্রিয় করে জনমানুষের মাঝে স্থান করে নেয় “ইসলামের সাম্যবাদী” দর্শন ও রাজনীতি। সুতরাং মুহাম্মদ “বাতিল”, নারী লোলুপ ইত্যাদি জিন-সঞ্জাত খিস্তি করে যেসব নব্যশিক্ষিত পুঙ্গব সার্টিফিকেটধারী দিবানিশি শীতকার করে চলেছে; তাদের আবার কুসুমকলি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া উচিত। আর পান খেকো ধর্মের মেশিনম্যানেরা যারা মুহাম্মদের ওপর অলৌকিকতার বোঝা চাপিয়ে অশ্লীল ওয়াজ করে খায়; তাদের জুতিয়ে লম্বা করে দেয়া উচিত।
আমি সেই ‘মুহাম্মদে’র কথা বলছি যিনি কার্ল মার্কসের অনেক আগে আরবের অন্ধকার সমাজে বসে ঐকান্তিক শ্রেণীহীন সমাজের ভাবনা আত্মস্থ করেছিলেন।
বিদায়ী বক্তৃতায় যিনি বলেছিলেন, আমি কোন সুপারম্যান নই; আমি তোমাদেরি লোক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।