আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনুপ্রবেশিত পাকিজাত উর্দু শব্দসমূহ বর্জন করলে বাংলাভাষার খুব কি বেশি অঙ্গহানি হবে?



বঙ্গ ও বাঙালির মত বাংলাভাষাও চিরনির্যাতিত। হাজার বছর ধরে নির্যাতন চালিয়েও আমাদের দাবায়ে রাখতে পারে নাই। সংস্কৃত, ফার্সি, আরবি, ইংরেজি, উর্দুসহ অনেক ভাষাই আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছিল। বাংলাভাষাকে সমূলে উৎপাটন করতে চেয়েছিল তার উৎসমূল থেকে। বারবার বাঙালির মাতৃভাষাকে বদলে দেয়ার চেষ্টা হয়েছে।

শুধু বিদেশিরাই নয় উচ্চ বর্ণের হিন্দু-মুসলিমরাও বাংলাকে দেখেছে নীচুজাতের ভাষা হিসেবে।

পাকিস্তানি শাসকরা প্রথমেই আঘাত এনেছিল আমাদের ভাষার উপর। পাকিস্তান সৃষ্টির পরপরই মোট জনসংখ্যার ৫৪.৬% ভাগ বাংলাভাষী হওয়া সত্বেও মাত্র ৭.২% উর্দু ভাষীর ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। এ উদ্দেশ্যে বাংলাভাষাকে ইসলামিকরণ, সংস্কৃতি ও আদি বাংলা শব্দমালাকে বাতিল করে আরবি ও ফারসি শব্দ সংযোজন, বাংলা বর্ণমালা বাতিল, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য চর্চার প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ভেঙে দিয়ে বাংলা ভাষার সামাজিক ভিত্তির উপর আঘাত হানা হয়েছিল। রাতারাতি কবি জসিম উদ্দিনের 'নিমন্ত্রণ' কবিতাটির নাম বদলে ‌'দাওয়াত' করা হলো।

নজরুলের কবিতায় ‌'মহা শ্মশান'-কে করা হলো 'গােরস্থান'। রবীন্দ্রনাথকে নিষিদ্ধ করার পায়তারা চললো। আমরা ভুলি নাই জ্ঞানপাপী কিছু বাঙালি বুদ্ধিজীবিও ছিল সেই ষড়যন্ত্রে। পাকিস্তান সৃষ্টির ছ’মাস পেরুতে না পেরুতেই বাঙালিকে রাজপথে নামতে হয়েছিল মাতৃভাষার মর্যাদা লড়াইয়ে । আজ বাংলাভাষীর সংগ্রামেই বিশ্ববাসী পেয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।



আমার জানি বাংলা ভাষায় বিভিন্ন বিদেশি ভাষার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এটি বাংলাভাষাকে ঋদ্ধ করেছে বলেই পন্ডিতরা মনে করেন। আমার শত্রু অন্যকোন দেশ বা ভাষা নয়, আমার শত্রু পাকিস্তান, উর্দু আমার কাছে শত্রুভাষা। হতে পারি আমি হঠকারি কিংবা উগ্র দেশপ্রেমিক। তবুও বিদগ্ধ জনের কাছে জিজ্ঞাসা- বাংলাভাষায় উর্দু থেকে অনুপ্রবেশিত শব্দসমূহ কি আমাদের খুবই প্রয়োজনীয়? উর্দু শব্দসমূহ বাদ দিলে বাংলাভাষার কি খুব বেশী অঙ্গহানি হবে? যদি না হয় গুরুজনদের কাছে অনুরোধ অনুপ্রবেশিত উর্দু শব্দসমূহের তালিকা দিন, আমার জনম দুঃখী বাংলাভাষাকে আরেকটু কলঙ্কমুক্ত করি।



নদীর মত ভাষা ও মানুষের চাহিদাও কিন্তু চির প্রবহমাণ, বাঁধ দিয়ে বাঁধা দেয়া যায়না সত্য তবুও আমরা পাকিস্তানি পণ্য ও জামাতি প্রতিষ্ঠান বর্জনের আহবান জানিয়েছি। যদি আপনি গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের সাথে সহমত হন, জামাতি প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা প্রনয়ণ ও তা বয়কটকে সমর্থন করেন, পাকিস্তানের সাথে কুটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন ও পাকিস্তানি পণ্য বর্জনের আহবানকে যৌক্তিক মনে করেন তবে অনুপ্রবেশিত উর্দু শব্দসমূহের তালিকা প্রনয়ণ ও তা পরিহারের আহবানও যৌক্তিক বলে মেনে নেয়া উচিত। বাংলাভাষা নিয়ে যারা কাজ করেন সেই বিদগ্ধ অগ্রজদের কাছে অনুরোধ ভাষার মাসেই পক্ষ-বিপক্ষের আলোচনা ও বিতর্কটি শুরু করা দরকার।





সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।