১৯৫৪ সালে সুচিত্রা সেনকে অভিনয় ছাড়তে বলেছিলেন স্বামী দিবানাথ সেন। কারণ উত্তম কুমারের সঙ্গে রোমাঞ্চের সম্পর্ক। আসলেই কি উত্তম-সুচিত্রা জুটির মধ্যে ব্যক্তি রসায়ন ছিল। এ ধোঁয়াশা ঘেরা প্রশ্নের উত্তর এখনো খুঁজে ফেরেন ভক্তরা। ১৯৫৩ সালে এই জুটির প্রথম ছবি 'সাড়ে চুয়াত্তর' মুক্তি পেয়ে হিট হয়।
প্রথম ছবিতেই দর্শক তাদের পর্দার মতো বাস্তব জীবনেও প্রেমিক যুগল ভাবতে থাকে। এই ভাবনা জোরালো হয় ১৯৫৪ সালে। ওই বছর মুক্তি পায় তাদের ছয়টি ছবি। প্রতিটি ছবিতেই জীবনঘনিষ্ঠ অভিনয়ের কারণে দর্শকের মনে উত্তম-সুচিত্রার প্রেমের কল্পকথা জোরালো হতে থাকে। তবে দর্শকের অন্ধবিশ্বাসের মূলে জল ঢালেন সুচিত্রা নিজেই।
ওই বছর মুক্তি পায় 'অগি্নপরীক্ষা'। এ ছবির পোস্টারে লেখা ছিল- 'আমাদের প্রণয়ের সাক্ষী হলো অগি্নপরীক্ষা'। এ লেখার নিচে ছিল সুচিত্রার স্বাক্ষর। এই পোস্টার দেখে অঝোরে কেঁদেছিলেন উত্তম কুমারের স্ত্রী গৌরী দেবী। অন্যদিকে এর অাঁচ ছড়িয়েছিল সুচিত্রার দাম্পত্য জীবনেও।
উত্তম-দিবানাথের সম্পর্কের অবনতি এখান থেকেই শুরু। স্বামীর জোরালো সন্দেহের কারণে ওই বছর চুক্তিবদ্ধ হওয়া আরও চারটি ছবিতে কাজ করতে পারেননি সুচিত্রা। স্বামীর নিষেধ সত্ত্বেও অভিনয় ছাড়তে রাজি হননি মহানায়িকা। বাড়তে থাকে ঝগড়-ঝাটি, সঙ্গে সন্দেহের তীর। মদে আসক্ত হয়ে পড়লেন দিবানাথ।
সুচিত্রা সেনকে চিত্রজগতের সবাই মিসেস সেন বলে ডাকতেন। কিন্তু উত্তম কুমার ডাকতেন রমা নামে।
আর উত্তম কুমারকে রমা ডাকতেন 'উতো' বলে। দাম্পত্য কলহ বাড়তে থাকায় মেয়ে মুনমুনকে সুচিত্রা পাঠিয়ে দেন দার্জিলিংয়ে কনভেন্টে পড়তে। ১৯৫৭ সালে উত্তম কুমার 'হারানো সুর' প্রযোজনা করলেন।
নায়িকা হতে বললেন সুচিত্রা সেনকে। উত্তম প্রযোজনা করছেন শুনে সুচিত্রা সেন বললেন, 'তোমার জন্য সব ছবির ডেট ক্যান্সেল করব। ' হলোও তাই। এতে আরও ক্ষেপলেন দিবানাথ।
এক দিন সুচিত্রা সেনের বালিগঞ্জের বাসায় পার্টি ছিল।
উত্তম কুমার 'ব্ল্যাক ডগ' হুইস্কি পছন্দ করতেন। তাই ছিল মদের বিশাল আয়োজন। পার্টিতে ছিলেন উত্তম কুমারের স্ত্রী গৌরিদেবী, প্রোডিউসার রত্না চ্যাটার্জি।
তখন মধ্য রাত। উঠে পড়লেন উত্তম-সুচিত্রা।
শুরু হলো টুইস্ট ডুয়েল নাচ। উত্তম কুমার সুচিত্রার কোমরে হাত দিয়ে নাচছেন বেশ ঘনিষ্ঠ হয়েই।
মাথা ঠিক রাখতে পারলেন না দিবানাথ সেন। হঠাৎ দিবানাথ ছুরি নিয়ে তাড়া শুরু করলেন উত্তম কুমারকে। পার্টি লণ্ডভণ্ড।
সুচিত্রার বাড়ির অলিন্দে ছুটছেন উত্তম কুমার। পেছনে ছুরি হাতে সুচিত্রার স্বামী! একসময় উত্তম কুমারকে ধরে ফেললেন দিবানাথ সেন। হাতজোড় করে ছেড়ে দেওয়ার জন্য কাতর প্রার্থনা করছেন উত্তম কুমার।
আর দিবানাথ সেন বলে চলেছেন, 'উত্তম আই উইল কিল ইউ', 'আই উইল কিল ইউ'। থামালেন গৌরিদেবী।
কোনো মতে দিবানাথ সেনকে নিরস্ত্র করলেন। উত্তম কুমার ছাড়া পেয়ে ছুটতে শুরু করলেন। থামলেন! প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে নিজের বাড়িতে পেঁৗছে। ছুরি নিয়ে উত্তমকে তাড়া করার ঘটনার পর থেকে স্বামী দিবানাথের সঙ্গে আরও দূরত্ব তৈরি হলো সুচিত্রা সেনের। দিবানাথ ছিলেন সুচিত্রা সিনেমা করুক, কিন্তু উত্তম কুমারকে ছাড়া।
কিন্তু সুচিত্রা রাজি হলেন না কোনোমতেই। শেষ পর্যন্ত চরম সিদ্ধান্ত নিলেন সুচিত্রা। স্বামী, বালিগঞ্জের শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে ফ্ল্যাট ভাড়া নিলেন দক্ষিণ কলকাতার নিউ আলিপুরে। আলাদা থাকতে শুরু করলেন। এর কিছু দূরেই উত্তম কুমারের নতুন বাড়ি।
সপরিবারে থাকবেন বলে বাড়িটি মনের মতো তৈরি করেছিলেন উত্তম।
ফিল্ম জগতে দুজনকে নিয়ে গুজব চরমে উঠল। এবার তাহলে উত্তম সুচিত্রাকে বিয়ে করবেন। দিবানাথকে ডিভোর্স এবার শুধু সময়ের অপেক্ষা। উত্তমের সঙ্গে ঘর বাঁধবেন সুচিত্রা।
গুজবের অাঁচ থেকে রেহাই পাননি উত্তমও। তিনি রাত করে শুটিং থেকে ফিরলেই স্ত্রী গৌরিদেবীর মনে হতো বোধহয় সুচিত্রার সঙ্গে সময় কাটিয়ে ফিরল। কেউ কেউ বলতে শুরু করলেন উত্তম-সুচিত্রার গোপনে বিয়ে হয়ে গেছে। সুচিত্রার ডিভোর্স হলেই ঘটা করে তা ঘোষণা করা হবে। এতে সুচিত্রা-দিবানাথের মতো দূরত্ব তৈরি হয় উত্তম- গৌরিদেবীর সম্পর্কেও।
তবে উত্তম-সুচিত্রা সত্যিই বিয়ে করেছিলেন কি-না তা আজও রহস্যই রয়ে গেছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।