কমরেড আইউব রেজার লেখাটি ব্লগে দেওয়া হল --
(২)
তরুণ কমিউনিস্ট আসাদের মহান মৃত্যু ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান সচনা করে। পর্ববাঙলার কমিউনিস্টদের সংগঠিত ট্রেড ইউনিয়ন সংগ্রাম ও গরীব কৃষক সংগ্রাম ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ভূমিকা রাখে। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান পাকিস্তানের স্বৈরাচারী বুর্জোয়া রাষ্ট্র কাঠামোকে একটি বড় আঘাত করে। কিন্তু সঠিক তত্ত্বগত লাইন ও রাজনৈতিক কর্মসচীর অভাবে পর্ববাঙলার কমিউনিস্টরা শেষ পর্যš জাতীয় পর্যায়ে পিছিয়ে পড়ে। আসাদের মৃত্যুর তাতপর্য ক্রমশঃ অনুজ্জ্বল হয়ে পড়ে।
কঠিন সত্য হলো লেনিন উত্তর রাশিয়া ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ভ্রাš তত্ত্বগত লাইনের কারণে বৃটিশ আমল, পাকিস্তান আমল ও বাঙলাদেশ আমলে কমিউনিস্টরা বিভ্রান্তিমলক তত্ত্বগত লাইন প্রয়োগ করে। বিশেষতঃ কমিউনিস্টরা বৃটিশ ভারতে সাম্রাজ্যবাদী বুর্জোয়াদের গুণগত বিপরীত, পাকিস্তান আমলে বৃহত বুর্জোয়াদের গুণগত বিপরীত ও বাঙলাদেশ আমলে বৃহৎ বুর্জোয়াদের গুণগত বিপরীত কর্মসচী উপস্থিত করেনি।
সঠিক কর্মসচীর রাজনৈতিক কর্মসচীর ভিত্তিতে বৃটিশ ভারতে কমিউনিস্ট আন্দোলন জাতীয় পর্যায়ে প্রভাবশালী হলে দেশে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব তীব্র আকার ধারণ করতোনা। বৃটিশ ভারতে শেষ পর্যায়ে প্রধানতঃ গণতাšিক সংগ্রাম, পাশাপাশি সমাজতান্ত্রিক সংগ্রাম বিকশিত ও শক্তিশালী হতে পারলে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি বুর্জোয়া রাষ্ট্রের উদ্ভব হতো না। অখন্ড স্বাধীন ও সমাজতান্ত্রিক ভারতবর্ষ (নিপীড়িত জাতিসমহের আত্মনিয়ন্ত্রের অধিকারসহ) সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনার উদ্ভব হতো।
পাকিস্তানে, পর্ববাঙলায় সঠিক কর্মসচীর রাজনৈতিক কর্মসচীর ভিত্তিতে কমিউনিস্ট আন্দোলন জাতীয় পর্যায়ে প্রভাবশালী হতে পারলে সারা দেশে শ্রেণী দ্বন্দ্ব তীব্রতর হতো, জাতীয় দ্বন্দ্ব এতটা তীব্রতর হতোনা। অপর কথায় পাকিস্তান, পর্ববাঙলায় শ্রমিকশ্রেণীর মেহনতী জনগণের সমাজতান্ত্রিক সংগ্রাম জাতীয় পর্যায়ে প্রভাবশালী হতে পারলে অখন্ড সমাজতান্ত্রিক পাকিস্তান (নিপীড়িত জাতিসমহের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারসহ) সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতো। পাকিস্তানে, পর্ববাঙলায় নিপীড়িত জাতিসমহের আÍনিয়šন অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম এতটা তীব্রতর হতো না।
বৃটিশ আমলে, পাকিস্তান আমলে ও বাঙলাদেশ আমলে এই ভৌগলিক ভুখন্ডের (সাবেক পর্ববাঙলা) সমাজ বিকাশের ধারায় ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও আসাদের মৃত্যু একটি বিশাল সামাজিক রাজনৈতিক ক্যানভাস ও অন্যান্যসাধারণ অধ্যায়। বাঙলাদেশের আšরিক কমিউনিস্টদের কর্তব্য হলো ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও আসাদের মৃত্যুর অসাধারণ ও সুগভীর তাতপর্য অনুধাবন করা।
বাঙলাদেশের আন্তরিক কমিউনিস্টদের কর্তব্য হলো বাঙলাদেশের সমাজের গুণগত পরিবর্তনের লক্ষ্যে মার্কসবাদ-লেনিনবাদের তত্ত্ব্ সৃজনশীলভাবে প্রয়োগ করা। লেনিন উত্তর রাশিয়া ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ভ্রাš তত্ত্বগত লাইনকে পরিহার করা। বাঙলাদেশে প্রধানতঃ পুঁজিবাদ বিরোধী সমাজতান্ত্রিক সংগ্রাম সংগঠিত করা। এখানে উল্লেখ্য বাঙলাদেশে সমাজতান্ত্রিক সংগ্রাম ছাড়া বুর্জোয়া রাজনীতি ও কমিউনিস্ট রাজনীতির মধ্যকার পার্থক্য যথাযথ সুনির্দিষ্ট হতে পারেনা। আর পাশাপাশি গণতান্ত্রিক সংগ্রাম (সামাজ্যবাদ ও ধর্মীয় মৌলবাদ বিরোধী সংগ্রাম) গড়ে তোলা।
দক্ষিণ এশিয়া সমাজতাšিক সংগ্রাম ও আরব সমাজতাšিক সংগ্রাম শক্তিশালী করা। মার্কসবাদ-লেনিনবাদ ও সমাজতš-কমিউনিজমের বিজয় অনিবার্য।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।